রিফাতের পাশাপাশি নয়ন বন্ডের সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক ছিল মিন্নির -আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী
বরগুনার
আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া রিফাতের
স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী
বলেছেন, মিন্নি ছিলেন রিফাত শরীফ হত্যার মাস্টারমাইন্ড। স্বামী রিফাত
শরীফের পাশাপশি নয়ন বন্ডের সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক করতেন মিন্নি।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ এসব কথা বলেন।
আদালতে মিন্নির পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির শুনানি করেন।
এ সময় মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ও রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফও উপস্থিত ছিলেন। মিন্নির আবেদনের পক্ষে অর্ধশতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মামলার শুনানি দেখতে অনেক আইনজীবী ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আদালতের কক্ষে জায়গা সংকটের কারণে নিরাপত্তাকর্মীরা পরিচয় জেনে আদালতে প্রবেশ করান।
শুনানিকালে আদালত কক্ষের বাঁ পাশে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর দোয়া-দুরুদ পড়তে থাকেন। অপরদিকে রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ আদালত কক্ষের ডান পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিকেল ৩টায় জামিনের শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরুতে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না আদালতে বলেন, মাই লর্ড, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি এ মামলার প্রধান সাক্ষী। স্বামী হত্যায় তাঁকে বানানো হলো আসামি। ১৯ বছরের একজন মেয়ে মিন্নি। পুলিশ তাঁকে নির্যাতন করায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নারী ও অসুস্থ বিবেচনায় জামিন চাই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী নারী, শিশু ও বৃদ্ধা হলে জামিন পাওয়ার বিধান রয়েছে।
জেড আই খান পান্না আদালতে আরো বলেন, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি নিজের জীবনবাজি রেখেই ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁর স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি যদি জড়িত হতেন তাহলে এত জীবনবাজি রেখে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করতেন না। তিনি তো ঘটনাস্থলেই যেতেন না।
পুলিশ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নিজের কাস্টডিতে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখাল। এরপর তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশনা মানা হয়নি। জেলগেট থাকতে তাঁকে পুলিশ লাইনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। একজন ১৯ বছরের তরুণীকে পুলিশ লাইনে নিয়ে পুরুষ পুলিশ দিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং নির্যাতন করা হয়। পুলিশের এ ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
জেড আই খান পান্না আরো বলেন, বিচারিক আদালতে মিন্নির পক্ষে প্রথম দিন কোনো আইনজীবী ছিলেন না। একজন আইনজীবী নিয়োগ দিলেও তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রচারিত হয়।
এ সময় জেড আই খান পান্না কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ আদালতে উপস্থাপন করেন।
জেড আই খান পান্না বলেন, একটি বিশেষ মহলকে বাঁচানোর জন্যই পুলিশ প্রশাসন উঠে পড়ে লেগেছে। মিন্নি যদি জামিন পান তাহলে তিনি পালিয়ে যাবেন না। কিন্তু এ মামলার প্রধান সাক্ষীকে সরিয়ে দিলে মামলার মূল আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে। মিন্নিকে আসামি রাখায় মামলার এখন ১২টা বাজানো হয়েছে।
মাই লর্ড, এ মামলার মূল আসামি ছিল চারজন। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কোনো তৎপরতা ছিল না। অথচ প্রধান সাক্ষীকে নিয়ে পুলিশ নির্যাতন করে মামলার নতুন গল্প সাজিয়েছে। আমরা নারী ও অসুস্থ বিবেচনায় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন চাই। এ বিষয়ে সারা দেশের মানুষের সহানুভূতি রয়েছে।
এ সময় মিন্নির পক্ষে অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন শুনানিতে বলেন, দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে ঘটনা ঘটল। দেশবাসী সবার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে। অথচ কিছু লোককে রক্ষা করার জন্য মিন্নিকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার ১৮ দিন পর সাক্ষীকে আসামিকে করা হলো। আমরা নারী ও অসুস্থ বিবেচনায় তাঁর জামিন চাই।
এরপর আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন।
এ সময় আদালত জানতে চান, আপনি কী বক্তব্য রাখবেন? কী আছে?
জবাবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির শুনানিতে বলেন, ভিডিও আছে, আনেক কিছুই আছে। আমি আপনাকে জানাচ্ছি। মিন্নির সঙ্গে নয়ন বন্ডের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। শুধু তাই নয়, রিফাতের আগে মিন্নির সঙ্গে নয়ন বন্ডের বিয়ে হয়। সেই বিয়ে গোপন করেই মিন্নি রিফাতের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। নয়ন বন্ড যখন জেলে থাকে তখন মিন্নি তথ্য গোপন করে রিফাত শরীফকে বিয়ে করেন। সেই কাবিননামা আমাদের কাছে রয়েছে। শুধুই তাই নয়, নয়ন বন্ড জেল থেকে বের হয়ে আসার পর এক সঙ্গে দুটি সম্পর্ক বজায় রাখেন মিন্নি। স্বামীর পাশাপাশি নয়ন বন্ডের সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক করতেন মিন্নি। কলেজে যাওয়ার নাম করে মিন্নি নয়ন বন্ডের বাসায় গিয়ে মেলামেশা করতেন। এ বিষয়গুলো মিন্নি নিজেই স্বীকার করেছেন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে। রিমান্ড আবেদনে এসব বিষয়ের তথ্য পাওয়া গেছে।
দুজনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখায় এক সময় নয়ন বন্ড ও রিফাতের মধ্যে ঝামেলা তৈরি হয়। পরে মিন্নি ও নয়ন বন্ড মিলে রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যার উদ্দেশ্যে রিফাতকে কলেজে নিয়ে যান মিন্নি। এরপর তাঁর সামনে রিফাতকে ধরে নিয়ে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে নয়ন বন্ড কোপাতে থাকলে মিন্নি বাঁচানোর অভিনয় করেন। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার আগে এবং পরে নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির কথোপকথনের রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে। সেই রেকর্ডে বলা আছে, তাঁরা রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। মিন্নি ও নয়ন বন্ডের ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে কথোপকথনের রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে।
মিন্নির পক্ষের আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতে বলেন, এগুলো তৈরি করা যায়। ভেরিফায়েড কি না, তা দেখতে হবে। এসব তো মামলার মেরিটের অংশ নয়। আপনি মূল জায়গায় আসেন।
তখন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আপনারা পত্রিকার সংবাদ উপস্থাপন করেছেন। তা কি মামলার নথি? প্লিজ, সাইড টক করবেন না। কোনো কিছু কি জোরপূর্বক আদায় করবেন?
এ সময় আদালত বলেন, কেউ কোনো কিছুই জোরপূর্বক আদায় করতে পারবে না। ফেসবুকের আইডি সঠিক কি না, তার তো সার্টিফায়েড লাগবে।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, মাই লর্ড, ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রিফাত শরীফকে যখন ধরে নিয়ে যায়, তখন মিন্নির আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়েছে। কেননা কলেজের গেটে তিনি একবার এসে আবার ভেতরে যান। আবার ফিরে আসেন। রিফাত শরীফকে যখন মারার জন্য ধরে নিয়ে যাচ্ছে তিনি তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। যখন কোপানো শুরু করল তখন বাঁচানোর নামে অভিনয় করেছেন। রিফাতকে কোপানোর সময় বাঁচাতে এলো অথচ মিন্নির গাঁয়ে একটু নখের আচড়ও লাগল না। তদন্ত কর্মকর্তার মামলার জব্দ তালিকায় দেখা যায়, মিন্নির জামাকাপড়ে কোনো প্রকার আচড় লাগেনি। ঘটনার আগে পরে বহুবার নয়ন বন্ড এবং মিন্নির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথোপকথনের রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে।
মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, মিন্নির আইনজীবীরা দাবি করেছেন, মিন্নি অসুস্থ। তিনি যদি অসুস্থ হন তাহলে জেল কোড অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে পারেন। মিন্নি অসুস্থ, কী ধরনের অসুস্থ এ বিষয়ে কোনো ডাক্তারি সার্টিফিকেট দিতে পারেননি। প্রকৃতপক্ষে মিন্নি ছিল রিফাত হত্যার মাস্টারমাইন্ড। মিন্নি নয়ন বন্ডকে বিয়ের তথ্য গোপন করে দুই মাস পর রিফাতকে বিয়ে করেন। বিচারিক আদালত মিন্নির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির স্বীকারোক্তি, নয়ন বন্ডের সঙ্গে বিয়ের কাবিননামা, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে জামিন নামঞ্জুর করেন।
এ সময় আসামপিক্ষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী নারীদের জন্য জামিনের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনার বিধান রয়েছে। এ যুক্তিতে তাঁকে জামিন দেওয়া যায়।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আইনে থাকলে বাধা নেই। সেক্ষেত্রে রিজনেবল যুক্তি থাকতে হবে।
এ সময় মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, পুলিশ কী বলল, সেটা দিয়ে তো এখানে বিচার হবে না। পাবলিক কী বলে সেটা এখানে বিবেচনায় নিতে হবে।
তখন আদালত বলেন, আপনাদের কাছে ১৬৪ ধারায় নেওয়া জবানবন্দি আছে?
