‘অনেক হয়েছে এবার ক্ষান্ত দেন’- কীভাবে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হয় জানা আছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেছেন, হরতাল, অবরোধ দিয়ে মানুষের
জীবন ধ্বংস করা, খুন করা বন্ধ করতে হবে। বন্ধ না করলে কীভাবে করতে হয় তা
আওয়ামী লীগের জানা আছে। শক্ত হাতে সন্ত্রাসী কাজ বন্ধ করা হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন বানচাল করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক হয়েছে এবার ক্ষান্ত দেন।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আসেননি, ভুল করেছেন। ভুলের খেসারত আপনাকেই দিতে হবে।’ তিনি বলেন, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যত কঠোর হওয়া দরকার, সরকার তত কঠোর হবে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্যের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময়কার বিভিন্ন কথা তিনি তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। সোনার বাংলা করাই আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার।’ তবে তাঁর বক্তব্যের বেশির ভাগ অংশ জুড়েই ছিল বিরোধী দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা। হরতাল, অবরোধ ও সহিংসতা বন্ধের জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি বারবার আহ্বান জানান তিনি।
নির্বাচনে না আসার জন্য ধন্যবাদ
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ তিনি নির্বাচনে আসেননি। তিনি নির্বাচনে আসেননি, কারণ যুদ্ধাপরাধের দল জামায়াত আসতে পারেনি। ভালোই হলো, বাংলাদেশের মানুষকে যুদ্ধাপরাধীদের দলকে ভোট দিতে হয়নি। বিএনপি নেত্রীকে অনুরোধ করব, লাদেনের মতো ভিডিও দিয়ে, কর্মসূচি ঘোষণা করে দেশের মানুষকে যেন আর কষ্ট না দেন।’
ভোটারদের ধন্যবাদ
নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বিরোধী দল নির্বাচনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনকে।’ একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করায় তিনি নির্বাচন কমিশনকেও ধন্যবাদ জানান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র্যাব, আনসার-ভিডিপি, সেনাবাহিনী বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
১২ তারিখ সরকার গঠন
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন সরকার গঠন করার জন্য। এজন্য আগামী ১২ জানুয়ারি সরকার গঠনের জন্য শপথ গ্রহণ করব।’
শক্ত হাতে সন্ত্রাসী কাজ বন্ধ করব
বিএনপির নেতা খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক হয়েছে, এবার ক্ষান্ত দেন। বাংলাদেশের মানুষের ক্ষতি না করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। উন্নতি অবশ্যই হবে। সঙ্গে রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধী নিয়ে বিএনপির ক্ষমতা নেই যে সেটা বন্ধ করবে।’ তিনি বলেন, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যত কঠোর হওয়া দরকার, সরকার তত কঠোর হবে। শক্ত হাতে সন্ত্রাসী কাজ বন্ধ করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘লাদেনের মতো ভিডিওবার্তা দিয়ে আন্দোলনে নেমে দেশের মানুষকে কষ্ট যেন তিনি না দেন, সেটাই তাঁর কাছে অনুরোধ। কেউ যদি স্বাভাবিক জীবনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তাহলে আমরা তা প্রতিহত করব। শক্ত হাতে সন্ত্রাসী কাজ বন্ধ করা হবে।’
জবাব দিতে হবে সংখ্যালঘুদের কেন হত্যা করা হচ্ছে
খালেদা জিয়ার প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ আর কত ধ্বংসযজ্ঞ সহ্য করবে? তিনি বলেন, ‘জবাব দিতে হবে, কেন সংখ্যালঘুদের হত্যা করা হচ্ছে?’ ২০০১ সালের নির্বাচনের পরও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, সে সময় আমরা বিরোধী দলে ছিলাম। কিন্তু এখন জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আছি। শক্ত হাতে এসব বন্ধ করা হবে। দায়ীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’
কষ্টের দিন থাকবে না
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে ছেলে-মেয়েরা স্কুল যেতে পারছে না। হরতাল-অবরোধের কারণে দিনের পর দিন স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়েছে। এ কষ্টের দিন আর বেশি দিন থাকবে না। আবার মানুষ স্কুলে যেতে পারবে। নিয়মিত কাজকর্ম করতে পারবে। কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না। কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে শক্ত হাতে প্রতিহত করব। বাংলার জনগণের জীবন নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। এজন্য আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে সহযোগিতা চাই।’
অশান্তি বেগমের আক্রমণের শিকার থেকে কেউ রেহাই পায়নি
বিএনপির নেতার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মনে শান্তি এলেও একজনের মনে কোনো শান্তি ছিল না। আমাদের বিএনপির নেত্রীর মনে শান্তি ছিল না। বাংলাদেশের মানুষ যখন শান্তিতে থাকেন, উনি তখন অশান্তিতে ভোগেন। আর উনার সেই অশান্তির আগুন ছড়িয়ে দেন সারা বাংলাদেশে। আবার শুরু করেন তিনি আন্দোলনের নামে খুন খারাবি, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড। উনার আন্দোলন মানে কী? উনি জনগণকে ডাক দেন। উনার ডাকে কেউ সাড়া দেয় না।’ তিনি বলেন, ‘বোমা হামলা করে বাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা শুরু করেন। সিএনজিতে ড্রাইভার যাত্রীসহ পুড়িয়ে মারেন। নিরীহ গরু। ট্রাকে গরু যাচ্ছে। সেই গরুগুলো ওই অশান্তি বেগমের আক্রমণের শিকার থেকে রেহাই পায়নি।’ তিনি বলেন, ‘রিকশাওয়ালা, গাড়িচালক কেউ রেহাই পায়নি। বারবার আলোচনার ডাক দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। আলটিমেটাম দিয়েছেন।’
তিনি যা গালি দেবেন তাই আশীর্বাদ হয়ে আসবে
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৬ সালে বিএনপির নেত্রী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এমনকি বিরোধী দলও হতে পারবে না। উনি যখন যা বলেন সেটা আওয়ামী লীগের বেলায় প্রযোজ্য না হলেও, ফলে যায় ওনার বেলায়।’ ‘তিনি যা গালি দেবেন, তা-ই আশীর্বাদ হয়ে আসবে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বক্তব্যের শুরুতে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ভাষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, একটি দেশ কীভাবে চলবে সেটা ১০ জানুয়ারি এই ময়দানে বঙ্গবন্ধু বলে গিয়েছেন। একটি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি কীভাবে চলবে, সেটাও তিনি ওই ভাষণে বলেছেন। তাই এ দিনটি আজ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশের অবস্থা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৯৯৬-২০০১ বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণযুগ। ওই সময় বিশ্বসভায় বাংলাদেশ সম্মান পায়। ২০০১-২০০৬ আবার চলে অত্যাচার নির্যাতন। বাংলাদেশে ৭১-এর মতো নির্যাতন করা হয়। ছোট্ট ৬ বছরের শিশু ফাহিমা, পূর্ণিমা ধর্ষণের শিকার হয়। কারণ তাদের বাবা-মা নৌকায় ভোট দিয়েছিল। এরপর ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের হাত থেকে মুক্ত করে আওয়ামী লীগ। সফলতা অর্জন করে। বাংলার মানুষের মনে তখন শান্তি ছিল। কিন্তু একজনের মনে শান্তি ছিল না। তিনি জনতার কাছে জানতে চান, ‘কার মনে শান্তি ছিল না?’ সমস্বরে সবাই জবাব দেয়, ‘খালেদা জিয়া’।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিক, মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রমুখ।
No comments