বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা by সুভাষ সিংহ রায়
১৯৭২
সালের ১০ জানুয়ারি বিকেলবেলা বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
বিমানবন্দর জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। বিমান থেকে বঙ্গবন্ধু দেখলেন গোটা ঢাকা
শহরের সব মানুষ যেন বিমানবন্দরকে ঘিরে আছে। একজন বিদেশি সাংবাদিক
বঙ্গবন্ধুর পাশেই বসা ছিলেন। দেখলেন বঙ্গবন্ধু হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠলেন।
তিনি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, 'আপনার তো আনন্দের দিন। আপনি কাঁদছেন
কেন?' বঙ্গবন্ধু কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, 'এত মানুষ যে আমার অপেক্ষায়। আমি
ওদের খাওয়াব কী? পাকিস্তানিরা তো সব ধ্বংস করে গেছে।' জাতির পিতা না হলে ওই
মুহূর্তে এ রকম কথা বলা যায় না। বঙ্গবন্ধুর উদ্বেগ ছিল স্বাভাবিক। রাস্তা
নেই, ব্রিজ নেই। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে কোনো টাকা নেই। আজ ২০১৪ সালের ১০
জানুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি মজুদ আছে।
কীভাবে শুরু হয়েছিল আমাদের রাষ্ট্রীয় কোষাগার? কানাডা সরকার তখন
বঙ্গবন্ধুকে আড়াই মিলিয়ন ডলারের স্বর্ণের একটা উপহার দেয়। সেটাই রাষ্ট্রীয়
কোষাগারে জমা দিয়ে শুরু করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির
সেই বিকেলে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে খোলা ট্রাকে বঙ্গবন্ধু তখনকার রেসকোর্স
ময়দানের দিকে এগোতে থাকেন। এইটুকু পথ তাকে পাড়ি দিতে হয় আড়াই ঘণ্টায়।
এখানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। তিনি বলেছিলেন, গত ৭ মার্চ আমি এই
রেসকোর্সে বলেছিলাম, 'দুর্গ গড়ে তোলো।' আমি বলেছিলাম, 'বাংলাদেশকে মুক্ত
করে ছাড়ব।' বাংলাদেশ আজ মুক্ত, স্বাধীন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন, "আমি
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, নেতা হিসেবে নয়, আপনাদের ভাই হিসেবে বলছি_ আমাদের
সাধারণ মানুষ যদি আশ্রয় না পায়, যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকরা চাকরি বা
কাজ না পায়, তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের তাই এখন
অনেক কাজ করতে হবে। তোমরা, আমার ভাইয়েরা, গেরিলা হয়েছিলে দেশমাতার মুক্তির
জন্য। তোমরা রক্ত দিয়েছ। তোমাদের রক্ত বৃথা যাবে না। ... বাংলার লাখো
মানুষের আজ খাবার নাই। অসংখ্য লোক গৃহহারা। এদের জন্য মানবতার খাতিরে আমরা
সাহায্য চাই। বিশ্বের সব রাষ্ট্রের প্রতি আমি সাহায্যের আবেদন জানাই।
বিশ্বের সব মুক্ত রাষ্ট্রকে অনুরোধ করছি_ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিন। কবিগুরু
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, 'সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি
করে মানুষ করোনি।' কবিগুরুর এই আক্ষেপকে আমরা মোচন করেছি। বাঙালি জাতি
প্রমাণ করে দিয়েছে, তারা মানুষ, তারা প্রাণ দিতে জানে। এমন কাজ তারা এবার
করেছে যার নজির ইতিহাসে নেই।" অথচ ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, মাত্র সাড়ে
তিন বছরের মাথায় তাকে সপরিবারে রক্ত দিতে হলো! বঙ্গবন্ধু অল্প সময়ের মধ্যে
বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাবান জাতিতে পরিণত করতে পেরেছিলেন। অর্থনৈতিক
মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু স্বদেশে এসেছিলেন বলেই
ভারতীয় সৈন্য অতি দ্রুত সময়ে প্রত্যাবর্তন করেছিল।
পৃথিবীর যেখানেই তিনি গিয়েছেন সরকারপ্রধান কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানরা মুগ্ধ হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন। আজকে পৃথিবীতে ধনী রাষ্ট্র ও দরিদ্র রাষ্ট্রবৈষম্যের বিরুদ্ধে অনেক বিশ্বনেতা সোচ্চার হয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন, 'আমি বৃহৎ শক্তিবর্গের প্রতি অস্ত্র প্রতিযোগিতা হ্রাস করে সে অর্থ দিয়ে দরিদ্র দেশের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন বলেই স্বাধীন বাংলাদেশ সার্বভৌম সত্তা নিয়ে বিশ্বসভায় জায়গা করে নিতে পেরেছিল। শুধু জাতির পিতা শেখ মুজিবের কারণেই বিদেশিরা বলত, বাংলাদেশ আসলেই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেশ।
সুভাষ সিংহ রায় :রাজনৈতিক বিশ্লেষক
suvassingho@gmail.com
পৃথিবীর যেখানেই তিনি গিয়েছেন সরকারপ্রধান কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানরা মুগ্ধ হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন। আজকে পৃথিবীতে ধনী রাষ্ট্র ও দরিদ্র রাষ্ট্রবৈষম্যের বিরুদ্ধে অনেক বিশ্বনেতা সোচ্চার হয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন, 'আমি বৃহৎ শক্তিবর্গের প্রতি অস্ত্র প্রতিযোগিতা হ্রাস করে সে অর্থ দিয়ে দরিদ্র দেশের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন বলেই স্বাধীন বাংলাদেশ সার্বভৌম সত্তা নিয়ে বিশ্বসভায় জায়গা করে নিতে পেরেছিল। শুধু জাতির পিতা শেখ মুজিবের কারণেই বিদেশিরা বলত, বাংলাদেশ আসলেই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেশ।
সুভাষ সিংহ রায় :রাজনৈতিক বিশ্লেষক
suvassingho@gmail.com
No comments