ডেঙ্গু রোগীদের সর্বত্রই ভোগান্তি: হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল by শুভ্র দেব
হাসপাতাল
থেকে হাসপাতাল। ছুটছে মানুষ। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী নিয়ে এমন দৌড়ঝাঁপ
নিত্যদিনের। হাসপাতালে ঠাঁই পাওয়া যেন এখন ভাগ্যের ব্যাপার। এমনিতেই
হাসপাতালে রোগীতে ঠাঁসা। বেড, ফ্লোর, বারান্দায়ও রোগী। অতিরিক্ত এসব রোগীর
চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। সরজমিন বেশ ক’টি হাসপাতালে দেখা
গেছে- শয্যাতো দুরের কথা বাথরুমের আশেপাশের ফাঁকা জায়গায়, হাঁটা-চলার
রাস্তা সর্বত্রই ডেঙ্গু রোগী।
এমনকি লিফট, সিঁড়িতে উঠানামার পথেও শুয়ে আছেন রোগীরা। ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ানক হওয়াতে হাসপাতালে বেড পাওয়াটা হয়ে গেছে সোনার হরিণ। এছাড়া পরীক্ষা নিরীক্ষার টাকা জমা দেয়ার জন্য ব্যাংকের কাউন্টারে, রক্ত দেয়ার জন্য প্যাথলজি বিভাগে ও রিপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য ডেলিভারি কাউন্টারের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। পাশাপাশি রোগীর চাপ সামাল দিতে না পেরে রোগীর সঙ্গে নার্সদের খারাপ আচরণ, নোংরা শৌচাগার ও সময়মত রোগীর খাবার না পাওয়া। সব মিলিয়ে ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তরা রয়েছেন চরম বিপাকে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে ভোগান্তির নানা চিত্র পাওয়া গেছে। অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, জ্বর নিয়ে আসার পর চিকিৎসকের দেখা পেতেই সারাদিন চলে যায়। রোগীর চাপ বেশি তবুও বাড়তি চিকিৎসক বসানো হচ্ছে না।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর চিকিৎসকের দেখা পেলেও তারা বাসায় গিয়ে ঠিকমত খাবার খাওয়া, প্রচুর তরল জাতীয় খাবার ও প্লাটিলেট পরীক্ষার পরামর্শ দেন। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি নিতে চান না। রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলে ভর্তি নেন। এছাড়া ভর্তি রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন রক্ত পরীক্ষার জন্য ভোর চারটা থেকে সিরিয়াল দিতে হয়। রক্ত দেয়ার পর রিপোর্ট পেতে লম্বা সময় লাগছে। আবার রিপোর্টের জন্য চিকিৎসকরা তাগদা দেন। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, যেভাবে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন অন্যান্য সময়ের চেয়ে কয়েকগুন কাজ বেশি করে সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্টাফদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রাতদিন সবাই কাজ করছেন।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালে শাহজাদপুরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের স্ত্রী মাকসুদা বেগম বলেন, আমি ও আমার ছোট ছেলে একসঙ্গেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছি। শুক্রবার আমি হাসপাতালে আসি। সারাদিন অপেক্ষা করে চিকিৎসকের দেখা পাই। তারা রিপোর্ট দেখে নিশ্চিত হন যে আমাদের ডেঙ্গু হয়েছে। কিন্তু তারা ভর্তি না নিয়ে বাসায় চলে যাওয়ার কথা বলেন। অথচ আমি হাঁটতেই পারছিলাম না। আমার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। পরে আমার স্বামী আবার জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করে চিকিৎসককে আমার অবস্থার কথা বলেন। তখন চিকিৎসক আমার অবস্থা খারাপ দেখে ভর্তি নেন। তিনি বলেন, এখানে সবকিছুতেই লম্বা সিরিয়াল থাকে। আমি ও আমার ছেলের প্রতিদিন রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষা করাতে হয়। কিন্তু ভোর চারটা থেকে লাইনে দাড়াতে হয়। কয়েক ঘন্টা অপেক্ষার পর রক্ত দেয়া যায়। আবার