ঢাকি-ঢুলিদের ডাক পড়ে না আর
দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক শুরু হয়েছে গতকাল রবিবার থেকে। চারদিকে এখন পূজার আমেজ। সবার মনেই উৎসবের আনন্দ। কিন্তু আনন্দ নেই উত্তরের ঢাকি সমপ্রদায়ের মনে। সমাজ-সংস্কৃতির পরিবর্তনসহ নানা কারণে এখন হিন্দু সমপ্রদায়ের মধ্যে এমন আনুষ্ঠানিক উৎসব-আয়োজন কমে গেছে। ফলে ঢাকি-ঢুলিদের আর তেমন ডাক পড়ে না। অভাব-অনটনে এখন তাঁদের বাড়িতে নিত্যবিসর্জনের বিষাদ। এ কারণে বংশপরম্পরায় চলে আসা এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
'পিঠে আর পেটে পড়ে অনবরত ঢাকের বাড়ি'_এ কথা এখন এ অঞ্চলের ঢুলিদের মধ্যে বেশ প্রচলিত। দুর্গাপূজাকে উপলক্ষ করে সারা বছর অবহেলায় পড়ে থাকা ছেঁড়া-ফাটা ঢোল ও ঢাকের চামড়ার ছাউনি, দল (টানা) বেঁধে চামড়া টান করা ও তা রঙিন করে সাজানো_এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থটুকুরও জোগান নেই তাঁদের। পূজা কমিটির কাছে আগাম কিংবা কোনো সুদখোর ব্যক্তির কাছে ধরনা দিয়ে কোনোভাবে চলছে এর আয়োজন। তারা বেঁচে আছেন অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যে।
দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার একটি কুড়িগ্রামের উলিপুরের ধরণিবাড়ী। এ গ্রামেরই বাসিন্দা ছিলেন নিতাই ঢাকি। ঢাকে ময়ূরপুচ্ছ লাগিয়ে আর রং-বেরঙের পোশাক পরে উৎসবের আনন্দ বাড়িয়ে দিত তাঁর ঢাক। সেই নিতাই ঢাকির মৃত্যু হয়েছে অনাহারে আর বিনাচিকিৎসায়। প্রতিবেশীরা জানায়, দুই বছর আগের কথা। দুর্গাপূজা আর কয়েক দিন পরেই। বৃদ্ধ বয়সে নিতাইয়ের শরীর তখন বেশ দুর্বল। দুধ খেয়ে শরীর সবল করবে ঢাকের ওজন বইতে_এ জন্য আগাম নিতে তিনি হাত পাতেন এক পূজা কমিটির কাছে। প্রতিশ্রুতি দেন, ঢাক বাজিয়ে টাকা শোধ করবেন। কিন্তু তিনি আগাম কোনো টাকা পাননি। এরপর পাঁচ দিন পূজার মণ্ডপে রাত কাটিয়ে আর ঢাক বাজিয়ে যখন বাড়ি ফেরেন, তখন তাঁর গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। রাতভর প্রলাপ বকে অবশেষে মৃত্যুতে মুক্তি মিলল তাঁর। এর পরের কাহিনী আরো শোকাবহ। স্বামীহারা স্ত্রী পড়লেন আরো নিদারুণ কষ্টে। অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে থেকে তিনি একসময় স্বামীর প্রিয় ঢাকটি পানির দরে বিক্রি করে দিলেন। এর কয়েক দিন পর তিনি কোথায় হারিয়ে গেলেন, সে খোঁজ আজও কেউ জানে না।
আরেক ঢাকি ক্ষুদু দাস। তিনি মারা গেলে তাঁর ঢাক কাঁধে তুলে নেন ছেলে কমল। কিন্তু তখন আর ঢাক চলে না। এলাকায় পূজা-পার্বণ কম। পিতৃপুরুষের পেশা ছেড়ে পানের দোকান দেন তিনি। সেটিও একদিন বন্ধ হয়ে যায়। বেকার কমল দেশ ছাড়েন একদিন। তাঁর ভাই অমল আর ঢাক কাঁধে নেননি। তিনি এখন মানুষের বাড়িতে ফুট-ফরমাশ খাটেন, রান্নার কাজ করেন।
