আসন্ন আফগান চুক্তি কেন পাকিস্তানের জন্য বিজয় by সালমান রাফি শেখ
বর্তমান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ২০১৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন তিনি আফগানিস্তানের
জন্য ‘আঞ্চলিক কৌশল’ প্রণয়ন করে সেটা উদযাপন করেছিলেন এবং তাদের দীর্ঘতম
যুদ্ধের ইতি টানার জন্য ভারতকে এর প্রধান ভূমিকায় বসিয়েছিলেন। আগামী
মাসগুলোতে যেখানে আফগান যুদ্ধের ইতি ঘটার একটা ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে
এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আঞ্চলিক কৌশল’ কাজ করেছে বলে মনে হচ্ছে – অন্তত
চীন ও পাকিস্তানকে সফলভাবে পুরো প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে সেটা
কাজে লেগেছে, তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট শুরুতে যেভাবে ভেবেছিলেন, ঠিক
সেভাবে পুরো বিষয়টি কাজ করেনি।
যেমন, ভারত যদি শুরুতে প্রধান ভূমিকা রাখতো, তাহলে শান্তি-চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক গঠন বা এতে প্রভাব বিস্তারের মতো কোন কূটনৈতিক ভূমিকাই তাদের থাকতো না। তবে পাকিস্তান পুরো প্রক্রিয়ার ‘আঞ্চলিকীকরণের’ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে – একদিকে তারা তালেবানদের সাথে চীনের যোগাযোগের কূটনৈতিক চ্যানেল খুলে দিয়েছে, অন্যদিকে রাশিয়ার সাথে তালেবানদের যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তালেবানদের সরাসরি আলোচনার জন্য পাকিস্তান যে ‘সহায়তা’ করেছে এবং তালেবানরা সেখানে যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ করার জন্য যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, সেখানেও পাকিস্তান কার্যত ভারতের তথাকথিত ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নীতিকে সফলভাবে পরাস্ত করেছে।
এই কূটনৈতিক বিজয় সত্যিকার অর্থেই পাকিস্তানের কূটনৈতিক জৌলুস বাড়িয়েছে, যার বহিপ্রকাশ ঘটেছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খানকে ওয়াশিংটনে সফরের আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে এবং পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে আগের দশকের ‘সন্ত্রাস-বিরোধী যুদ্ধের’ ফ্রেমওয়ার্ক থেকে বের করে এনে আরও সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টার মাধ্যমে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খানের সাথে আলোচনায় বেশ খোলামেলা ছিলেন এবং তিনি স্বীকার করেছেন যে আফগান গোলকধাঁধা থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তান তাদেরকে সহায়তা করছে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যদিও অন্যান্য দিকগুলোর যথাযথ উল্লেখ থাকবে, তবে অন্তত এখনকার মতো যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের ভারতের পূর্ব-পরিকল্পিত ‘কেন্দ্রীয় ভূমিকার’ জায়গা বদলে সেখানে পাকিস্তানকে বসিয়েছে। হোয়াইট হাউজ যেটাকে “সঙ্ঘাতপূর্ণ এই অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের” প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আফগান যুদ্ধের সমাপ্তির মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র তাই যে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করে যেতে চাচ্ছে, সেখানে পাকিস্তানের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আফগানিস্তানে সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সমাপ্তির পর তালেবানদের যখন রাজনৈতিক উত্থান হলো, সেই পরস্থিতির সাথে বর্তমানের একটা সাদৃশ্য রয়েছে। এখানে পার্থক্য শুধু এটা যে, এখানে একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে এবং বিশেষ করে পাকিস্তান, চীন ও রাশিয়ার মতো আঞ্চলিক পক্ষগুলো এখানে জড়িত রয়েছে, যাতে তারা চুক্তির বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
