পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট আর কত দূর যাবে? by সিরিল আলমেইডা

গোলযোগ আর পাকিস্তান সমার্থক। দুই সপ্তাহ আগে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট এক দুর্নীতি কেলেঙ্কারির বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সে সময় এক বড় হাউজিং ব্যবসায়ী আদালত থেকে সুবিধাজনক রায় পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ছেলে বিপুল অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ করেছিল বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন।


প্রধান বিচারপতি এমনিতেই পাকিস্তানে যথেষ্ট জনপ্রিয়। ২০০৭ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফ তাকে পদত্যাগ করতে বলার পরও তিনি তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে জেনারেলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে ওঠেন। এর এক বছরের মাথায় জেনারেল নিজেই ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন।
এই কেলেঙ্কারি কি বিশাল জনপ্রিয়তার অধিকারী প্রধান বিচারপতির ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং এতে তার বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা কি হ্রাস পাবে? ১৯ জুন এর জবাব পাওয়া গেল এবং সে জবাব হলো_ না। কলমের এক খোঁচায় জনাব চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেন।
প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির বিরুদ্ধে এক দুর্নীতির মামলা পুনরুজ্জীবনের জন্য সুইস কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখতে আদালতের আদেশ মান্য না করায় তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা রুজু হয় এবং আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এপ্রিলের শেষদিকে শাস্তি প্রদান করেন। গিলানি ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার ঘটনায় উচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে না গিয়ে পাকিস্তান পিপলস পার্টি সরকার আপসের রাস্তা নেয়। পিপিপি গিলানির জায়গায় প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে পাঞ্জাবে দলের আরেক বড় নেতা মখদুম শাহাবুদ্দিনের নাম ঘোষণা করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে শাহাবুদ্দিনের নাম ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাওয়ালপিন্ডিতে মাদকবিরোধী আদালত তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। স্মর্তব্য, মাদকবিরোধী আদালত সামরিক বাহিনী পরিচালিত।
আসলে এটা হলো আরও গোলযোগের নিদর্শন। এই প্রচ্ছন্ন অথচ শক্তিশালী গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি কি এই অজনপ্রিয় সরকারকে সরিয়ে দিতে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে এবং নেতিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দোহাই দিয়ে তারা রাজনীতিবিদদের পরিবর্তে টেকনোক্রেটিক সরকার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা আঁটছে?
এখন নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্যও এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। সুপ্রিম কোর্টর্ ইতিমধ্যেই রেন্টাল বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় দুর্নীতির জন্য রাজার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আদেশ দিয়েছেন। এদিকে গিলানির মতো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রাজাও জারদারির মামলা পুনরুজ্জীবনে আদালতের আদেশ পালনে অস্বীকৃতি জানালে তাকেও তার পূর্বসূরির ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে।
এই নাটকের কোথায় গিয়ে যবনিকা পড়বে, তা কিন্তু কেউই হলফ করে বলতে পারবেন না।
বর্তমান সরকারের প্রকৃত শক্তি হলেন প্রেসিডেন্ট জারদারি। পাকিস্তানে কোনো বেসামরিক সরকার যেটা পারেনি, সেই সংসদের পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত তিনি সরকার টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হতে যে আরও অনেক পথ হাঁটতে হবে_ সেই আগামী মার্চ পর্যন্ত। ইত্যবসরে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টকে দেশটির চিরাচরিত ক্ষমতার কেন্দ্র সামরিক এবং রাজনৈতিক শ্রেণীর মতো ক্ষমতাশালী প্রমাণ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেই বোধ হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এই নব্যলব্ধ ক্ষমতাবলে বলীয়ান হয়ে পাকিস্তানের আদালত সে দেশের নির্বাচিত অথচ অকার্যকর ও অজনপ্রিয় সরকারকে উৎখাত করেন কিনা এবং পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক অধোগতি ও শাসন প্যারালাইসিস থেকে রক্ষা করার নামে নির্বাচিত সরকারের জায়গায় অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাসীন করেন কিনা।
সামরিক বাহিনী তাদের দিক থেকে সাইড লাইনে থেকেই আদালত ও সরকারের মধ্যকার লড়াই দেখছে। তবে তারা গত সপ্তাহে মখদুম শাহাবুদ্দিনের প্রার্থিতাকে ভণ্ডুল করে দেওয়ার ব্যাপারে ভূমিকা রাখে।
যারা গণতন্ত্রে উত্তরণের সমর্থক তারা মনে করেন, এই বিশৃঙ্খলা যত বাড়বে ততই খাকি পোশাকধারীদের রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে প্রবেশের সুযোগ বাড়বে। তারা এক সময় বলতে পারে_ যথেষ্ট হয়েছে, এবার তোমরা বিদায় হও। একদিক থেকে বলতে গেলে, সরকারের নিজের ভাগ্য এখন নিজের হাতেই। তাদের হাতে এখন গণতন্ত্র রক্ষার দুটি পথ রয়েছে।
একটি হলো, সরকার আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারে। এর ফলে সরকারের ওপর যে অসহনীয় চাপ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা সহজ হয়ে আসতে পারে। দ্বিতীয় পথ হলো, সরকার তার শাসন রেকর্ডকে উন্নত করার মাধ্যমে বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে।

সিরিল আলমেইডা :পাকিস্তানি কলাম লেখক; দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর সুভাষ সাহা

No comments

Powered by Blogger.