বিদ্যুৎ ভোগান্তি চরমেঃ সরকারি কেন্দ্রে উৎপাদন ধস by এম আবদুল্লাহ
রাজধানীসহ সারাদেশে বিদ্যুত্ সঙ্কট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। রাজধানীর অভিজাত এলাকায়ও দৈনিক ৪-৫ দফা লোডশেডিং হচ্ছে। ঢাকার অন্যান্য এলাকাসহ সারাদেশে রাত-দিন প্রায় প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং তো আছেই, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিতরণ ত্রুটিজনিত বিভ্রাট। তীব্র গরমে বিদ্যুতের এ ভেল্কিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গতকালও কমপক্ষে ১ হাজার ৭শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ ঘাটতি নিয়ে লোডশেডিং করা হয়েছে যথেচ্ছভাবে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী, জ্বালানি উপদেষ্টা, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী দফায় দফায় আশ্বস্ত করেছিলেন এক বছরের মাথায় লোডশেডিং থাকবে না। ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন করে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল লোডশেডিংমুক্ত বাংলাদেশের। কুইক রেন্টালের নামে টেন্ডারবিহীন ব্যয়বহুল বিদ্যুেকন্দ্র বসিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েও সরকারের অদূরদর্শী ও ভ্রান্ত পরিকল্পনার কারণে বিদ্যুত্ ভোগান্তি থেকে গ্রাহকের মুক্তি মিলছে না।
বিদ্যুতের নতুন সংযোগ বন্ধ রেখে চাহিদা বৃদ্ধির ধারা রোধ করেও সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুেকন্দ্রগুলোতে উত্পাদনধস পুরো খাততে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। প্রায় ১৮শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতার সরকারি বিদ্যুেকন্দ্র অচল হয়ে আছে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য। গ্যাস সঙ্কটে সরকারি খাতে ৫শ’ মেগাওয়াট উত্পাদন কম হচ্ছে। পিডিবির উত্পাদন কেন্দ্রগুলো থেকে ক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুত্ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বিদ্যুতের উত্পাদন ও সরবরাহ ঝুঁকিপূর্ণ বেসরকারি খাতনির্ভর হয়ে পড়ছে।
রাজধানীর পল্টন, লালবাগ, সেগুনবাগিচা, রামপুরা, খিলগাঁও, কমলাপুর, সূত্রাপুর, বংশাল, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, পার্শ্ববর্তী টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ প্রভৃতি এলাকা থেকে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানিয়েছেন, মাঝে ক’দিনের জন্য লোডশেডিং কিছুটা সহনীয় থাকলেও এখন আবার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। একবার বিদ্যুত্ চলে গেলে দু’ঘণ্টায়ও আর দেখা মেলে না। সন্ধ্যার পর বিদ্যুত্ থাকে খুবই কম সময়ের জন্য। রাত ১১টার পর যখন শিল্প-কলকারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সব বন্ধ থাকে, তখন বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কমে যায়। কিন্তু গভীর রাত থেকে শুরু করে ভোররাতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুত্ থাকছে না। বিদ্যুত্ বিতরণ কোম্পানির স্থানীয় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে সন্তোষজনক কোনো উত্তরও পাওয়া যাচ্ছে না। নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে কর্তব্যরতরা সাফ জবাব দিচ্ছেন—গ্রিড থেকে যা পাওয়া যাচ্ছে, তা-ই পালাক্রমে সরবরাহ করতে হচ্ছে। ভোররাতে যখন বিদ্যুতের চাহিদা অর্ধেকের কিছু বেশি, তখন কেন লোডশেডিং হবে—এ প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। বর্তমান সরকার হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ যোগ করার যে দাবি করছে, তা গেল কোথায়—তাও সুস্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে না।
