'ইনসটেক্স' ইরানের সঙ্গে ইউরোপের রাজনৈতিক খেলার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে
২০১৫
সালের জুলাই ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতা সই হয় এবং পরের
বছর জানুয়ারি মাস থেকে এটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়। বিশ্বের দেশগুলোর
পরমাণু কর্মসূচির ওপর নজরদারী প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা
বা আইএইএ সব ক'টি প্রতিবেদনে বলেছে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন শুরুর পর ইরান
তার প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছে।
গত বছর ৮মে আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গেলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ চুক্তি টিকিয়ে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মোকাবেলায় ইরানকে রক্ষার জন্য তারা ইরানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিশেষ ব্যবস্থা 'ইনসটেক্স' চালু করার কথা ঘোষণা করে। শুরু থেকেই এটির বাস্তবায়নের ব্যাপারে নানা জল্পনা কল্পনা চলে আসছে এবং এক বছর পেরিয়ে গেলেও ইউরোপ এখনও এটি বাস্তবায়ন করেনি।
পরমাণু সমঝোতায় সইকারী ইউরোপের তিনটি প্রভাবশালী দেশ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি পরমাণু সমঝোতাকে বহুপক্ষীয় চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছে যা কিনা বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপের এ দেশগুলোর মতে, ইরানের ব্যাপারে মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং ওয়াশিংটনের এ আচরণ মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি যা কিনা বিশ্বকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে। এ কারণে আমেরিকা পরমাণু সমঝোতাকে ধ্বংস করার পাশাপাশি ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির নীতি গ্রহণ করলেও এর বিপরীতে ইউরোপীয়রা পরমাণু সমঝোতা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ গত বছর ১৫ মে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ইউরোপের এই তিনটি প্রভাবশালী দেশ ৯ ধারা বিশিষ্ট বিবৃতি প্রকাশ করে। বিবৃতিতে ইরানের সঙ্গে ইউরোপের অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এতে বলা হয়, ইরানের তেল, গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম পণ্য বিক্রি অব্যাহত থাকবে, ইরানের সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেন স্বাভাবিক রাখা হবে, দেশটির পরিবহন ও বিমা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বজায় থাকবে, পুঁজি বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরো সহজ করা হবে, ইরান ও ইউরোপের মধ্যকার বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়ন করা হবে, ইরানে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর তৎপরতার প্রতি সমর্থন জানানো হবে। এ ছাড়া, আরো কিছু বিষয় বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যা কিনা ইরানের স্বার্থ রক্ষা করবে।
ইউরোপের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা আসার পর গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের অবকাশে আমেরিকা বাদে পরমাণু সমঝোতায় সইকারী অন্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনিও উপস্থিত ছিলেন। মোগেরিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন এবং ইরানের তেল বিক্রি ও দেশটির সঙ্গ বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আর্থিক লেনদেনের বিশেষ ব্যবস্থা 'ইনসটেক্স' চালু করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
প্রকৃতপক্ষে, ইউরোপীয়রা দাবি করেছিল, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় ইরানের ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা এবং দেশটির বাণিজ্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুযোগ করে দেয়া হবে তাদের প্রধান লক্ষ্য। আর এ জন্যই তারা ইরানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিশেষ ব্যবস্থা 'ইনসটেক্স' চালু করার কথা বলছে।
ডলার বাদ দিয়ে ইরানের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইউরো ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়ে জার্মানি, ব্রিটেন ও ফ্রান্স গত ৩১ জানুয়ারি 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দেয়। এই তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, "জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সমর্থিত পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার জন্য তারা 'ইনসটেক্স' বাস্তবায়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে যাতে ইরানের বাণিজ্যে ব্যাঘাত না ঘটে এবং এই ব্যবস্থা ইরান ও ইউরোপের বাণিজ্য কার্যক্রমকে সহজতর করবে।"
'ইনসটেক্স' ব্যবস্থায় ইরানের জনগণের জন্য জরুরি পণ্য সামগ্রী যেমন খাদ্য, ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী, কৃষিপণ্য প্রভৃতি সরবরাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ইউরোপীয়রা দাবি করেছে, ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করতে আগ্রহী ইউরোপের বাইরের অন্য দেশগুলোও এ প্রকল্পে যুক্ত হতে পারবে এবং ইউরোপের তিনটি দেশ এ বিষয়ে দেখভাল করবে। 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থায় ইরান থাকবে পর্যবেক্ষক হিসেবে এবং দু'পক্ষই লেনদেনের হিসাব নিকাশ করবে। তবে ইরান বারবার বলে এসেছে ইরানের স্বার্থ নিশ্চিত করা ছাড়া এই ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য হবে না। 'ইনসটেক্স' এর আওতায় প্রথমে খাদ্য ও ওষুধ এবং এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পণ্য সামগ্রী ইরানকে সরবরাহের কথা বলা হয়।
