নাৎসি প্রহরীর জেল-ইতিহাসের অমোঘ বিচার
যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের কালিমা সময় গড়িয়ে গেলেও মুছে যায় না। ইতিহাসের অমোঘ বিচারও রোধ করা যায় না। কারণ, এ ধরনের অপরাধ সভ্যতার এগিয়ে চলার পথকে কণ্টকাকীর্ণ করে। তাই অপরাধীর শাস্তি বিধান আইনের শাসন তথা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই প্রয়োজন হয়।
এ নিরিখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনী ও তাদের অপরাধের সঙ্গী বিভিন্ন ব্যক্তির সুদীর্ঘকাল পরও বিচার অনুষ্ঠান ও শাস্তি বিধানও এতটা গুরুত্ব পায়। গত বৃহস্পতিবার জার্মানির একটি আদালত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যান্ডের এক নাৎসি বন্দিশিবিরে কমপক্ষে ২৮ হাজার ইহুদি হত্যাকাণ্ডে সহায়তার অপরাধে ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত জন দেমজানজুককে কারাদণ্ড দিয়েছেন। ৯১ বছর বয়সী দেমজানজুকের বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যার অভিযাগ আনা হয়নি। তিনি বন্দিশিবিরের প্রহরী থাকার সময় বিপুলসংখ্যক মানুষ হত্যায় সহযোগিতা করেছেন। তাই প্রত্যক্ষ হোক আর পরোক্ষভাবেই হোক, দেমজানজুক যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ এড়াতে পারেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে ৬৬ বছর আগে। কিন্তু এখনও যুদ্ধাপরাধীর নিস্তার নেই। এ ঘটনা বাংলাদেশের জন্যও প্রাসঙ্গিক এবং শিক্ষণীয়। এখানেও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে কয়েকজনকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেমন ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখা ও সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে নিরাপদ করার স্বার্থে সুদীর্ঘকাল পরও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, তেমনি আমাদের সমাজকেও কলুষমুক্ত করা ও আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখার স্বার্থেই একসময়ের স্বীকৃত অপরাধীদের বিচার করে শাস্তি বিধান সময়ের দাবি। অপরাধীদের কার বয়স কত হয়েছে বা তিনি প্রত্যক্ষ নাকি পরোক্ষভাবে অপরাধ সংঘটিত করেছেন তা তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না। এ ধরনের অপরাধী সমাজ ও দেশের শত্রু। এরা জাতীয় অগ্রগতির প্রতিবন্ধকও। নাৎসি বন্দিশিবিরে হত্যার দায়ে দেমজানজুকের কারাদণ্ড আমাদের দেশের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে প্রণোদনা সৃষ্টিকারী। আমরা অপরাধীর শাস্তি বিধানের জন্য জার্মান আদালতকে ধন্যবাদ জানাই।
No comments