রিপোর্ট পাওয়ার জন্য বিকাল বেলা লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। একই হাসপাতালে শারমিন নামের আরেক রোগী বলেন, আমি ও আমার সন্তান এক সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছি। হাসপাতালে নার্সদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা রেগে যায়। একটু পরামর্শও করা যায় না। শৌচাগারের এত নোংরা ওই দিকে যাওয়ার উপায় নাই। এছাড়া শুধু স্যালাইন আর নাপা দিয়েই চিকিৎসা চলছে। যে মানের চিকিৎসা তারা করছে মান আরও বাড়ানো দরকার।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাজারখানেক মানুষ লম্বা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে। সবার উদ্দেশ্য ডেঙ্গুর পরীক্ষা করা। আবার অনেকেই রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। রোগী ও তাদের স্বজনদের চাপ সামাল দিতে হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবকরা হিমশিম খাচ্ছেন। আল-আমিন নামের এক রোগীর স্বজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যাদের ডেঙ্গু হয়েছে তারা ও তাদের পরিবারের লোকজন বুঝতেছে ভোগান্তি কাকে বলে।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না। আবার রিপোর্ট পাওয়ার জন্য একই রকম ভোগান্তি ও সময় নষ্ট হচ্ছে। এমন অবস্থা হাসপাতালের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডের ডেঙ্গু রোগীর স্বজন আরফাত বলেন, রোগীর তুলনায় নার্সদের সংখ্যা এত কম একটা স্যালাইন দেয়ার জন্য নার্সের জন্য অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। ওয়ার্ডের বাইরে ফ্লোরের মধ্যে যে রোগীরা আছে তাদের কাছে নার্স-চিকিৎসকরা কম আসেন। তাদের নাই শৌচাগারের ব্যবস্থা। এত রোগীর জন্য ওয়ার্ডের ভেতরের শৌচাগারই ভরসা। জরুরি প্রয়োজনে যেতে হলেও লাইন ধরতে হয়। সালেহা বেগম নামের আরেক রোগীর স্বজন জানান, টেস্ট করানোর জন্য এত চাপ থাকার পরও কর্তৃপক্ষ সীমিত লোক দিয়ে কাজ করাচ্ছে। তাই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক সময় লেগে যায়। প্রচন্ড গরম, রোগী নিয়ে টেনশন তার ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা। সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে সময় যাচ্ছে। ঢামেকের ২০৭, ২০৮ ও ২১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ডেঙ্গু রোগীদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা। বড় ওয়ার্ডের চেয়ে শিশু ওয়ার্ডে তুলনামুলক চাপ বেশি। প্রতিটা বেডে তিন চারজন করে শিশু রোগী রাখা হয়েছে। আবার সঙ্গে তাদের মায়েরাও আছেন। জন্মের পরপরই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া এসব শিশুদের নিয়ে তাদের স্বজনদের ভোগান্তির শেষ নাই। একদিকে প্রচন্ড জ্বর অন্যদিকে কোনো কোনো শিশুর শরীরে ব্যাথা। সহ্য করতে না পেরে চিৎকার দিয়ে কান্না করছে অনেক শিশু। পরীক্ষার জন্য অনেক শিশুর শরীর থেকে রক্ত টানা কঠিন হয়ে পড়ে। নার্সরা জানিয়েছেন, ছোট শিশুর শরীর থেকে রক্ত টানা খুব কঠিন। এসব ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসকরাও রোগীদের ফাইল, রিপোর্ট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এদিকে বিভিন্ন ডেঙ্গু রোগীকে রাখা হয়েছে এমন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় আরও বেহাল দশা। ওয়ার্ডগুলোতে রোগীর জন্য যত বেড বরাদ্দ আছে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। মেডিসিন ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আলী নামের এক রোগী বলেন, সিট পাওয়ার কোন আশাই করছি না। বরং ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নেয়ার নিশ্চয়তা চাই। কোনরকম গাদাগাদি করে শুয়ে আছি। ঘুমানোর কোনো উপায় নাই। সবসময়ই মানুষের হাঁটাচলা লেগেই আছে। শিশু ওয়ার্ডে নাফিসা নামের এক শিশুর অভিভাবক বলেন, বাচ্চাটাকে নিয়ে তিনদিন ধরে মেঝেতে শুয়ে আছি। এখনও তার কোনো পরিবর্তনও হয় না। প্লাটিলেট শুধু উঠানামা করছে। ঘনঘন প্লাটিলেট টেস্ট করাতে হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালে যে সিরিয়াল দিয়ে টেস্ট করাতে হয় ও রিপোর্ট পেতে হয় ততক্ষণে রোগীই মারা যাবে।