'ইনসটেক্স' এর সদর দফতর নির্ধারণ করা হয় প্যারিসে এবং জার্মানির কমার্স ব্যাংকের সাবেক প্রধান পুর ফিশারকে এর প্রধান করা হয়। এই ব্যবস্থা চালুর প্রধান উদ্দেশ্য ইউরোপের ছোট ও মাঝারি কোম্পানিগুলোকে ইরানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের ব্যবস্থা করে দেয়া। এই ব্যবস্থার প্রধান পুর ফিশার 'ইনসটেক্স' দ্রুত চালু করার বিষয়ে ইরানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য গত ১১ মার্চ ইরান সফরে আসেন। ইরান-ব্রিটেন চেম্বার অব কমার্সের প্রধান নরম্যান লামোন্ত সে সময় দাবি করেছিলেন, "এই ব্যবস্থা চালু করা থেকে বোঝা যায়, আমেরিকার চাপ সত্বেও ইউরোপ এ ক্ষেত্রে তাদের স্বাধীন নীতি বজায় রেখেছে।" চলতি বছর মার্চে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান জানিয়েছিলেন, খুব শিগগিরি ইউরোপের তিনটি প্রভাবশালী দেশের পক্ষ থেকে উত্থাপিত 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থা চালু হবে।
কিন্তু যতই দিন গড়াতে থাকে ততই আমেরিকার মোকাবেলায় ইউরোপের দুর্বলতা প্রকাশ পেতে থাকে। কথা দিয়েও তারা 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থা চালু করতে ব্যর্থ হয়।
এ কারণে শুধু ইরান নয় একইসঙ্গে ইউরোপের রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তারাও 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থা বাস্তবায়নে ইউরোপের সক্ষমতার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেন। জার্মানির ডয়েটসেভেলে এক প্রতিবেদনে ইরানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সহজতর করার জন্য জার্মানি, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের উত্থাপিত 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থাকে ভেজা বারুদের সঙ্গে তুলনা করেছে। অর্থাৎ এটির কোনো কার্যকরিতা নেই। কারণ মাত্র কয়েক মিলিয়ন ইউরো এই ব্যবস্থায় জমা রাখা হয় যাতে ইউরোপের কোম্পানিগুলো সহজে ইরানে পণ্য রপ্তানি করতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থা আলোর মুখে দেখেনি। পর্যবেক্ষকদের মতে ইউরোপ যদি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করত তাহলেও ইরান মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে না।
ইরান 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থার আওতায় তেল বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায়। কিন্তু ইউরোপ ইরানের এ যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করায় এবং এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় তেহরানের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসা স্বাভাবিক ব্যাপার। ইরান অভিযোগ করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুধু যে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে তাই নায় তাদের দেয়া প্রতিশ্রুত অর্থাৎ 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থা বাস্তবায়নেও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। 'ইনসটেক্স' বর্তমানে ইরান ও ইউরোপের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার পরিবর্তে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে যার পেছনে রয়েছে মার্কিন চাপ ও ইন্ধন।
গত বছর ৮মে আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গেলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ চুক্তি টিকিয়ে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মোকাবেলায় ইরানকে রক্ষার জন্য তারা ইরানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিশেষ ব্যবস্থা 'ইনসটেক্স' চালু করার কথা ঘোষণা করে। শুরু থেকেই এটির বাস্তবায়নের ব্যাপারে নানা জল্পনা কল্পনা চলে আসছে এবং এক বছর পেরিয়ে গেলেও ইউরোপ এখনও এটি বাস্তবায়ন করেনি।
পরমাণু সমঝোতায় সইকারী ইউরোপের তিনটি প্রভাবশালী দেশ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি পরমাণু সমঝোতাকে বহুপক্ষীয় চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছে যা কিনা বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপের এ দেশগুলোর মতে, ইরানের ব্যাপারে মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং ওয়াশিংটনের এ আচরণ মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি যা কিনা বিশ্বকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে। এ কারণে আমেরিকা পরমাণু সমঝোতাকে ধ্বংস করার পাশাপাশি ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির নীতি গ্রহণ করলেও এর বিপরীতে ইউরোপীয়রা পরমাণু সমঝোতা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ গত বছর ১৫ মে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ইউরোপের এই তিনটি প্রভাবশালী দেশ ৯ ধারা বিশিষ্ট বিবৃতি প্রকাশ করে। বিবৃতিতে ইরানের সঙ্গে ইউরোপের অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এতে বলা হয়, ইরানের তেল, গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম পণ্য বিক্রি অব্যাহত থাকবে, ইরানের সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেন স্বাভাবিক রাখা হবে, দেশটির পরিবহন ও বিমা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বজায় থাকবে, পুঁজি বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরো সহজ করা হবে, ইরান ও ইউরোপের মধ্যকার বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়ন করা হবে, ইরানে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর তৎপরতার প্রতি সমর্থন জানানো হবে। এ ছাড়া, আরো কিছু বিষয় বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যা কিনা ইরানের স্বার্থ রক্ষা করবে।
