বিমানবাহিনীর উচিত বিষয়টি ব্যাখ্যা করা by মিজানুর রহমান খান
একটা গল্প বলি। এটা জরুরি অবস্থার সময়ের ঘটনা। ঢাকার সাবেক জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মোবারকের কাছ থেকে শোনা। বর্তমান সরকারের আমলে তিনি আইন কমিশনে অবৈতনিক সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান। থাকেন মগবাজারে। ১৮ তলা ভবনের ১৭ তলায়। বিগত জরুরি অবস্থায় হঠাৎ তিনি বিচলিত হলেন। কারণ তিনি জানতে পেরেছেন, বিমানবাহিনী ও সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি অভিমত দিয়েছে যে ঢাকা শহরের উঁচু উঁচু দালানগুলো বিমান চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যেসব ভবন ১৫ তলার চেয়ে বেশি উঁচু, সেগুলো ভেঙে ফেলতে হবে।
তখনকার পূর্তসচিব সভা ডাকলেন। জনাব মোবারক বলেন, ‘আমি সেই সভায় উপস্থিত ছিলাম। কনকর্ড, ইস্টার্ন হাউজিং, ইউনিক ও নাভানার প্রতিনিধিরাও ছিলেন। ছিলেন আমেরিকায় কর্মরত বাংলাদেশি এক জ্যেষ্ঠ পাইলটও। আরও অনেক বিশেষজ্ঞ ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সভার পরিবেশ বদলে গেল। বিমান চলাচলের ঝুঁকির যুক্তি গ্রহণযোগ্যতা পেল না। অনেকেই বললেন, এটা উদ্ভট যুক্তি। বিমানবাহিনীর প্রতিনিধি নীরবই থাকলেন। বরং পূর্তসচিব জানালেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, সরকার কে চালায়?’ বিমানবাহিনীর আপত্তির কারণে প্রস্তাবিত মেট্রো রেলের প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে আমাদের মনে হচ্ছে সরকার কে চালায়। ‘বিমানবাহিনী’ মানে কী? এর নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের স্বচ্ছ ধারণা নেই। প্রথম আলোর আজকের প্রতিবেদন বলেছে, বিমানবাহিনীর আপত্তির কারণে মেট্রো রেল রুট বদলাচ্ছে। আর সে জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী’ বিজয় সরণি পথটি পরিহার করে খামারবাড়ীর বিকল্প পথ বাতলে দিয়েছেন। বিমানবাহিনী বলে কথা নয়, যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থা একটা ভিন্ন অবস্থান নিতে পারে। ভিন্ন বক্তব্য দিতে পারে। কিন্তু সেটা ঠিক কি ঠিক নয়, তা একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচাইবাছাই হওয়ার কথা। কারণ প্রধানমন্ত্রীর তো সব বিষয়ে কোনো বিশেষজ্ঞ জ্ঞান থাকার কথা নয়। সুতরাং আগের রেল রুট কী কারণে প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করেছিলেন আর এখন কী কারণে তিনি বর্জন করলেন, তার একটা রেকর্ড থাকা বাঞ্ছনীয় ও প্রত্যাশিত। আমরা এখন সেটা জানতে চাই।
নভোথিয়েটারের চেয়ে কম উচ্চতার মেট্রো রেলপথ নিয়ে আপত্তি বিমানবাহিনীর, শুধু এ রকম বক্তব্য জানা যথেষ্ট নয়। এর আগে স্থপতি মোবাশ্বের হাসান বাংলা ভিশনের এক আলোচনায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য নির্দিষ্টভাবে বিমানবাহিনীর প্রধানকে দায়ী করেছেন। বিমানবাহিনীর প্রধান একজন মুক্তিযোদ্ধা। এয়ার মার্শাল এস এম জিয়াউর রহমান একাত্তরের রণাঙ্গনে ছিলেন একজন গেরিলা যোদ্ধা। দেশের কীসে মঙ্গল, তা তাঁর ও তাঁর বাহিনী নিশ্চয় জানবেন। ধরে নিতে হবে, তাঁদের যথাযথ বিশেষজ্ঞ জ্ঞান আছে। অন্যদিকে বুয়েটসহ সংশ্লিষ্ট যেসব বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে কাজটা এত দূর এগোলো, সেটাকেও তো খাটো করা চলে না।
