জ্বালানি ব্যবহারকারীদের মধ্যে বৈষম্য প্রকট-এলপিজির দাম আরও বেড়েছে by অরুণ কর্মকার
দেশে চলতি মাসে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম প্রতি সিলিন্ডারে ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে আবাসিক পর্যায়ে পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহারকারীদের সঙ্গে এলপিজি ব্যবহারকারীদের জ্বালানি খাতে ব্যয়ের বৈষম্য প্রকট হয়েছে।
এ বৈষম্য কমাতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বললেও বাস্তবে কার্যকর উদ্যোগ নেই। এসব পদক্ষেপের একটি ছিল আবাসিক পর্যায়ে পাইপলাইনের গ্যাসের দাম বাড়ানো। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে এ গ্যাসের দাম বাড়বে। ডেসকোর আওতাভুক্ত এলাকায় অনলাইনে বিদ্যুৎ-সংযোগের আবেদন করার পদ্ধতির উদ্বোধন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সূত্র জানায়, এলপিজি সিলিন্ডারজাত করার কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে এর সরবরাহ বাড়ানো ও দাম নিয়ন্ত্রণের কথা থাকলেও এসব পদক্ষেপ শিগগির কার্যকর হচ্ছে না।
এদিকে তরল জ্বালানি হিসেবে পেট্রল বা অকটেন ব্যবহারকারীদের সঙ্গে সিএনজি ব্যবহারকারীদের ব্যয়ে বৈষম্য জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর আরও বেড়েছে।
পাইপলাইন গ্যাস: সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেট চূড়ান্ত করার সময়ই সরকার পাইপলাইনের গ্যাসের দাম বাড়ানোর নীতি নিয়েছিল। এ লক্ষ্যে প্রায় এক মাস আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় পেট্রোবাংলা দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাব তৈরি করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, খুব শিগগির গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা তিনি দেখেন না।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করলে প্রস্তাবটি পেট্রোবাংলার মাধ্যমে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) যাবে। এরপর কমিশন আইনি প্রক্রিয়ায় দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ নেবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, গ্যাসের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেনি।
এলপিজির দাম: এলপিজির দাম কমানো এবং তা সহজলভ্য করার লক্ষ্যে সরকার চলতি বছরের বাজেটে এলপিজির আমদানি শুল্ক রহিত করেছে। কিন্তু এখনো এলপিজি সহজলভ্য নয়। বরং চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে দেশে প্রতিটি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম স্থানভেদে ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
জানতে চাইলে ক্লিনহিটের মহাব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এলপিজির দাম কমানোর কোনো সুযোগ নেই। ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধিতে দেশেও এলপিজির দাম বেড়েছে।
গতকাল ঢাকা, রাজশাহী ও বরিশালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্লিনহিটের সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪৫০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। টোটাল ও যমুনার প্রতি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৪৫০ টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসির (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) যে সিলিন্ডার ৭৫০ টাকায় পাওয়ার কথা, তা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ২৫০ টাকায়।
কারখানা স্থাপনে অগ্রগতি কম: এলপিজি বোতলজাত করার কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি কম। চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এ-সংক্রান্ত স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বিষয়টি এগোচ্ছে না। অথচ বিপিসি গত বছরের জুলাই মাসে আগ্রহী কোম্পানির কাছ থেকে আগ্রহপত্র নিয়েছে।
বিপিসির চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ১৬টি কোম্পানি আগ্রহপত্র দিয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাইও হয়েছে। শিগগিরই প্রস্তাবগুলো পিপিপির অধীনে বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
সূত্রগুলো জানায়, বিষয়টি যে পর্যায়ে রয়েছে, সেখান থেকে বাস্তবায়ন পর্যায়ে যেতে অনেক সময় লাগবে।
No comments