বরগুনা হত্যাকাণ্ড: মাদক, রাজনৈতিক প্রভাব আর ক্ষমতার এক দুষ্ট চক্র - বিবিসি বাংলার সরেজমিন রিপোর্ট by আকবর হোসেন
এই কলেজের সামনেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে |
লাস্ট আপডেট- ২২ জুলাই ২০১৯: বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বরগুনা শহরে
দিনে-দুপুরে বহু মানুষের সামনে রিফাত শরীফ নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার
ঘটনা এখন দেশজুড়ে আলোচনার বিষয়।
এই ঘটনার তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়
যখন হত্যাকাণ্ডের ২১ দিন পরে রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা
মিন্নিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার
করে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
ছোট এই জেলা শহরে একটি
হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতায় বাংলাদেশের মানুষ স্তম্ভিত হয়ে যায়, যখন এর ভিডিও
সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
আর
এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এবং এরপর রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতা,
সঙ্গে মাদক ব্যবসা জড়িত থাকার অভিযোগ, পুরো ঘটনাকে ভিন্ন এক মাত্রা দেয় -
অভিযোগ ওঠে যে বড় কিছু আড়াল করতেই পেছন থেকে ক্ষমতাশালীরা কলকাঠি
নাড়ছেন।
আমি বরগুনায় বিভিন্ন পেশার লোকজনের সাথে কথা বলেছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা কিছু অভিযোগ তুলেছেন।
যে
রাজনৈতিক মহলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে জোরালো অভিযোগ উঠেছে, তাদের সামনে
রয়েছেন বরগুনার একটি আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ
শম্ভু এবং তার আইনজীবী পুত্র সুনাম দেবনাথ।
এই হত্যা মামলার প্রধান
আসামী পুলিশের সঙ্গে কথিত এক বন্দুকযুদ্ধে ঘটনার কয়েকদিন পরই নিহত
হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে নয়ন বন্ড নামে বরগুনাবাসীর কাছে পরিচিত এই সাব্বির
আহম্মেদ ওই শহরে একটি গ্যাংয়ের নেতা, যাদের মদদ দেন মিঃ শম্ভুর পুত্র।
আমি
বরগুনা শহরে থাকার সময়ে সুনাম দেবনাথের সঙ্গে কথা বলি, কিন্তু তিনি কোন
সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি। আর তিনদিন চেষ্টা করেও তার পিতার কোন মন্তব্য
পাওয়া যায়নি।
তবে এর আগে বিবিসি বাংলার কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে পিতা-পুত্র দু'জনেই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
হত্যাকাণ্ডে মিন্নি ফ্যাক্টর?
মিন্নির
সাথে রিফাত শরীফের প্রেমের সম্পর্ক ছিল দেড় থেকে দুই বছরের মতো - বিবিসি
বাংলার কাছে এমনটা দাবি করেছেন মিন্নির বাবা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন
কিশোর।
দুই পরিবারের সূত্রেই বলা হয়েছে, রিফাত শরীফের মাধ্যমেই
নয়ন বন্ডের সাথে মিন্নির পরিচয় হয়েছিল। নিহত রিফাত শরীফ এবং নয়ন বন্ড -
দুজনেই স্কুল জীবন থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং একসময় তারা দুজনেই একই
গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়েন।
নয়ন বন্ড-এর মা শাহিদা বেগম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তার ছেলে প্রায় আটমাস আগে মিন্নিকে বিয়ে করে।
কথিত ওই বিয়ের একটি কাবিননামাও রয়েছে, কিন্তু বিয়েতে মিন্নির পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিলেন না বলে তিনি জানান।
শাহিদা বেগম বলেন, বিয়ের পরে তাঁর ছেলে এবং পুত্রবধূ কুয়াকাটায়
বেড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেন যে মিন্নি কখনো তাদের বাড়িতে
স্থায়ীভাবে বসবাস না করলেও নিয়মিত যাতায়াত করতো।
কিন্তু মাস
দুয়েক আগে রিফাত শরীফের সাথে মিন্নির বিয়ে হয়। এই ঘটনা নয়ন বন্ডকে
ক্ষিপ্ত করে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে ধারণা দেয়া হয়।
বরগুনার এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশ আয়োজন করেই রিফাত শরীফের সাথে মিন্নির বিয়ে হয়।
এখন
প্রশ্ন হচ্ছে, মিন্নি যদি নয়ন বন্ডের স্ত্রী হবেন, তাহলে রিফাত শরীফের
সাথে মিন্নির বিয়ের সময় নয়ন আপত্তি তোলেননি কেন? কেন তিনি নিশ্চুপ
ছিলেন? এই প্রশ্ন তুলেছেন মিন্নির মা মিলি আখতার।
মিন্নির পরিবার বলছে, নয়নের সঙ্গে কথিত বিয়ের বিষয়ে তারা কিছুই জানতেন না।
তবে
এক পর্যায়ে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, নয়ন বন্ড জোর করে
মিন্নিকে আটকে রেখে একটি কাবিননামায় স্বাক্ষর আদায় করে।
"ও একদিন
ওর ছোট কাকার কাছে বলছে, আমার কাছে বলার সুযোগ হয় নাই ওর, এই রকম একটা
কাহিনি করছে। আমি মনে করছি ও পোলাপান মানুষ, কী করছে, কী কয়, এটা আমরা
তেমন একটা গুরুত্ব দেই নাই।"
এই কাবিননামাকে তিনি বানোয়াট বলে দাবি করেন।
মিন্নির
বাবা প্রশ্ন তোলেন, "আমার কথা হইল, নয়ন বন্ডের সাথে যদি আমার মেয়ের
বিবাহ হয়, তাহলে যেদিন আমার মেয়ের আনুষ্ঠানিক বিবাহ দিলাম সেদিন নয়ন
বন্ড কোথায় ছিল?"
