চারদিক-অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের খোঁজে by অদিতি ফাল্গুনী
শৈশবে আমাদের ভেতর পাঠ্যপুস্তকের সেই কবিতা কে মুখস্থ করেনি: ‘বাঙালী অতীশ লঙ্ঘিল গিরি, তুষারে ভয়ঙ্কর/ জ্বালিল জ্ঞানের দীপ তিব্বতে বাঙালী দীপঙ্কর?’ বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামের অতীশ দীপঙ্কর পাল আমলে বাংলাদেশ থেকে তিব্বত যাত্রা করেছিলেন তিব্বতিদের ভেতর বৌদ্ধধর্ম প্রচার, চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন এবং সেচবিজ্ঞান শিক্ষা দিতে।
তাঁর জন্ম ৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে এই বজ্রযোগিনী গ্রামে এবং ১০৫৪ সালে তিব্বতের নিয়েতাং এলাকায় মৃত্যু। অতীশের জন্মসালটি এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে ৯৮০ সালেই বাংলায় বহিরাগত কম্বোজ শাসকদের হটিয়ে বাঙালি পাল বংশ তাদের সুবিখ্যাত সাম্রাজ্য স্থাপন করেছিল।
বজ্রযোগিনী গ্রামে যাওয়ার শখ আমার বহুদিনের। ঢাকার গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ড থেকে মুন্সিগঞ্জগামী একটি বাসে উঠলাম। এক অনুজ গল্পকার ও সাংবাদিক কিছুদিন আগে বজ্রযোগিনী গ্রাম ঘুরে এসেছে। তার নির্দেশমাফিক ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ রুটের ‘দীঘির পাড়’ বাসে উঠে বলতে হলো ‘ভাঙার পাড়’ বা ‘ধলার মোড়’-এ নামিয়ে দিতে। ঢাকা থেকে ঘণ্টা দেড়েকে সেখানে পৌঁছে রিকশায় আরও মিনিট দশেক চললেই স্থানীয় মানুষ যাকে বলে ‘পণ্ডিতের ভিটা’ বা অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জন্মবাস্তু, তার দেখা মেলে। ৯৮০ সালের জন্মভিটে কি আর থাকে? সেখানে এখন খানিকটা প্যাগোডা ও খানিকটা বৌদ্ধস্তূপের আদলে নির্মিত একটি স্মারকস্তম্ভ। উড়ছে ড্রাগন-অঙ্কিত তিব্বতীয় লাল পতাকা। আর বৌদ্ধধর্মীয় স্থাপত্যের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শ্বেতপাথরের ক্ষুদ্র দুটো সিংহ আর ব্যাঘ্রমূর্তিও নিয়মমাফিক রয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের সহায়তায় ২০০৬ সালের ৫ মে স্থাপিত হয়েছে এই স্মারক স্থাপনা। স্মারক স্থাপনা থেকে কয়েক শ গজ দূরেই সরকারি উদ্যোগে ‘অতীশ দীপঙ্কর পাবলিক লাইব্রেরি ও অডিটরিয়াম’। তবে ভবনটি বন্ধ। এক পাশে নির্মাণকাজ শেষে রঙের কাজ এখনো চলছে।
