রাজনৈতিক সংঘাতে ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত
ঋণমানে ভালো অবস্থান, আঞ্চলিক সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি, বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া, চীনে শ্রমের দাম বেড়ে যাওয়া ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি_সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে বিরাট সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত। বাংলাদেশে অর্থনীতির সূচকগুলো যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে মধ্য আয়ের দেশ হতে বেশি বছর বাকি নেই।
দেশের ব্যবসায়ীরা মনে করেন, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো সমস্যার সমাধান হলে দেশে ব্যাপক বিদেশি বিনিয়োগ আসতে পারে। এ লক্ষণ এখনই দেখা যাচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীরা মনে করেন, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো সমস্যার সমাধান হলে দেশে ব্যাপক বিদেশি বিনিয়োগ আসতে পারে। এ লক্ষণ এখনই দেখা যাচ্ছে।
জাপান এ দেশে একটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা গড়ে তোলার জন্য জমি চেয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম স্পোর্টস সু প্রস্তুতকারক নাইকি, রিবক ও এডিডাস বাংলাদেশে কারখানা করতে চায়। কিছুদিন আগে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা এ দেশে এসে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ওয়েলস রাজ্যের ব্যবসায়ীদের একটি দলও বিনিয়োগের সম্ভাবনা যাচাই করে গেছে কিছুদিন আগে।
তবে এত সম্ভাবনার মধ্যে দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দিচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া বা না-হওয়া নিয়ে প্রধান দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থানে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা। প্রধান দুই দলকে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি বাধার মুখে পড়ে এমন কোনো অবস্থা সৃষ্টি করা উচিত নয়। ব্যবসায়ীরা সংসদ ও সংসদের বাইরে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা চান। আর এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা বড় বলে মনে করেন তাঁরা।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, চীনে শ্রমের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন বহুজাতিক কম্পানি তাদের কারখানা সেখান থেকে সরিয়ে অন্য দেশে নেওয়ার কথা ভাবছে। উদার বিনিয়োগনীতি, সস্তা শ্রম ও বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার কারণে তাদের পছন্দের তালিকায় শুরুতে আছে বাংলাদেশ। দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস ও মুডিসের ঋণমানে স্থিতিশীল অবস্থানও এগিয়ে রাখছে বাংলাদেশকে। বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগের কেন্দ্র হওয়ার সুযোগটি বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করবে মাত্র পাঁচ বছর। এর মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে উঠে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্থিতিশীল পরিবেশ দিতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের বদলে কম্বোডিয়া, লাওস অথবা ভিয়েতনাম হবে বিনিয়োগকারীদের গন্তব্য।
দেশীয় রপ্তানিকারকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে বিশ্বে আরেকটি মন্দা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার বাড়ছে। ঋণ সংকটে ডুবতে বসেছে ইউরোজোনের পাঁচটি দেশের অর্থনীতি। যার প্রভাব পড়ছে ইউরোপের অন্য দেশে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা। সেখানে মন্দার নেতিবাচক প্রভাব দেশের রপ্তানি খাতে পড়েবে। রপ্তানিকারকদের শঙ্কার বড় কারণ ২০০৭-০৮ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময় বাংলাদেশের রাজনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এবার মন্দা যখন আঘাত হানবে, তখন রাজনীতিও থাকবে সংঘাতময়। এ দুইয়ের ধাক্কায় অর্থনীতি বিপর্যস্ত হতে পারে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছেন। তিনি গত রবিবারও বলেন, 'যেকোনো উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করার আগে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা বিবেচনায় রাখে। এ দুটি বিষয় ঠিক থাকলে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে।' তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের তিন কোটি লোক বেকার। প্রতিবছর ২০ লাখ লোক শ্রমবাজারে আসছে। এদের কাজের ব্যবস্থা করতে পারে কেবল বেসরকারি খাত।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রাজনীতি সংঘাতময় হলে অবশ্যই অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অতীতে দেখা গেছে, এমন পরিস্থিতিতে প্রচুর হরতাল হয়। হরতাল দেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি করে। বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে।' তিনি বলেন, 'অনেক বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান চীনের পাশাপাশি বাংলাদেশকে বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে ভাবছে। তারা এ দেশের রাজনৈতিক সংঘাতের খবর পেলে নিরুৎসাহিত হবে। তাদের বিনিয়োগ বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাবে লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোতে।'