এটা পাকিস্তানের জন্য একটা বিশাল কূটনৈতিক সাফল্য কারণ নিজেদের প্রধান দাবিগুলোর ব্যাপারে কোন রকম ছাড় না দিয়েই তারা যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে যাচ্ছে। পাকিস্তানের প্রধান দাবিগুলো ছিল আফগানিস্তানের রাজনৈতিক কাঠামোতে তালেবানদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং ‘সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে’ পাকিস্তানের নিজেদের ভূমিকার স্বীকৃতি আদায়।
পাকিস্তানের এই দাবি পূরণ হতে যাওয়ার অর্থ হলো এখানে ভারতের যে দাবি ছিল যে তালেবানদের রাজনৈতিক কাঠামো থেকে বাদ দিতে হবে, সেটা পুরোপুরি গৌণ হয়ে গেছে।
ভারত সে কারণে শান্তি চুক্তির প্রক্রিয়া থেকে পুরোপুরি বাদ পড়ে গেছে, এমনকি ভারত যদিও দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাভাবিক মিত্র ছিল এবং যদিও একবিংশ শতকে তাদের মধ্যে একটা দৃঢ় জোট তৈরি হতে যাচ্ছে, এর পরও প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়েছে তারা।
পুরো প্রক্রিয়া থেকে ভারতকে সম্পূর্ণ বাদ রাখার একটা কারণ সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের চলমান শুল্ক বিতর্ক, তবে এতে কোন সন্দেহ নেই যে পাকিস্তানের নিজেদের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই মূলত যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তির প্রক্রিয়ায় ভারতের জন্য কোন জায়গা রাখতে পারেনি।
আফগানিস্তানে ভারতের যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকা চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান এখানে চীনের ভূমিকাকে উৎসাহিত করার কারণে ভারতের সেই অবস্থানটি গৌণ হয়ে গেছে। তাছাড়া চীন ও তালেবানদের মধ্যে গোপন কূটনৈতিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে গত মাসে তালেবান প্রতিনিধিদের চীন সফরের মধ্য দিয়ে চীনের ভূমিকাটি এখানে ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠেছে। তালেবানরা দোহাতে মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় বসার এবং খসড়া চুক্তি চূড়ান্ত করার ঠিক আগ দিয়েই ওই চীন সফরে গিয়েছিল তালেবান প্রতিনিধি দল।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, শান্তি আলোচনায় বেইজিং একটা প্রধান ভূমিকা রেখেছে এবং গত মাসে তালেবান নেতা মোল্লা বারাদারের বেইজিং সফর সম্ভবত দোহা আলোচনায় বাঁক বদলের পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। দোহা-৬ আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানদের মধ্যে বরফ জমতে শুরু করেছিলে, সেটা গলানোর ক্ষেত্রে চীন নিশ্চিতভাবে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এমনকি জালমাই খালিলজাদ যেখানে আগে ভারতে গিয়ে নয়াদিল্লীকে প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ‘অবহিত’ করেছেন, সেখানে দোহা-৭ আলোচনার পর তিনি চীনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সেখানে খসড়া চুক্তি তৈরির ব্যাপারে সমন্বয় করেন, যেটার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় চীনের ভূমিকাটা প্রকাশিত হয়েছে।
আলোচনা যেখানে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, এ অবস্থায় খুব সামান্যই সন্দেহ রয়েছে যে, ভারতের আফগান নীতি সব ক্ষেত্রেই পরাজিত হয়েছে। আফগানিস্তানকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা থেকে শুরু করে, আফগানিস্তান ও এই পুরো অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতার অপপ্রচার এবং পাকিস্তান বারবার আলোচনার প্রস্তাব দেয়া সত্বেও পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনায় বসতে অস্বীকার করা – ভারতের এই সব নীতিই ব্যর্থ হয়েছে।
আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমাধানের ক্ষেত্রে তালেবানরা অবশ্যম্ভাবীভাবে একটা প্রধান রাজনৈতিক পক্ষ হতে যাচ্ছে – এই বাস্তবতার অর্থ হলো তালেবানদের প্রকৃত ও দেশীয় রাজনৈতিক পক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ভারত যে অস্বীকার করে আসছে, তাদের সে নীতিও এখানে পরাস্ত হলো। সে কারণে এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ভবিষ্যতে ভারতের কোন ভূমিকা দেখছে না এবং একমাত্র চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারেই ভারতের গুরুত্ব রয়েছে তাদের কাছে। তবে ইউরেশিয়ান ভূ-অর্থনৈতিক স্বার্থের ব্যাপারে ভারতের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের কারণে সেই ভূমিকা রাখার ব্যাপারে ভারত এখন আর অতটা আগ্রহী নয়, কারণ সেখানে চীন ও রাশিয়ার ভূমিকাটা গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন, ভারত যদি শুরুতে প্রধান ভূমিকা রাখতো, তাহলে শান্তি-চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক গঠন বা এতে প্রভাব বিস্তারের মতো কোন কূটনৈতিক ভূমিকাই তাদের থাকতো না। তবে পাকিস্তান পুরো প্রক্রিয়ার ‘আঞ্চলিকীকরণের’ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে – একদিকে তারা তালেবানদের সাথে চীনের যোগাযোগের কূটনৈতিক চ্যানেল খুলে দিয়েছে, অন্যদিকে রাশিয়ার সাথে তালেবানদের যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তালেবানদের সরাসরি আলোচনার জন্য পাকিস্তান যে ‘সহায়তা’ করেছে এবং তালেবানরা সেখানে যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ করার জন্য যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, সেখানেও পাকিস্তান কার্যত ভারতের তথাকথিত ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নীতিকে সফলভাবে পরাস্ত করেছে।
এই কূটনৈতিক বিজয় সত্যিকার অর্থেই পাকিস্তানের কূটনৈতিক জৌলুস বাড়িয়েছে, যার বহিপ্রকাশ ঘটেছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খানকে ওয়াশিংটনে সফরের আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে এবং পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে আগের দশকের ‘সন্ত্রাস-বিরোধী যুদ্ধের’ ফ্রেমওয়ার্ক থেকে বের করে এনে আরও সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টার মাধ্যমে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খানের সাথে আলোচনায় বেশ খোলামেলা ছিলেন এবং তিনি স্বীকার করেছেন যে আফগান গোলকধাঁধা থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তান তাদেরকে সহায়তা করছে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যদিও অন্যান্য দিকগুলোর যথাযথ উল্লেখ থাকবে, তবে অন্তত এখনকার মতো যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের ভারতের পূর্ব-পরিকল্পিত ‘কেন্দ্রীয় ভূমিকার’ জায়গা বদলে সেখানে পাকিস্তানকে বসিয়েছে। হোয়াইট হাউজ যেটাকে “সঙ্ঘাতপূর্ণ এই অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের” প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আফগান যুদ্ধের সমাপ্তির মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র তাই যে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করে যেতে চাচ্ছে, সেখানে পাকিস্তানের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আফগানিস্তানে সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সমাপ্তির পর তালেবানদের যখন রাজনৈতিক উত্থান হলো, সেই পরস্থিতির সাথে বর্তমানের একটা সাদৃশ্য রয়েছে। এখানে পার্থক্য শুধু এটা যে, এখানে একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে এবং বিশেষ করে পাকিস্তান, চীন ও রাশিয়ার মতো আঞ্চলিক পক্ষগুলো এখানে জড়িত রয়েছে, যাতে তারা চুক্তির বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
এটা পাকিস্তানের জন্য একটা বিশাল কূটনৈতিক সাফল্য কারণ নিজেদের প্রধান দাবিগুলোর ব্যাপারে কোন রকম ছাড় না দিয়েই তারা যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে যাচ্ছে। পাকিস্তানের প্রধান দাবিগুলো ছিল আফগানিস্তানের রাজনৈতিক কাঠামোতে তালেবানদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং ‘সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে’ পাকিস্তানের নিজেদের ভূমিকার স্বীকৃতি আদায়।
পাকিস্তানের এই দাবি পূরণ হতে যাওয়ার অর্থ হলো এখানে ভারতের যে দাবি ছিল যে তালেবানদের রাজনৈতিক কাঠামো থেকে বাদ দিতে হবে, সেটা পুরোপুরি গৌণ হয়ে গেছে।