জেড আই খান পান্না বলেন, অভিযোগ গঠনের আগে পুলিশ এটা আমাদের দিচ্ছে না। সেটা আমাদের কাছে নেই।
এ সময় আদালত বলেন, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি আইনের ৪৯৭ ধারা এখন আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থার আলোকে প্রযোজ্য হবে না। ১৬৪ ধারায় নেওয়া জবানবন্দি দিতে পারলে আমরা সেক্ষেত্রে জামিনের রুলের বিষয়ে বিবেচনা করব। আপনারা কি আদেশ নেবেন নাকি ফেরত নিবেন?
মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, আমরা ফেরত নেব।
এরপর আদালত মিন্নির জামিন আবেদন ফেরত দেন।
পরে জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মর্মাহত। এখন অন্য কোনো বেঞ্চে আবেদনটি নিয়ে যাব।
শুনানির পর মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, আমার মেয়ে পুলিশ প্রশাসনের হয়রানির শিকার। স্থানীয় একজন নেতার কারণে প্রশাসন মিন্নিকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। দেশবাসীর উদ্দেশে বলব, আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার। ন্যায়বিচার চাই।
এর আগে গত ৫ আগস্ট মিন্নির জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
গত ৩০ জুলাই মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
এর আগে ২২ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে প্রথমবার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। ওই দিনই শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এরপর গত ২৩ জুলাই ‘মিস কেস’ দাখিল করে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানের আদালতে ফের জামিনের আবেদন করেন মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের নথি তলব করে ৩০ জুলাই জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন ।
সেদিন তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে উভয়পক্ষের শুনানি চলতে থাকে। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির আদালতে উপস্থিত হলে এ হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়। সবার উপস্থিতিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ল্যাপটপে হত্যাকাণ্ডের আগের ও পরের ভিডিও ফুটেজ দেখান। এ ছাড়া মিন্নির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিসহ হত্যার আগে ও পরে প্রধান আসামি নয়ন বন্ডসহ অন্যান্য আসামির সঙ্গে মিন্নির কললিস্টের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। শুনানি শেষে মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় মিন্নি হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি। খুনিরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়। এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ পরের দিন সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন। মিন্নি ছিলেন সেই মামলার এক নম্বর সাক্ষী। পরে ১৬ জুলাই রাতে এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ এসব কথা বলেন।
আদালতে মিন্নির পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির শুনানি করেন।
এ সময় মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ও রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফও উপস্থিত ছিলেন। মিন্নির আবেদনের পক্ষে অর্ধশতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মামলার শুনানি দেখতে অনেক আইনজীবী ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আদালতের কক্ষে জায়গা সংকটের কারণে নিরাপত্তাকর্মীরা পরিচয় জেনে আদালতে প্রবেশ করান।
শুনানিকালে আদালত কক্ষের বাঁ পাশে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর দোয়া-দুরুদ পড়তে থাকেন। অপরদিকে রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ আদালত কক্ষের ডান পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিকেল ৩টায় জামিনের শুনানি শুরু হয়। শুনানির শুরুতে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না আদালতে বলেন, মাই লর্ড, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি এ মামলার প্রধান সাক্ষী। স্বামী হত্যায় তাঁকে বানানো হলো আসামি। ১৯ বছরের একজন মেয়ে মিন্নি। পুলিশ তাঁকে নির্যাতন করায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নারী ও অসুস্থ বিবেচনায় জামিন চাই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী নারী, শিশু ও বৃদ্ধা হলে জামিন পাওয়ার বিধান রয়েছে।
জেড আই খান পান্না আদালতে আরো বলেন, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি নিজের জীবনবাজি রেখেই ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁর স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি যদি জড়িত হতেন তাহলে এত জীবনবাজি রেখে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করতেন না। তিনি তো ঘটনাস্থলেই যেতেন না।