বিদ্যুত্ সঙ্কটে শিল্প-কারখানায় উত্পাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে জেনারেটর দিয়ে উত্পাদন ধরে রাখতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। সিএনজি স্টেশনগুলোতে বিদ্যুতের কারণে অচলাবস্থা দেখা দিচ্ছে। ঘরে ঘরে শিক্ষার্থীরা লোডশেডিংয়ের নির্মম শিকার। বিত্তবানরা আইপিএস ও জেনারেটর দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলেও মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত পরিবারের ত্রাহি অবস্থা। এমনিতেই জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে; তার ওপর জেনারেটরে ডিজেল ব্যবহারের সামর্থ্য হারিয়েছেন অনেকেই। এছাড়াও দীর্ঘ সময় বিদ্যুত্ না থাকার কারণে আইপিএসও ঠিকমত চার্জ হচ্ছে না। জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে যারা একটি ফ্ল্যাট কিনে কোনোরকমে বসবাস করছেন, তাদেরও বাড়তি ব্যয় বহনে হিমশিম খেতে হচ্ছে। লোডশেডিং বাড়লে জেনারেটরে তেল খরচ বেড়ে যায়। তার ওপর তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সঙ্গতি রাখতে পারছেন না তারা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বর্তমান সরকার নতুন বিদ্যুত্ সংযোগ বন্ধ রেখেছে। ফলে নতুন নির্মিত বহু বাড়িঘরে বসবাস করতে পারছেন না নির্মাতা ও মালিকরা। সংযোগ বন্ধ রাখায় গত তিন বছরে বিদ্যুতের চাহিদা তেমন একটা বাড়েনি। তারপরও কেন এত ব্যাপক লোডশেডিং? অনুসন্ধানে যে তথ্য মিলেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ব্যয়বহুল কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র থেকে উচ্চদামে কিনে সরকার যেটুকু বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে যোগ করেছে, তার চেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে সরকারি বিদ্যুেকন্দ্রের উত্পাদন। সরকারি কেন্দ্রগুলোর সময়োপযোগী মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থতার কারণে অনেক কেন্দ্র ধুঁকছে। যখন-তখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বড় বড় বিদ্যুেকন্দ্র। দলীয় লোকজনকে বিনা টেন্ডারে নতুন বিদ্যুেকন্দ্রের কাজ দেয়ার পটভূমি তৈরির জন্যই সরকারি কেন্দ্রগুলো একে একে অচল করে দেয়া হচ্ছে কিনা—সে প্রশ্নও তুলছেন বিদ্যুত্ খাত সংশ্লিষ্ট অনেকে।
বিদু্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাবে গতকাল সান্ধ্য পিকআওয়ারে দেশে বিদ্যুত্ উত্পাদন হয়েছে ৪ হাজার ৭শ’ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বিতরণ পর্যায়ে (সাব-স্টেশনে) গেছে ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট। প্রধানমন্ত্রী ও বিদ্যুত্ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সময়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে বিদ্যুতের চাহিদা এখন কমপক্ষে ৬ হাজার মেগাওয়াট। এ হিসেবে গতকাল সান্ধ্য পিকআওয়ারে দেশে বিদ্যুত্ ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৭শ’ মেগাওয়াট। প্রকৃত ঘাটতি আরও বেশি বলেও অনেকে মনে করেন। বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে, তখনও ঘাটতির পরিমাণ এর বেশি ছিল না।
পিডিবি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, সরাসরি পিডিবির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত সরকারি বিদ্যুেকন্দ্রগুলোর বর্তমান উত্পাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৮৭৩ মেগাওয়াটের বিপরীতে এখন উত্পাদন হচ্ছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ১১৯৫ মেগাওয়াট। পিডিবির অধীনে এসবিইউ প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত ৩১৭ মেগাওয়াট উত্পাদন ক্ষমতার বিপরীতে এখন পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ২৫০ থেকে ২৭০ মেগাওয়াট। বিদ্যুত্ উত্পাদনে দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে পিডিবির সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশের (ইজিসিবি) পরিচালিত ২৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুেকন্দ্রে পিকআওয়ারে উত্পাদন হচ্ছে মাত্র ৬২ মেগাওয়াট। পিডিবির আরেক সহযোগী কোম্পানি আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের ৭৫৯ মেগাওয়াটের বিদ্যুেকন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ ৬২১ মেগাওয়াট উত্পাদন হলেও প্রায়ই এ কেন্দ্রে উত্পাদন বিপর্যয় ঘটে বিদ্যুত্ সঙ্কটকে মারাত্মক করে তুলছে। বেসরকারি খাতের ১২৭১ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র থেকে এখন পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ মেগাওয়াট। সঙ্কট মোকাবিলায় বিনা টেন্ডারে দলীয় লোকজনের মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে স্থাপিত কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্রও ক্ষমতার সমপরিমাণ বিদ্যুত্ উত্পাদন করতে পারছে না। তিন বছর মেয়াদি কুইক রেন্টালে ৭৭৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিপরীতে ৫শ’ থেকে ৫৫০ মেগাওয়াট উত্পাদন হচ্ছে।
