মন্ত্রী হতে জোর তদবির by শাহেদ চৌধুরী ও শরীফুল ইসলাম
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা আগামী রোববার তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। রাষ্ট্রপতি
আবদুল হামিদ তার নিয়োগে গতকাল রাতেই সম্মতি দিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ
এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছে, নতুুন মন্ত্রিসভা গঠনের পর বর্তমান
মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের সংসদীয়
দলের বৈঠকে শেখ হাসিনা সংসদ নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। এদিকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই
পাওয়ার জন্য জোর তদবির শুরু হয়েছে। তরুণদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের
ডাকসাইটে নেতারাও শেষ মুহূর্তে দৌড়ঝাঁপ করছেন। সবাই নিয়মিত গণভবনে
আসা-যাওয়া করছেন। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। আওয়ামী
লীগের নীতিনির্ধারক অনেক নেতাই গতকাল রাতে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর
সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন
বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ। তার
সঙ্গে ছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তিনি মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির
অংশগ্রহণ নিয়ে দলের সিদ্ধান্তের কথা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
জাতীয় পার্টি চাইছে কমপক্ষে ১০ জন মন্ত্রী। তার কম হলে সামাল দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন রওশন এরশাদ। 'ঐকমত্যে'র সরকার_ তাই জাপা সরকারে থাকবে, বিরোধী দলেও থাকবে। নিন্দুকেরা বলছেন, জাপা সুযোগ পেয়ে এখন গাছেরটা ও তলারটাও খেতে চায়। তবে জাতীয় পার্টির চার থেকে পাঁচ নেতা মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন, এর বেশি নয় বলে আওয়ামী লীগ নেতারা সমকালকে জানিয়েছেন।
নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে পুরনো ১৯ জেলার প্রতিনিধিত্বের বিষয় মাথায় রাখছেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্য নেওয়ার বেলায় দক্ষ, সৎ এবং ক্লিন ইমেজকে বিবেচনায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে মন্ত্রিসভায় না রেখে সাংগঠনিক দায়িত্বে রাখা হতে পারে। মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন আগামী রোববার। বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে তাদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য প্রায় এক হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
মন্ত্রিসভায় কারা আসছেন_ এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। বেশ টেনশনে রয়েছেন মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে বাদপড়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। উদ্বেগ- উৎকণ্ঠায় রয়েছেন সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও। গতকাল সংসদ নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রীকে সরকার গঠনের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এ সময় মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির পরামর্শ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাল শনিবারের মধ্যে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নামের তালিকা চূড়ান্ত করবেন। শনিবার রাতে কিংবা রোববার সকালে সংশ্লিষ্টদের তা অবহিত করা হবে। রোববার মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের পর ওই দিনই দফতর বণ্টনের সম্ভাবনা রয়েছে। মহাজোট কিংবা সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রীদের কেউ নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেলে বেশির ভাগই আগের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাত দিনের মাথায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ২৩১টি আসনে জয়ী আওয়ামী লীগের এমপিরা গতকাল শপথ নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতাদের অনেকেই বলেছেন, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারির মন্ত্রিসভার মতো এবারের মন্ত্রিসভা গঠনের বেলায়ও চমক দেখাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগের মন্ত্রিসভায় অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা বাদ পড়লেও এই দফায় তা হবে না। কয়েকজন অভিজ্ঞের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নতুন এমপিও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাবেন। মহাজোট সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা ৩২ হলেও পরে তা বেড়ে হয়েছিল ৫১। এবার মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা এর বেশি নাও হতে পারে। এই সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০ জনের মধ্যে সীমিত থাকতে পারে। ২৯ সদস্যের বর্তমান সর্বদলীয় সরকারের কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন। বিতর্কিত কাউকেই নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হবে না বলে শোনা যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করতে চাইছেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এমন একজন জানিয়েছেন, সাত বিভাগের প্রতিনিধি থাকবে নতুন মন্ত্রিসভায়। এ ছাড়া পুরনো ১৯ জেলায়ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকবেন। কোনো জেলার প্রতিনিধি বাদ পড়লে সংশ্লিষ্ট জেলার যে কোনো একজন এমপিকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় হুইপ করা হবে। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা এবারকার মন্ত্রিসভায় না থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কেননা, মন্ত্রী না করে ওই সব নেতাকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। মহাজোট সরকারে বেশিরভাগ নেতা মন্ত্রী হওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে কিছুটা স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছিল বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন। কমপক্ষে তিন দফায় বিজয়ী এমপিদের অনেকেই এবারকার মন্ত্রিসভায় থাকবেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। এসব এমপি অনেকেই খুব পরিচিত মুখ না হলেও সংসদীয় রাজনীতিতে অভিজ্ঞ। এ কারণেই তাদের মন্ত্রিসভায় রাখতে আগ্রহী প্রধানমন্ত্রী। কে হচ্ছেন অর্থ ও আইনমন্ত্রী :অর্থ ও আইনমন্ত্রী কে হচ্ছেন_ এ নিয়ে নানা গুজব-গুঞ্জন রয়েছে। শেষতক আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী এবং ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ আইনমন্ত্রী থেকে যাচ্ছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা নিশ্চিত করেছেন। তবে অর্থমন্ত্রী হিসেবে এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নাম আলোচনায় রয়েছে। আইনমন্ত্রী হিসেবে আলোচনার পুরোভাগে রয়েছে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর নাম। ড. ফরাসউদ্দিনকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী করা হতে পারে।
তারকারা থাকছেন :নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে থাকলেও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। এবার তারা মন্ত্রিসভায় থাকছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তারকা নেতাদের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাতীয় পার্টি_জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ মন্ত্রী হচ্ছেন না। তবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ, অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু ও অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম মন্ত্রী হতে পারেন।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ওবায়দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আন্তর্জাতিক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, কৃষি সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক, শিক্ষা সম্পাদক নুুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মুজিবুল হক, রমেশ চন্দ্র সেন, শাজাহান খান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মল্পুম্নজান সুফিয়ান ও অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে পারেন। জাপাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের বিশেষ দূত হতে পারেন।
কক্ষচ্যুত তারকা :নতুন সরকারের সদস্য না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মহাজোট ও সর্বদলীয় সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর। তাদের মধ্যে থাকতে পারেন এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বীরউত্তম, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, জিএম কাদের, অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, আবদুল লতিফ বিশ্বাস, মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, দীপঙ্কর তালুকদার, আহাদ আলী সরকার, মোতাহার হোসেন, অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির, অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া, মাহবুবুর রহমান তালুকদার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এনামুল হক ও ওমর ফারুক চৌধুরী।
নতুন মুখ :মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন বেশ কয়েকজন নতুন মুখ। তাদের মধ্যে থাকতে পারেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাদারীপুর-৩ আসনের এমপি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জয়পুরহাট-২ আসনের এমপি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, দিনাজপুর-২ আসনের এমপি খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ফরিদপুর-১ আসনের এমপি আবদুর রহমান, জামালপুর-৩ আসনের এমপি মির্জা আজম, চাঁদপুর-২ আসনের এমপি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, নীলফামারী-২ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান নূর, চট্টগ্রাম-৯ আসনের এমপি নূরুল ইসলাম বিএসসি, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের এমপি নাজমুল হাসান পাপন, নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী, রাজশাহী-৬ আসনের এমপি শাহরিয়ার আলম, ঢাকা-৩ আসনের এমপি নসরুল হামিদ বিপু, নাটোর-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক, গাজীপুর-১ আসনের এমপি আ ক ম মোজাম্মেল হক, বান্দরবানের এমপি বীর বাহাদুর উশৈ সিং, কুমিল্লা-১০ আসনের এমপি আ হ ম মোস্তফা কামাল ও সিরাজগঞ্জ-২ আসনের এমপি হাবিবে মিল্লাত।
সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি :মহাজোট ও সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নতুন মন্ত্রিসভায় থাকা না-থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। মন্ত্রিসভায় স্থান না পেলেও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ূয়ার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাদের সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি। অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, রেজাউল করিম হীরা, আবুল কালাম আজাদ, ডা. আফছারুল আমীন, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, আবদুল হাই ও মেহের আফরোজ চুমকির সম্ভাবনা আধাআধি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ব্রিফিং :গতকাল সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেছেন, 'আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন। এর থেকে বেশি কিছু এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।' সচিব আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া তালিকা অনুযায়ী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথের ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শপথ অনুষ্ঠানে যারা মন্ত্রী হবেন, তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এ ছাড়া অতিথিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। বর্তমান মন্ত্রিসভার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা আছে। যখন নতুন ক্যাবিনেট শপথ নেবে, ওই ক্যাবিনেটই হবে সরকার। নতুন ক্যাবিনেট শপথ নিলে তখন থেকে তা কার্যকর হয়ে যাবে।