ভারত সে কারণে শান্তি চুক্তির প্রক্রিয়া থেকে পুরোপুরি বাদ পড়ে গেছে, এমনকি ভারত যদিও দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাভাবিক মিত্র ছিল এবং যদিও একবিংশ শতকে তাদের মধ্যে একটা দৃঢ় জোট তৈরি হতে যাচ্ছে, এর পরও প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়েছে তারা।
পুরো প্রক্রিয়া থেকে ভারতকে সম্পূর্ণ বাদ রাখার একটা কারণ সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের চলমান শুল্ক বিতর্ক, তবে এতে কোন সন্দেহ নেই যে পাকিস্তানের নিজেদের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই মূলত যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তির প্রক্রিয়ায় ভারতের জন্য কোন জায়গা রাখতে পারেনি।
আফগানিস্তানে ভারতের যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকা চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান এখানে চীনের ভূমিকাকে উৎসাহিত করার কারণে ভারতের সেই অবস্থানটি গৌণ হয়ে গেছে। তাছাড়া চীন ও তালেবানদের মধ্যে গোপন কূটনৈতিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে গত মাসে তালেবান প্রতিনিধিদের চীন সফরের মধ্য দিয়ে চীনের ভূমিকাটি এখানে ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠেছে। তালেবানরা দোহাতে মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় বসার এবং খসড়া চুক্তি চূড়ান্ত করার ঠিক আগ দিয়েই ওই চীন সফরে গিয়েছিল তালেবান প্রতিনিধি দল।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, শান্তি আলোচনায় বেইজিং একটা প্রধান ভূমিকা রেখেছে এবং গত মাসে তালেবান নেতা মোল্লা বারাদারের বেইজিং সফর সম্ভবত দোহা আলোচনায় বাঁক বদলের পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। দোহা-৬ আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানদের মধ্যে বরফ জমতে শুরু করেছিলে, সেটা গলানোর ক্ষেত্রে চীন নিশ্চিতভাবে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
এমনকি জালমাই খালিলজাদ যেখানে আগে ভারতে গিয়ে নয়াদিল্লীকে প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ‘অবহিত’ করেছেন, সেখানে দোহা-৭ আলোচনার পর তিনি চীনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সেখানে খসড়া চুক্তি তৈরির ব্যাপারে সমন্বয় করেন, যেটার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় চীনের ভূমিকাটা প্রকাশিত হয়েছে।
আলোচনা যেখানে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, এ অবস্থায় খুব সামান্যই সন্দেহ রয়েছে যে, ভারতের আফগান নীতি সব ক্ষেত্রেই পরাজিত হয়েছে। আফগানিস্তানকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা থেকে শুরু করে, আফগানিস্তান ও এই পুরো অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতার অপপ্রচার এবং পাকিস্তান বারবার আলোচনার প্রস্তাব দেয়া সত্বেও পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনায় বসতে অস্বীকার করা – ভারতের এই সব নীতিই ব্যর্থ হয়েছে।
আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমাধানের ক্ষেত্রে তালেবানরা অবশ্যম্ভাবীভাবে একটা প্রধান রাজনৈতিক পক্ষ হতে যাচ্ছে – এই বাস্তবতার অর্থ হলো তালেবানদের প্রকৃত ও দেশীয় রাজনৈতিক পক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ভারত যে অস্বীকার করে আসছে, তাদের সে নীতিও এখানে পরাস্ত হলো। সে কারণে এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ভবিষ্যতে ভারতের কোন ভূমিকা দেখছে না এবং একমাত্র চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারেই ভারতের গুরুত্ব রয়েছে তাদের কাছে। তবে ইউরেশিয়ান ভূ-অর্থনৈতিক স্বার্থের ব্যাপারে ভারতের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের কারণে সেই ভূমিকা রাখার ব্যাপারে ভারত এখন আর অতটা আগ্রহী নয়, কারণ সেখানে চীন ও রাশিয়ার ভূমিকাটা গুরুত্বপূর্ণ।
মস্কোতে গত ৩০ মে সিনিয়র আফগান রাজনীতিকদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান আলোচক মোল্লা আব্দুল ঘানি বারদারের নেতৃত্বে বেরিয়ে আসছেন তালেবান প্রতিনিধি দল |
No comments