বিদ্যুতের বর্তমান সঙ্কট পরিস্থিতি সম্পর্কে বিদ্যুত্ বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদ্যুত্ সঙ্কট নিরসনে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি মালিকানার পুরনো বিদ্যুেকন্দ্রগুলো কারিগরি কারণে হঠাত্ বন্ধ হয়ে গেলে সঙ্কট বেড়ে যায়। তা না হলে লোডশেডিং আগের চেয়ে অনেক কমেছে।
পিডিবি চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরকারি কেন্দ্রগুলো সচল রাখার জন্য পিডিবির পক্ষ থেকে সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারপরও সমস্যা হচ্ছে। দেশ লোডশেডিংমুক্ত হতে আরও সময় লাগবে বলে তিনি মনে করেন।
বিদ্যুতের নতুন সংযোগ বন্ধ রেখে চাহিদা বৃদ্ধির ধারা রোধ করেও সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুেকন্দ্রগুলোতে উত্পাদনধস পুরো খাততে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। প্রায় ১৮শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতার সরকারি বিদ্যুেকন্দ্র অচল হয়ে আছে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য। গ্যাস সঙ্কটে সরকারি খাতে ৫শ’ মেগাওয়াট উত্পাদন কম হচ্ছে। পিডিবির উত্পাদন কেন্দ্রগুলো থেকে ক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুত্ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বিদ্যুতের উত্পাদন ও সরবরাহ ঝুঁকিপূর্ণ বেসরকারি খাতনির্ভর হয়ে পড়ছে।
রাজধানীর পল্টন, লালবাগ, সেগুনবাগিচা, রামপুরা, খিলগাঁও, কমলাপুর, সূত্রাপুর, বংশাল, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, পার্শ্ববর্তী টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ প্রভৃতি এলাকা থেকে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানিয়েছেন, মাঝে ক’দিনের জন্য লোডশেডিং কিছুটা সহনীয় থাকলেও এখন আবার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। একবার বিদ্যুত্ চলে গেলে দু’ঘণ্টায়ও আর দেখা মেলে না। সন্ধ্যার পর বিদ্যুত্ থাকে খুবই কম সময়ের জন্য। রাত ১১টার পর যখন শিল্প-কলকারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সব বন্ধ থাকে, তখন বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কমে যায়। কিন্তু গভীর রাত থেকে শুরু করে ভোররাতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুত্ থাকছে না। বিদ্যুত্ বিতরণ কোম্পানির স্থানীয় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে সন্তোষজনক কোনো উত্তরও পাওয়া যাচ্ছে না। নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে কর্তব্যরতরা সাফ জবাব দিচ্ছেন—গ্রিড থেকে যা পাওয়া যাচ্ছে, তা-ই পালাক্রমে সরবরাহ করতে হচ্ছে। ভোররাতে যখন বিদ্যুতের চাহিদা অর্ধেকের কিছু বেশি, তখন কেন লোডশেডিং হবে—এ প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। বর্তমান সরকার হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ যোগ করার যে দাবি করছে, তা গেল কোথায়—তাও সুস্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে না।
বিদ্যুত্ সঙ্কটে শিল্প-কারখানায় উত্পাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে জেনারেটর দিয়ে উত্পাদন ধরে রাখতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। সিএনজি স্টেশনগুলোতে বিদ্যুতের কারণে অচলাবস্থা দেখা দিচ্ছে। ঘরে ঘরে শিক্ষার্থীরা লোডশেডিংয়ের নির্মম শিকার। বিত্তবানরা আইপিএস ও জেনারেটর দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলেও মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত পরিবারের ত্রাহি অবস্থা। এমনিতেই জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে; তার ওপর জেনারেটরে ডিজেল ব্যবহারের সামর্থ্য হারিয়েছেন অনেকেই। এছাড়াও দীর্ঘ সময় বিদ্যুত্ না থাকার কারণে আইপিএসও ঠিকমত চার্জ হচ্ছে না। জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে যারা একটি ফ্ল্যাট কিনে কোনোরকমে বসবাস করছেন, তাদেরও বাড়তি ব্যয় বহনে হিমশিম খেতে হচ্ছে। লোডশেডিং বাড়লে জেনারেটরে তেল খরচ বেড়ে যায়। তার ওপর তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সঙ্গতি রাখতে পারছেন না তারা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বর্তমান সরকার নতুন বিদ্যুত্ সংযোগ বন্ধ রেখেছে। ফলে নতুন নির্মিত বহু বাড়িঘরে বসবাস করতে পারছেন না নির্মাতা ও মালিকরা। সংযোগ বন্ধ রাখায় গত তিন বছরে বিদ্যুতের চাহিদা তেমন একটা বাড়েনি। তারপরও কেন এত ব্যাপক লোডশেডিং? অনুসন্ধানে যে তথ্য মিলেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ব্যয়বহুল কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র থেকে উচ্চদামে কিনে সরকার যেটুকু বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে যোগ করেছে, তার চেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে সরকারি বিদ্যুেকন্দ্রের উত্পাদন। সরকারি কেন্দ্রগুলোর সময়োপযোগী মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থতার কারণে অনেক কেন্দ্র ধুঁকছে। যখন-তখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বড় বড় বিদ্যুেকন্দ্র। দলীয় লোকজনকে বিনা টেন্ডারে নতুন বিদ্যুেকন্দ্রের কাজ দেয়ার পটভূমি তৈরির জন্যই সরকারি কেন্দ্রগুলো একে একে অচল করে দেয়া হচ্ছে কিনা—সে প্রশ্নও তুলছেন বিদ্যুত্ খাত সংশ্লিষ্ট অনেকে।
বিদু্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাবে গতকাল সান্ধ্য পিকআওয়ারে দেশে বিদ্যুত্ উত্পাদন হয়েছে ৪ হাজার ৭শ’ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বিতরণ পর্যায়ে (সাব-স্টেশনে) গেছে ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট। প্রধানমন্ত্রী ও বিদ্যুত্ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সময়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে বিদ্যুতের চাহিদা এখন কমপক্ষে ৬ হাজার মেগাওয়াট। এ হিসেবে গতকাল সান্ধ্য পিকআওয়ারে দেশে বিদ্যুত্ ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৭শ’ মেগাওয়াট। প্রকৃত ঘাটতি আরও বেশি বলেও অনেকে মনে করেন। বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে, তখনও ঘাটতির পরিমাণ এর বেশি ছিল না।
পিডিবি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, সরাসরি পিডিবির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত সরকারি বিদ্যুেকন্দ্রগুলোর বর্তমান উত্পাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৮৭৩ মেগাওয়াটের বিপরীতে এখন উত্পাদন হচ্ছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ১১৯৫ মেগাওয়াট। পিডিবির অধীনে এসবিইউ প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত ৩১৭ মেগাওয়াট উত্পাদন ক্ষমতার বিপরীতে এখন পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ২৫০ থেকে ২৭০ মেগাওয়াট। বিদ্যুত্ উত্পাদনে দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে পিডিবির সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশের (ইজিসিবি) পরিচালিত ২৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুেকন্দ্রে পিকআওয়ারে উত্পাদন হচ্ছে মাত্র ৬২ মেগাওয়াট। পিডিবির আরেক সহযোগী কোম্পানি আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের ৭৫৯ মেগাওয়াটের বিদ্যুেকন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ ৬২১ মেগাওয়াট উত্পাদন হলেও প্রায়ই এ কেন্দ্রে উত্পাদন বিপর্যয় ঘটে বিদ্যুত্ সঙ্কটকে মারাত্মক করে তুলছে। বেসরকারি খাতের ১২৭১ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র থেকে এখন পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ মেগাওয়াট। সঙ্কট মোকাবিলায় বিনা টেন্ডারে দলীয় লোকজনের মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে স্থাপিত কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্রও ক্ষমতার সমপরিমাণ বিদ্যুত্ উত্পাদন করতে পারছে না। তিন বছর মেয়াদি কুইক রেন্টালে ৭৭৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিপরীতে ৫শ’ থেকে ৫৫০ মেগাওয়াট উত্পাদন হচ্ছে।
বিদ্যুতের বর্তমান সঙ্কট পরিস্থিতি সম্পর্কে বিদ্যুত্ বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদ্যুত্ সঙ্কট নিরসনে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি মালিকানার পুরনো বিদ্যুেকন্দ্রগুলো কারিগরি কারণে হঠাত্ বন্ধ হয়ে গেলে সঙ্কট বেড়ে যায়। তা না হলে লোডশেডিং আগের চেয়ে অনেক কমেছে।
পিডিবি চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরকারি কেন্দ্রগুলো সচল রাখার জন্য পিডিবির পক্ষ থেকে সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারপরও সমস্যা হচ্ছে। দেশ লোডশেডিংমুক্ত হতে আরও সময় লাগবে বলে তিনি মনে করেন।
No comments