জাতীয় পার্টি চাইছে কমপক্ষে ১০ জন মন্ত্রী। তার কম হলে সামাল দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন রওশন এরশাদ। 'ঐকমত্যে'র সরকার_ তাই জাপা সরকারে থাকবে, বিরোধী দলেও থাকবে। নিন্দুকেরা বলছেন, জাপা সুযোগ পেয়ে এখন গাছেরটা ও তলারটাও খেতে চায়। তবে জাতীয় পার্টির চার থেকে পাঁচ নেতা মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন, এর বেশি নয় বলে আওয়ামী লীগ নেতারা সমকালকে জানিয়েছেন।
নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে পুরনো ১৯ জেলার প্রতিনিধিত্বের বিষয় মাথায় রাখছেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্য নেওয়ার বেলায় দক্ষ, সৎ এবং ক্লিন ইমেজকে বিবেচনায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে মন্ত্রিসভায় না রেখে সাংগঠনিক দায়িত্বে রাখা হতে পারে। মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন আগামী রোববার। বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে তাদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য প্রায় এক হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
মন্ত্রিসভায় কারা আসছেন_ এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। বেশ টেনশনে রয়েছেন মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে বাদপড়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। উদ্বেগ- উৎকণ্ঠায় রয়েছেন সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও। গতকাল সংসদ নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রীকে সরকার গঠনের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এ সময় মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির পরামর্শ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাল শনিবারের মধ্যে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নামের তালিকা চূড়ান্ত করবেন। শনিবার রাতে কিংবা রোববার সকালে সংশ্লিষ্টদের তা অবহিত করা হবে। রোববার মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের পর ওই দিনই দফতর বণ্টনের সম্ভাবনা রয়েছে। মহাজোট কিংবা সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রীদের কেউ নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেলে বেশির ভাগই আগের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাত দিনের মাথায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ২৩১টি আসনে জয়ী আওয়ামী লীগের এমপিরা গতকাল শপথ নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতাদের অনেকেই বলেছেন, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারির মন্ত্রিসভার মতো এবারের মন্ত্রিসভা গঠনের বেলায়ও চমক দেখাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগের মন্ত্রিসভায় অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা বাদ পড়লেও এই দফায় তা হবে না। কয়েকজন অভিজ্ঞের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নতুন এমপিও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাবেন। মহাজোট সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা ৩২ হলেও পরে তা বেড়ে হয়েছিল ৫১। এবার মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা এর বেশি নাও হতে পারে। এই সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০ জনের মধ্যে সীমিত থাকতে পারে। ২৯ সদস্যের বর্তমান সর্বদলীয় সরকারের কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন। বিতর্কিত কাউকেই নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হবে না বলে শোনা যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করতে চাইছেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এমন একজন জানিয়েছেন, সাত বিভাগের প্রতিনিধি থাকবে নতুন মন্ত্রিসভায়। এ ছাড়া পুরনো ১৯ জেলায়ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকবেন। কোনো জেলার প্রতিনিধি বাদ পড়লে সংশ্লিষ্ট জেলার যে কোনো একজন এমপিকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় হুইপ করা হবে। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা এবারকার মন্ত্রিসভায় না থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কেননা, মন্ত্রী না করে ওই সব নেতাকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। মহাজোট সরকারে বেশিরভাগ নেতা মন্ত্রী হওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে কিছুটা স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছিল বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন। কমপক্ষে তিন দফায় বিজয়ী এমপিদের অনেকেই এবারকার মন্ত্রিসভায় থাকবেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন। এসব এমপি অনেকেই খুব পরিচিত মুখ না হলেও সংসদীয় রাজনীতিতে অভিজ্ঞ। এ কারণেই তাদের মন্ত্রিসভায় রাখতে আগ্রহী প্রধানমন্ত্রী। কে হচ্ছেন অর্থ ও আইনমন্ত্রী :অর্থ ও আইনমন্ত্রী কে হচ্ছেন_ এ নিয়ে নানা গুজব-গুঞ্জন রয়েছে। শেষতক আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী এবং ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ আইনমন্ত্রী থেকে যাচ্ছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা নিশ্চিত করেছেন। তবে অর্থমন্ত্রী হিসেবে এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নাম আলোচনায় রয়েছে। আইনমন্ত্রী হিসেবে আলোচনার পুরোভাগে রয়েছে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর নাম। ড. ফরাসউদ্দিনকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী করা হতে পারে।
