একজন বিশ্বভাবুকের প্রতিকৃতি by মাসুদুজ্জামান

ইতালীয় মার্কসবাদী অ্যান্তোনিও গ্রামসি একবার তার জেলখানার নোটবুকে উল্লেখ করেছিলেন, নির্বস্তুক গণতন্ত্রের কোনো পটভূমিকায় নয়, বরং বাস্তব প্রথানুগ বিভিন্ন ঐতিহাসিক পারম্পর্যের মধ্য দিয়ে বুদ্ধিজীবীদের আবির্ভাব ঘটে। কবি, লেখক, ভাবুক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের আবির্ভাব ঘটেছিল ঠিক এ রকমই একটা পটভূমিতে, গত শতকের পঞ্চাশ দশকের বাংলাদেশে। ব্যক্তিপরিচয়ের সূত্রে তার লেখালেখি ও ভাবনার সঙ্গে কিছুটা হলেও পরিচিতি ঘটেছে আমার। সেইসব প্রসঙ্গ নিয়েই এই লেখা। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। সময়টা গত শতকের সত্তর দশকের শেষ দিক। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বেশ কয়েকটা বছর কেটে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকলেই যা হয়, নানা দিকে দৃষ্টি প্রসারিত হয়ে যায়। অনেক কিছু জানবার ও করবার স্পৃহা জেগে ওঠে। প্রথমেই মনে হয় সেইসব ব্যক্তিত্বের কথা, যারা আমাদের কালে কিংবদন্তি হয়ে আছেন। রাজনীতি সচেতন হলেও রাজনীতিবিদদের প্রতি আকৃষ্ট হইনি। আগ্রহটা জেগেছে শিল্পসাহিত্যের প্রতি। ফলে, যারা সাহিত্যচর্চা করেন- তা সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকেই হোক কিংবা বাইরে থেকে- তাঁদের সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম। আমাদের কালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বেশ কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন যাঁরা লেখালেখি আর প্রাগ্রসর চিন্তার সূত্রে দেশ জুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। মাঝে মাঝেই দেখতাম, ত্রস্ত পায়ে অলস মন্থর কোনো বিকেলে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে শহীদ মিনারের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। তিনি তখন থাকতেন শহীদ মিনারের পাশেই বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায়। কলাভবনের পশ্চিম পাশের লনে সান্ধ্যভ্রমণে উপস্থিত হতেন আহমদ শরীফ। প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সন্জীদা খাতুন ছিলেন আমার সরাসরি শিক্ষক। হুমায়ুন আজাদ তখন এডিনবরা থেকে সদ্য দেশে ফিরেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যোগ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবু হেনা মোস্তফা কামালও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আগে থেকেই বাংলা বিভাগে কাজ করছিলেন রফিকুল ইসলাম আর সৈয়দ আকরাম হোসেনের মতোন খ্যাতিমান শিক্ষকেরা। এরই মাঝে কিছুটা দলছুট কিন্তু প্রাজ্ঞ, সৃষ্টিশীল একজন মানুষের সন্ধান আমরা পেয়েছিলাম, তিনি হচ্ছেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। দলছুট বললাম এই কারণে যে তিনি পড়াতেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে, বসতেন কলাভবনের নিচতলার উত্তর-পূর্ব কোণের প্রায়ান্ধকার সর্বশেষ ঘরটিতে। মিতকথন আর পরিমার্জিত ব্যবহারের কারণে প্রথম সাক্ষাতেই মুগ্ধ হয়েছিলাম আমি। পরিচয়ের সূত্রটাও ছিল আকর্ষক, অন্তত আমার কাছে।
