এই অপশক্তিকে রুখে দাঁড়ান
প্রথমে যশোরের অভয়নগরে, তারপর দিনাজপুরের চেহেলগাজীতে, পরে দেশের অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়েছে ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বলা হচ্ছে, নির্বাচনবিরোধী শক্তি, বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা এই সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছেন। সমাজে তাঁদের শক্তি কতটুকু? কীভাবে কতিপয় দুর্বৃত্ত সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে? এই চিহ্নিত দুর্বৃত্তদের বাইরে সমাজের আরও কোনো রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি গোষ্ঠীস্বার্থে এসব সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ইন্ধন জোগাচ্ছে কি না, তা-ও খুঁজে বের করা দরকার। এর প্রতিকারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই বা কী করছে? প্রতিটি স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া কিংবা লুটপাটের পরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ঘটনাস্থলে হাজির হতে দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে আগেভাগে জানিয়েও আক্রান্ত লোকজন তাদের সহযোগিতা পান না। আর ক্ষমতাসীন দলটির স্থানীয় নেতারাও নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পরপরই এলাকা ছেড়েছেন। ভোটারদের নিরাপত্তার ব্যাপারে যে তাঁদের ন্যূনতম দায়িত্ব আছে, সেটিও তাঁরা বিস্মৃত হয়ে যান। প্রতিবারই নির্বাচন কিংবা কোনো জাতীয় দুর্যোগের পর সংখ্যালঘুদের ওপর এই যে সহিংসতা ঘটে চলেছে, সেটি গোটা জাতির জন্যই লজ্জাজনক। যে সাম্প্রদায়িকতাকে পরাস্ত করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই রাষ্ট্রে বারবার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে? সর্বশক্তি নিয়ে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
এ কথা ঠিক, রাষ্ট্রের হেফাজতকারী হিসেবে সরকারেরই দায়িত্ব সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। একই সঙ্গে সমাজের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়েরও দায়িত্ব রয়েছে। যে সমাজে কেবল ধর্মীয় পরিচয়ের কারণেই মানুষ আক্রান্ত হয়, সেই সমাজ কোনোভাবেই সভ্য বলে দাবি করতে পারে না, গণতান্ত্রিক তো নয়ই। গণতন্ত্রের জন্য যে নির্বাচন, সেই নির্বাচনের পরই সংখ্যালঘুদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে। ২০০১ সালে তাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের ভোট না দেওয়ায়। এবার আক্রান্ত হলেন তাদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভোট দেওয়ার কারণে। এ অবস্থা আর কত দিন চলবে? ২০০১ সালের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় অপরাধীদের সবার শাস্তি হয়নি। এমনকি বর্তমান সরকারের আমলে রামুসহ বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর মূল হোতাদেরও আমরা বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারিনি। এ ব্যর্থতার দায় কে নেবে? যদি অতীতের অপকর্মের জন্য অপরাধীরা শাস্তি পেত, তাহলে এই সাম্প্রদায়িক শক্তি নতুন করে হামলা চালানোর সাহস পেত না। সংখ্যালঘুদের ওপর যেসব সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে, তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক, অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক—এটাই দেশবাসীর দাবি। সরকার যদি এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে পূর্বসূরিদের মতো তাদেরও একদিন ইতিহাসের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
No comments