বাঘের চামড়া উধাও by হোসেন সোহেল
বাঘ শিকারে বীরত্ব প্রকাশ এবং একই সঙ্গে বাঘের চামড়ার লোভে বাঘ হত্যার খবর শত বছরের পুরনো_ যা আজও অব্যাহত আছে। বাঘ সমৃদ্ধ পৃথিবীর ১২টি দেশের মতো বাংলাদেশেও বাঘ হত্যা চলে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে। কখন কীভাবে চামড়ার লোভে এ বাঘ হত্যা করা হয় তা সবার অগোচরে থাকে। বাঘ বাঁচাতে না পারলেও বিভিন্ন সময় মৃত বাঘের চামড়া উদ্ধারে প্রশংসার দাবি রাখেন বাংলাদেশ বন বিভাগসহ দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চামড়া নিজ হাতে স্পর্শ করার সৌভাগ্য আমার কখনও হয়নি। জীবন্ত নয়। তাই মৃত চামড়া স্পর্শ করার তাড়নায় এবার ছুটলাম সুন্দরবনে। প্রথমেই যাই সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বনকর্তার কাছে। ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ১২টি ও পশ্চিম বিভাগে ১৪টি মৃত বাঘ নিয়ে ২৬টি মারা যায়। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জে চোরা শিকারিরা বাঘ হত্যা করে বেশি। অন্যদিকে বাঘ-মানুষের সংঘর্ষে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে মারা পড়ে বেশির ভাগ বাঘ। এছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারা পড়ে কয়েকটি বাঘ।
১৯৯০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করে ২৪টি বাঘের চামড়া। চলতি বছরেও ১৭ মার্চ শরণখোলার বাংলাবাজার থেকে বন বিভাগ ও কোস্টগার্ড আটক করে বাঘের তিনটি মাথা ও চারটি চামড়াসহ অনেক
হাড়গোড়। চলতি বছরের আটক চারটি চামড়া বাদ দিয়ে গত ২০ বছরে বন বিভাগের কাছে সংরক্ষিত আছে আটক ২৪টি বাঘের চামড়া। বিশ্ব বাজারে বর্তমানে এর মূল্য কমপক্ষে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। একেকটি পূর্ণাঙ্গ বাঘের চামড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা।
যাই হোক। চামড়া স্পর্শের কাতরতা নিয়ে মুখোমুখি হলাম সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বাগেরহাট বনকর্তা মিহির কুমার দের কাছে। স্বচ্ছতা ও সততা নিয়ে তিনি খুলে দিলেন চামড়া রাখার আলমারিটি। সংরক্ষিত কিছু হরিণের চামড়ার সঙ্গে ৫টি বাঘের চামড়া চোখে পড়তেই মনটা ভারী হয়ে গেল। চকচকে মৃত বাঘের চামড়া যদি এত রাজকীয় হতে পারে তাহলে জীবন্ত বাঘ প্রাণিজগতে কতখানি উচ্চবর্গীয় হতে পারে তা বলাই বাহুল্য। বনকর্তা জানালেন, তার কাছে ১২টি বাঘের চামড়ার রেকর্ড থাকলেও ২টি পচে যাওয়াসহ ২টি ট্যানারিতে প্রক্রিয়াজাতকরণ অবস্থায় রয়েছে। সেই অর্থে ৮টি চামড়া থাকার কথা থাকলেও দেখা যায় ৫টি।
এবার আগ্রহ বাড়িয়ে নিয়ে ছুটে যাই সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বুড়িগোয়ালিনী বন অফিসে। উপস্থিত এসিএফ তৌফিক জানান, মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে তার অনুমতি লাগবে। ফোন করি বিভাগীয় বনকর্তা জহিরউদ্দীনের কাছে। ফোনে খুলনার বনকর্তা জানান, তার কাছে সব চামড়া সংরক্ষিত আছে। কিন্তু তিনি অনেক ব্যস্ত থাকায় এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন। তিনি বললেও পরে তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। তার অধীন ১৪টি বাঘের চামড়া খুলনার বন অফিসেই রয়েছে।
কয়েক বন কর্মচারী জানান, চামড়াগুলো সংরক্ষণ করা হয় আরব দেশের শেখ বাদশাহদের জন্য। তারা বাঘের চামড়া পেলে মহাখুশি হন। সেই সঙ্গে এ দেশের অনেক গুণী মানুষের বাড়িতে বাঘের চামড়া ঝুলিয়ে অহঙ্কার করতে দেখা যায়।