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির দুরবস্থা ও ইউরোজোনে ঋণ সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে মন্দা শুরু হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমার জানামতে, অনেক অর্ডার বাতিল হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ অবস্থা চলবে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, রেমিট্যান্স কমছে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ে যাচ্ছে। এমন সময় বাংলাদেশের রাজনীতিও সংঘাতপূর্ণ হলে আমাদের লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে।'
সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনিসুল হক এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি থাকার সময় দুই নেত্রীকে আলোচনায় বসানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি সফল হননি। আলোচনার ওপর আবারও গুরুত্ব দিয়ে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের একটি স্বচ্ছ ও উদার বিনিয়োগনীতি আছে। তবু এ দেশে কাঙ্ক্ষিত হারে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। এর প্রধান কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা। তিনি আরো বলেন, 'রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলে অর্থনীতি অবশ্যই দুর্ভোগে পড়বে। যখনই এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তখনই বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে বিকল্প খোঁজার প্রবণতা তৈরি হয়। এ ধরনের প্রবণতা দেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতির ওপর তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।' আলোচনার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, 'সংঘর্ষে কারো উপকার হয় না। দুই দলকেই এ বিষয়টি বুঝতে হবে। সরকারের কাছে দেওয়ার জন্য বেশি থাকে। তাই সরকারকেই বেশি সহানুভূতিশীল হতে হবে।'
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। সংসদ ও সংসদের বাইরে আলোচনা হওয়া উচিত। অন্যদিকে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এখনো বিশ্বাস করেন, দেশের সরকার ও বিরোধী দল এমন অবস্থা তৈরি করবে না, যাতে অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়ে। তিনি বলেন, 'তারা একই অবস্থানে থেকে দেশের সেবা করে। আমরাও আরেকটি অবস্থানে থেকে দেশের সেবা করি। আমাদের লক্ষ্য একই। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি, তারা এমন অবস্থা তৈরি করবে না, যাতে অর্থনীতির ক্ষতি হয়।'
বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিশ্বে বাংলাদেশের ব্র্র্যান্ডিং হয়েছে রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হরতাল হলে বাংলাদেশ সম্পর্কে ক্রেতাদের নেতিবাচক ধারণা জন্মায়। কারণ, তারা বাংলাদেশের রাজনীতির টিপিক্যাল দিকগুলো সম্পর্কে জানে না। তিনি সব রাজনৈতিক দলকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
তবে এত সম্ভাবনার মধ্যে দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দিচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া বা না-হওয়া নিয়ে প্রধান দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থানে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা। প্রধান দুই দলকে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি বাধার মুখে পড়ে এমন কোনো অবস্থা সৃষ্টি করা উচিত নয়। ব্যবসায়ীরা সংসদ ও সংসদের বাইরে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা চান। আর এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা বড় বলে মনে করেন তাঁরা।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, চীনে শ্রমের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন বহুজাতিক কম্পানি তাদের কারখানা সেখান থেকে সরিয়ে অন্য দেশে নেওয়ার কথা ভাবছে। উদার বিনিয়োগনীতি, সস্তা শ্রম ও বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার কারণে তাদের পছন্দের তালিকায় শুরুতে আছে বাংলাদেশ। দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস ও মুডিসের ঋণমানে স্থিতিশীল অবস্থানও এগিয়ে রাখছে বাংলাদেশকে। বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগের কেন্দ্র হওয়ার সুযোগটি বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করবে মাত্র পাঁচ বছর। এর মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে উঠে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্থিতিশীল পরিবেশ দিতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের বদলে কম্বোডিয়া, লাওস অথবা ভিয়েতনাম হবে বিনিয়োগকারীদের গন্তব্য।
