ভিআইপি সংস্কৃতির বেদিতে বলিদান by সাজেদুল হক
মৃত্যুর
মিছিল চলছে। মারা যাচ্ছে মানুষ। আর তোমরা শুধুই নীরব। হ্যামলেট নাটকে
ঐতিহাসিক উচ্চারণ। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। মৃত্যুর মিছিল চলছে আমাদের
মাতৃভূমিতেও। স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক। নানা কারণ।
ডেঙ্গুতে শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলো। দমবন্ধ অবস্থা। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ। তারচেয়েও বেশি অসহায়। এমন সময় অন্য একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাও আলোচনার ঝড় তুলেছে। বহুকাল হলো দাসপ্রথা দুনিয়া থেকে বিলোপ হয়েছে। যদিও জোহান উলফগ্যাং ভন গ্যাটে ‘ফাউস্টে’ লিখেছেন যারই হই না কেন আমরা আসলে ক্রীতদাসই। মাননীয় যুগ্ম সচিব আব্দুস সবুর মণ্ডল ফাউস্ট পড়েছেন কি-না কে জানে? ঘটনাটি এরই মধ্যে সবার জানা। বৃহস্পতিবার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয় নড়াইলের একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা সেদিন রাতেই একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। কিন্তু ভিআইপি (?) আব্দুস সবুর মণ্ডল আসবেন বলে কয়েকঘণ্টা আটকে রাখা হয় ফেরি। দুই ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষার পর যুগ্ম সচিব মহোদয় এলে অ্যাম্বুলেন্সটি যেতে দেয়া হয়। ফেরিটি যাত্রা শুরু করার পর মাঝপথেই মারা যায় তিতাস ঘোষ।
তিতাস একটি নদীর নাম। অদ্বৈত মল্লবর্মনের প্রখ্যাত উপন্যাস। কিন্তু এখন তিতাস নামটি পরিণত হয়েছে এ জাতির দুঃখ-যন্ত্রণা আর অসহায়ত্বের এক প্রতীকে। এ রাষ্ট্রে জনগণ যে কত অসহায়, এমনকি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরাও যে জনগণের প্রভু বনে আছেন এই ঘটনা আরো একবার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। আব্দুস সবুর মণ্ডলও একটি প্রতীক মাত্র। এটা অভিনব কোনো ঘটনা নয়। এবং এটা শুধু প্রশাসন ক্যাডারের ঘটনাও নয়। হালজমানায় আরো অনেক ক্যাডার আরো ক্ষমতাবান হয়ে উঠছে। তারা মনে করেন, তারাই এখন সকল ক্ষমতার উৎস। ভিআইপি সংস্কৃতি এদেশে নতুন কিছু নয়। বহুকাল ধরেই চলে আসছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের ক্ষমতায়ন। দুঃখজনক হলেও সত্য এ সংস্কৃতি এখন আরো বহুগুণে ক্ষমতাবান। সংবিধান জনগণকে এ রাষ্ট্রের মালিক ঘোষণা করেছে। কিন্তু এটা যে কত বড় মশকরা তা সম্ভবত উল্লেখ না করলেও চলে। অনেক পর্যবেক্ষকই মনে করেন, সংবিধান সংশোধন করে মুষ্টিমেয় জনগণকে এ রাষ্ট্রের মালিকানা দেয়া উচিত। যেটা সত্য সেটাই সংবিধানে লেখা থাকা উচিত। কোন জাতির সংবিধান অলিক কোন গ্রন্থ হতে পারে না।