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেও ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা কম নয়। গতকাল সকাল থেকেই হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে ব্যাপক ভিড় ছিল। যাদের একটা বড় অংশই ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে আসা। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্য হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়গনস্টিক সেন্টারে রক্তের পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। তাই এখন এই হাসপাতালে এসেছেন ভর্তি হতে। রাহুল দেবনাথ নামের এক অভিভাবক বলেন, আমার ভাতিজির জ্বর ছিল কয়েকদিন ধরে। জ্বরে কাতর হয়ে গেছে আর শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা। তারপর অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে ডেঙ্গু টেস্ট করিয়েছিলাম। রিপোর্টে ডেঙ্গু পজেটিভ এসেছে। অ্যাপোলো হাসপাতালে খরচ বেশি তাই এখানে নিয়ে এসেছি। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি এখন ভর্তি করাতে পারি নাই। জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক রোগী বলেন, দাঁড়িয়ে আছি ঘন্টাখানেক ধরে। শুনেছি এই হাসপাতালে চিকিৎসা ভাল। তবে ভর্তি করাতে পারব কিনা জানিনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ডেঙ্গু রোগীদের ভোগান্তির শেষ নাই। এখানেও সিটের সমস্যার কারণে রোগী ভর্তি করাটা কঠিন। তারপরও অন্যান্য হাসপাতালের মতই এই হাসপাতালে রোগীর চাপ। পরীক্ষার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আর রিপোর্ট পেতে অপেক্ষার শেষ নাই। অপেক্ষা প্রহর গুনতে গুনতে রোগীরা বাইরে থেকে টেস্ট করাতে বাধ্য হচ্ছেন।
এমনকি লিফট, সিঁড়িতে উঠানামার পথেও শুয়ে আছেন রোগীরা। ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ানক হওয়াতে হাসপাতালে বেড পাওয়াটা হয়ে গেছে সোনার হরিণ। এছাড়া পরীক্ষা নিরীক্ষার টাকা জমা দেয়ার জন্য ব্যাংকের কাউন্টারে, রক্ত দেয়ার জন্য প্যাথলজি বিভাগে ও রিপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য ডেলিভারি কাউন্টারের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। পাশাপাশি রোগীর চাপ সামাল দিতে না পেরে রোগীর সঙ্গে নার্সদের খারাপ আচরণ, নোংরা শৌচাগার ও সময়মত রোগীর খাবার না পাওয়া। সব মিলিয়ে ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তরা রয়েছেন চরম বিপাকে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে ভোগান্তির নানা চিত্র পাওয়া গেছে। অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, জ্বর নিয়ে আসার পর চিকিৎসকের দেখা পেতেই সারাদিন চলে যায়। রোগীর চাপ বেশি তবুও বাড়তি চিকিৎসক বসানো হচ্ছে না।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর চিকিৎসকের দেখা পেলেও তারা বাসায় গিয়ে ঠিকমত খাবার খাওয়া, প্রচুর তরল জাতীয় খাবার ও প্লাটিলেট পরীক্ষার পরামর্শ দেন। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি নিতে চান না। রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলে ভর্তি নেন। এছাড়া ভর্তি রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন রক্ত পরীক্ষার জন্য ভোর চারটা থেকে সিরিয়াল দিতে হয়। রক্ত দেয়ার পর রিপোর্ট পেতে লম্বা সময় লাগছে। আবার রিপোর্টের জন্য চিকিৎসকরা তাগদা দেন। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, যেভাবে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন অন্যান্য সময়ের চেয়ে কয়েকগুন কাজ বেশি করে সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্টাফদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রাতদিন সবাই কাজ করছেন।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালে শাহজাদপুরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের স্ত্রী মাকসুদা বেগম বলেন, আমি ও আমার ছোট ছেলে একসঙ্গেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছি। শুক্রবার আমি হাসপাতালে আসি। সারাদিন অপেক্ষা করে চিকিৎসকের দেখা পাই। তারা রিপোর্ট দেখে নিশ্চিত হন যে আমাদের ডেঙ্গু হয়েছে। কিন্তু তারা ভর্তি না নিয়ে বাসায় চলে যাওয়ার কথা বলেন। অথচ আমি হাঁটতেই পারছিলাম না। আমার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। পরে আমার স্বামী আবার জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করে চিকিৎসককে আমার অবস্থার কথা বলেন। তখন চিকিৎসক আমার অবস্থা খারাপ দেখে ভর্তি নেন। তিনি বলেন, এখানে সবকিছুতেই লম্বা সিরিয়াল থাকে। আমি ও আমার ছেলের প্রতিদিন রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষা করাতে হয়। কিন্তু ভোর চারটা থেকে লাইনে দাড়াতে হয়। কয়েক ঘন্টা অপেক্ষার পর রক্ত দেয়া যায়। আবার রিপোর্ট পাওয়ার জন্য বিকাল বেলা লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। একই হাসপাতালে শারমিন নামের আরেক রোগী বলেন, আমি ও আমার সন্তান এক সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছি। হাসপাতালে নার্সদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা রেগে যায়। একটু পরামর্শও করা যায় না। শৌচাগারের এত নোংরা ওই দিকে যাওয়ার উপায় নাই। এছাড়া শুধু স্যালাইন আর নাপা দিয়েই চিকিৎসা চলছে। যে মানের চিকিৎসা তারা করছে মান আরও বাড়ানো দরকার।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাজারখানেক মানুষ লম্বা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে। সবার উদ্দেশ্য ডেঙ্গুর পরীক্ষা করা। আবার অনেকেই রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। রোগী ও তাদের স্বজনদের চাপ সামাল দিতে হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবকরা হিমশিম খাচ্ছেন। আল-আমিন নামের এক রোগীর স্বজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যাদের ডেঙ্গু হয়েছে তারা ও তাদের পরিবারের লোকজন বুঝতেছে ভোগান্তি কাকে বলে।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না। আবার রিপোর্ট পাওয়ার জন্য একই রকম ভোগান্তি ও সময় নষ্ট হচ্ছে। এমন অবস্থা হাসপাতালের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডের ডেঙ্গু রোগীর স্বজন আরফাত বলেন, রোগীর তুলনায় নার্সদের সংখ্যা এত কম একটা স্যালাইন দেয়ার জন্য নার্সের জন্য অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। ওয়ার্ডের বাইরে ফ্লোরের মধ্যে যে রোগীরা আছে তাদের কাছে নার্স-চিকিৎসকরা কম আসেন। তাদের নাই শৌচাগারের ব্যবস্থা। এত রোগীর জন্য ওয়ার্ডের ভেতরের শৌচাগারই ভরসা। জরুরি প্রয়োজনে যেতে হলেও লাইন ধরতে হয়। সালেহা বেগম নামের আরেক রোগীর স্বজন জানান, টেস্ট করানোর জন্য এত চাপ থাকার পরও কর্তৃপক্ষ সীমিত লোক দিয়ে কাজ করাচ্ছে। তাই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক সময় লেগে যায়। প্রচন্ড গরম, রোগী নিয়ে টেনশন তার ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা। সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে সময় যাচ্ছে। ঢামেকের ২০৭, ২০৮ ও ২১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ডেঙ্গু রোগীদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা। বড় ওয়ার্ডের চেয়ে শিশু ওয়ার্ডে তুলনামুলক চাপ বেশি। প্রতিটা বেডে তিন চারজন করে শিশু রোগী রাখা হয়েছে। আবার সঙ্গে তাদের মায়েরাও আছেন। জন্মের পরপরই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া এসব শিশুদের নিয়ে তাদের স্বজনদের ভোগান্তির শেষ নাই। একদিকে প্রচন্ড জ্বর অন্যদিকে কোনো কোনো শিশুর শরীরে ব্যাথা। সহ্য করতে না পেরে চিৎকার দিয়ে কান্না করছে অনেক শিশু। পরীক্ষার জন্য অনেক শিশুর শরীর থেকে রক্ত টানা কঠিন হয়ে পড়ে। নার্সরা জানিয়েছেন, ছোট শিশুর শরীর থেকে রক্ত টানা খুব কঠিন। এসব ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসকরাও রোগীদের ফাইল, রিপোর্ট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এদিকে বিভিন্ন ডেঙ্গু রোগীকে রাখা হয়েছে এমন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় আরও বেহাল দশা। ওয়ার্ডগুলোতে রোগীর জন্য যত বেড বরাদ্দ আছে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। মেডিসিন ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আলী নামের এক রোগী বলেন, সিট পাওয়ার কোন আশাই করছি না। বরং ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নেয়ার নিশ্চয়তা চাই। কোনরকম গাদাগাদি করে শুয়ে আছি। ঘুমানোর কোনো উপায় নাই। সবসময়ই মানুষের হাঁটাচলা লেগেই আছে। শিশু ওয়ার্ডে নাফিসা নামের এক শিশুর অভিভাবক বলেন, বাচ্চাটাকে নিয়ে তিনদিন ধরে মেঝেতে শুয়ে আছি। এখনও তার কোনো পরিবর্তনও হয় না। প্লাটিলেট শুধু উঠানামা করছে। ঘনঘন প্লাটিলেট টেস্ট করাতে হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালে যে সিরিয়াল দিয়ে টেস্ট করাতে হয় ও রিপোর্ট পেতে হয় ততক্ষণে রোগীই মারা যাবে।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেও ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা কম নয়। গতকাল সকাল থেকেই হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে ব্যাপক ভিড় ছিল। যাদের একটা বড় অংশই ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে আসা। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্য হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়গনস্টিক সেন্টারে রক্তের পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। তাই এখন এই হাসপাতালে এসেছেন ভর্তি হতে। রাহুল দেবনাথ নামের এক অভিভাবক বলেন, আমার ভাতিজির জ্বর ছিল কয়েকদিন ধরে। জ্বরে কাতর হয়ে গেছে আর শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা। তারপর অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে ডেঙ্গু টেস্ট করিয়েছিলাম। রিপোর্টে ডেঙ্গু পজেটিভ এসেছে। অ্যাপোলো হাসপাতালে খরচ বেশি তাই এখানে নিয়ে এসেছি। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি এখন ভর্তি করাতে পারি নাই। জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক রোগী বলেন, দাঁড়িয়ে আছি ঘন্টাখানেক ধরে। শুনেছি এই হাসপাতালে চিকিৎসা ভাল। তবে ভর্তি করাতে পারব কিনা জানিনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ডেঙ্গু রোগীদের ভোগান্তির শেষ নাই। এখানেও সিটের সমস্যার কারণে রোগী ভর্তি করাটা কঠিন। তারপরও অন্যান্য হাসপাতালের মতই এই হাসপাতালে রোগীর চাপ। পরীক্ষার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আর রিপোর্ট পেতে অপেক্ষার শেষ নাই। অপেক্ষা প্রহর গুনতে গুনতে রোগীরা বাইরে থেকে টেস্ট করাতে বাধ্য হচ্ছেন।
No comments