দেশীয় রপ্তানিকারকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে বিশ্বে আরেকটি মন্দা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার বাড়ছে। ঋণ সংকটে ডুবতে বসেছে ইউরোজোনের পাঁচটি দেশের অর্থনীতি। যার প্রভাব পড়ছে ইউরোপের অন্য দেশে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা। সেখানে মন্দার নেতিবাচক প্রভাব দেশের রপ্তানি খাতে পড়েবে। রপ্তানিকারকদের শঙ্কার বড় কারণ ২০০৭-০৮ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময় বাংলাদেশের রাজনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এবার মন্দা যখন আঘাত হানবে, তখন রাজনীতিও থাকবে সংঘাতময়। এ দুইয়ের ধাক্কায় অর্থনীতি বিপর্যস্ত হতে পারে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছেন। তিনি গত রবিবারও বলেন, 'যেকোনো উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করার আগে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা বিবেচনায় রাখে। এ দুটি বিষয় ঠিক থাকলে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে।' তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের তিন কোটি লোক বেকার। প্রতিবছর ২০ লাখ লোক শ্রমবাজারে আসছে। এদের কাজের ব্যবস্থা করতে পারে কেবল বেসরকারি খাত।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রাজনীতি সংঘাতময় হলে অবশ্যই অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অতীতে দেখা গেছে, এমন পরিস্থিতিতে প্রচুর হরতাল হয়। হরতাল দেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি করে। বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে।' তিনি বলেন, 'অনেক বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান চীনের পাশাপাশি বাংলাদেশকে বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে ভাবছে। তারা এ দেশের রাজনৈতিক সংঘাতের খবর পেলে নিরুৎসাহিত হবে। তাদের বিনিয়োগ বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাবে লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোতে।'
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির দুরবস্থা ও ইউরোজোনে ঋণ সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে মন্দা শুরু হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমার জানামতে, অনেক অর্ডার বাতিল হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ অবস্থা চলবে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, রেমিট্যান্স কমছে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ে যাচ্ছে। এমন সময় বাংলাদেশের রাজনীতিও সংঘাতপূর্ণ হলে আমাদের লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে।'
সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনিসুল হক এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি থাকার সময় দুই নেত্রীকে আলোচনায় বসানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি সফল হননি। আলোচনার ওপর আবারও গুরুত্ব দিয়ে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের একটি স্বচ্ছ ও উদার বিনিয়োগনীতি আছে। তবু এ দেশে কাঙ্ক্ষিত হারে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। এর প্রধান কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা। তিনি আরো বলেন, 'রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলে অর্থনীতি অবশ্যই দুর্ভোগে পড়বে। যখনই এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তখনই বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে বিকল্প খোঁজার প্রবণতা তৈরি হয়। এ ধরনের প্রবণতা দেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতির ওপর তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।' আলোচনার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, 'সংঘর্ষে কারো উপকার হয় না। দুই দলকেই এ বিষয়টি বুঝতে হবে। সরকারের কাছে দেওয়ার জন্য বেশি থাকে। তাই সরকারকেই বেশি সহানুভূতিশীল হতে হবে।'
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। সংসদ ও সংসদের বাইরে আলোচনা হওয়া উচিত। অন্যদিকে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এখনো বিশ্বাস করেন, দেশের সরকার ও বিরোধী দল এমন অবস্থা তৈরি করবে না, যাতে অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়ে। তিনি বলেন, 'তারা একই অবস্থানে থেকে দেশের সেবা করে। আমরাও আরেকটি অবস্থানে থেকে দেশের সেবা করি। আমাদের লক্ষ্য একই। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি, তারা এমন অবস্থা তৈরি করবে না, যাতে অর্থনীতির ক্ষতি হয়।'
বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিশ্বে বাংলাদেশের ব্র্র্যান্ডিং হয়েছে রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হরতাল হলে বাংলাদেশ সম্পর্কে ক্রেতাদের নেতিবাচক ধারণা জন্মায়। কারণ, তারা বাংলাদেশের রাজনীতির টিপিক্যাল দিকগুলো সম্পর্কে জানে না। তিনি সব রাজনৈতিক দলকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
No comments