হোঁচট খেল ‘বামবলয়’ গঠনের উদ্যোগ by সেলিম জাহিদ
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই জোটের বাইরে পৃথক ‘বামবলয়’ বা বামপন্থীদের বৃহত্তর ঐক্য গঠনের উদ্যোগ হোঁচট খেয়েছে। মহাজোট সরকারের শরিক ও এর বাইরে থাকা বামপন্থী দলগুলোকে একত্র করে ‘বামবলয়’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কয়েক মাস ধরে একাধিক উদ্যোগে তৎপরতা চলছিল।
এর মধ্যে সিপিবি ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার তৎপরতা ছিল উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া পঙ্কজ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত গণঐক্য কমিটি ও বদরুদ্দীন উমরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চা ও জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমুক্তিও একই লক্ষ্যে তৎপরতা চালাচ্ছে।
এরই মধ্যে সিপিবি ও বাম মোর্চার উদ্যোগটি সম্প্রতি ভেস্তে যাওয়ায় সহসা আর বামবলয় হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক বামপন্থী নেতা। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে অসন্তোষ থাকলেও মহাজোটের শরিক বাম দলগুলোরও আপাতত জোট ছাড়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও তাঁরা মনে করেন।
সূত্রগুলো জানায়, বাম দলগুলো নিজেদের অবস্থানে থেকে কর্মসূচি পালন করবে, নাকি কিছু বিষয়ে সহায়ক বড় কোনো দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনেও শরিক হবে, এই বিতর্কে সিপিবি ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার উদ্যোগটি হোঁচট খেয়েছে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, বামপন্থীদের বিকল্প বলয় গড়ার ক্ষেত্রে কোনো দলেরই দ্বিমত নেই। তবে, কতগুলো কৌশলগত প্রশ্নে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে।
উদ্যোক্তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাম দলগুলোর একটি অংশ মনে করে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন: যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির মতো কর্মসূচিতে সহায়ক যেকোনো শক্তির সঙ্গে ঐক্য করা যায়। এ অংশের সমর্থকদের মধ্যে একটি পক্ষ মনে করে, ভুল-ত্রুটি সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে এ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে সহায়তা দিতে হবে।
গণঐক্য কমিটির আহ্বায়ক পঙ্কজ ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা কাটিয়ে সরকারি দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কীভাবে নীতিনিষ্ঠ ভূমিকা নিতে পারে, গণবিচ্ছিন্নতা কাটাতে পারে; তা গুরুত্বের সঙ্গে স্থির করতে হবে।’ তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে গণঐক্য কমিটি আগামী ৯ মার্চ ঢাকায় গণজমায়েত করবে।
বাম দলগুলোর আরেকটি অংশ মনে করে, মহাজোট সরকার দেশ পরিচালনায় সব ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু করলেও এ ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা, অপেশাদারি ও দুর্বলতা প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দল যুদ্ধাপরাধীর বিচারের চেয়ে এর থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নিতেই বেশি মনোযোগী।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতা ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কথাই ছিল, জোট-মহাজোটের বাইরে বৃহত্তর বাম বিকল্প গড়ব। যাদের বিরুদ্ধে মানুষের মনে ক্ষোভ-বিক্ষোভ আছে, বাম বিকল্পের কথা বলে তাদের কাছে গেলে এর ফলাফল কী দাঁড়ায়?’
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১০টি দল নিয়ে গঠিত গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতারা সিপিবির সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর চারটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর মধ্যে গত ১১ ডিসেম্বর জনজীবনের সংকট নিরসনের দাবিতে একটি কর্মসূচি পালিত হয়। কিন্তু গত ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সিপিবির নেতাদের বৈঠকের পর ঐক্যে ছেদ পড়ে। ওই বৈঠকে সিপিবি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়।
এর দুই দিন পর গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা সংবাদ সম্মেলন করে সিপিবির এই উদ্যোগকে ‘আত্মঘাতী’ ও বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ‘বড় আঘাত’ বলে আখ্যায়িত করে।
বাম মোর্চার শরিক গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাম বিকল্পের ডাক দিয়ে সিপিবি মূলত আওয়ামী বাম বিকল্প গড়ে তুলতে চায়। এটা দ্বিদলীয় বৃত্তের বাইরে বৃহত্তর বাম ঐক্যের জন্য ক্ষতিকর।’
অবশ্য সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক মোর্চা হবে না। তবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুতে আওয়ামী লীগ তো বটেই, পারলে বিএনপিকেও মাঠে নামাতেই চাই।’
No comments