সমঝোতার জন্য সবকিছু করুন
(নির্বাচনোত্তর রাজনীতি)
দশম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সদস্যদের বেশিরভাগ বৃহস্পতিবার শপথ নিয়েছেন।
দুয়েক দিনের মধ্যেই নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে বলেও জানা গেছে। এই
নির্বাচন বর্জন ও প্রতিরোধের জন্য বিরোধীরা সচেষ্ট ছিল। তারা সফল হয়নি।
কিন্তু এটাও ঠিক যে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেশ-বিদেশে তেমনভাবে গ্রহণযোগ্য
হয়নি। ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম ছিল। তদুপরি ঘটেছে বিস্তর অনিয়ম। এখন
সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষকেই এই নতুন বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে। বিরোধীদের
হিংসাশ্রয়ী রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে যেমন সরে আসতে হবে, তেমনি সরকারপক্ষকেও
দেশে উদার গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির প্রতি মনোযোগী হতে হবে। বিএনপি এখন
আর আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদীয় বিরোধী দল থাকছে বটে, কিন্তু তাদের যে জনসমর্থন
যথেষ্ট সেটা ভুললে চলবে না। অন্যদিকে, বিরোধীদেরও আন্দোলনের কৌশল
পুনর্বিবেচনা করার সময় এসেছে। তারা গোটা ডিসেম্বর মাসজুড়েই দেশব্যাপী
হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। একই সঙ্গে চলেছে নির্বিচারে বোমাবাজিসহ
বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড। এতে সরকারকে যতটা কাবু করা গেছে, তার
চেয়ে ঢের বেশি দুর্দশায় ফেলা হয়েছে সাধারণ জনগণকে। তাদের সহিংস ও উগ্র
আন্দোলন জনগণ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। বিএনপি ও তাদের মিত্রদের অবশ্যই এ পথ
থেকে সরে আসতে হবে। আমরা দেখছি, গত কয়েকদিনে অবরোধ কর্মসূচি যথেষ্টই
ঢিলেঢালা ও শিথিল হয়ে পড়েছে। রাজধানীতে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় স্বাভাবিক।
দেশব্যাপী লঞ্চ ও ট্রেন যোগাযোগ আগে থেকেই কমবেশি নিয়মিত ছিল। এখন সড়কপথও
সচল হতে শুরু করেছে। যে কর্মসূচিতে জনগণ সাড়া দেয় না, তা বহাল রাখার কোনো
যুক্তি থাকতে পারে না। বিএনপি ও তার মিত্রদের একটি সবলতার দিক হচ্ছে, তারা
নির্বাচনের অগ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে যে যুক্তি দিচ্ছে তার প্রতি দেশে এবং
আন্তর্জাতিক মহলে যথেষ্ট সমর্থন রয়েছে। এ অবস্থায় তাদের উচিত হবে জনগণের
কাছে যাওয়ার জন্য নতুন কৌশল উদ্ভাবন। আন্দোলনে বিরতি দিলেই পরাজয় স্বীকার
করে নেওয়া হবে, এমন মনোভাব রাজনীতিতে অচল। সব মহল থেকেই বলা হচ্ছে,
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশে যত দ্রুত সম্ভব একাদশ সংসদ
নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আওয়ামী লীগকেও এ ব্যাপারে নতুন করে উদ্যোগী হতে
হবে। নির্বাচনের আগে প্রধান দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা একাধিক বৈঠকে
আলোচনায় মিলিত হয়েছিলেন। এখন সেটা নতুন করে শুরু হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীও
ফের বিএনপি চেয়ারপারসনকে ফোন করে কিংবা চিঠি দিয়ে আলোচনার আহ্বান জানাতে
পারেন। এতে ইতিবাচক সাড়া মিলবে, এমন প্রত্যাশা থাকবে। নিউইয়র্ক টাইমসকে
দেওয়া সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া আলোচনায় তার দলের দিক থেকে প্রস্তুত থাকার
কথা জানিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির শর্ত দিয়েছেন।
বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন আটক দলীয় নেতাদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের
প্রতি। রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকারকে অবশ্যই এসব বিষয়
বিবেচনা করতে হবে। বিরোধীরা নির্বাচন ভণ্ডুল করতে ব্যর্থ হয়েছে ঠিকই।
কিন্তু তাদের শক্তিহীন মনে করা ঠিক হবে না। ইতিমধ্যে দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে
গেছে। রাজনীতি-ক্ষমতা সবই তো দেশের জন্য, জনগণের জন্য। দেশবাসী আশা করে,
রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রধান দুই পক্ষ পরস্পরকে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে দ্রুত একটি
সমঝোতায় উপনীত হবে।
No comments