কবিতাচর্চার পাশাপাশি আমার তখন আগ্রহ জন্মেছে সমকালীন বিশ্বভাবুকদের প্রতি। যখন যে বই পাচ্ছি সেই সূত্রে গোগ্রাসে বিশ্বসাহিত্য পড়ছি, পড়ছি নানা ভাবুকের লেখা। পরিচয় ঘটছে ফুকো, দেরিদা, হাবেরমাস, সাঈদ এদের সঙ্গে। এরকমই একটা দিনে অনুমতি নিয়েই প্রবেশাধিকার পেয়েছিলাম বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের সেই রুমে, যেটা ছিল একাধারে তাঁর বিভাগীয় বসবার কক্ষ আর তাঁরই প্রতিষ্ঠিত সমাজ নিরীক্ষণ কেন্দে র কার্যালয়। প্রথম পরিচয়ের দ্বিধা নিয়ে কিছুটা কুণ্ঠিত হয়ে বসে আছি। তিনি নিজেই নাম-ধাম জেনে সহজ করে নিলেন। চা খাওয়ার সৌজন্যের মাঝেই চোখে পড়ল টেবিলের ওপর রাখা আমার পরম প্রার্থিত একটা বইয়ের প্রতি - অরিয়েন্টালিজম। ইতিমধ্যে বইটার নাম জেনেছি কিন্তু তখনও পড়া হয়নি, ফলে লুব্ধকের দৃষ্টিতে বইটা দেখছি। তবে এর এই মুহূর্তের পাঠক যিনি, তাঁর কাছ থেকে বইটা তো প্রথম পরিচয়ের দিনই চেয়ে নিয়ে পড়ব বলা যায় না। তবে বইটা পড়ার যে দারুণ ইচ্ছে, সে কথা জানাতে ভুলিনি তাঁকে। ফলে কয়েক দিন পরে দ্বিতীয় সাক্ষাতেই বইটা হাতে পেয়ে গেলাম। সুখ্যাত কোনো বইপাঠের সে এক দারুণ রোমাঞ্চকর অনুভূতি। ফলে আরেক দিন বইটার বিষয়আশয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে জমে উঠল ছোটখাটো আলোচনা। আমার ইচ্ছেটা ছিল এরকম- যতটা না বলব তার চেয়ে অনেক বেশি শুনে নিয়ে বুঝে নেব বইটার মর্মবস্তু। আমার এই অভিলাষ পূর্ণ হয়েছিল আর সেই সূত্রে সেদিন আমি বুঝে নিয়েছিলাম তাঁর পঠনপাঠন আর বোধের সীমা কতটা বিস্মৃত, কতটা গভীর। সাহিত্য থেকে রাজনীতি, সমাজতত্ত্ব থেকে নৃতত্ত্ব, সংস্কৃতিতত্ত্ব থেকে দর্শন, অনেক কিছুই তাঁর অধিগত। একজন পরিপূর্ণ আধুনিক মানুষ তিনি- কী জীবনাচরণে, কী পঠনপাঠনে, কী ভাবনায়। আমাদের ওই সময়ে একমাত্র তাঁকেই দেখেছি পশ্চিমা বিশ্বের সাম্প্রতিক কালের সদ্য প্রকাশিত শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি বা দর্শনের বইগুলো পড়তে। তাঁরই সাহচর্যে আমার কাছে খুলে গিয়েছিল পশ্চিমের জানালা। এরও আগে তিনি যে সৃষ্টিশীল একজন লেখক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত, উন্মোচিত হয়ে গিয়েছিল সেই পরিচয়।
২.
শুরু গত শতকের সেই পঞ্চাশের দশকে। পঞ্চাশের সূচনাবর্ষেই নতুন রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল একটি কবিতা সংকলন- নতুন কবিতা। এই সংকলনটিই ছিল বাংলাদেশের নতুন কবিদের প্রথম কবিতা সংকলন। আশরাফ সিদ্দিকী এবং আবদুর রশীদের সম্পাদনায় প্রকাশিত এই সংকলনে স্থান পেয়েছিল সমকালের তেরোজন তরুণ কবির কবিতা। শামসুর রাহমান যদিও লক্ষ্য করেছেন, প্রকৃত অর্থে নতুন কোনো কবিতাই ছিল না সংকলনটিতে, তবু তাঁর ভাষ্য অনুসারে এই সংকলনেই কয়েকজন কবির অস্পষ্ট বিশিষ্টতা প্রথম থেকেই চিহ্নিত হয়ে গিয়েছিল। অস্পষ্ট বিশিষ্টতায় চিহ্নিত এই কবিসংকলনের অন্যতম কবি ছিলেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। সেই থেকে আজও একজন তরুণ কবির ভাষায় আর আÍঅনুভবের গভীরতা দিয়ে কবিতা রচনা করে চলেছেন তিনি। মানবিক দিক থেকে তাঁর কবিতা সংরক্ত, মিতকথনের ঔজ্জ্বল্যে দ্যুতিময়। একটা কবিতা থেকে কয়েক পঙ্ক্তি তুলে দিই : আমি এক ফতুর মানুষের মতো/বিশ্বাসগুলো খুঁজি, /ভালোবেসে ফতুর হওয়ার ভিতর/কোথাও মিল আছে, আমি মিলগুলোর কথা ভাবি। এই যে নিহিলবাদিতা থেকে অস্তিতে ফেরার আকুতি, কবিতার মধ্য দিয়ে ইতিবাচক মানবিকতায় স্থির হওয়ার অভিলাষ, তাঁর মতো প্রাজ্ঞ কবির পক্ষেই তা ভাবা সম্ভব।
