সোনার দোকানে ডাকাতি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা অপরিহার্য
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা বনানীর ইকবাল সেন্টারের একটি সোনার দোকানে দিনদুপুরে ডাকাতির ঘটনা নগরজীবনের নিরাপত্তাহীনতাকেই আবারও প্রকট করে তুলেছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে রাজধানীতে এমন আরেকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ইস্কাটনের একটি অ্যাপার্টমেন্টে। সেখানেও এক ব্যবসায়ীর বাসা থেকে তিন শতাধিক ভরি সোনা নিয়ে যায়
ডাকাতরা। তারও আগে পল্লবীতে সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য শাহিদা তারেখ দীপ্তির বাসা থেকে ৬৫ ভরি স্বর্ণালংকার ডাকাতি হয়। এই সংসদ সদস্যার বাসায় ডাকাতি হওয়ার পর সংসদ অধিবেশনেও বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতার প্রমাণ দিতে গিয়ে সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। মনে করা হয়েছিল, এ ধরনের ডাকাতি প্রতিরোধ করতে জোরদার ব্যবস্থা নেওয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। এদিকে চলতি মাসেই কামরাঙ্গীরচর এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি হলে সেখানেও অনেক টাকার স্বর্ণালংকার হাতছাড়া হয়ে যায় সেই ব্যবসায়ীর। এভাবে ডাকাতদের সোনা ডাকাতির দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণে রাজধানীতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। সাধারণ দৃষ্টিতে বর্তমানে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্য অনেক সময়ের তুলনায় সহনীয় হলেও এ ধরনের ঘটনা নাগরিক জীবনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষের মনে প্রশ্ন জন্ম দিচ্ছে, তাহলে কি মানুষ স্বর্ণালংকারও নিজের ঘরে রাখতে পারবে না? কিন্তু শুক্রবারের বনানী ইকবাল সেন্টারের নিউ হীরা জুয়েলার্স নামের সোনার দোকানটি লুট হওয়ার পর সংগত কারণে সেই প্রশ্নটি এখন ব্যবসায়ীদের কাছেও জোরালো হয়ে দেখা দিয়েছে। তাহলে কি ব্যবসায়ীদের পক্ষেও নিরাপদে ব্যবসা করা সম্ভব হবে না? বনানীর এ জায়গাটিতে বেশ কিছু দোকান আছে, যেগুলো আকার-আয়তনের দিক থেকে যেমন বড়, তেমনি সেখানে বেচাকেনাও হয় অনেক। সংগত কারণেই এলাকার নিরাপত্তার দিকটি আলোচনায় আসতে পারে। যে দোকানটিতে ডাকাতি হয়েছে, সেখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা যে দুর্বল ছিল, তা বোঝা যায় তাদের সিসিটিভি অকেজো থাকার কথা সংবাদে দেখার পর। ইকবাল সেন্টারের মতো ভবনে নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা যে খুবই দুর্বল, তাও বোঝা যায় এ ঘটনার পর। সরকারি ব্যবস্থাপনারও গাফিলতি চোখে পড়ে। গত এক মাসের মধ্যে বেশ কিছু ডাকাতির ঘটনা ঘটার পরও কোন কারণে সরকার পুলিশি টহলব্যবস্থা জোরদার করেনি, তাও ভেবে দেখা দরকার। নিউ হীরা জুয়েলার্সের মতো নামিদামি দোকানে সিসিটিভি ব্যবস্থা অকেজো থাকাটা স্বাভাবিক নয়। যদিও সিসিটিভি এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করতে পারত না, কিন্তু আগন্তুকদের চিনতে সহায়তা করত। এতে পরবর্তী সময়ে তাদের ধরতে পারা যেত। এ পরিস্থিতিতে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অধিকতর সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক ভবনেরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দিকে নজর দিতে হবে।
No comments