জম্মু ও কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তানের সাথে ভারতের বিরোধ: নয়া দিল্লির লালিত সেক্যুলারবাদের পরাজয় by অজাই শুক্লা
৬ আগস্ট সোমবার
ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মির-সংক্রান্ত বিশেষ সাংবিধানিক সম্পর্কটি বাতিল
করে দিয়েছে। অথ্চ এই বিশেষ সম্পর্কের অধীনেই রাজা-শাসিত রাজ্যটি ভারতীয়
ইউনিয়নে যোগ দিয়েছিল।
১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তান-মদতপুষ্ট পশতু মিলিশিয়ারা রাজ্যটির গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরের কাছাকাছি চলে এলে মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের হিন্দু রাজা ভারতে অন্তর্ভুক্ত হতে একটি চুক্তিতে সই করেন। এর মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মিরের প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগব্যবস্থার ওপর নয়া দিল্লির পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। আর শ্রীনগরের ওপর দায়িত্ব থাকে নিজস্ব সংবিধান প্রণয়নসহ বাকি সবকিছুর।
জম্মু ও কাশ্মিরের সাথে বিশেষ সম্পর্কটি ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারায় উল্লেখ ছিল।
এই বিশেষ সম্পর্কটির বিরোধিতা করে আসছিল হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দীর্ঘ দিন ধরেই এই ধারাটি বিলুপ্ত করার কথা বলে আসছিল।
গত মে মাসে পার্লামেন্টে আরো বেশি শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন দলটি। তখনই ৩৭০ ধারার ব্যাপারে ফয়সালা হয়ে যায়।
কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারত সরকার যেভাবে কাজটি করেছে, তাতে অনেকে বিস্মিত হয়েছে। গত বছর বিজেপি কাশ্মিরের জোট সরকার থেকে বের হয়ে আসে। এর ফলে মেহবুবা মুফতির পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়, সেখানে কেন্দ্রীয় শাসন জারি হয়।
গত কয়েক দিনে সেখানে হাজার হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য পাঠানো হয়। আর আগে থেকেই সেখানে চার লাখের মতো সৈন্য ছিলই।
গত সপ্তাহে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অমরনাথ যাত্রা বাতিল করা হয়। এছাড়া হাজার হাজার পর্যটক ও তীর্থযাত্রীকে হঠাৎ করেই ফিরিয়ে আনা হয়।
এখন নয়া দিল্লি অনিবার্যভাবেই আইনগত, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। কেবল কাশ্মিরি গ্রুপগুলোর কাছ থেকেই নয়, ভারতের নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলোর কাছ থেকেও তারা বিরোধিতার মুখে পড়বে।
রোববার কাশ্মির উপত্যাকায় কারফিউ জারি করা হয়, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এমনকি ভারতপন্থী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত মুফতি ও অন্যান্য রাজনীতিবিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে করে অনুগত, জাতীয়তাবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সব কাশ্মিরি রাজনীতিবিদ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা মেরামত করা সম্ভব নয়।
কাশ্মিরিরা এখন দীর্ঘ অবরোধের আশঙ্কায় রয়েছে।
সোমবার সকালে যে ঘোষণাটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিয়েছেন, তাতে ৩৭০ ধারা বাতিলের ফলে জম্মু ও কাশ্মির রাজ্য বলে আর কিছু থাকল না। এই রাজ্যটি এখন থেকে কেন্দ্রীয় শাসনে থাকবে। তাছাড়া এট দুই অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মির থেকে লাদাখকে আলাদা করা হয়েছে। বিশাল লাদাখ অঞ্চলে জনবসতি খুবই কম। এখানকার বেশির ভাগ অধিবাসী বৌদ্ধ ও শিয়া মুসলিম। কাশ্মির গোলযোগপূর্ণ থাকলেও এই অঞ্চলটি মোটামুটিভাবে শান্তিপূর্ণ।
এসব পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কাশ্মিরিরা যে ফেটে পড়বে, তা অনিবার্য। কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ৩৭০ ধারা বাতিলকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি এটাকে আগ্রাসন হিসেবেও অভিহিত করেছেন।
রাজপথে বিক্ষোভ যদি হয়, আর তা ব্যাপক রূপ লাভ করে, তবে কাশ্মিরে এবারের গ্রীষ্মটিও হবে রক্তাক্ত। এ কারণে নিরাপত্তা বাহিনীকে রাস্তাঘাটগুলো ফাঁকা রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কাশ্মিরি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী বেশ স্বস্তি বোধ করে। কিন্তু পাথর নিক্ষেপকারীদের নিয়ে বেশ বিপাকে পড়ে তারা।
ভারতীয়রা সবসময় কাশ্মিরের অন্তর্ভুক্তিকে দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রত্যাখ্যান হিসেবে তুলে ধরেছে। ভারতের বক্তব্য হলো, ধর্ম কখনো দেশের সাংগঠনিক মূলনীতি হতে পারে না। আর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মির দেশটির অতি যত্নে লালিত সেক্যুলারবাদের বৈধতা দিচ্ছে। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মিরে বিশেষ মর্যাদা গুঁড়িয়ে দিয়ে নয়া দিল্লি এখন ওই যুক্তিকেই অসার প্রতিপন্ন করল।
