চা-বাগানের বাংলা শকুন by আ ন ম আমিনুর রহমান
গত এপ্রিলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিচিকিৎসার (ডিভিএম) ছাত্রদের পরীক্ষা নিতে গিয়েছিলাম। এত কাছে এসে লাউয়াছড়া দেখা হবে না, তা কি হয়? তাই পরীক্ষা শেষে মৌলভীবাজারের বন্য প্রাণী আলোকচিত্রী তানিয়া খান ও মুনির খানের বাসার উদ্দেশে রওনা হলাম। রাতে আলাপকালে তাঁরা জানালেন, দেওরাছড়া চা-বাগানে একসঙ্গে ৩৭টি গ্রিফন শকুন দেখেছেন। খুব ভোরে স্কুটার এল। শকুনের ঝাঁকের কথা শোনার পর থেকেই ছবি তোলার বেশ লোভ হচ্ছিল। তাই মুনির ভাইকে বললাম দেওরাছড়া হয়ে যেতে।
এতগুলো শকুন একসঙ্গে দেখব, ভেবে মনের মধ্যে বেশ আনন্দই হচ্ছিল। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করেও গ্রিফনদের দেখা পেলাম না। মন খারাপ দেখে মুনির ভাই বাগানের ভেতরে বড় একটা ছায়াদানকারী গাছের সামনে গিয়ে বললেন, ‘এবার ছবি তোলেন।’ ওপরে তাকিয়ে দেখি গাছে দুই জোড়া শকুন দুটো বাসায় ডিমে তা দিচ্ছে। বহুদিন পর এমন দৃশ্য দেখলাম। ছেলেবেলায় গ্রামে প্রায়ই শকুনের মরা গরু খাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ত। কিন্তু বর্তমানে এরা অত্যন্ত দুর্লভ। এ দেশে শকুন দেশি বা বাংলা শকুন (White-rumped vulture) নামে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম Gyps bengalensis. লম্বায় ৯০ সেমি ও ওজনে ৪ দশমিক ৩ কেজি। পালক ময়লা কালচে বাদামি। গলা লম্বা। লোমহীন মাথা ও গলা গাঢ় ধূসর। ঘাড় ও পিঠের সংযোগস্থলের ময়লা সাদা পালকগুলো দেখতে মাফলারের মতো। পশ্চাদ্দেশের পালক সাদা। ডানা, পিঠ ও লেজ কালচে বাদামি। পা কালো। স্ত্রী-পুরুষ একই রকম। বাচ্চার গাঢ় বাদামি, দেহ ও ডানার ওপরের অংশে চিকন সাদা দাগ থাকে।
শকুনের দৃষ্টি অসাধারণ তীক্ষ, কিন্তু ঘ্রাণশক্তি নেই। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ প্রজননকাল। বাসার আকার বেশ বড়। একই বাসা ঠিকঠাক করে বছরের পর বছর ব্যবহার করে। স্ত্রী শকুন সাদা রঙের একটি মাত্র ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ৪০-৪৫ দিনে।
বর্তমানে এরা মহাবিপন্ন (Critically endangered) পাখি। তানিয়া ও মনির খানের মতে, মৌলভীবাজারে বর্তমানে ৪০-৫০টির বেশি শকুন নেই। একসময় দেশের যেকোনো অঞ্চলে যাদের অবাধ বিচরণ ছিল, আজ তারা মহাবিপন্ন। এ দেশে শকুনের বাসা বানানোর গাছের তেমন অভাব নেই। কিন্তু অভাব আছে খাদ্যের। নামে শিকারি হলেও আদতে মরা-পচা প্রাণী ছাড়া অন্যকিছুতে রুচি নেই।
আন্তর্জাতিক শকুনশুমারির তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর ৯৯.৯% বাংলা শকুন গত দুই দশকে মারা গেছে। এ জন্য গবাদিপশুর চিকিৎসায় ব্যবহূত ব্যথানাশক ওষুধ ডাইক্লোফেনাকই মূলত দায়ী। তবে সাম্প্রতিককালে দেশে প্রাণী চিকিৎসাসেবার মান উন্নত হওয়ায় চাষিরা নিজেদের চিকিৎসার প্রতি যত্ন না নিলেও তাদের মহামূল্যবান গবাদিপশুর চিকিৎসার প্রতি বেশ সচেতন। ফলে এদের মৃত্যুহার কমেছে। তা ছাড়া অ্যানথ্রাক্স ও অন্যান্য জুনোটিক রোগে (যে রোগ মানুষ থেকে পশু ও পশু থেকে মানুষে ছড়ায়) মৃত গবাদিপশু মাটির গভীরে চাপা দেওয়ার নিয়ম থাকায় এগুলোকে যত্রতত্র ফেলা হয় না। ফলে শকুনের খাদ্য ঘাটতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে, অন্যান্য পাখির তুলনায় বাংলা শকুনের বংশবৃদ্ধির হারও অত্যন্ত কম। ফলে দিনে দিনে এদের সংখ্যা কমে যায়।