ইউরোপের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা আসার পর গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের অবকাশে আমেরিকা বাদে পরমাণু সমঝোতায় সইকারী অন্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনিও উপস্থিত ছিলেন। মোগেরিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন এবং ইরানের তেল বিক্রি ও দেশটির সঙ্গ বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আর্থিক লেনদেনের বিশেষ ব্যবস্থা 'ইনসটেক্স' চালু করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
প্রকৃতপক্ষে, ইউরোপীয়রা দাবি করেছিল, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় ইরানের ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা এবং দেশটির বাণিজ্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুযোগ করে দেয়া হবে তাদের প্রধান লক্ষ্য। আর এ জন্যই তারা ইরানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিশেষ ব্যবস্থা 'ইনসটেক্স' চালু করার কথা বলছে।
ডলার বাদ দিয়ে ইরানের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইউরো ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়ে জার্মানি, ব্রিটেন ও ফ্রান্স গত ৩১ জানুয়ারি 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দেয়। এই তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, "জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সমর্থিত পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার জন্য তারা 'ইনসটেক্স' বাস্তবায়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে যাতে ইরানের বাণিজ্যে ব্যাঘাত না ঘটে এবং এই ব্যবস্থা ইরান ও ইউরোপের বাণিজ্য কার্যক্রমকে সহজতর করবে।"
'ইনসটেক্স' ব্যবস্থায় ইরানের জনগণের জন্য জরুরি পণ্য সামগ্রী যেমন খাদ্য, ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী, কৃষিপণ্য প্রভৃতি সরবরাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ইউরোপীয়রা দাবি করেছে, ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করতে আগ্রহী ইউরোপের বাইরের অন্য দেশগুলোও এ প্রকল্পে যুক্ত হতে পারবে এবং ইউরোপের তিনটি দেশ এ বিষয়ে দেখভাল করবে। 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থায় ইরান থাকবে পর্যবেক্ষক হিসেবে এবং দু'পক্ষই লেনদেনের হিসাব নিকাশ করবে। তবে ইরান বারবার বলে এসেছে ইরানের স্বার্থ নিশ্চিত করা ছাড়া এই ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য হবে না। 'ইনসটেক্স' এর আওতায় প্রথমে খাদ্য ও ওষুধ এবং এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পণ্য সামগ্রী ইরানকে সরবরাহের কথা বলা হয়।
'ইনসটেক্স' এর সদর দফতর নির্ধারণ করা হয় প্যারিসে এবং জার্মানির কমার্স ব্যাংকের সাবেক প্রধান পুর ফিশারকে এর প্রধান করা হয়। এই ব্যবস্থা চালুর প্রধান উদ্দেশ্য ইউরোপের ছোট ও মাঝারি কোম্পানিগুলোকে ইরানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের ব্যবস্থা করে দেয়া। এই ব্যবস্থার প্রধান পুর ফিশার 'ইনসটেক্স' দ্রুত চালু করার বিষয়ে ইরানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য গত ১১ মার্চ ইরান সফরে আসেন। ইরান-ব্রিটেন চেম্বার অব কমার্সের প্রধান নরম্যান লামোন্ত সে সময় দাবি করেছিলেন, "এই ব্যবস্থা চালু করা থেকে বোঝা যায়, আমেরিকার চাপ সত্বেও ইউরোপ এ ক্ষেত্রে তাদের স্বাধীন নীতি বজায় রেখেছে।" চলতি বছর মার্চে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান জানিয়েছিলেন, খুব শিগগিরি ইউরোপের তিনটি প্রভাবশালী দেশের পক্ষ থেকে উত্থাপিত 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থা চালু হবে।
কিন্তু যতই দিন গড়াতে থাকে ততই আমেরিকার মোকাবেলায় ইউরোপের দুর্বলতা প্রকাশ পেতে থাকে। কথা দিয়েও তারা 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থা চালু করতে ব্যর্থ হয়।
এ কারণে শুধু ইরান নয় একইসঙ্গে ইউরোপের রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তারাও 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থা বাস্তবায়নে ইউরোপের সক্ষমতার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেন। জার্মানির ডয়েটসেভেলে এক প্রতিবেদনে ইরানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সহজতর করার জন্য জার্মানি, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের উত্থাপিত 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থাকে ভেজা বারুদের সঙ্গে তুলনা করেছে। অর্থাৎ এটির কোনো কার্যকরিতা নেই। কারণ মাত্র কয়েক মিলিয়ন ইউরো এই ব্যবস্থায় জমা রাখা হয় যাতে ইউরোপের কোম্পানিগুলো সহজে ইরানে পণ্য রপ্তানি করতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থা আলোর মুখে দেখেনি। পর্যবেক্ষকদের মতে ইউরোপ যদি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করত তাহলেও ইরান মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে না।
ইরান 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থার আওতায় তেল বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায়। কিন্তু ইউরোপ ইরানের এ যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করায় এবং এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় তেহরানের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসা স্বাভাবিক ব্যাপার। ইরান অভিযোগ করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুধু যে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে তাই নায় তাদের দেয়া প্রতিশ্রুত অর্থাৎ 'ইনসটেক্স' ব্যবস্থা বাস্তবায়নেও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। 'ইনসটেক্স' বর্তমানে ইরান ও ইউরোপের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার পরিবর্তে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে যার পেছনে রয়েছে মার্কিন চাপ ও ইন্ধন।
No comments