ভারত কর্তৃক অধিকৃত কাশ্মীরের স্ট্যাটাস বদলের অর্থ কি

ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে ব্যাপক নিরাপত্তা অভিযান অব্যাহত রেখে ওই রাজ্যের জন্য নির্দিষ্ট বিশেষ স্ট্যাটাসটি সংবিধান থেকে বাতিল করেছে ভারত সরকার।

সংবিধানের ওই স্ট্যাটাস অনুসারে কাশ্মীরের বাইরের নাগরিকরা ওই রাজ্যে জমি বা সম্পদ কিনতে পারবে না বা সেখানে স্থায়ী বসতি গড়তে পারবে না।

কি ঘটছে?
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার সোমবার সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে, সেখানে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের স্থায়ী অধিবাসীদের বিশেষ অধিকার দেয়া হয়েছে।

মোদির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন ১৯৪৭ সালে ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার আগ থেকে যে অধিকারের বিষয়টি চলে আসছে, সেটা ছিল ‘অস্থায়ী’ এবং সরকার এটাকে বিলুপ্ত করবে।

এই ধরনের সিদ্ধান্তের সমালোচকরা বলেছেন যে, অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার মাধ্যমে সেখানে হিন্দুদের বসতি গড়ে রাজ্যের জনসংখ্যার চেহারা বদলে দিতে চায় সরকার।

সেখানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং জনগণের সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সেখানকার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতিকে রোববার থেকে গৃহবন্দী রেখেছে ভারত সরকার। পাশাপাশি উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলে কারফিউয়ের মতো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট ও ফোন সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের বিশেষ স্ট্যাটাসটা কি?
ভারতীয় সংবিধানের ৩৫এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের স্থানীয় আইনসভা ওই এলাকার জন্য স্থায়ী নাগরিকত্বের বিষয়টি নির্ধারণ করবে।

১৯৫৪ সালে এক প্রেসিডেন্টের আদেশের মধ্য দিয়ে এটি সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে যুক্ত হয়, যেখানে কাশ্মীরকে বিশেষ স্বায়ত্বশাসনের মর্যাদা দেয়া হয়েছে।

৩৫এ অনুচ্ছেদে কাশ্মীরের বাইরের নাগরিকদের সেখানে স্থায়ী বসতি স্থাপন, জমি কেনা, স্থানীয় সরকারে চাকরি করা এবং শিক্ষা স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

এই অনুচ্ছেদকে পার্মানেন্ট রেজিডেন্ট ল হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এতে আরও বলা হয়েছে যে, রাজ্যের কোন মেয়ে রাজ্যের বাইরের কোন ছেলেকে বিয়ে করলে সে এখানকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে। ওই মেয়ের সন্তানরাও এখানকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে বলে এতে উল্লেখ রয়েছে।

কিভাবে ৩৫এ প্রণীত হয়েছিল?
১৯২৭ সালে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের প্রশাসনের এক আদেশের মাধ্যমে এই এলাকার জন্য বিশেষ এক মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার দুই মাস পরে তৎকালীন কাশ্মীরের শাসক মহারাজা হারি সিং কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে ট্রিটি অব অ্যাকসেশান স্বাক্ষর করেছিলেন, যেটার মাধ্যমে ভারতের সংবিধানে অনুচ্ছেদ ৩৭০ যুক্ত হয়।

১৯৫২ সালের দিল্লী এগ্রিমেন্টের মধ্য দিয়ে এটি আরও বিস্তৃত হয়। এ সময় প্রেসিডেন্টের আদেশের মধ্য দিয়ে এই রাজ্যের অধিবাসীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেয়া হয় কিন্তু এখানকার অধিবাসীদের যে আলাদা মর্যাদা আগে ছিল, সেটিও বজায় রাখা হয়।

কিভাবে এটার বিলোপ হতে পারে?
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০(৩) অনুচ্ছেদে এই বিধান রাখা হয়েছে যে, প্রেসিডেন্টের আদেশের মাধ্যমে এটা বাতিল হতে পারে। তবে, এ ধরনের আদেশ অবশ্যই রাজ্যের কন্সটিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে অনুমোদিত হতে হবে। যেহেতু এই অ্যাসেম্বরি ১৯৫৭ সালে বিলুপ্ত করা হয়, তাই এই অনুচ্ছেদের বাতিলের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কেউ বলেছেন, এটার জন্য রাজ্যের এমপিদের অনুমোদন লাগবে এবং অন্যেরা বলছেন, প্রেসিডেন্টের আদেশই এ জন্য যথেষ্ট হবে।

৩৫এ অনুচ্ছেদের কার্যকারিতার বিষয়টি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে নেয়া হয়েছিল। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্যরা বলেছিলেন যে, আদালত যদি এ বিষয়টি বজায় রাখে, তাহলে মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার প্রেসিডেন্টের আদেশের মাধ্যমে এটাকে বাতিল করবে।
>>>এপি

No comments

Powered by Blogger.