কিংবদন্তি অনুসারে বিক্রমপুরের এক রাজপরিবারে অতীশের জন্ম। তাঁর জন্মমুহূর্তে আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি ও রংধনু উদিত হওয়ার কাহিনি শোনা যায়। রাজা কল্যাণ শ্রী ও রানী শ্রী প্রভাবতীর সন্তান অতীশের সন্ন্যাস গ্রহণের আগ অবধি নাম ছিল কুমার চন্দ্রপ্রভ। তিন বছর বয়সে সংস্কৃত ভাষায় পড়তে শেখা ও ১০ বছর নাগাদ বৌদ্ধ ও অবৌদ্ধ শাস্ত্রের পার্থক্য বুঝতে পারার বিরল প্রতিভা প্রদর্শন করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে ১০০ জন শিক্ষকের কাছ থেকে মহাযান, হীনযান ও বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন জ্ঞান কাণ্ড শিক্ষা করেন তিনি। বিখ্যাত বৌদ্ধ পণ্ডিত জেত্রির পরামর্শ অনুযায়ী তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘নালন্দা’য় গিয়ে বহুদিন ধরে শাস্ত্র শিক্ষা করেন।
শোনা যায়, যৌবনে বজ্রযান বৌদ্ধ দেবী তারা চন্দ্রপ্রভকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বিয়ে করতে ও পার্থিব জীবনের বন্ধনে জড়াতে নিষেধ করেন। ২৯ বছরের চন্দ্রপ্রভ পরিবার, রাজত্ব ও লোকসমাজ ত্যাগ করে বিখ্যাত বৌদ্ধভিক্ষু শিলা রক্ষিতের কাছে সন্ন্যাসব্রতে দীক্ষা নেন এবং তাঁর নতুন নাম রাখা হয় ‘দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান’—অর্থ হলো ‘যাঁর গভীর চেতনা প্রদীপের মতো জ্বলে’। তাঁর নামের ‘অতীশ’ অংশটুকু তিব্বতিদের উপহার, যার অর্থ ‘শান্তি’। দীক্ষা নেওয়ার পর দীপঙ্কর ভারতের বোধগয়ায় তীর্থযাত্রা করেন। ৩১ বছর বয়সে তিনি সমুদ্রপথে ১৩ মাস দুঃসাধ্য যাত্রা করে সুমাত্রা (বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার অংশ) পৌঁছান। সেখানে সুবর্ণদ্বীপ ধর্মকীর্তি নাম্নী অপর এক বিখ্যাত বৌদ্ধভিক্ষুর কাছে এক যুগব্যাপী শাস্ত্র অধ্যয়নের পর ধর্মকীর্তি তাঁকে বলেন, ‘উত্তরে যাও, যেখানে বরফের দেশ।’ তবে তিব্বত যাওয়ার আগে সুমাত্রা থেকে বাংলা তথা ভারতে আসেন তিনি। ভারতে ও বাংলায় তখন বৌদ্ধধর্মের উত্থানপর্ব চলছিল। কিন্তু তিব্বতে তখন বৌদ্ধধর্মের ঘোর দুর্দিন। তিব্বতি রাজা লা লামার পাঠানো বৌদ্ধধর্মীয় দূতদের একজন ছিলেন নাগৎসো। ভারতে আসার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ‘বিক্রমশীলা বিহার’-এ সংস্কৃত শিখতে আসেন এবং সেখানেই অতীশের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। অতীশকে তিনি অনুরোধ করেন তিব্বতে গিয়ে বুদ্ধের ধর্ম সেখানকার মানুষকে শেখানোর জন্য।
তুষারময় গিরিসংকুল ুপথ অতিক্রম করে অতীশ তিব্বতে পৌঁছান। তিব্বতে তাঁর বসবাসের প্রথম তিন বছর তিনি কাটান ‘নগারি’ শহরে। পরে তিব্বতের বর্তমান রাজধানী লাসার নিকটবর্তী নিয়েতাংয়ে কাটান আরও নয় বছর। তিব্বতি পাঠাগারগুলোয় সংস্কৃত ও তিব্বতি ভাষায় লিখিত অজস্র শাস্ত্রীয় পুঁথি তাঁর দৃষ্টি কাড়ে। মৃত্যুর আগের পাঁচ বছর তিব্বতের পথে-প্রান্তরে সতত পরিভ্রমণ করেছেন তিনি। ১০৫২ সালে নিয়েতাং শহরে তাঁর মৃত্যু হয়। ১৯৭৮ সালের ২৮ জুন ঢাকায় অতীশের দেহভস্ম আনা হয়, যা বর্তমানে ‘ধর্মরাজিকা বৌদ্ধ বিহার’-এ সংরক্ষিত।
