স্মরণ-সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বালু by গৌরাঙ্গ নন্দী
২০০৪ সালের ২৭ জুন। দিনটি ছিল সাংবাদিক বালু পরিবারের জন্য আনন্দের। সাধারণ আর ১০টি দিনের চেয়ে ভিন্নতর। বালুর দ্বিতীয় সন্তান হুসনা মেহরুবা টুম্পা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে। মাতৃহীন সন্তানরা বালুর খুবই প্রিয়। তাই উচ্ছ্বাসটা তাঁর একটু বেশি। নিজ সন্তানের এই সাফল্যগাথার অংশীদার তিনি তাঁর (বালু) মাকে করাতে চান।
তাই মাকে মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য ইকবালনগরে যান। বালু তাঁর সন্তানদের নিয়ে থাকতেন খুলনা মহানগরীর শান্তিধাম মোড়ের (সাবেক ইসলামপুর রোড) বাড়িতে। ওই বাড়ির নিচতলা ও দোতলায় দৈনিক 'জন্মভূমি' এবং সান্ধ্য দৈনিক 'রাজপথের দাবি'র কার্যালয়। তৃতীয় তলায় তিনি থাকেন। আর মা থাকতেন তাঁদের পুরনো বাড়ি ইকবালনগরে। বালুর অন্য ভাইরাও ওই বাড়িতে থাকেন। তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে বালু মাকে মিষ্টি খাইয়ে ফেরেন। তখন দুপুর ১২টার কিছু বেশি হবে। অফিস তথা বাড়ির তৃতীয় তলা ভবনের নিচে এসে তাঁর প্রাইভেট কারটি থামে। নেমে যায় মেয়ে টুম্পা ও ছোট ছেলে আশিক। বড় ছেলে আসিফ ও বালু নামেন পরে। বালু সবার পেছনে। তাঁরা গেট দিয়ে বাড়ির ভেতর যাচ্ছেন। গেটের মুখেই বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরণ। বোমাটি সরাসরি বালুর কোমরে আঘাত হানে। বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন একটু সামনে এগিয়ে থাকা তাঁর বড় ছেলে আসিফ কবির।
আসিফ কবির ওই দিনের ওই সময়কার বর্ণনা দিয়ে এক জায়গায় লিখেছেন, 'কোনো আশঙ্কা বা সন্দেহ ছাড়াই অবসন্ন স্টেশন ওয়াগনটায় চড়ে আমরা বাড়ির সামনে এসে থেমেছিলাম। তখন তাতানো দুপুর। রাস্তায় লোক-গাড়ি-রিকশা ছিল না তেমন। এ সময় হঠাৎ বোমা নিক্ষেপ করা হয় আমাদের বাবা হুমায়ুন কবির বালুর ওপর। আমি তাঁর কিছুটা দূরে ছিলাম। আমি অনুভব করলাম, একটা ঢিলের মতো কিছু এসে আমার পেছনে পায়ের ওপরের অংশে লাগল। পরে বুঝেছিলাম, ওটা ছিল বোমার অংশ।' বোমার আঘাতে ছয় ফুটেরও বেশি দীর্ঘ বালুর কোমরে ক্ষত তৈরি হয়। মাত্র পাঁচ মাস ১২ দিনের মাথায় খুলনা শহরে আরো একজন পরিচিত সাংবাদিক খুনের শিকার হন। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবের অদূরে দৈনিক সংবাদ ও নিউ এজের সিনিয়র রিপোর্টার এবং বিবিসি বাংলার প্রতিনিধি মানিক সাহা বোমা হামলায় খুন হন।
মধুমতির তীরে ইতিহাস-প্রসিদ্ধ সমৃদ্ধ নড়াইলের ইতনা গ্রামের মাতুলালয়ে জন্মেছিলেন সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বালু। দিনটি ১৯৪৭ সালের ৪ অক্টোবর। তাঁর বাবার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার বরফা গ্রামে। বাবা ইমান উদ্দিন সরদার এবং মা রাবেয়া বেগম। বালুরা ছয় ভাই এবং তিন বোন। তিনি ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। তাঁর বাবা পেশাগত কাজ এবং ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য চলে আসেন খুলনা শহরে। হুমায়ুন কবির বালু খুলনা শহরের বি কে ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক, সরকারি আযম খান কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭২ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি 'জয় বাংলা' পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে 'সাপ্তাহিক জন্মভূমি'র প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৭৬ সালে খুলনা নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৩ সালে সাপ্তাহিক জন্মভূমি দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তিনি এর সম্পাদক ছিলেন। তিনি খুলনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও তিনবার নির্বাচিত সভাপতি, খুলনা আঞ্চলিক সংবাদপত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, মিড-টাউন রোটারি ক্লাবের সভাপতি, বাংলাদেশ কাউন্সিলর অব এডিটরসের সদস্য, জনসংখ্যা পরিষদের সদস্য, খুলনা আঞ্চলিক সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি, পরিবার পরিকল্পনা সংস্থার সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালক ছিলেন। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য হুমায়ুন কবির বালু ১৯৯২ সালে খুলনা প্রেসক্লাব প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি পদক, ১৯৯৩ সালে সুজলা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী পদক, ১৯৯৪ সালে ডক্টর আশরাফ সিদ্দিকী পদক এবং ১৯৯৭ সালে সুর-ঝঙ্কার সম্মাননা লাভ করেন। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে একুশে পদক-২০০৯ (মরণোত্তর) দেওয়া হয়।
গৌরাঙ্গ নন্দী
আসিফ কবির ওই দিনের ওই সময়কার বর্ণনা দিয়ে এক জায়গায় লিখেছেন, 'কোনো আশঙ্কা বা সন্দেহ ছাড়াই অবসন্ন স্টেশন ওয়াগনটায় চড়ে আমরা বাড়ির সামনে এসে থেমেছিলাম। তখন তাতানো দুপুর। রাস্তায় লোক-গাড়ি-রিকশা ছিল না তেমন। এ সময় হঠাৎ বোমা নিক্ষেপ করা হয় আমাদের বাবা হুমায়ুন কবির বালুর ওপর। আমি তাঁর কিছুটা দূরে ছিলাম। আমি অনুভব করলাম, একটা ঢিলের মতো কিছু এসে আমার পেছনে পায়ের ওপরের অংশে লাগল। পরে বুঝেছিলাম, ওটা ছিল বোমার অংশ।' বোমার আঘাতে ছয় ফুটেরও বেশি দীর্ঘ বালুর কোমরে ক্ষত তৈরি হয়। মাত্র পাঁচ মাস ১২ দিনের মাথায় খুলনা শহরে আরো একজন পরিচিত সাংবাদিক খুনের শিকার হন। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবের অদূরে দৈনিক সংবাদ ও নিউ এজের সিনিয়র রিপোর্টার এবং বিবিসি বাংলার প্রতিনিধি মানিক সাহা বোমা হামলায় খুন হন।
মধুমতির তীরে ইতিহাস-প্রসিদ্ধ সমৃদ্ধ নড়াইলের ইতনা গ্রামের মাতুলালয়ে জন্মেছিলেন সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বালু। দিনটি ১৯৪৭ সালের ৪ অক্টোবর। তাঁর বাবার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার বরফা গ্রামে। বাবা ইমান উদ্দিন সরদার এবং মা রাবেয়া বেগম। বালুরা ছয় ভাই এবং তিন বোন। তিনি ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। তাঁর বাবা পেশাগত কাজ এবং ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য চলে আসেন খুলনা শহরে। হুমায়ুন কবির বালু খুলনা শহরের বি কে ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক, সরকারি আযম খান কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭২ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি 'জয় বাংলা' পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে 'সাপ্তাহিক জন্মভূমি'র প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৭৬ সালে খুলনা নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৩ সালে সাপ্তাহিক জন্মভূমি দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তিনি এর সম্পাদক ছিলেন। তিনি খুলনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও তিনবার নির্বাচিত সভাপতি, খুলনা আঞ্চলিক সংবাদপত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, মিড-টাউন রোটারি ক্লাবের সভাপতি, বাংলাদেশ কাউন্সিলর অব এডিটরসের সদস্য, জনসংখ্যা পরিষদের সদস্য, খুলনা আঞ্চলিক সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি, পরিবার পরিকল্পনা সংস্থার সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালক ছিলেন। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য হুমায়ুন কবির বালু ১৯৯২ সালে খুলনা প্রেসক্লাব প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি পদক, ১৯৯৩ সালে সুজলা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী পদক, ১৯৯৪ সালে ডক্টর আশরাফ সিদ্দিকী পদক এবং ১৯৯৭ সালে সুর-ঝঙ্কার সম্মাননা লাভ করেন। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে একুশে পদক-২০০৯ (মরণোত্তর) দেওয়া হয়।
গৌরাঙ্গ নন্দী
No comments