এখন বড় বাধা হলো বিস্তারিত তথ্য না জানা। বিমানবাহিনীর যে অভিমত, সেটা জনসমক্ষে প্রকাশ করলে আমরাও তা অনুধাবন করতে পারি। কারণ কারিগরি জ্ঞানের সব খুঁটিনাটি সবার নাও জানা থাকতে পারে। শুধু উচ্চতার যুক্তিই কি বিমানবাহিনী দিয়েছে? তারা কীসের ভিত্তিতে এত বড় একটি জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভিন্নমত দিলেন, তা বিস্তারিত না জানলে কোনো মন্তব্য করা কঠিন। তবে আমাদের দেশে বহু ক্ষেত্রে সত্যিকারের বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের চেয়ে ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ স্বার্থ অনেক বড় বিষয়কে প্রভাবিত করতে পারে। তাই অনেকে রসিকতা করে বলেন, এটা হলো সব সম্ভবের দেশ।
আবার হয়তো মেট্রো রেলের মতো একটা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে পর্দার আড়ালে নানা হিসাবনিকাশ চলতে পারে। দাতা গোষ্ঠী ও সংস্থাগুলোর নিজস্ব রসায়ন অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন বা বাধাগ্রস্ত করতেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে।
মেট্রো রেলপথের কাজ বিলম্বিত হওয়ার খবর যানজটে জেরবার জনগণকে অধিকতর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলেছে। তবে এ নিয়ে উন্মুক্ত বিতর্ক শুরু হওয়া এবং তা থেকে দ্রুত একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো দরকার। লক্ষ্য রাখতে হবে, জাইকার অর্থায়ন যাতে অনিশ্চিত না হয়ে পড়ে।
পত্রপত্রিকায় বিমানবাহিনীর আপত্তির যে কারণ আমাদের নজরে এ পর্যন্ত এসেছে, তা অস্পষ্ট। তবে যদি উচ্চতাজনিত কারণই একমাত্র হয়ে থাকে, তবে আমাদের সুপরিচিত বিশেষজ্ঞরা তো সর্বসম্মতভাবে তা নাকচ করে দিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। এর পরও যদি কোনো অস্বচ্ছ বা অগ্রহণযোগ্য কারণে এই প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়, তাহলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছুই হতে পারে না।
১৫ তলার চেয়ে বেশি উচ্চতার ভবন ভাঙার ‘বিশেষজ্ঞ’ মত সেনা-সমর্থিত জরুরি শাসনের সুযোগে কী করে গ্রহণ করা হয়েছিল, সে বিষয়েও আমরা বিস্তারিত তথ্য জানতে চাই। কারণ সরকারে যে যখনই থাকুক, সেটা কে চালাচ্ছে বা কীভাবে চলছে, সেটা জানার অধিকার নাগরিকের রয়েছে। এবারে আরেকটি দিকও লক্ষণীয়। কথিত মতে, বিমানবাহিনীর আপত্তি যদি মেনে নেওয়া হয়, তাহলে তা জাতীয় সংসদের স্থাপত্যশৈলীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই বিমানবাহিনীর উচিত হবে, তাদের আপত্তির কারণগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করা। শুধু বিমানবাহিনী বা সামরিক বাহিনী আপত্তি করেছে বলেই সিদ্ধান্ত বদলানোর ধারণা গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য ক্ষতিকর।
আমরা মনে রাখব, সেই ষাটের দশকে জমিসংকটে ভুগতে থাকা সিঙ্গাপুরের সংসদ মাস র্যাপিড ট্রানজিট বা এমআরটি পরিকল্পনা করেছিল। প্রস্তাবিত মেট্রো রেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। সিঙ্গাপুরের এমআরটি এখন ৭৯ স্টেশনের মাধ্যমে ১২৯ কিলোমিটার বিস্তৃত আর এটা প্রতিদিন গড়ে যাত্রী পরিবহন করে ১০ লাখের বেশি। সিঙ্গাপুরের দূরদর্শী রাজনীতিকেরা যথাসময়ে পরিকল্পনা করতে পেরেছিলেন বলেই সিঙ্গাপুর আজ সিঙ্গাপুর হতে পেরেছে।
নভোথিয়েটারের চেয়ে কম উচ্চতার মেট্রো রেলপথ নিয়ে আপত্তি বিমানবাহিনীর, শুধু এ রকম বক্তব্য জানা যথেষ্ট নয়। এর আগে স্থপতি মোবাশ্বের হাসান বাংলা ভিশনের এক আলোচনায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য নির্দিষ্টভাবে বিমানবাহিনীর প্রধানকে দায়ী করেছেন। বিমানবাহিনীর প্রধান একজন মুক্তিযোদ্ধা। এয়ার মার্শাল এস এম জিয়াউর রহমান একাত্তরের রণাঙ্গনে ছিলেন একজন গেরিলা যোদ্ধা। দেশের কীসে মঙ্গল, তা তাঁর ও তাঁর বাহিনী নিশ্চয় জানবেন। ধরে নিতে হবে, তাঁদের যথাযথ বিশেষজ্ঞ জ্ঞান আছে। অন্যদিকে বুয়েটসহ সংশ্লিষ্ট যেসব বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে কাজটা এত দূর এগোলো, সেটাকেও তো খাটো করা চলে না।