পুলিশ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নিজের কাস্টডিতে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখাল। এরপর তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশনা মানা হয়নি। জেলগেট থাকতে তাঁকে পুলিশ লাইনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। একজন ১৯ বছরের তরুণীকে পুলিশ লাইনে নিয়ে পুরুষ পুলিশ দিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং নির্যাতন করা হয়। পুলিশের এ ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
জেড আই খান পান্না আরো বলেন, বিচারিক আদালতে মিন্নির পক্ষে প্রথম দিন কোনো আইনজীবী ছিলেন না। একজন আইনজীবী নিয়োগ দিলেও তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রচারিত হয়।
এ সময় জেড আই খান পান্না কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ আদালতে উপস্থাপন করেন।
জেড আই খান পান্না বলেন, একটি বিশেষ মহলকে বাঁচানোর জন্যই পুলিশ প্রশাসন উঠে পড়ে লেগেছে। মিন্নি যদি জামিন পান তাহলে তিনি পালিয়ে যাবেন না। কিন্তু এ মামলার প্রধান সাক্ষীকে সরিয়ে দিলে মামলার মূল আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে। মিন্নিকে আসামি রাখায় মামলার এখন ১২টা বাজানো হয়েছে।
মাই লর্ড, এ মামলার মূল আসামি ছিল চারজন। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কোনো তৎপরতা ছিল না। অথচ প্রধান সাক্ষীকে নিয়ে পুলিশ নির্যাতন করে মামলার নতুন গল্প সাজিয়েছে। আমরা নারী ও অসুস্থ বিবেচনায় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন চাই। এ বিষয়ে সারা দেশের মানুষের সহানুভূতি রয়েছে।
এ সময় মিন্নির পক্ষে অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন শুনানিতে বলেন, দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে ঘটনা ঘটল। দেশবাসী সবার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে। অথচ কিছু লোককে রক্ষা করার জন্য মিন্নিকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার ১৮ দিন পর সাক্ষীকে আসামিকে করা হলো। আমরা নারী ও অসুস্থ বিবেচনায় তাঁর জামিন চাই।
এরপর আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন।
এ সময় আদালত জানতে চান, আপনি কী বক্তব্য রাখবেন? কী আছে?
জবাবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির শুনানিতে বলেন, ভিডিও আছে, আনেক কিছুই আছে। আমি আপনাকে জানাচ্ছি। মিন্নির সঙ্গে নয়ন বন্ডের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। শুধু তাই নয়, রিফাতের আগে মিন্নির সঙ্গে নয়ন বন্ডের বিয়ে হয়। সেই বিয়ে গোপন করেই মিন্নি রিফাতের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। নয়ন বন্ড যখন জেলে থাকে তখন মিন্নি তথ্য গোপন করে রিফাত শরীফকে বিয়ে করেন। সেই কাবিননামা আমাদের কাছে রয়েছে। শুধুই তাই নয়, নয়ন বন্ড জেল থেকে বের হয়ে আসার পর এক সঙ্গে দুটি সম্পর্ক বজায় রাখেন মিন্নি। স্বামীর পাশাপাশি নয়ন বন্ডের সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক করতেন মিন্নি। কলেজে যাওয়ার নাম করে মিন্নি নয়ন বন্ডের বাসায় গিয়ে মেলামেশা করতেন। এ বিষয়গুলো মিন্নি নিজেই স্বীকার করেছেন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে। রিমান্ড আবেদনে এসব বিষয়ের তথ্য পাওয়া গেছে।
দুজনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখায় এক সময় নয়ন বন্ড ও রিফাতের মধ্যে ঝামেলা তৈরি হয়। পরে মিন্নি ও নয়ন বন্ড মিলে রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যার উদ্দেশ্যে রিফাতকে কলেজে নিয়ে যান মিন্নি। এরপর তাঁর সামনে রিফাতকে ধরে নিয়ে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে নয়ন বন্ড কোপাতে থাকলে মিন্নি বাঁচানোর অভিনয় করেন। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার আগে এবং পরে নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির কথোপকথনের রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে। সেই রেকর্ডে বলা আছে, তাঁরা রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। মিন্নি ও নয়ন বন্ডের ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে কথোপকথনের রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে।
মিন্নির পক্ষের আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতে বলেন, এগুলো তৈরি করা যায়। ভেরিফায়েড কি না, তা দেখতে হবে। এসব তো মামলার মেরিটের অংশ নয়। আপনি মূল জায়গায় আসেন।
তখন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আপনারা পত্রিকার সংবাদ উপস্থাপন করেছেন। তা কি মামলার নথি? প্লিজ, সাইড টক করবেন না। কোনো কিছু কি জোরপূর্বক আদায় করবেন?
