অধ্যাপক ইউনূস ও বিশ্বব্যাংক-প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে ইইউর ইতিবাচক সাড়া
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনাকালে দেওয়া তার প্রস্তাবকে ঠিক আনুষ্ঠানিক বলা যাবে না।
প্রতিনিধি দল তাৎক্ষণিক মতামত ব্যক্ত না করলেও বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, এ প্রস্তাব ইতিবাচক এবং তা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে সুবিবেচনা পাবে। প্রতিনিধি দলের নেতা জঁ্য ল্যাম্বার্টের বিবেচনায়, বিশ্বব্যাংকের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূস একজন যোগ্য ব্যক্তি। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব এবং তার প্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিমতে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকই গর্বিতবোধ করবে। প্রথাগতভাবে এ মর্যাদার পদে এ পর্যন্ত কেবল আমেরিকান কাউকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে কয়েক বছর ধরে চলা মন্দা এবং উন্নত-উন্নয়নশীল-স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কে নতুন বিন্যাসের ক্রমবর্ধমান তাগিদের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাংকের নীতিনির্ধারক মহলের মনোভাবে পরিবর্তন আসে কি-না সেটা দেখার বিষয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর এ সংক্রান্ত প্রস্তাবকে ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা ও সফল রূপকার অধ্যাপক ইউনূস সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের মনোভাবে পরিবর্তন হিসেবেও অনেকে গণ্য করতে পারেন। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে তার মতো বড়মাপের ব্যক্তিকে এবং এ ক্ষেত্রে অনুসৃত প্রক্রিয়ায় সরকারের ভূমিকা দেশের অনেকেই পছন্দ করেননি। আন্তর্জাতিক সমাজেও বিষয়টি সমালোচিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল তো বটেই, এমনটি সাধারণ মানুষেরও ধারণা হয়েছে, বিশ্ব সমাজে যিনি বিপুলভাবে সমাদৃত, স্বদেশে তার অবমূল্যায়নের চেষ্টা হয়েছে। তিনি দেশের জন্য অনেক সম্মান বয়ে এনেছেন। হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে এবং বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নে তার কর্মপন্থা এখন উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত অনেক দেশেই মডেল, এমনকি উন্নত বিশ্বেও তা বহুল প্রশংসিত। এটা জানা কথা যে, তিনি চিরকাল গ্রামীণ ব্যাংকের প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত থাকবেন না। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে রাখায় কোনো সমস্যা নেই, এমন মনোভাব সুশীল সমাজের বাইরেও ব্যাপকভাবে রয়েছে। একই সঙ্গে দারিদ্র্যকে স্বল্প সময়ের মধ্যেই 'জাদুঘরে স্থান করে' দেওয়ার জন্য যে আর্থ-সামাজিক কল্যাণমুখী ধারণা তিনি দেশবাসী ও বিশ্ব সমাজের কাছে তুলে ধরে চলেছেন তার বাস্তবায়ন কাজেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেন। তাকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট করার প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে যদি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ পেয়ে থাকে, তার ধারাবাহিকতায় এসব বিষয়ও সক্রিয় বিবেচনা পেতে পারে। দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমস্যাদির সমাধানেও সরকার এ ধরনের উদার মনোভাব গ্রহণ করতে পারে। দেশে অনেক সমস্যা রয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতায় জনগণ উদ্বিগ্ন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সরকার ও প্রধান বিরোধী দল মুখোমুখি অবস্থানে। মহাজোট সরকার বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাদির সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্ট অচলাবস্থার অবসানে সফল না হলে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে_ অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকের এমন মত রয়েছে।
বাংলাদেশের এ পর্যন্ত একমাত্র নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট করার প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মহল কীভাবে গ্রহণ করবে, সময়ই সেটা বলে দেবে। তবে বাংলাদেশ যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে আন্তরিক সেটা আনুষ্ঠানিকভাবেই সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে তুলে ধরতে হবে।
বাংলাদেশের এ পর্যন্ত একমাত্র নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট করার প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মহল কীভাবে গ্রহণ করবে, সময়ই সেটা বলে দেবে। তবে বাংলাদেশ যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে আন্তরিক সেটা আনুষ্ঠানিকভাবেই সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে তুলে ধরতে হবে।
No comments