ড. মনমোহন সিং-দুর্নীতি শেকড়ে পৌঁছে গেছে
গত বছরটি ছিল আমাদের জন্য সমস্যাপূর্ণ একটি বছর। জাতি হিসেবে আমাদের যে বড় ধরনের সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে হচ্ছে তার কয়েকটি এখানে আমি ব্যাখ্যা করব। সরবরাহ ঘাটতি, বিশেষ করে কৃষিপণ্য এবং আমদানি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কয়েক মাস ধরে মুদ্রাস্ফীতির হার উচ্চপর্যায়ে চলে গেছে।
দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় পেঁৗছেছে। কাশ্মীর উপত্যকায় এবং চরম বামপন্থীদের প্রভাবিত এলাকায় সহিংসতা এমন পর্যায়ে চলে গেছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের জনজীবনে নৈতিক আচরণ ও নৈতিক মূল্যবোধের অভাব দেখা দেওয়ার ব্যাপারে বহু মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। যদিও দারিদ্র্য বিমোচনের বেশ কিছু প্রকল্প সফলতা অর্জন করেছে, কিন্তু সেবা প্রদানের মান যতটা হওয়ার কথা ততটা অনেক ক্ষেত্রেই হয়ে ওঠেনি। বঞ্চিত মানুষের যে সুযোগ তাদের কাছে পেঁৗছে দেওয়ার কথা সেটা পুরোপুরি পেঁৗছেনি। সংগত কারণেই তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আছে।
আমাদের অর্থনীতির শনৈঃশনৈঃ ওপরের দিকে উঠছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সতর্ক আছি। বিশ্বাস করার অনেক কারণ আছে যে আমরা সামনের বছরগুলোতে ভালো করব, কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি আমাদের সে অগ্রযাত্রায় একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এ মুদ্রাস্ফীতি দেশের দরিদ্র এবং অসহায় জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এক বছর আগে প্রাথমিক উদ্বেগের বিষয় ছিল শস্য, ডাল, ভোজ্য তেল ও চিনির দাম বৃদ্ধি নিয়ে। ২০০৯ সালের খরা এগুলোকে মূল্য বৃদ্ধির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। পদ্ধতিগতভাবে অতিরিক্ত খাদ্য সরবরাহ, আমদানি বৃদ্ধির মাধ্যমে সরবরাহ বৃদ্ধি এবং দৃঢ়ভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করার মধ্য দিয়ে এই প্রবণতাকে মোকাবিলা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শাকসবজি, ফলমূল, ডিম, দুধ এবং মাছের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি একটি ভিন্ন ধরনের সমস্যা। এ খাদ্যদ্রব্য মজুদের কোনো সুযোগ নেই। এসব খাদ্যদ্রব্যের কিছু অংশের কিছু মূল্য বৃদ্ধির কারণ মানুষের আয় বৃদ্ধি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। কারণ যাই হোক, মুদ্রাস্ফীতি একটি বড় বিষয়। এটাকে জরুরি ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
আমাদের সংবিধান অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ও জনগণের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব রাজ্য সরকারগুলোর ওপর। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে এবং সমস্যার ধরন বারবার পরিবর্তন হওয়ার কারণে রাজ্যগুলোর প্রায়শই কেন্দ্রের সহায়তা প্রয়োজন হয়ে থাকে। উগ্র বামপন্থী, সীমান্তের ওপারের সন্ত্রাস এবং ধর্মীয় মৌলবাদের ব্যাপারে যে সমস্যাগুলো রয়েছে তা নিয়ন্ত্রণের একমাত্র প্রক্রিয়া হলো কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে অব্যাহতভাবে অর্থপূর্ণ সমঝোতা। আজ আমি আবার নিশ্চিত করছি যে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোকে সম্ভাব্য সর ধরনের সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে প্রতিশ্রুত। কিন্তু কেন্দ্রের অর্থসাহায্য, দিকনির্দেশনা এবং তথ্য প্রদানের পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক করা, তাদের উন্নত সরঞ্জাম প্রদান, ব্যক্তি পুলিশের কাজের মান বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো শক্তিশালী করার ব্যাপারে রাজ্য সরকারগুলোকে মনোনিবেশ করতে হবে। তহবিল কোনো বাধা নয়। ১৩তম ফিন্যান্স কমিশন পর্যাপ্ত পরিমাণ অনুমোদন দিয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার অব্যাহতভাবে রাজ্যগুলোকে রিসোর্স দিয়ে যাচ্ছে।
দুর্নীতি গুড গভর্নেন্সের রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। এটি আমাদের অগ্রযাত্রার একটি বড় বাধা। সমাজের অভ্যন্তরে আমাদের প্রচেষ্টাকে এ সমস্যা পুরোপুরি ধ্বংস না করলেও দুর্বল করে দিচ্ছে। এ সমস্যা আন্তর্জাতিক মহলে আমাদের ভাবমূর্তিকে খাটো করে দিচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণ জনগণের সামনে আমাদের মাথা নত হয়ে যাচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জকে আমাদের সর্বাগ্রে, দৃঢ়ভাবে এবং দ্রুত মোকাবিলা করতে হবে। আপনারা জানেন, 'আমরা আইন বিভাগ ও প্রশাসনে এ আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে একদল মন্ত্রীকে নিয়োজিত করেছি। এর মধ্যেই বিচারিক দায়িত্ব এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসংক্রান্ত দুটি বিল পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসনে বিলম্ব একটি বড় সমস্যা। এটাকে ক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব, দায়িত্ব বিন্যাস ও ফলদায়ক বিকেন্দ্রীকরণের দ্বারা চিহ্নিত করা যেতে পারে।'
দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়ন করা এবং সমাজে বঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া অংশকে সফলভাবে এগিয়ে নিতে সামাজিক খাতে অনেক প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। পর্যাপ্ত চাকরি সুবিধা, মজুরি বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ক্ষেত্রে ক্রয়ক্ষমতার ক্ষেত্রে অনেক এগোনো গেছে। কিন্তু ধারণা আছে দরিদ্রদের জন্য নেওয়া স্কিমগুলো পূর্ণমাত্রায় কাজ করছে না। এ ব্যাপারে বিকেন্দ্রীকরণ বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
মুখ্যসচিবদের দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনে দেওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ভাষণের কিয়দংশ। আউটলুক থেকে
ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
আমাদের অর্থনীতির শনৈঃশনৈঃ ওপরের দিকে উঠছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সতর্ক আছি। বিশ্বাস করার অনেক কারণ আছে যে আমরা সামনের বছরগুলোতে ভালো করব, কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি আমাদের সে অগ্রযাত্রায় একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এ মুদ্রাস্ফীতি দেশের দরিদ্র এবং অসহায় জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এক বছর আগে প্রাথমিক উদ্বেগের বিষয় ছিল শস্য, ডাল, ভোজ্য তেল ও চিনির দাম বৃদ্ধি নিয়ে। ২০০৯ সালের খরা এগুলোকে মূল্য বৃদ্ধির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। পদ্ধতিগতভাবে অতিরিক্ত খাদ্য সরবরাহ, আমদানি বৃদ্ধির মাধ্যমে সরবরাহ বৃদ্ধি এবং দৃঢ়ভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করার মধ্য দিয়ে এই প্রবণতাকে মোকাবিলা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শাকসবজি, ফলমূল, ডিম, দুধ এবং মাছের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি একটি ভিন্ন ধরনের সমস্যা। এ খাদ্যদ্রব্য মজুদের কোনো সুযোগ নেই। এসব খাদ্যদ্রব্যের কিছু অংশের কিছু মূল্য বৃদ্ধির কারণ মানুষের আয় বৃদ্ধি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। কারণ যাই হোক, মুদ্রাস্ফীতি একটি বড় বিষয়। এটাকে জরুরি ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
আমাদের সংবিধান অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ও জনগণের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব রাজ্য সরকারগুলোর ওপর। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে এবং সমস্যার ধরন বারবার পরিবর্তন হওয়ার কারণে রাজ্যগুলোর প্রায়শই কেন্দ্রের সহায়তা প্রয়োজন হয়ে থাকে। উগ্র বামপন্থী, সীমান্তের ওপারের সন্ত্রাস এবং ধর্মীয় মৌলবাদের ব্যাপারে যে সমস্যাগুলো রয়েছে তা নিয়ন্ত্রণের একমাত্র প্রক্রিয়া হলো কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে অব্যাহতভাবে অর্থপূর্ণ সমঝোতা। আজ আমি আবার নিশ্চিত করছি যে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলোকে সম্ভাব্য সর ধরনের সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে প্রতিশ্রুত। কিন্তু কেন্দ্রের অর্থসাহায্য, দিকনির্দেশনা এবং তথ্য প্রদানের পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক করা, তাদের উন্নত সরঞ্জাম প্রদান, ব্যক্তি পুলিশের কাজের মান বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো শক্তিশালী করার ব্যাপারে রাজ্য সরকারগুলোকে মনোনিবেশ করতে হবে। তহবিল কোনো বাধা নয়। ১৩তম ফিন্যান্স কমিশন পর্যাপ্ত পরিমাণ অনুমোদন দিয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকার অব্যাহতভাবে রাজ্যগুলোকে রিসোর্স দিয়ে যাচ্ছে।
দুর্নীতি গুড গভর্নেন্সের রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। এটি আমাদের অগ্রযাত্রার একটি বড় বাধা। সমাজের অভ্যন্তরে আমাদের প্রচেষ্টাকে এ সমস্যা পুরোপুরি ধ্বংস না করলেও দুর্বল করে দিচ্ছে। এ সমস্যা আন্তর্জাতিক মহলে আমাদের ভাবমূর্তিকে খাটো করে দিচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণ জনগণের সামনে আমাদের মাথা নত হয়ে যাচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জকে আমাদের সর্বাগ্রে, দৃঢ়ভাবে এবং দ্রুত মোকাবিলা করতে হবে। আপনারা জানেন, 'আমরা আইন বিভাগ ও প্রশাসনে এ আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে একদল মন্ত্রীকে নিয়োজিত করেছি। এর মধ্যেই বিচারিক দায়িত্ব এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসংক্রান্ত দুটি বিল পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসনে বিলম্ব একটি বড় সমস্যা। এটাকে ক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব, দায়িত্ব বিন্যাস ও ফলদায়ক বিকেন্দ্রীকরণের দ্বারা চিহ্নিত করা যেতে পারে।'
দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়ন করা এবং সমাজে বঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া অংশকে সফলভাবে এগিয়ে নিতে সামাজিক খাতে অনেক প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। পর্যাপ্ত চাকরি সুবিধা, মজুরি বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ক্ষেত্রে ক্রয়ক্ষমতার ক্ষেত্রে অনেক এগোনো গেছে। কিন্তু ধারণা আছে দরিদ্রদের জন্য নেওয়া স্কিমগুলো পূর্ণমাত্রায় কাজ করছে না। এ ব্যাপারে বিকেন্দ্রীকরণ বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
মুখ্যসচিবদের দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনে দেওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ভাষণের কিয়দংশ। আউটলুক থেকে
ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
No comments