অনেকটা গল্পের মতো করে নিজের কথাগুলো বলেন তিনি, ছোট ছোট বাক্য, বাক্যের মধ্যে কখনও কখনও কিছু উপমা- এভাবেই গল্পকবিতার কুশলী নির্মাতা বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। আরেকটি কবিতার কথা বলি : তুমি চা রেখে বাইরে গেছ। / পাহাড়টা ছাড়িয়ে নদীটা পেরিয়ে / রোদটা যখন পায়ের কাছে আসবে তখন আমি উঠবো। এখানে রোদের যে মানবিকীকরণ করলেন, খুবই সরল সেই বর্ণনা, কিন্তু নিঃসন্দেহে মর্মস্পর্শী। কষ্টকল্পনা দিয়ে তিনি কবিতাকে পাঠকের কাছে অনধিগম্য করে তোলেন না।
আমিত্বের কথাই আধুনিক কবিতা, বলেছিলেন ব্রাত্য-ইতিহাসের প্রখ্যাত ভারতীয় ভাবুক রণজিৎ গুহ তাঁর তিন আমির কথা শীর্ষক গ্রন্থে। বোরহানউদ্দিনের কবিতা এই আমিত্বের বয়ানে পূর্বাপর বিস্মৃত। তবে কার্তেসীয় অর্থে নয়, আমিত্বের ভেতর দিয়ে বিশ্বজনীন হয়ে উঠবার দিকেই তাঁর কবিতার ঝোঁক সুস্পষ্ট : সরকার পতনের চিৎকার শোনা যায় / কিন্তু যে রাষ্ট্রটা মানুষের খুলির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত/সে-খুলির কাছ / দায়বদ্ধতা কারো নেই।/ হে অমানুষ মানুষ/তোমার দায়বদ্ধতা কার কাছে/আমার এক চোখে পানি, আর এক চোখে আগুন/আমি দুচোখ মেলে চেয়ে থাকি / সকল বধ্যভূমির দিকে। ব্যক্তিক প্রেম, এমনকি শারীরিক প্রেমও তাঁর কবিতায় এভাবে সর্বমানবিক বা রাজনৈতিক হয়ে ওঠে : জানেন কি / শরীরে অনুভূতির প্রবেশই / রাজনৈতিক / গাছের মধ্যে পাখিদের প্রবেশ / করার মতো / জানেন কি / তখন শরীর আগের মতো নয় / তখন গাছগুলি বিপ্লবের মতো বিস্ফোরিত।
কবিতার পাশাপাশি গল্পও লিখেছেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। নাগরিক নির্বেদ আর নৈঃসঙ্গ্যের মধ্যে ব্যক্তিক আত্মোপলব্ধিই হচ্ছে তাঁর গল্পের বিষয়আশয়।
তবে তাঁর সৃষ্টিশীলতার সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক হচ্ছে, আমার মতে, তাঁর প্রবন্ধগুলো। সমকালীন রাজনীতির চমৎকার বৌদ্ধিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি, যা আর কারও লেখায় খুঁজে পাই না। দৈশিক ও বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়ে এমন সব অন্তর্ভেদী গভীর বিশ্লেষণাত্মক প্রবন্ধ তিনি লিখেছেন, যার তুলনা পাওয়া ভার। সেই সঙ্গে তিনি লিখেছেন শিল্পসংস্কৃতি বিষয়ক নানা গ্রন্থ। আমাদের লোকশিল্প এবং চিত্রশিল্পের তিনিই প্রথম আধুনিক ব্যাখ্যাতা। শুধু প্রচারবিমুখ বলে কিংবা আত্মপ্রচারে আগ্রহী নন বলে তাঁর প্রবন্ধ নিয়ে তেমন আলোচনা হতে দেখা যায় না। অনেকেই আবার তাঁর পঠনপাঠন ও বোধের সমীপবর্তী হতে পারেন না বলে প্রবন্ধগুলোকে দুর্বোধ্য বলে মনে করেন। বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের প্রবন্ধের বিষয়আশয় এতটাই আধুনিক যে, পাঠকের যদি বিশ্বভাবুকতার পূর্বপাঠজনিত অভিজ্ঞতা না থাকে, অর্থাৎ তিনি যদি এই সময়ের যেসব ভাবুক বিশ্বজুড়ে তাঁদের চিন্তাসূত্রে খ্যাতিমান হয়ে উঠেছেন, তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো না পড়ে থাকেন, তাহলে তাঁর প্রবন্ধ বোঝা সহজ হবে না। তাঁর রচিত কয়েকটি গ্রন্থের নামোল্লেখ করলেই বোঝা যাবে কী ধরনের আধুনিক কিন্তু অনিবার্য বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- বাংলাদেশের গ্রাম, বাংলাদেশে ধনতন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ, জয়নুল আবেদিনের জিজ্ঞাসা, নিস্তব্ধতার সংস্কৃতি, চিত্রশিল্প বাংলাদেশে, বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদ এবং মৌলবাদ, আধুনিকতা ও উত্তর-আধুনিকতার অভিজ্ঞতা শীর্ষক বইগুলোর কথা।