১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তান-মদতপুষ্ট পশতু মিলিশিয়ারা রাজ্যটির গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরের কাছাকাছি চলে এলে মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের হিন্দু রাজা ভারতে অন্তর্ভুক্ত হতে একটি চুক্তিতে সই করেন। এর মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মিরের প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগব্যবস্থার ওপর নয়া দিল্লির পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। আর শ্রীনগরের ওপর দায়িত্ব থাকে নিজস্ব সংবিধান প্রণয়নসহ বাকি সবকিছুর।
জম্মু ও কাশ্মিরের সাথে বিশেষ সম্পর্কটি ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারায় উল্লেখ ছিল।
এই বিশেষ সম্পর্কটির বিরোধিতা করে আসছিল হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দীর্ঘ দিন ধরেই এই ধারাটি বিলুপ্ত করার কথা বলে আসছিল।
গত মে মাসে পার্লামেন্টে আরো বেশি শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন দলটি। তখনই ৩৭০ ধারার ব্যাপারে ফয়সালা হয়ে যায়।
কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারত সরকার যেভাবে কাজটি করেছে, তাতে অনেকে বিস্মিত হয়েছে। গত বছর বিজেপি কাশ্মিরের জোট সরকার থেকে বের হয়ে আসে। এর ফলে মেহবুবা মুফতির পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়, সেখানে কেন্দ্রীয় শাসন জারি হয়।
গত কয়েক দিনে সেখানে হাজার হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য পাঠানো হয়। আর আগে থেকেই সেখানে চার লাখের মতো সৈন্য ছিলই।
গত সপ্তাহে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অমরনাথ যাত্রা বাতিল করা হয়। এছাড়া হাজার হাজার পর্যটক ও তীর্থযাত্রীকে হঠাৎ করেই ফিরিয়ে আনা হয়।
এখন নয়া দিল্লি অনিবার্যভাবেই আইনগত, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। কেবল কাশ্মিরি গ্রুপগুলোর কাছ থেকেই নয়, ভারতের নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলোর কাছ থেকেও তারা বিরোধিতার মুখে পড়বে।
রোববার কাশ্মির উপত্যাকায় কারফিউ জারি করা হয়, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এমনকি ভারতপন্থী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত মুফতি ও অন্যান্য রাজনীতিবিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে করে অনুগত, জাতীয়তাবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সব কাশ্মিরি রাজনীতিবিদ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা মেরামত করা সম্ভব নয়।
কাশ্মিরিরা এখন দীর্ঘ অবরোধের আশঙ্কায় রয়েছে।
সোমবার সকালে যে ঘোষণাটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিয়েছেন, তাতে ৩৭০ ধারা বাতিলের ফলে জম্মু ও কাশ্মির রাজ্য বলে আর কিছু থাকল না। এই রাজ্যটি এখন থেকে কেন্দ্রীয় শাসনে থাকবে। তাছাড়া এট দুই অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মির থেকে লাদাখকে আলাদা করা হয়েছে। বিশাল লাদাখ অঞ্চলে জনবসতি খুবই কম। এখানকার বেশির ভাগ অধিবাসী বৌদ্ধ ও শিয়া মুসলিম। কাশ্মির গোলযোগপূর্ণ থাকলেও এই অঞ্চলটি মোটামুটিভাবে শান্তিপূর্ণ।
এসব পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কাশ্মিরিরা যে ফেটে পড়বে, তা অনিবার্য। কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ৩৭০ ধারা বাতিলকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি এটাকে আগ্রাসন হিসেবেও অভিহিত করেছেন।
রাজপথে বিক্ষোভ যদি হয়, আর তা ব্যাপক রূপ লাভ করে, তবে কাশ্মিরে এবারের গ্রীষ্মটিও হবে রক্তাক্ত। এ কারণে নিরাপত্তা বাহিনীকে রাস্তাঘাটগুলো ফাঁকা রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কাশ্মিরি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী বেশ স্বস্তি বোধ করে। কিন্তু পাথর নিক্ষেপকারীদের নিয়ে বেশ বিপাকে পড়ে তারা।
ভারতীয়রা সবসময় কাশ্মিরের অন্তর্ভুক্তিকে দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রত্যাখ্যান হিসেবে তুলে ধরেছে। ভারতের বক্তব্য হলো, ধর্ম কখনো দেশের সাংগঠনিক মূলনীতি হতে পারে না। আর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মির দেশটির অতি যত্নে লালিত সেক্যুলারবাদের বৈধতা দিচ্ছে। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মিরে বিশেষ মর্যাদা গুঁড়িয়ে দিয়ে নয়া দিল্লি এখন ওই যুক্তিকেই অসার প্রতিপন্ন করল।
No comments