এ সময় আদালত বলেন, কেউ কোনো কিছুই জোরপূর্বক আদায় করতে পারবে না। ফেসবুকের আইডি সঠিক কি না, তার তো সার্টিফায়েড লাগবে।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, মাই লর্ড, ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রিফাত শরীফকে যখন ধরে নিয়ে যায়, তখন মিন্নির আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়েছে। কেননা কলেজের গেটে তিনি একবার এসে আবার ভেতরে যান। আবার ফিরে আসেন। রিফাত শরীফকে যখন মারার জন্য ধরে নিয়ে যাচ্ছে তিনি তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। যখন কোপানো শুরু করল তখন বাঁচানোর নামে অভিনয় করেছেন। রিফাতকে কোপানোর সময় বাঁচাতে এলো অথচ মিন্নির গাঁয়ে একটু নখের আচড়ও লাগল না। তদন্ত কর্মকর্তার মামলার জব্দ তালিকায় দেখা যায়, মিন্নির জামাকাপড়ে কোনো প্রকার আচড় লাগেনি। ঘটনার আগে পরে বহুবার নয়ন বন্ড এবং মিন্নির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথোপকথনের রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে।
মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, মিন্নির আইনজীবীরা দাবি করেছেন, মিন্নি অসুস্থ। তিনি যদি অসুস্থ হন তাহলে জেল কোড অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে পারেন। মিন্নি অসুস্থ, কী ধরনের অসুস্থ এ বিষয়ে কোনো ডাক্তারি সার্টিফিকেট দিতে পারেননি। প্রকৃতপক্ষে মিন্নি ছিল রিফাত হত্যার মাস্টারমাইন্ড। মিন্নি নয়ন বন্ডকে বিয়ের তথ্য গোপন করে দুই মাস পর রিফাতকে বিয়ে করেন। বিচারিক আদালত মিন্নির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির স্বীকারোক্তি, নয়ন বন্ডের সঙ্গে বিয়ের কাবিননামা, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে জামিন নামঞ্জুর করেন।
এ সময় আসামপিক্ষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী নারীদের জন্য জামিনের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনার বিধান রয়েছে। এ যুক্তিতে তাঁকে জামিন দেওয়া যায়।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আইনে থাকলে বাধা নেই। সেক্ষেত্রে রিজনেবল যুক্তি থাকতে হবে।
এ সময় মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, পুলিশ কী বলল, সেটা দিয়ে তো এখানে বিচার হবে না। পাবলিক কী বলে সেটা এখানে বিবেচনায় নিতে হবে।
তখন আদালত বলেন, আপনাদের কাছে ১৬৪ ধারায় নেওয়া জবানবন্দি আছে?
জেড আই খান পান্না বলেন, অভিযোগ গঠনের আগে পুলিশ এটা আমাদের দিচ্ছে না। সেটা আমাদের কাছে নেই।
এ সময় আদালত বলেন, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি আইনের ৪৯৭ ধারা এখন আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থার আলোকে প্রযোজ্য হবে না। ১৬৪ ধারায় নেওয়া জবানবন্দি দিতে পারলে আমরা সেক্ষেত্রে জামিনের রুলের বিষয়ে বিবেচনা করব। আপনারা কি আদেশ নেবেন নাকি ফেরত নিবেন?
মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, আমরা ফেরত নেব।
এরপর আদালত মিন্নির জামিন আবেদন ফেরত দেন।
পরে জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মর্মাহত। এখন অন্য কোনো বেঞ্চে আবেদনটি নিয়ে যাব।
শুনানির পর মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, আমার মেয়ে পুলিশ প্রশাসনের হয়রানির শিকার। স্থানীয় একজন নেতার কারণে প্রশাসন মিন্নিকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। দেশবাসীর উদ্দেশে বলব, আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার। ন্যায়বিচার চাই।
এর আগে গত ৫ আগস্ট মিন্নির জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
গত ৩০ জুলাই মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
এর আগে ২২ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে প্রথমবার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। ওই দিনই শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এরপর গত ২৩ জুলাই ‘মিস কেস’ দাখিল করে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানের আদালতে ফের জামিনের আবেদন করেন মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের নথি তলব করে ৩০ জুলাই জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন ।
সেদিন তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে উভয়পক্ষের শুনানি চলতে থাকে। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির আদালতে উপস্থিত হলে এ হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়। সবার উপস্থিতিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ল্যাপটপে হত্যাকাণ্ডের আগের ও পরের ভিডিও ফুটেজ দেখান। এ ছাড়া মিন্নির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিসহ হত্যার আগে ও পরে প্রধান আসামি নয়ন বন্ডসহ অন্যান্য আসামির সঙ্গে মিন্নির কললিস্টের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। শুনানি শেষে মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় মিন্নি হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি। খুনিরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়। এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ পরের দিন সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন। মিন্নি ছিলেন সেই মামলার এক নম্বর সাক্ষী। পরে ১৬ জুলাই রাতে এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
No comments