তিব্বতি বৌদ্ধধর্মে অতীশ দীপঙ্কর নানা কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছেন। রচনা, অনুবাদ, সম্পাদনাসহ ২০০-এর বেশি বই তাঁর। বহু সংস্কৃত পুঁথি তিনি তিব্বতি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। যদিও সংস্কৃত ভাষায়ও তিনি প্রচুর বই রচনা করেছেন, কিন্তু বর্তমানে শুধু তাঁর তিব্বতি ভাষায় রচিত গ্রন্থাবলিই পাওয়া যায়। তিব্বতি অনুবাদে তাঁর ৭৯টি বই আজও পাওয়া যায়।
অতীশ দীপঙ্কর আজ নেই। কয়েক শতাব্দী পার হয়ে তাঁর জনপদের মানুষের কাছে আজ অনেকটাই বিস্মৃত ও অচেনা এক মানুষ তিনি। আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ‘অতীশ দীপঙ্কর লাইব্রেরি ও অডিটরিয়াম’-এ চীনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে তিব্বত থেকে অতীশের রচিত কিছু পুঁথি বা পুঁথির কপি নিয়ে আসতে পারে, যা এই লাইব্রেরিকে বাস্তব অর্থেই সমৃদ্ধ করবে। অতীশ দীপঙ্করকে নিয়ে এই স্মারক স্থাপনা ও পাঠাগারকে কেন্দ্র করে গোটা বজ্রযোগিনী গ্রামকেই একটি ‘সংস্কৃতি এলাকা’ তথা ‘ট্যুরিজম স্পট’ হিসেবেও গড়ে তোলা যায়।
বজ্রযোগিনী গ্রাম থেকে ঢাকায় ফেরার পথে গ্রামের মাঠজুড়ে শরতের মাঝামাঝি শালিক পাখির সমাহার। মনে পড়ল, ‘মানুষের মৃত্যু হলে’ কবিতায় অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানকে নিয়ে কবি জীবনানন্দ দাশের সেই অমোঘ পঙিক্তগুলো:
‘...অনন্ত যাত্রার কথা মনে হয় সে সময় দীপংকর শ্রীজ্ঞানের ; চলেছে— চলেছে— একদিন বুদ্ধকে সে চেয়েছিলো ব’লে ভেবেছিলো। একদিন ধূসর পাতায় যেই জ্ঞান থাকে— তাকে।’
বাসের জানালার পাশে গাছের ধূসর পাতায় হয়তো তখনো জমে উঠেছে বা ওঠেনি মহাকালের প্রজ্ঞা।
অদিতি ফাল্গুনী
বজ্রযোগিনী গ্রামে যাওয়ার শখ আমার বহুদিনের। ঢাকার গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ড থেকে মুন্সিগঞ্জগামী একটি বাসে উঠলাম। এক অনুজ গল্পকার ও সাংবাদিক কিছুদিন আগে বজ্রযোগিনী গ্রাম ঘুরে এসেছে। তার নির্দেশমাফিক ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ রুটের ‘দীঘির পাড়’ বাসে উঠে বলতে হলো ‘ভাঙার পাড়’ বা ‘ধলার মোড়’-এ নামিয়ে দিতে। ঢাকা থেকে ঘণ্টা দেড়েকে সেখানে পৌঁছে রিকশায় আরও মিনিট দশেক চললেই স্থানীয় মানুষ যাকে বলে ‘পণ্ডিতের ভিটা’ বা অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জন্মবাস্তু, তার দেখা মেলে। ৯৮০ সালের জন্মভিটে কি আর থাকে? সেখানে এখন খানিকটা প্যাগোডা ও খানিকটা বৌদ্ধস্তূপের আদলে নির্মিত একটি স্মারকস্তম্ভ। উড়ছে ড্রাগন-অঙ্কিত তিব্বতীয় লাল পতাকা। আর