নদীদূষণের আরেক চিত্র by আলম শাইন
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। যদিও সত্যতা প্রমাণের জন্য দলিল-দস্তাবেজ নিষ্প্র্রয়োজন, তথাপি সংক্ষেপে সারকথাটা জানাতে হয়। আমরা জানি, এ দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৩৫০টি নদী বহমান। অপরদিকে শাখা-প্রশাখা মিলিয়ে নদ-নদীর সংখ্যা প্রায় ৮শ'।
যার ফলে ২৪ হাজার ৯৪০ কিলোমিটার জলপথের মালিক এ দেশবাসী (ব্যবহৃত জলপথের পরিমাণ আরও কম)। এত স্বল্প আয়তনের দেশে বিপুলসংখ্যক নদ-নদীর অবস্থানটা বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার বলতে হয়। পৃথিবীর আর কোনো স্বল্প আয়তনের দেশে এত বিপুলসংখ্যক নদ-নদীর অবস্থানের কথা জানা যায় না।
নদী বলতে আমাদের ভেতর আজকাল এক ধরনের ভীতিও কাজ করছে। বন্যা ও নদীভাঙন এ ভীতির মূল কারণ। ভীতিটা দূর করার উদ্দেশ্যে বলতে হয়, অসংখ্য নদীর কারণে দেশের ফসলি জমিগুলো যে হারে পলি পাচ্ছে, তাতে আমাদের কৃষককুল উপকৃত হচ্ছে ঢের। শুষ্ক মৌসুমে পাচ্ছে সেচের সুবিধা। এর ফল প্রত্যক্ষভাবে ভোগ করছি আমরা সবাই। শুধু পলিই নয়, এসব কারণে আমরা বেশ দীর্ঘ জলপথও পেয়েছি। যার ফলে ব্যবসায়ীরা স্বল্পমূল্যে মালপত্র পরিবহনের সুযোগ পেয়ে থাকে। তা ছাড়া বিপুল জলরাশি থেকে আমরা প্রতিনিয়ত পাচ্ছি পর্যাপ্ত পরিমাণে মৎস্য আহরণের সুযোগ। এতে আমাদের আমিষের চাহিদার জোগান হচ্ছে ব্যাপক।
এত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা সত্ত্বেও নদীর সঙ্গে আমরা বৈরী আচরণ করছি প্রতিনিয়ত। প্রথমত বলতে হয়, আমরা নদ-নদী দূষণ করছি কল-কারখানার বর্জ্য ফেলে, যা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বাঁধ বা রাস্তা বানিয়ে নানা উপায়ে গলা টিপে ধরে নদীকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করছি। দখলবাজির বিষয়টাও রয়েছে তন্মধ্যে। তৃতীয়ত, যা করছি তা সত্যিই ন্যক্কারজনক বলা যায়। সভ্য সমাজে এটি বড়ই বেমানান। গ্রহণযোগ্যও নয়। যে নদীর কারণে দেশবাসী এত উপকৃত হচ্ছে, সেই নদীর বুকে যাতায়াতের সুবাদে আমরা সরাসরি মলমূত্র ত্যাগ করছি। তাতে শুধু নদী দূষণই হচ্ছে না; দূষণ হচ্ছে আমাদের পরিপাকতন্ত্রটাও। কারণ, নৌপথের যাত্রীদের এখনও নদীর পানি পান করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। সামর্থ্যবানদের ব্যাপারটা ভিন্ন। তারা বোতলজাত পানি ব্যবহার করলেও অধিকাংশ যাত্রীর ক্ষেত্রে নদীর পানিই ভরসা।
এ প্রক্রিয়ায় নদীদূষণ বেশি হচ্ছে লঞ্চ, স্টিমারের যাত্রীদের বদৌলতে। অবশ্য এ ব্যাপারে যাত্রীরা সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমাদের দেশের জলযানগুলোর পয়ঃনিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকার কারণে মলমূত্র সরাসরি নদীর বুকে ছড়িয়ে পড়ছে, যা নদী তথা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। যেখানে সমগ্র বিশ্বের মানুষ পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে উঠেপড়ে লেগেছে, সেখানে বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতি কি মানা যায়? বিষয়টা লজ্জাজনকও বটে।
এটি এখনই রোধ করা প্রয়োজন। রোধ করা কঠিন কিছু নয়ও। শুধু প্রয়োজন একটু আন্তরিকতার। আমরা জানি, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে একেকটি উন্নতমানের জলযান প্রস্তুত করা হচ্ছে বর্তমানে। অথচ এতে ট্যাংকের ব্যবস্থা করলে বিষয়টার সমাধান হয়ে যায় সহজেই। তাহলে নদীদূষণ হ্রাসের পাশাপাশি আমরা আধুনিক জলযানও পেয়ে যেতাম।
এ ছাড়াও আমরা লক্ষ্য করছি, নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষেরা নদীর কিনারেই বাঁশ-কাঠ কিংবা চটের বেড়া দিয়ে কাঁচা পায়খানা নির্মাণ করছে এবং প্রতিনিয়ত মলমূত্র ত্যাগ করছে, যা আমাদের নদীদূষণের অন্যতম কারণ। এসব কারণ থেকে আমরা অতিশিগগিরই মুক্তি চাই।
বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক দৃষ্টি নিয়ে দেশবাসীর কল্যাণের কথা চিন্তা করে কঠোর হস্তে এর বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিষয়টা সংশোধন হলে নদী-মাতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের সুযোগ তৈরি হবে আমাদের।
alamshine@gmail.com
নদী বলতে আমাদের ভেতর আজকাল এক ধরনের ভীতিও কাজ করছে। বন্যা ও নদীভাঙন এ ভীতির মূল কারণ। ভীতিটা দূর করার উদ্দেশ্যে বলতে হয়, অসংখ্য নদীর কারণে দেশের ফসলি জমিগুলো যে হারে পলি পাচ্ছে, তাতে আমাদের কৃষককুল উপকৃত হচ্ছে ঢের। শুষ্ক মৌসুমে পাচ্ছে সেচের সুবিধা। এর ফল প্রত্যক্ষভাবে ভোগ করছি আমরা সবাই। শুধু পলিই নয়, এসব কারণে আমরা বেশ দীর্ঘ জলপথও পেয়েছি। যার ফলে ব্যবসায়ীরা স্বল্পমূল্যে মালপত্র পরিবহনের সুযোগ পেয়ে থাকে। তা ছাড়া বিপুল জলরাশি থেকে আমরা প্রতিনিয়ত পাচ্ছি পর্যাপ্ত পরিমাণে মৎস্য আহরণের সুযোগ। এতে আমাদের আমিষের চাহিদার জোগান হচ্ছে ব্যাপক।
এত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা সত্ত্বেও নদীর সঙ্গে আমরা বৈরী আচরণ করছি প্রতিনিয়ত। প্রথমত বলতে হয়, আমরা নদ-নদী দূষণ করছি কল-কারখানার বর্জ্য ফেলে, যা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বাঁধ বা রাস্তা বানিয়ে নানা উপায়ে গলা টিপে ধরে নদীকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করছি। দখলবাজির বিষয়টাও রয়েছে তন্মধ্যে। তৃতীয়ত, যা করছি তা সত্যিই ন্যক্কারজনক বলা যায়। সভ্য সমাজে এটি বড়ই বেমানান। গ্রহণযোগ্যও নয়। যে নদীর কারণে দেশবাসী এত উপকৃত হচ্ছে, সেই নদীর বুকে যাতায়াতের সুবাদে আমরা সরাসরি মলমূত্র ত্যাগ করছি। তাতে শুধু নদী দূষণই হচ্ছে না; দূষণ হচ্ছে আমাদের পরিপাকতন্ত্রটাও। কারণ, নৌপথের যাত্রীদের এখনও নদীর পানি পান করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। সামর্থ্যবানদের ব্যাপারটা ভিন্ন। তারা বোতলজাত পানি ব্যবহার করলেও অধিকাংশ যাত্রীর ক্ষেত্রে নদীর পানিই ভরসা।
এ প্রক্রিয়ায় নদীদূষণ বেশি হচ্ছে লঞ্চ, স্টিমারের যাত্রীদের বদৌলতে। অবশ্য এ ব্যাপারে যাত্রীরা সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমাদের দেশের জলযানগুলোর পয়ঃনিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকার কারণে মলমূত্র সরাসরি নদীর বুকে ছড়িয়ে পড়ছে, যা নদী তথা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। যেখানে সমগ্র বিশ্বের মানুষ পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে উঠেপড়ে লেগেছে, সেখানে বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতি কি মানা যায়? বিষয়টা লজ্জাজনকও বটে।
এটি এখনই রোধ করা প্রয়োজন। রোধ করা কঠিন কিছু নয়ও। শুধু প্রয়োজন একটু আন্তরিকতার। আমরা জানি, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে একেকটি উন্নতমানের জলযান প্রস্তুত করা হচ্ছে বর্তমানে। অথচ এতে ট্যাংকের ব্যবস্থা করলে বিষয়টার সমাধান হয়ে যায় সহজেই। তাহলে নদীদূষণ হ্রাসের পাশাপাশি আমরা আধুনিক জলযানও পেয়ে যেতাম।
এ ছাড়াও আমরা লক্ষ্য করছি, নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষেরা নদীর কিনারেই বাঁশ-কাঠ কিংবা চটের বেড়া দিয়ে কাঁচা পায়খানা নির্মাণ করছে এবং প্রতিনিয়ত মলমূত্র ত্যাগ করছে, যা আমাদের নদীদূষণের অন্যতম কারণ। এসব কারণ থেকে আমরা অতিশিগগিরই মুক্তি চাই।
বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক দৃষ্টি নিয়ে দেশবাসীর কল্যাণের কথা চিন্তা করে কঠোর হস্তে এর বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিষয়টা সংশোধন হলে নদী-মাতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের সুযোগ তৈরি হবে আমাদের।
alamshine@gmail.com
No comments