নয়ন বন্ডকে চেনেন এমন কয়েকজন বিবিসি বাংলাকে
বলেছেন, মিন্নিকে পাওয়ার জন্য নয়ন বন্ড ব্যাকুল ছিল না। যদি তাই হতো,
তাহলে মিন্নির বিয়েতে নয়ন বন্ড প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারতো, কিন্তু
সেটি সে করেনি।
তবে নয়ন বন্ড এবং রিফাত শরীফের মধ্যে বন্ধুত্ব একসময় শত্রুতায় রূপ
নেয় বলে জানাচ্ছেন বরগুনাবাসীরা। কারণ, নয়ন বন্ডের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন
হয়ে রিফাত শরীফ ভিন্ন আরেকটি গ্রুপে যোগ দিয়েছিল।
পুলিশের একটি
সূত্র জানায়, মাস খানেক আগে একটি মাদকের মামলায় রিফাত শরীফকে পুলিশের
কাছে ধরিয়ে দিয়েছিলেন নয়ন বন্ড। এছাড়া, এই হত্যা মামলার আরেক আসামী
রিফাত ফরাজীর সাথেও রিফাত শরীফের দ্বন্দ্ব ছিল।
কিছুদিন আগে রিফাত ফরাজীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে রিফাত শরীফ - এমন কথা শোনা গেছে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে।
বেশ
কিছুদিন আগে বরগুনা শহরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের
বাড়ির সামনে একটি রেস্তোঁরায় খাবার খেতে যায় রিফাত শরীফ। তখন ওই বাড়ির
সামনে মোটর সাইকেল পার্কিং করাকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যানের স্ত্রীর সাথে
রিফাত শরীফের বচসা হয়।
এই বিষয়টি হত্যা মামলার দুই আসামী রিফাত
ফরাজী এবং রিশান ফরাজী - এই দুই ভাইকে ক্ষুব্ধ করে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
কারণ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্ত্রী তাদের খালা।
রিফাত শরীফ
হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে রিফাত শরীফ তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে কিনা -
এমন প্রশ্নে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্ত্রী খুকি অবশ্য বিস্ময় প্রকাশ
করেন।
তিনি বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেন, রিফাত শরীফকে তিনি কখনো দেখেননি, বাকবিতণ্ডা তো দূরের কথা।
মিন্নিকে গ্রেফতারের জন্য রাজনৈতিক চাপ
রিফাত শরীফকে যারা প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে, তারা বরগুনা শহরে সংঘবদ্ধ অপরাধী হিসেবে পরিচিত।
বরগুনা
শহরে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকের অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন নয়ন
বন্ড এবং রিফাত ফরাজী - এমন অভিযোগ রয়েছে। মাদকের মামলায় এরা বেশ
কয়েকবার কারাগারেও গিয়েছিলেন।
রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে, তাহলো এরা কার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এতোটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন?
