অর্থপাচার মামলায় কোকোর জেল-আইনগতভাবেই মোকাবিলা করা উচিত

একটি অর্থপাচার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কোকোর সহযোগী সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেনের ছেলে সায়মনেরও একই সাজা হয়েছে। উভয়কে ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।


কোকো ও সায়মনের পাচার করা অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত এনে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের এই রায় ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি জানিয়েছে, এ মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা। দুদকের আইনজীবী বলেছেন, কোকোর বিরুদ্ধে মামলা বা রায়ের ব্যাপারে সরকারের কোনো হাত নেই। অন্যদিকে কোকোর আইনজীবী জানিয়েছেন, জিয়া পরিবারকে হয়রানির উদ্দেশ্যেই এই রায় দেওয়া হয়েছে। রায়ের পর আদালতে বিএনপির সমর্থক আইনজীবীরা মিছিল করেছেন। মিছিল নিয়ে আদালত ভবনেও ঢুকতে চেয়েছিলেন তাঁরা।
আরাফাত রহমান কোকো ও ইসমাইল হোসেন সায়মনের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলাটি হয়েছিল কাফরুল থানায় ২০০৯ সালে। কোকোর ঘুষ নেওয়া ও অর্থপাচারের মামলাটি দেশে প্রমাণিত হওয়ার আগেই বিদেশে প্রমাণিত হয়েছে। কোকোর অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে সিঙ্গাপুরের এক আদালতে সেখানকার এক ব্যবসায়ীকে জরিমানা দিতে হয়েছে। ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতেও। সেখানে ২০০৮ সালে সিমেন্স কম্পানিকে জরিমানা দিতে হয়েছে। আরাফাত রহমান কোকোসহ বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মানি লন্ডারিং মামলাও হয়েছিল ২০০৯ সালে। কাজেই এই মামলা যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়, সেটা আগে থেকেই প্রমাণিত। কিন্তু দেশের আদালতে মামলার রায় হওয়ার পর যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে, সেটা রাজনৈতিক। আরাফাত রহমান কোকোর আইনজীবী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, 'এ মামলা দায়ের ও সাজার একটাই উদ্দেশ্য_জিয়া পরিবারকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা।' উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তাঁর দুই ছেলের বিরুদ্ধে মামলার শুরু বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকেই। জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে ২৩টি।
আমাদের দেশে এটা লক্ষ করা যায় যে, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হলেই তাতে রাজনৈতিক রং চড়ানো হয়। আবার রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে যে মামলা হয় না, তাও নয়। তবে মামলাকে মামলা হিসেবেই নেওয়া উচিত। বিচার বিভাগকে বিতর্কের ঊধর্ে্ব রাখতে হবে। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণ্ন না হয়, সেটি দেখার দায়িত্ব সবারই। কোনো মামলার রায় অপছন্দ হলেই আইনজীবীদের রাস্তায় নেমে আসার প্রবণতাও ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে। এতে বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করা হয়। মামলার রায় পক্ষে না গেলে উচ্চ আদালত আছে। উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগও আছে। কোকোর আইনজীবী উচ্চ আদালতে সুবিচার পাবেন, এমন আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন। কাজেই এ মামলার রায় পছন্দ না হলে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করতেই পারেন। সে সুযোগ নষ্ট করা হয়নি বা নষ্ট হয়ে যায়নি। আইনজীবীদের উচিত সে পথে যাওয়া। কিন্তু আদালতের রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আদালতকে বিব্রত করা কেন? আইনগতভাবেই কোকোর মামলার লড়াই করার সুযোগ যেহেতু আছে, সেহেতু আইনগতভাবেই এর মোকাবিলা করতে হবে। চূড়ান্ত আইনি লড়াইয়ে সিদ্ধান্ত হবে কে অপরাধী, কে নির্দোষ।

No comments

Powered by Blogger.