রংপুরের মমিনপুরের বাসিন্দা নরেশ, দীপেন ও সুনীল। ঢাক বাজিয়ে কেমন চলে সংসার_এ প্রশ্নের জবাবে তাঁরা বলেন, বংশপরম্পরায় ঢাক বাজিয়ে চলত তাঁদের সুখের সংসার। তখন রংপুরের নাম ছিল রঙ্গপুর। এখন আর রঙ্গ নেই, সেই রসও নেই। বছরে তিনবার মাত্র ডাক আসে তাঁদের_দুর্গা, কালী আর সরস্বতী পূজায়। তাই এখন আর জীবন চলে না। ক্ষেতমজুরি দিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছেন তাঁরা।
চিলমারীর রানীগঞ্জের গিরীশ ঢাকির বাজিয়েদের একটি দল ছিল। একসময় বিয়েবাড়ি, পূজা-পার্বণে তাঁরা খুব ডাক পেতেন। আর ডাক আসে না বলে এখন দলটি ভেঙে গেছে। দলের একজন সদস্য গৌরাঙ্গ জানান, অভাবের তাড়নায় পড়ে অন্যরা দেশ ছেড়েছেন।
দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার একটি কুড়িগ্রামের উলিপুরের ধরণিবাড়ী। এ গ্রামেরই বাসিন্দা ছিলেন নিতাই ঢাকি। ঢাকে ময়ূরপুচ্ছ লাগিয়ে আর রং-বেরঙের পোশাক পরে উৎসবের আনন্দ বাড়িয়ে দিত তাঁর ঢাক। সেই নিতাই ঢাকির মৃত্যু হয়েছে অনাহারে আর বিনাচিকিৎসায়। প্রতিবেশীরা জানায়, দুই বছর আগের কথা। দুর্গাপূজা আর কয়েক দিন পরেই। বৃদ্ধ বয়সে নিতাইয়ের শরীর তখন বেশ দুর্বল। দুধ খেয়ে শরীর সবল করবে ঢাকের ওজন বইতে_এ জন্য আগাম নিতে তিনি হাত পাতেন এক পূজা কমিটির কাছে। প্রতিশ্রুতি দেন, ঢাক বাজিয়ে টাকা শোধ করবেন। কিন্তু তিনি আগাম কোনো টাকা পাননি। এরপর পাঁচ দিন পূজার মণ্ডপে রাত কাটিয়ে আর ঢাক বাজিয়ে যখন বাড়ি ফেরেন, তখন তাঁর গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। রাতভর প্রলাপ বকে অবশেষে মৃত্যুতে মুক্তি মিলল তাঁর। এর পরের কাহিনী আরো শোকাবহ। স্বামীহারা স্ত্রী পড়লেন আরো নিদারুণ কষ্টে। অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে থেকে তিনি একসময় স্বামীর প্রিয় ঢাকটি পানির দরে বিক্রি করে দিলেন। এর কয়েক দিন পর তিনি কোথায় হারিয়ে গেলেন, সে খোঁজ আজও কেউ জানে না।
আরেক ঢাকি ক্ষুদু দাস। তিনি মারা গেলে তাঁর ঢাক কাঁধে তুলে নেন ছেলে কমল। কিন্তু তখন আর ঢাক চলে না। এলাকায় পূজা-পার্বণ কম। পিতৃপুরুষের পেশা ছেড়ে পানের দোকান দেন তিনি। সেটিও একদিন বন্ধ হয়ে যায়। বেকার কমল দেশ ছাড়েন একদিন। তাঁর ভাই অমল আর ঢাক কাঁধে নেননি। তিনি এখন মানুষের বাড়িতে ফুট-ফরমাশ খাটেন, রান্নার কাজ করেন।
রংপুরের মমিনপুরের বাসিন্দা নরেশ, দীপেন ও সুনীল। ঢাক বাজিয়ে কেমন চলে সংসার_এ প্রশ্নের জবাবে তাঁরা বলেন, বংশপরম্পরায় ঢাক বাজিয়ে চলত তাঁদের সুখের সংসার। তখন রংপুরের নাম ছিল রঙ্গপুর। এখন আর রঙ্গ নেই, সেই রসও নেই। বছরে তিনবার মাত্র ডাক আসে তাঁদের_দুর্গা, কালী আর সরস্বতী পূজায়। তাই এখন আর জীবন চলে না। ক্ষেতমজুরি দিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছেন তাঁরা।
চিলমারীর রানীগঞ্জের গিরীশ ঢাকির বাজিয়েদের একটি দল ছিল। একসময় বিয়েবাড়ি, পূজা-পার্বণে তাঁরা খুব ডাক পেতেন। আর ডাক আসে না বলে এখন দলটি ভেঙে গেছে। দলের একজন সদস্য গৌরাঙ্গ জানান, অভাবের তাড়নায় পড়ে অন্যরা দেশ ছেড়েছেন।
No comments