এখন বড় বাধা হলো বিস্তারিত তথ্য না জানা। বিমানবাহিনীর যে অভিমত, সেটা জনসমক্ষে প্রকাশ করলে আমরাও তা অনুধাবন করতে পারি। কারণ কারিগরি জ্ঞানের সব খুঁটিনাটি সবার নাও জানা থাকতে পারে। শুধু উচ্চতার যুক্তিই কি বিমানবাহিনী দিয়েছে? তারা কীসের ভিত্তিতে এত বড় একটি জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভিন্নমত দিলেন, তা বিস্তারিত না জানলে কোনো মন্তব্য করা কঠিন। তবে আমাদের দেশে বহু ক্ষেত্রে সত্যিকারের বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের চেয়ে ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ স্বার্থ অনেক বড় বিষয়কে প্রভাবিত করতে পারে। তাই অনেকে রসিকতা করে বলেন, এটা হলো সব সম্ভবের দেশ।
আবার হয়তো মেট্রো রেলের মতো একটা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে পর্দার আড়ালে নানা হিসাবনিকাশ চলতে পারে। দাতা গোষ্ঠী ও সংস্থাগুলোর নিজস্ব রসায়ন অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন বা বাধাগ্রস্ত করতেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে।
মেট্রো রেলপথের কাজ বিলম্বিত হওয়ার খবর যানজটে জেরবার জনগণকে অধিকতর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলেছে। তবে এ নিয়ে উন্মুক্ত বিতর্ক শুরু হওয়া এবং তা থেকে দ্রুত একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো দরকার। লক্ষ্য রাখতে হবে, জাইকার অর্থায়ন যাতে অনিশ্চিত না হয়ে পড়ে।
পত্রপত্রিকায় বিমানবাহিনীর আপত্তির যে কারণ আমাদের নজরে এ পর্যন্ত এসেছে, তা অস্পষ্ট। তবে যদি উচ্চতাজনিত কারণই একমাত্র হয়ে থাকে, তবে আমাদের সুপরিচিত বিশেষজ্ঞরা তো সর্বসম্মতভাবে তা নাকচ করে দিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। এর পরও যদি কোনো অস্বচ্ছ বা অগ্রহণযোগ্য কারণে এই প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়, তাহলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছুই হতে পারে না।
১৫ তলার চেয়ে বেশি উচ্চতার ভবন ভাঙার ‘বিশেষজ্ঞ’ মত সেনা-সমর্থিত জরুরি শাসনের সুযোগে কী করে গ্রহণ করা হয়েছিল, সে বিষয়েও আমরা বিস্তারিত তথ্য জানতে চাই। কারণ সরকারে যে যখনই থাকুক, সেটা কে চালাচ্ছে বা কীভাবে চলছে, সেটা জানার অধিকার নাগরিকের রয়েছে। এবারে আরেকটি দিকও লক্ষণীয়। কথিত মতে, বিমানবাহিনীর আপত্তি যদি মেনে নেওয়া হয়, তাহলে তা জাতীয় সংসদের স্থাপত্যশৈলীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই বিমানবাহিনীর উচিত হবে, তাদের আপত্তির কারণগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করা। শুধু বিমানবাহিনী বা সামরিক বাহিনী আপত্তি করেছে বলেই সিদ্ধান্ত বদলানোর ধারণা গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য ক্ষতিকর।
আমরা মনে রাখব, সেই ষাটের দশকে জমিসংকটে ভুগতে থাকা সিঙ্গাপুরের সংসদ মাস র্যাপিড ট্রানজিট বা এমআরটি পরিকল্পনা করেছিল। প্রস্তাবিত মেট্রো রেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। সিঙ্গাপুরের এমআরটি এখন ৭৯ স্টেশনের মাধ্যমে ১২৯ কিলোমিটার বিস্তৃত আর এটা প্রতিদিন গড়ে যাত্রী পরিবহন করে ১০ লাখের বেশি। সিঙ্গাপুরের দূরদর্শী রাজনীতিকেরা যথাসময়ে পরিকল্পনা করতে পেরেছিলেন বলেই সিঙ্গাপুর আজ সিঙ্গাপুর হতে পেরেছে।
No comments