প্রতি বছরে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলির কারণে কোন চামড়া কোথায় যায় তা কে বলতে পারেন! তারপরও ছুটতে থাকলাম। এবার সুন্দরবন এলাকা ছেড়ে সরাসরি বাঘ রক্ষা কর্তাদের কাছেই গেলাম। একের পর এক ফোন দিয়েও বর্তমান প্রধান বন সংরক্ষক ইশতিয়াক আহমেদের নাগাল পেলাম না।
গত ২০ বছরে শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যে ২৪টি বাঘের চামড়া উদ্ধার হয়েছে, তথ্য অনুসারে সেগুলো থাকার কথা ঢাকার বন অফিসে। প্রধান বন সংরক্ষকের দেখা না পেয়ে বন্যপ্রাণি সার্কেলের প্রধান ড. তপন কুমার দের কাছে গেলাম। কয়টি চামড়া আছে_ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সব চামড়াই তাদের কাছে সংরক্ষিত আছে। আমি আবারও বলি, সংখ্যায় কত হতে পারে? এবার তার উত্তর আসে_ ৬০টি চামড়া তার কাছে সংরক্ষিত আছে। ৬০টির পরিবর্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক শুধু ২৪টি চামড়াই দেখতে চাইলাম। এবার তিনি শুরু করলেন টালবাহানা। বোঝা গেল তার হিসাবে গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। আমি চামড়া দেখার আশায় ঠাঁই বসে থাকলাম। এক পর্যায়ে তিনি রাজি হলেন।
আগারগাঁও বন অফিসের আলমারি খুলতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। কিছু হরিণের চামড়ার সঙ্গে মাত্র দুটি বাঘের চামড়া আমার চোখে পড়ল। এরপরও আমি কক্ষের আশপাশে চোখ বোলাই আর কোনো আলমারি রয়েছে কি-না যেখানে থাকতে পারে আরও কিছু চামড়া! না, আর পাওয়া গেল না কোনো আলমারি। বের হওয়া দুটো বাঘের চামড়ার একটিতে লাল কাপড় দিয়ে সেলাই করা। দেখলেই বোঝা যায় এটি রাজপ্রাসাদের দেয়ালে অনেক মানানসই।
বন অফিসের দুটি বাদে ২২টি বাঘের চামড়ার দাম কমপক্ষে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে না দেখা ৩টি চামড়ার দাম ৬০ লাখ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে এ ২৫টি বাঘের চামড়ার দাম কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগে ১৪টি চামড়া দেখতে না পাওয়ার হিসাব বাদ থেকে গেল। বাঘের চামড়াগুলো একদিনে নয়, খোদ বন অফিস থেকেই বছরে বছরে হাতবদল হয়ে উধাও হয়েছে দেশ ও দেশের বাইরে। বর্তমান অনেক বনকর্তা যে এ বিষয়ে জড়িত নন তা বলাই যায়। তারপরও এসব চামড়ার হিসাব আগের বনকর্তাদের কাছ থেকে বুঝিয়ে না নেওয়ার কারণে তারাও একই চক্রে শামিল হবেন_ এটিও স্বাভাবিক।
১৯৯০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করে ২৪টি বাঘের চামড়া। চলতি বছরেও ১৭ মার্চ শরণখোলার বাংলাবাজার থেকে বন বিভাগ ও কোস্টগার্ড আটক করে বাঘের তিনটি মাথা ও চারটি চামড়াসহ অনেক
হাড়গোড়। চলতি বছরের আটক চারটি চামড়া বাদ দিয়ে গত ২০ বছরে বন বিভাগের কাছে সংরক্ষিত আছে আটক ২৪টি বাঘের চামড়া। বিশ্ব বাজারে বর্তমানে এর মূল্য কমপক্ষে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। একেকটি পূর্ণাঙ্গ বাঘের চামড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা।
যাই হোক। চামড়া স্পর্শের কাতরতা নিয়ে মুখোমুখি হলাম সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বাগেরহাট বনকর্তা মিহির কুমার দের কাছে। স্বচ্ছতা ও সততা নিয়ে তিনি খুলে দিলেন চামড়া রাখার আলমারিটি। সংরক্ষিত কিছু হরিণের চামড়ার সঙ্গে ৫টি বাঘের চামড়া চোখে পড়তেই মনটা ভারী হয়ে গেল। চকচকে মৃত বাঘের চামড়া যদি এত রাজকীয় হতে পারে তাহলে জীবন্ত বাঘ প্রাণিজগতে কতখানি উচ্চবর্গীয় হতে পারে তা বলাই বাহুল্য। বনকর্তা জানালেন, তার কাছে ১২টি বাঘের চামড়ার রেকর্ড থাকলেও ২টি পচে যাওয়াসহ ২টি ট্যানারিতে প্রক্রিয়াজাতকরণ অবস্থায় রয়েছে। সেই অর্থে ৮টি চামড়া থাকার কথা থাকলেও দেখা যায় ৫টি।
