আমলাতান্ত্রিক জটিলতা-আফ্রিকায় চাষাবাদে বিনিয়োগ সহজ করুন

আফ্রিকায় কৃষি-বাণিজ্য সম্প্রসারণ বাংলাদেশের জন্য হতে পারে এক যুগান্তকারী সূচনা। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে রয়েছে লাখ লাখ কর্মহীন হাত। দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে কৃষি আবাদি জমির পরিমাণ যেমন কম, তেমনি কৃষিজমির উৎপাদনক্ষমতাও দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে কৃষিজমির পরিমাণও কমে আসছে।


এমন একটি পরিস্থিতিতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে উর্বর জমিতে চাষাবাদ ও গবাদিপশু পালনের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো এবং ইউরোপে রপ্তানির মাধ্যমে আয়ের সুযোগ রয়েছে, তাকে অবহেলা করা খুবই অবিবেচনার কাজ হবে। আর সে অবিবেচনা ও ঢিলেমির কাজটিই আমলাদের দ্বারা হচ্ছে বলে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, অর্থপাচার, জনশক্তি রপ্তানি, নিরাপত্তাসহ নানা জটিলতার অজুহাতে লিজ নেওয়ার ক্ষতিকর দিকটাই তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করছে সরকারের অন্তত ছয়টি বিভাগ ও সংস্থা। জানা গেছে, বেসরকারি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান নিটল নিলয় গ্রুপ এবং ভাটি বাংলা অ্যাগ্রিটেক নিজেদের উদ্যোগে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের জমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। সেখানে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে বলে বেশ কিছু শর্ত দিয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি মনে করছে, সরকারের সঙ্গে ওই সব দেশের সরকার পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা সেখানে বিনিয়োগ করতে পারবে। যা থেকে দেশ আয় করবে, কৃষি দ্রব্যের চাহিদা মিটবে।
শুধু কৃষি-বাণিজ্য সম্প্রসারণই নয়, অর্থনৈতিক সব কর্মকাণ্ডে গোটা বিশ্ব একটি পল্লীতে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রের সীমানা অতিক্রম করে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দেওয়া না গেলে এখন কোনোক্রমেই একটি জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ জন্য কোনো খাতকেই অবহেলা করার সুযোগ নেই। ভারত, চীনসহ বিশ্বের উন্নত, উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত সব দেশই শিল্প-বাণিজ্য, কৃষি-বাণিজ্য সম্প্রসারণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারত আফ্রিকার দেশগুলোয় কৃষিজমির ওপর যথেষ্ট জোর দিয়েছে। বহু আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে, সেখানে বিনিয়োগ করে দেশের চাহিদা মেটাতে এগিয়ে গেছে। তাই বাংলাদেশের এ উদ্যোগে আমলাদের অবহেলা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আশা করি, এ ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে সে মোতাবেক আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তিতে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ বিষয়ে বিলম্ব করলে পরে আর মাথা কুটলেও সুযোগ পাওয়া যাবে না। জানা গেছে, ইতিমধ্যেই আফ্রিকার দু-একটি দেশ বাংলাদেশকে তথা বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জমি লিজ দিতে অনিচ্ছাও প্রকাশ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.