কিন্তু
এ আলোচনা আড়ালে চলে যেতে থাকে যখন নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ গত
১৩ই জুলাই, অর্থাৎ ঘটনার ১৮ দিন পরে পুত্রবধূ মিন্নির গ্রেফতারের দাবি
তোলেন।
বরগুনায় কর্মরত একাধিক সাংবাদিক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন,
স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথ সংবাদ
সম্মেলন করাতে দুলাল শরীফকে নিয়ে বরগুনা প্রেসক্লাবে এসেছিলেন।
দুলাল শরীফ যখন সংবাদ সম্মেলন করেন, তখন সুনাম দেবনাথ অন্য আরেকটি কক্ষে অবস্থান করেন।
তখন
থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, রাজনৈতিক চাপে পড়ে দুলাল শরীফ সংবাদ
সম্মেলনটি করেছেন কিনা। যদিও মিঃ শরীফ বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেন, তিনি
কারো দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন না।
এমপি পুত্রের তৎপরতা
রিফাত
শরীফ হত্যাকাণ্ড এবং মিন্নির গ্রেফতারের পর বরগুনায় আলোচনার
কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সুনাম দেবনাথ - অভিযোগ, তিনি তার পিতার রাজনৈতিক
ছত্রছায়ায় থেকে মামলার তদন্তে নানা রকম প্রভাব খাটাচ্ছেন।
এমন অভিযোগও রয়েছে যে মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে নিহতের বাবা
দুলাল শরীফকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়ে ক্ষান্ত হননি সুনাম দেবনাথ।
মিন্নির গ্রেফতারের দাবিতে বরগুনা শহরে তার উদ্যোগে সমাবেশও হয়েছে।
সুনাম
দেবনাথ নিজেও সেখানে উপস্থিতি ছিলেন। মিঃ দেবনাথের অনুসারীরা ফেসবুক এবং
ইউটিউবে এ হত্যাকাণ্ডকে নানাভাবে 'নারীঘটিত বিষয়' হিসেবে প্রমাণের
যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
যা সবাইকে বিস্মিত
করেছে, তাহলো মিন্নিকে গ্রেফতারের পরদিন যখন আদালতে উপস্থাপন করা হয়, তখন
তার পক্ষে বরগুনায় কোন আইনজীবী পাওয়া যায়নি।
মিন্নির পিতা বিবিসি
বাংলাকে বলেছেন, মেয়ের পক্ষে আদালতে দাঁড়ানোর জন্য তিনি তিনজন আইনজীবীর
সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। এদের মধ্যে একজনকে তিনি টাকাও দেন। কিন্তু তাদের
সবাই শেষ মুহূর্তে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্যের পুত্র সুনাম দেবনাথ নিজে বরগুনার একজন আইনজীবী।
গত
২৭শে জুন তিনি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, "আমরা বরগুনার আইনজীবীরা
রিফাত শরীফ হত্যাকারীদের কোন আইনি সহায়তা দিব না, একজনকেও না। আশাকরি আমার
এই প্রস্তাবের সাথে সকল আইনজীবীরা একমত হবেন।"
মিঃ দেবনাথের এই ফেসবুক পোস্ট আইনজীবীদের উপর এক ধরণের চাপ তৈরি করে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন আইনজীবী।
নাম
প্রকাশ না করার শর্তে বরগুনার একজন সিনিয়র আইনজীবী বিবিসি বাংলাকে বলেন,
মিন্নিকে যেদিন আদালতে উপস্থাপন করা হচ্ছিল সেদিন মিঃ দেবনাথের অনুসারীরা
আইনজীবীদের ''অহেতুক ভিড় না করার'' পরামর্শ দেন।
"তখনই আমরা বুঝতে পারলাম যে বিষয়টা কোন দিকে যাচ্ছে," বলছিলেন ওই আইনজীবী। তার মতে, আইনজীবীদের অনেকেই নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
সম্প্রতি
কুমিল্লায় আদালতের ভেতরে একটি হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন
তোলেন , "যে দেশে বিচারকের সামনে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, সেখানে আমার
জীবনের নিরাপত্তা কোথায়?"
কেন রাজনৈতিক চাপ
রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর আলোচনা জোরদার হতে থাকে যে এই অপরাধের মদদদাতা কারা?