এবার আগ্রহ বাড়িয়ে নিয়ে ছুটে যাই সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বুড়িগোয়ালিনী বন অফিসে। উপস্থিত এসিএফ তৌফিক জানান, মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে তার অনুমতি লাগবে। ফোন করি বিভাগীয় বনকর্তা জহিরউদ্দীনের কাছে। ফোনে খুলনার বনকর্তা জানান, তার কাছে সব চামড়া সংরক্ষিত আছে। কিন্তু তিনি অনেক ব্যস্ত থাকায় এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন। তিনি বললেও পরে তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। তার অধীন ১৪টি বাঘের চামড়া খুলনার বন অফিসেই রয়েছে।
কয়েক বন কর্মচারী জানান, চামড়াগুলো সংরক্ষণ করা হয় আরব দেশের শেখ বাদশাহদের জন্য। তারা বাঘের চামড়া পেলে মহাখুশি হন। সেই সঙ্গে এ দেশের অনেক গুণী মানুষের বাড়িতে বাঘের চামড়া ঝুলিয়ে অহঙ্কার করতে দেখা যায়।
প্রতি বছরে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলির কারণে কোন চামড়া কোথায় যায় তা কে বলতে পারেন! তারপরও ছুটতে থাকলাম। এবার সুন্দরবন এলাকা ছেড়ে সরাসরি বাঘ রক্ষা কর্তাদের কাছেই গেলাম। একের পর এক ফোন দিয়েও বর্তমান প্রধান বন সংরক্ষক ইশতিয়াক আহমেদের নাগাল পেলাম না।
গত ২০ বছরে শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যে ২৪টি বাঘের চামড়া উদ্ধার হয়েছে, তথ্য অনুসারে সেগুলো থাকার কথা ঢাকার বন অফিসে। প্রধান বন সংরক্ষকের দেখা না পেয়ে বন্যপ্রাণি সার্কেলের প্রধান ড. তপন কুমার দের কাছে গেলাম। কয়টি চামড়া আছে_ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সব চামড়াই তাদের কাছে সংরক্ষিত আছে। আমি আবারও বলি, সংখ্যায় কত হতে পারে? এবার তার উত্তর আসে_ ৬০টি চামড়া তার কাছে সংরক্ষিত আছে। ৬০টির পরিবর্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক শুধু ২৪টি চামড়াই দেখতে চাইলাম। এবার তিনি শুরু করলেন টালবাহানা। বোঝা গেল তার হিসাবে গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। আমি চামড়া দেখার আশায় ঠাঁই বসে থাকলাম। এক পর্যায়ে তিনি রাজি হলেন।
আগারগাঁও বন অফিসের আলমারি খুলতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। কিছু হরিণের চামড়ার সঙ্গে মাত্র দুটি বাঘের চামড়া আমার চোখে পড়ল। এরপরও আমি কক্ষের আশপাশে চোখ বোলাই আর কোনো আলমারি রয়েছে কি-না যেখানে থাকতে পারে আরও কিছু চামড়া! না, আর পাওয়া গেল না কোনো আলমারি। বের হওয়া দুটো বাঘের চামড়ার একটিতে লাল কাপড় দিয়ে সেলাই করা। দেখলেই বোঝা যায় এটি রাজপ্রাসাদের দেয়ালে অনেক মানানসই।
বন অফিসের দুটি বাদে ২২টি বাঘের চামড়ার দাম কমপক্ষে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে না দেখা ৩টি চামড়ার দাম ৬০ লাখ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে এ ২৫টি বাঘের চামড়ার দাম কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগে ১৪টি চামড়া দেখতে না পাওয়ার হিসাব বাদ থেকে গেল। বাঘের চামড়াগুলো একদিনে নয়, খোদ বন অফিস থেকেই বছরে বছরে হাতবদল হয়ে উধাও হয়েছে দেশ ও দেশের বাইরে। বর্তমান অনেক বনকর্তা যে এ বিষয়ে জড়িত নন তা বলাই যায়। তারপরও এসব চামড়ার হিসাব আগের বনকর্তাদের কাছ থেকে বুঝিয়ে না নেওয়ার কারণে তারাও একই চক্রে শামিল হবেন_ এটিও স্বাভাবিক।
No comments