আশার কথা, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গবাদিপশুতে ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। তবে প্রাণিচিকিৎসকদের এটি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। বিকল্প হিসেবে শকুনবান্ধব ম্যালক্সিক্যাম ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল ইতিমধ্যে শকুন রক্ষার জন্য তাদের বিকল্প খাদ্যের ব্যবস্থা, আবদ্ধাবস্থায় প্রজনন ও পরবর্তী সময়ে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কাজেই এ দেশের মহাবিপন্ন বাংলা শকুনকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারকে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
শকুনের দৃষ্টি অসাধারণ তীক্ষ, কিন্তু ঘ্রাণশক্তি নেই। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ প্রজননকাল। বাসার আকার বেশ বড়। একই বাসা ঠিকঠাক করে বছরের পর বছর ব্যবহার করে। স্ত্রী শকুন সাদা রঙের একটি মাত্র ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ৪০-৪৫ দিনে।
বর্তমানে এরা মহাবিপন্ন (Critically endangered) পাখি। তানিয়া ও মনির খানের মতে, মৌলভীবাজারে বর্তমানে ৪০-৫০টির বেশি শকুন নেই। একসময় দেশের যেকোনো অঞ্চলে যাদের অবাধ বিচরণ ছিল, আজ তারা মহাবিপন্ন। এ দেশে শকুনের বাসা বানানোর গাছের তেমন অভাব নেই। কিন্তু অভাব আছে খাদ্যের। নামে শিকারি হলেও আদতে মরা-পচা প্রাণী ছাড়া অন্যকিছুতে রুচি নেই।
আন্তর্জাতিক শকুনশুমারির তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর ৯৯.৯% বাংলা শকুন গত দুই দশকে মারা গেছে। এ জন্য গবাদিপশুর চিকিৎসায় ব্যবহূত ব্যথানাশক ওষুধ ডাইক্লোফেনাকই মূলত দায়ী। তবে সাম্প্রতিককালে দেশে প্রাণী চিকিৎসাসেবার মান উন্নত হওয়ায় চাষিরা নিজেদের চিকিৎসার প্রতি যত্ন না নিলেও তাদের মহামূল্যবান গবাদিপশুর চিকিৎসার প্রতি বেশ সচেতন। ফলে এদের মৃত্যুহার কমেছে। তা ছাড়া অ্যানথ্রাক্স ও অন্যান্য জুনোটিক রোগে (যে রোগ মানুষ থেকে পশু ও পশু থেকে মানুষে ছড়ায়) মৃত গবাদিপশু মাটির গভীরে চাপা দেওয়ার নিয়ম থাকায় এগুলোকে যত্রতত্র ফেলা হয় না। ফলে শকুনের খাদ্য ঘাটতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে, অন্যান্য পাখির তুলনায় বাংলা শকুনের বংশবৃদ্ধির হারও অত্যন্ত কম। ফলে দিনে দিনে এদের সংখ্যা কমে যায়।
আশার কথা, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গবাদিপশুতে ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। তবে প্রাণিচিকিৎসকদের এটি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। বিকল্প হিসেবে শকুনবান্ধব ম্যালক্সিক্যাম ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল ইতিমধ্যে শকুন রক্ষার জন্য তাদের বিকল্প খাদ্যের ব্যবস্থা, আবদ্ধাবস্থায় প্রজনন ও পরবর্তী সময়ে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কাজেই এ দেশের মহাবিপন্ন বাংলা শকুনকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারকে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
No comments