দুষ্টের দমনে কোনো শিথিলতা নয়-শিক্ষককে প্রহার

ঔদ্ধত্য ও ক্ষমতার দম্ভ লাগামছাড়া হলে কী ঘটে, সেটাই ঘটিয়ে দেখালেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা এমদাদ হোসেন। তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করে সন্ত্রাসের ‘অপূর্ব’ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।


বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস-আশ্রিত ছাত্রসংগঠনের সদস্যদের হাতে এ ধরনের ঘটনা আগেও যে ঘটেনি, তা নয় এবং প্রতিবারই এ রকম ঘটনায় বিদ্যা, মনুষ্যত্ব ও নৈতিকতা মুখ থুবড়ে পড়ে। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাই এবং দোষী ছাত্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।
কাছাকাছি ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি)। সেখানেও ছাত্রলীগ তাদের বিভিন্ন দাবি আদায়ের কৌশল হিসেবে পর পর দুই দিন প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে ২০০ শিক্ষক-কর্মচারীকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তাদের দাবি হলো: ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ‘অবৈধ নিয়োগ’ পাওয়া ব্যক্তিদের নিয়োগ বাতিল, শূন্য পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগদান এবং ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান। দাবিগুলোর যৌক্তিকতা থাকতে পারে, কিন্তু এগুলো এমন জীবন-মরণ প্রশ্ন নয়, যার জন্য প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে ২০০ শিক্ষক-কর্মচারীকে অবরোধ করে রাখতে হবে। এ রকম অনিয়মতান্ত্রিক পন্থা অধিকার আদায়ের পথ নয়।
দুটি ঘটনা একটি জিনিসেরই প্রমাণ দেয়, সেটা হলো—ক্ষমতার দাপটে ধরাকে সরা জ্ঞান করা। বলা বাহুল্য, এই ক্ষমতা পেশিশক্তির উন্মত্ত প্রকাশ ছাড়া কিছু নয়। অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তাদের প্রশ্রয় দিয়ে থাকে, আবার রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাবান ব্যক্তিরাও এদের বেয়াড়াপনাকে নিরুত্সাহিত করেন না।
ছাত্রের স্থান শিক্ষাঙ্গন, কিন্তু যে ছাত্র তার শিক্ষককে প্রহার করে, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। ইতিমধ্যে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে এবং সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠনটিও তাকে বহিষ্কার করেছে বলে পত্রিকায় খবর বের হয়েছে। এই তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থার পর ওই ছাত্রের গুরুতর অপরাধ যাতে লঘু করে না দেখা হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। একইভাবে যারা ক্ষমতার দর্পে শিক্ষাঙ্গনে যা খুশি তা করার প্রবণতার চর্চা করে, তাদের ছাত্র না বলাই শ্রেয়।
আমরা শিক্ষাঙ্গনে এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনার নিন্দা জানাই, কিন্তু যাদের দায়িত্ব এসব বন্ধ করার এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়ার, সেই সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় দুটির কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান—দুষ্টের দমনে শিথিলতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।

No comments

Powered by Blogger.