রিফাত
শরীফকে কুপিয়ে হত্যার জন্য যারা প্রত্যক্ষভাবে দায়ী বলে অভিযোগ উঠেছে,
তাদের মধ্যে রয়েছেন নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ ১৬ জন। বরগুনা শহরে মাদকসহ
নানা অপরাধ তৎপরতার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
এই অপরাধী চক্রের পেছনে রাজনৈতিক মদদ ছিল।
এই অপরাধী চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য মাদকের মামলায় কারাগারে গেলেও তাদের বেশি দিন আটকে রাখা সম্ভব হয়নি।
এবং রাজনৈতিক প্রভাবেই তারা জেল থেকে বের হয়ে দ্বিগুণ উদ্যমে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, বরগুনা শহরে এমন অভিযোগ বেশ জোরালো।
বরগুনা
জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে,
এমন আশংকা থেকেই মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে
রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা।
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি
জুবায়ের আদনান অনিক প্রশ্ন তোলেন, "মাদকটা কে চালায়? মাদকের পিছনে কারা
জড়িত? এই যে নয়ন কাদের প্রশ্রয়ে এতদূর এসেছে?"
বিষয়গুলো নিয়ে সুনাম দেবনাথের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি।
সাক্ষাৎকারের
জন্য বিবিসির পক্ষ থেকে টেলিফোন করা হলে মিঃ দেবনাথ বলেন, "কয়েকটা
মিডিয়া এরই মধ্যে এ ঘটনায় আমাকে ভিলেন বানিয়েছে। সেজন্য এই মুহূর্তে কোন
সাক্ষাৎকার দিতে চাচ্ছি না।"
তবে গত ১৮ জুলাই বিবিসি বাংলাকে তিনি
বলেছিলেন, "আমার বিরোধী পক্ষের কিছু লোক আর স্থানীয় কিছু সাংবাদিক,
নির্বাচনের সময় থেকে আমার বিরুদ্ধে রীতিমত উঠেপড়ে লেগেছে। রিফাত আমার
বন্ধুর মতো ছিল। তার মৃত্যুতে আমি সবার আগে, সুষ্ঠু বিচার চাই।"
"আমার ফেসবুকে আমি সবার বিচার চেয়ে পোস্ট দিয়েছি। আপনারা সবাই দেখেছেন। ষড়যন্ত্রে প্লিজ বিশ্বাস করবেন না," ওইদিন বলেছিলেন তিনি।
স্থানীয় রাজনীতি
বরগুনার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই বেশ প্রভাবশালী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।
তবে
দলটির নেতারা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে ২০১৪
সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের কিছুদিন পর থেকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা
তাঁর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান।
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের অনেক
নেতা এখন মিঃ শম্ভুর বিপক্ষে। কয়েক বছর আগে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের বেশ
কিছু নেতা একত্রিত হয়ে মিঃ শম্ভুর বিপক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়
পর্যায়ে অভিযোগও দাখিল করেছেন।
একজন সংসদ সদস্য হিসেবে বরগুনার প্রশাসনে তাঁর প্রভাব থাকলেও বরগুনা আওয়ামী লীগে তিনি অনেকের কাছেই অপছন্দের পাত্র।
নাম
প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বিবিসি
বাংলাকে বলেন, দলের ভেতরে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে যাবার পর আধিপত্য ধরে রাখতে
অপরাধী চক্র গড়ে তোলেন মিঃ শম্ভুর ছেলে।
সেজন্য এই সংঘবদ্ধ অপরাধী
চক্রের কর্মকাণ্ড আড়াল করতেই রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডকে নারীঘটিত বিষয়
হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিজের নাম
প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে খুব কম মানুষই আগ্রহী বরগুনা শহরে। তবে তাদের
ধারণা, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডটি রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে বন্দী হয়ে ভিন্ন দিকে
প্রবাহিত হচ্ছে।
বিষয়গুলো নিয়ে সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ
শম্ভুর সাথে বারবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি টেলিফোন ধরেননি। সংসদ
ওয়েবসাইটে তাঁর দুটো টেলিফোন নম্বর দেয়া আছে। এর একটি বন্ধ এবং অপরটি
তাঁর স্ত্রী রিসিভ করে বলছেন যে তিনি বাড়িতে নেই।
অভিযোগের বিস্তারিত জানিয়ে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর দুটো মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।
তবে
তিনিও বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন গত ১৮ই জুলাই। তখন তিনি বলেছিলেন,
"আমার এতো বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কোন গুন্ডা বাহিনী নিয়ে চলিনি।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের সঙ্গে আমার বা আমার দলের কোন সম্পৃক্ততা
নেই। সবার মতো আমিও চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। এক্ষেত্রে আমি সব
ধরণের সহযোগিতা দিতে রাজি আছি।"
অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেছেন ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।
আর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির দাবি করেছেন, এই মামলার তদন্তে কোন রাজনৈতিক চাপ নেই।
আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি - ছিলেন মামলার প্রধান সাক্ষী, তবে এখন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত |
No comments