তারকারা থাকছেন :নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে থাকলেও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। এবার তারা মন্ত্রিসভায় থাকছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তারকা নেতাদের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাতীয় পার্টি_জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ মন্ত্রী হচ্ছেন না। তবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ, অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু ও অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম মন্ত্রী হতে পারেন।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ওবায়দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আন্তর্জাতিক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, কৃষি সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক, শিক্ষা সম্পাদক নুুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মুজিবুল হক, রমেশ চন্দ্র সেন, শাজাহান খান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মল্পুম্নজান সুফিয়ান ও অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে পারেন। জাপাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের বিশেষ দূত হতে পারেন।
কক্ষচ্যুত তারকা :নতুন সরকারের সদস্য না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মহাজোট ও সর্বদলীয় সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর। তাদের মধ্যে থাকতে পারেন এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বীরউত্তম, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, জিএম কাদের, অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, আবদুল লতিফ বিশ্বাস, মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, দীপঙ্কর তালুকদার, আহাদ আলী সরকার, মোতাহার হোসেন, অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির, অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া, মাহবুবুর রহমান তালুকদার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এনামুল হক ও ওমর ফারুক চৌধুরী।
নতুন মুখ :মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন বেশ কয়েকজন নতুন মুখ। তাদের মধ্যে থাকতে পারেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাদারীপুর-৩ আসনের এমপি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জয়পুরহাট-২ আসনের এমপি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, দিনাজপুর-২ আসনের এমপি খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ফরিদপুর-১ আসনের এমপি আবদুর রহমান, জামালপুর-৩ আসনের এমপি মির্জা আজম, চাঁদপুর-২ আসনের এমপি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, নীলফামারী-২ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান নূর, চট্টগ্রাম-৯ আসনের এমপি নূরুল ইসলাম বিএসসি, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের এমপি নাজমুল হাসান পাপন, নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী, রাজশাহী-৬ আসনের এমপি শাহরিয়ার আলম, ঢাকা-৩ আসনের এমপি নসরুল হামিদ বিপু, নাটোর-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক, গাজীপুর-১ আসনের এমপি আ ক ম মোজাম্মেল হক, বান্দরবানের এমপি বীর বাহাদুর উশৈ সিং, কুমিল্লা-১০ আসনের এমপি আ হ ম মোস্তফা কামাল ও সিরাজগঞ্জ-২ আসনের এমপি হাবিবে মিল্লাত।
সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি :মহাজোট ও সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নতুন মন্ত্রিসভায় থাকা না-থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। মন্ত্রিসভায় স্থান না পেলেও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ূয়ার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাদের সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি। অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, রেজাউল করিম হীরা, আবুল কালাম আজাদ, ডা. আফছারুল আমীন, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, আবদুল হাই ও মেহের আফরোজ চুমকির সম্ভাবনা আধাআধি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ব্রিফিং :গতকাল সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেছেন, 'আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন। এর থেকে বেশি কিছু এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।' সচিব আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া তালিকা অনুযায়ী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথের ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শপথ অনুষ্ঠানে যারা মন্ত্রী হবেন, তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এ ছাড়া অতিথিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। বর্তমান মন্ত্রিসভার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন পর্যন্ত আগের মন্ত্রিসভা আছে। যখন নতুন ক্যাবিনেট শপথ নেবে, ওই ক্যাবিনেটই হবে সরকার। নতুন ক্যাবিনেট শপথ নিলে তখন থেকে তা কার্যকর হয়ে যাবে।
No comments