তিতাস ঘোষের নির্মম মৃত্যু অনেকের বিবেকে নাড়া দিয়েছে। খুব সম্ভবত, এটা ক্ষণিকের জন্য। যে কারণেই হোক না কেন, এটা এক গর্তে ঢুকে যাওয়া সময়। কোন কিছুতেই মানুষের কিছু আসে যায় না। তবুও তিতাস ঘোষের মৃত্যু অথবা হত্যার বিচার চেয়ে অনেকে মুখ খুলেছেন। তারপরও তদন্ত কমিটি গঠনের নামেও একধরনের তামাশা হয়ে গেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই নিষ্ঠুর, নির্মম মৃত্যুর দায় নেবে কে? প্রশ্ন অনেক। উত্তর নেই। যদিও প্রশ্ন করাও এখন সহজ কাজ নয়। তিতাসের মায়ের কাছে, বাবার কাছে, পরিবারের কাছে কি জবাব দেবে এই রাষ্ট্র? একটি পরিবার, একজন ব্যক্তির কাছে তার সন্তানের চেয়ে বেশি মূল্যের, বহুমূল্যের তো কিছু নেই। তিতাসের মৃত্যুর বা হত্যার কি সঠিক তদন্ত হবে? তদন্তে কারও কি কোন দোষ পাওয়া যাবে? তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তারও কি বিচার হবে? বুঝদার মানুষ মাত্রেই জানেন, এসবের সম্ভাবনা খুবই কম। সবচেয়ে কম সম্ভাবনা হচ্ছে, ভিআইপি সংস্কৃতির অবসানের। বৃটিশ শাসন, পাকিস্তানি শোষণের বিদায় হয়েছে। কিন্তু যে কলকব্জা ব্যবহার করে তারা এসব করতো তা সচল আছে পুরোমাত্রাতেই। যে কারণে শাসন আর শোষণ এখনও চলছে স্বাধীন বাংলাদেশে। স্বাধীনতার পুরোটা সময়ই। বহুমাত্রিকভাবেই এটা চলে আসছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি সংবিধান কার্যকর হয়নি আজো। জনগণ রাষ্ট্রের মালিকানা পায়নি। তারা প্রজাই রয়ে গেছে। যে কারণে তিতাস ঘোষেরা অ্যাম্বুলেন্সে মারা যায়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর বেদিতে উৎসর্গিত প্রাণ এটাই কি প্রথম? প্রতিদিন ভিআইপি সংস্কৃতিতে আটকে থাকে এমন কত অ্যাম্বুলেন্স। প্রতিদিন সবক দেয়া হয় জনগণকে। যেন রাষ্ট্রের আর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কোনই দায়িত্ব নেই। সব দায়িত্ব প্রজাদের।
ডেঙ্গুতে শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলো। দমবন্ধ অবস্থা। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ। তারচেয়েও বেশি অসহায়। এমন সময় অন্য একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাও আলোচনার ঝড় তুলেছে। বহুকাল হলো দাসপ্রথা দুনিয়া থেকে বিলোপ হয়েছে। যদিও জোহান উলফগ্যাং ভন গ্যাটে ‘ফাউস্টে’ লিখেছেন যারই হই না কেন আমরা আসলে ক্রীতদাসই। মাননীয় যুগ্ম সচিব আব্দুস সবুর মণ্ডল ফাউস্ট পড়েছেন কি-না কে জানে? ঘটনাটি এরই মধ্যে সবার জানা। বৃহস্পতিবার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয় নড়াইলের একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা সেদিন রাতেই একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। কিন্তু ভিআইপি (?) আব্দুস সবুর মণ্ডল আসবেন বলে কয়েকঘণ্টা আটকে রাখা হয় ফেরি। দুই ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষার পর যুগ্ম সচিব মহোদয় এলে অ্যাম্বুলেন্সটি যেতে দেয়া হয়। ফেরিটি যাত্রা শুরু করার পর মাঝপথেই মারা যায় তিতাস ঘোষ।