বৌদ্ধধর্মীয় স্থাপত্যের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শ্বেতপাথরের ক্ষুদ্র দুটো সিংহ আর ব্যাঘ্রমূর্তিও নিয়মমাফিক রয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের সহায়তায় ২০০৬ সালের ৫ মে স্থাপিত হয়েছে এই স্মারক স্থাপনা। স্মারক স্থাপনা থেকে কয়েক শ গজ দূরেই সরকারি উদ্যোগে ‘অতীশ দীপঙ্কর পাবলিক লাইব্রেরি ও অডিটরিয়াম’। তবে ভবনটি বন্ধ। এক পাশে নির্মাণকাজ শেষে রঙের কাজ এখনো চলছে।
কিংবদন্তি অনুসারে বিক্রমপুরের এক রাজপরিবারে অতীশের জন্ম। তাঁর জন্মমুহূর্তে আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি ও রংধনু উদিত হওয়ার কাহিনি শোনা যায়। রাজা কল্যাণ শ্রী ও রানী শ্রী প্রভাবতীর সন্তান অতীশের সন্ন্যাস গ্রহণের আগ অবধি নাম ছিল কুমার চন্দ্রপ্রভ। তিন বছর বয়সে সংস্কৃত ভাষায় পড়তে শেখা ও ১০ বছর নাগাদ বৌদ্ধ ও অবৌদ্ধ শাস্ত্রের পার্থক্য বুঝতে পারার বিরল প্রতিভা প্রদর্শন করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে ১০০ জন শিক্ষকের কাছ থেকে মহাযান, হীনযান ও বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন জ্ঞান কাণ্ড শিক্ষা করেন তিনি। বিখ্যাত বৌদ্ধ পণ্ডিত জেত্রির পরামর্শ অনুযায়ী তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘নালন্দা’য় গিয়ে বহুদিন ধরে শাস্ত্র শিক্ষা করেন।
শোনা যায়, যৌবনে বজ্রযান বৌদ্ধ দেবী তারা চন্দ্রপ্রভকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বিয়ে করতে ও পার্থিব জীবনের বন্ধনে জড়াতে নিষেধ করেন। ২৯ বছরের চন্দ্রপ্রভ পরিবার, রাজত্ব ও লোকসমাজ ত্যাগ করে বিখ্যাত বৌদ্ধভিক্ষু শিলা রক্ষিতের কাছে সন্ন্যাসব্রতে দীক্ষা নেন এবং তাঁর নতুন নাম রাখা হয় ‘দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান’—অর্থ হলো ‘যাঁর গভীর চেতনা প্রদীপের মতো জ্বলে’। তাঁর নামের ‘অতীশ’ অংশটুকু তিব্বতিদের উপহার, যার অর্থ ‘শান্তি’। দীক্ষা নেওয়ার পর দীপঙ্কর ভারতের বোধগয়ায় তীর্থযাত্রা করেন। ৩১ বছর বয়সে তিনি সমুদ্রপথে ১৩ মাস দুঃসাধ্য যাত্রা করে সুমাত্রা (বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার অংশ) পৌঁছান। সেখানে সুবর্ণদ্বীপ ধর্মকীর্তি নাম্নী অপর এক বিখ্যাত বৌদ্ধভিক্ষুর কাছে এক যুগব্যাপী শাস্ত্র অধ্যয়নের পর ধর্মকীর্তি তাঁকে বলেন, ‘উত্তরে যাও, যেখানে বরফের দেশ।’ তবে তিব্বত যাওয়ার আগে সুমাত্রা থেকে বাংলা তথা ভারতে আসেন তিনি। ভারতে ও বাংলায় তখন বৌদ্ধধর্মের উত্থানপর্ব চলছিল। কিন্তু তিব্বতে তখন বৌদ্ধধর্মের ঘোর দুর্দিন। তিব্বতি রাজা লা লামার পাঠানো বৌদ্ধধর্মীয় দূতদের একজন ছিলেন নাগৎসো। ভারতে আসার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ‘বিক্রমশীলা বিহার’-এ সংস্কৃত শিখতে আসেন এবং সেখানেই অতীশের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। অতীশকে তিনি অনুরোধ করেন তিব্বতে গিয়ে বুদ্ধের ধর্ম সেখানকার মানুষকে শেখানোর জন্য।
তুষারময় গিরিসংকুল ুপথ অতিক্রম করে অতীশ তিব্বতে পৌঁছান। তিব্বতে তাঁর বসবাসের প্রথম তিন বছর তিনি কাটান ‘নগারি’ শহরে। পরে তিব্বতের বর্তমান রাজধানী লাসার নিকটবর্তী নিয়েতাংয়ে কাটান আরও নয় বছর। তিব্বতি পাঠাগারগুলোয় সংস্কৃত ও তিব্বতি ভাষায় লিখিত অজস্র শাস্ত্রীয় পুঁথি তাঁর দৃষ্টি কাড়ে। মৃত্যুর আগের পাঁচ বছর তিব্বতের পথে-প্রান্তরে সতত পরিভ্রমণ করেছেন তিনি। ১০৫২ সালে নিয়েতাং শহরে তাঁর মৃত্যু হয়। ১৯৭৮ সালের ২৮ জুন ঢাকায় অতীশের দেহভস্ম আনা হয়, যা বর্তমানে ‘ধর্মরাজিকা বৌদ্ধ বিহার’-এ সংরক্ষিত।
তিব্বতি বৌদ্ধধর্মে অতীশ দীপঙ্কর নানা কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছেন। রচনা, অনুবাদ, সম্পাদনাসহ ২০০-এর বেশি বই তাঁর। বহু সংস্কৃত পুঁথি তিনি তিব্বতি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। যদিও সংস্কৃত ভাষায়ও তিনি প্রচুর বই রচনা করেছেন, কিন্তু বর্তমানে শুধু তাঁর তিব্বতি ভাষায় রচিত গ্রন্থাবলিই পাওয়া যায়। তিব্বতি অনুবাদে তাঁর ৭৯টি বই আজও পাওয়া যায়।
অতীশ দীপঙ্কর আজ নেই। কয়েক শতাব্দী পার হয়ে তাঁর জনপদের মানুষের কাছে আজ অনেকটাই বিস্মৃত ও অচেনা এক মানুষ তিনি। আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ‘অতীশ দীপঙ্কর লাইব্রেরি ও অডিটরিয়াম’-এ চীনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে তিব্বত থেকে অতীশের রচিত কিছু পুঁথি বা পুঁথির কপি নিয়ে আসতে পারে, যা এই লাইব্রেরিকে বাস্তব অর্থেই সমৃদ্ধ করবে। অতীশ দীপঙ্করকে নিয়ে এই স্মারক স্থাপনা ও পাঠাগারকে কেন্দ্র করে গোটা বজ্রযোগিনী গ্রামকেই একটি ‘সংস্কৃতি এলাকা’ তথা ‘ট্যুরিজম স্পট’ হিসেবেও গড়ে তোলা যায়।
বজ্রযোগিনী গ্রাম থেকে ঢাকায় ফেরার পথে গ্রামের মাঠজুড়ে শরতের মাঝামাঝি শালিক পাখির সমাহার। মনে পড়ল, ‘মানুষের মৃত্যু হলে’ কবিতায় অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানকে নিয়ে কবি জীবনানন্দ দাশের সেই অমোঘ পঙিক্তগুলো:
‘...অনন্ত যাত্রার কথা মনে হয় সে সময় দীপংকর শ্রীজ্ঞানের ; চলেছে— চলেছে— একদিন বুদ্ধকে সে চেয়েছিলো ব’লে ভেবেছিলো। একদিন ধূসর পাতায় যেই জ্ঞান থাকে— তাকে।’
বাসের জানালার পাশে গাছের ধূসর পাতায় হয়তো তখনো জমে উঠেছে বা ওঠেনি মহাকালের প্রজ্ঞা।
অদিতি ফাল্গুনী
No comments