আমার ছোট্ট এই লেখাটিতে তাঁর প্রবন্ধের অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ হাজির করা একেবারেই অসম্ভব, কিন্তু তাঁর চিন্তার গভীরতা যে কতখানি, দু-একটি উদাহরণ দিয়ে তা ব্যক্ত করা যেতে পারে। তিনিই প্রথম দেখিয়েছেন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছে আর ব্যক্তির পরিসর গেছে সংকুচিত হয়ে। রাজনৈতিক এই কর্তৃত্ববাদের কারণে জনসাধারণ একটি স্থায়ী নির্ভরশীলতার আবর্তে নিমজ্জিত, অন্যপক্ষে এই প্রক্রিয়ায় নিুবর্গের স্বার্থ দমিত এবং রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের একটি সুষম, উন্নয়নমুখী নীতি অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষুণ্ন হয়েছে। এভাবেই বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর রাজনীতি ও রাষ্ট্রের সঙ্গে এর অন্তর্গত জনমানুষ, বিভিন্ন বিশ্ব উন্নয়ন সংস্থা, মৌলবাদ, পুরসমাজ, জাতীয়তাবাদ, আধুনিকতার বোধ, উত্তর-আধুনিকতার তর্ক, নান্দনিকতার রাজনৈতিক তাৎপর্য ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে চমৎকার মৌলিক বিশ্লেষণ হাজির করেছেন। কামরুল হাসান, জয়নুল আবেদিনের শিল্পকর্মকেও তিনি আধুনিকতা ও উত্তর-আধুনিকতার নিরিখে বিনির্মাণ করে নিয়েছেন। বাংলাদেশের কোনো ভাবুক তাঁর মতো দেশজ বোধে শিকড়িত থেকে আধুনিকতা ও উত্তর-আধুনিকতার বিশ্ববোধ দিয়ে আমাদের চিত্রশিল্প, শিল্পসাহিত্য, লোকসাহিত্য বা রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। শিল্পসাহিত্য আর রাজনীতির সমীকরণ প্রসঙ্গে তাই তিনি লিখতে পেরেছেন, সোনার বাংলা হচ্ছে আমাদের অস্তিত্ব, সোনার বাংলা হচ্ছে আমাদের রাজনীতির এবং শিল্পের প্রকাশবহ উপাদান।... এই প্রকাশবহতা হচ্ছে আমাদের গ্লানি, আমাদের মুক্তি, মোক্ষ, পুনরুজ্জীবন এবং চিরন্তনতা। জয়নুল আবেদীন এই অবস্থান থেকে শিল্পের ক্ষেত্রে এবং শেখ মুজিব এই অবস্থান থেকে রাজনীতির ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করেছেন আমাদের মুক্তি, মোক্ষ, পুনরুজ্জীবন এবং চিরন্তনতা তৈরি করার জন্য।
৩.
সংক্ষেপে বিবৃত করলে, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ডিসকোর্স হাজির করেছেন তাঁর বিচিত্র ধরনের লেখায়-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধে- তা নিঃসন্দেহে মৌলিক এবং গভীরতর ভাবনায় সমৃদ্ধ। প্রকৃত অর্থেই একজন সব্যসাচী লেখক তিনি। রাষ্ট্রচিন্তা, সমাজচিন্তা, নৃতাত্ত্বিক ভাবনা, নান্দনিক বোধ সবকিছু এমনভাবে তাঁর রচনায় মিলেমিশে গিয়েছে যে, দৈশিক পটভূমিতে বিবৃত হলেও বিশ্বভাবুকের মর্যাদায় তাঁকে অভিষিক্ত বলে মনে হয়। এই স্বল্পপরিসরে সেই ভাবনার পূর্ণাঙ্গ পরিচয় উপস্থাপন করা গেল না, তবু এই সামান্য কথনের মধ্য দিয়ে ৭৮তম জন্মদিনে তাঁর প্রতি জ্ঞাপন করছি গভীর শ্রদ্ধা।

No comments

Powered by Blogger.