তিতাস একটি নদীর নাম। অদ্বৈত মল্লবর্মনের প্রখ্যাত উপন্যাস। কিন্তু এখন তিতাস নামটি পরিণত হয়েছে এ জাতির দুঃখ-যন্ত্রণা আর অসহায়ত্বের এক প্রতীকে। এ রাষ্ট্রে জনগণ যে কত অসহায়, এমনকি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরাও যে জনগণের প্রভু বনে আছেন এই ঘটনা আরো একবার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। আব্দুস সবুর মণ্ডলও একটি প্রতীক মাত্র। এটা অভিনব কোনো ঘটনা নয়। এবং এটা শুধু প্রশাসন ক্যাডারের ঘটনাও নয়। হালজমানায় আরো অনেক ক্যাডার আরো ক্ষমতাবান হয়ে উঠছে। তারা মনে করেন, তারাই এখন সকল ক্ষমতার উৎস। ভিআইপি সংস্কৃতি এদেশে নতুন কিছু নয়। বহুকাল ধরেই চলে আসছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের ক্ষমতায়ন। দুঃখজনক হলেও সত্য এ সংস্কৃতি এখন আরো বহুগুণে ক্ষমতাবান। সংবিধান জনগণকে এ রাষ্ট্রের মালিক ঘোষণা করেছে। কিন্তু এটা যে কত বড় মশকরা তা সম্ভবত উল্লেখ না করলেও চলে। অনেক পর্যবেক্ষকই মনে করেন, সংবিধান সংশোধন করে মুষ্টিমেয় জনগণকে এ রাষ্ট্রের মালিকানা দেয়া উচিত। যেটা সত্য সেটাই সংবিধানে লেখা থাকা উচিত। কোন জাতির সংবিধান অলিক কোন গ্রন্থ হতে পারে না।
তিতাস ঘোষের নির্মম মৃত্যু অনেকের বিবেকে নাড়া দিয়েছে। খুব সম্ভবত, এটা ক্ষণিকের জন্য। যে কারণেই হোক না কেন, এটা এক গর্তে ঢুকে যাওয়া সময়। কোন কিছুতেই মানুষের কিছু আসে যায় না। তবুও তিতাস ঘোষের মৃত্যু অথবা হত্যার বিচার চেয়ে অনেকে মুখ খুলেছেন। তারপরও তদন্ত কমিটি গঠনের নামেও একধরনের তামাশা হয়ে গেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই নিষ্ঠুর, নির্মম মৃত্যুর দায় নেবে কে? প্রশ্ন অনেক। উত্তর নেই। যদিও প্রশ্ন করাও এখন সহজ কাজ নয়। তিতাসের মায়ের কাছে, বাবার কাছে, পরিবারের কাছে কি জবাব দেবে এই রাষ্ট্র? একটি পরিবার, একজন ব্যক্তির কাছে তার সন্তানের চেয়ে বেশি মূল্যের, বহুমূল্যের তো কিছু নেই। তিতাসের মৃত্যুর বা হত্যার কি সঠিক তদন্ত হবে? তদন্তে কারও কি কোন দোষ পাওয়া যাবে? তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তারও কি বিচার হবে? বুঝদার মানুষ মাত্রেই জানেন, এসবের সম্ভাবনা খুবই কম। সবচেয়ে কম সম্ভাবনা হচ্ছে, ভিআইপি সংস্কৃতির অবসানের। বৃটিশ শাসন, পাকিস্তানি শোষণের বিদায় হয়েছে। কিন্তু যে কলকব্জা ব্যবহার করে তারা এসব করতো তা সচল আছে পুরোমাত্রাতেই। যে কারণে শাসন আর শোষণ এখনও চলছে স্বাধীন বাংলাদেশে। স্বাধীনতার পুরোটা সময়ই। বহুমাত্রিকভাবেই এটা চলে আসছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি সংবিধান কার্যকর হয়নি আজো। জনগণ রাষ্ট্রের মালিকানা পায়নি। তারা প্রজাই রয়ে গেছে। যে কারণে তিতাস ঘোষেরা অ্যাম্বুলেন্সে মারা যায়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর বেদিতে উৎসর্গিত প্রাণ এটাই কি প্রথম? প্রতিদিন ভিআইপি সংস্কৃতিতে আটকে থাকে এমন কত অ্যাম্বুলেন্স। প্রতিদিন সবক দেয়া হয় জনগণকে। যেন রাষ্ট্রের আর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কোনই দায়িত্ব নেই। সব দায়িত্ব প্রজাদের।
No comments