টিপু সুলতান মসজিদের ইমামকে অপসারণ
কলকাতার ঐতিহ্যবাহী টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম নুর ঊর রহমান বরকতিকে অপসারণ করা হয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর মসজিদের ইমাম পদে তাকে নিযুক্ত করেছিল মসজিদের পরিচালন কমিটি। সেই নিয়োগ কমিটিই বুধবার নুর ঊর রহমানকে অপসারণের চিঠি ধরিয়ে দিয়েছে। তবে মসজিদ কমিটির এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নুর ঊর রহমান। একই সঙ্গে তিনি নিজের পদ থেকে এখনই সরছেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। নুর ঊর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, 'যারা অপসারণের চিঠি দিয়েছে, মসজিদে তাদের কোনো কর্তৃত্বই নেই। ইমামকে সরিয়ে দেয়ার তারা কে? ওই চিঠির কোনো মূল্য নেই।' টিপু সুলতানের বংশধর ও মসজিদটির মোতোয়ালি আনোয়ার আলী শাহ জানিয়েছেন, 'নুর ঊর রহমানকে ইমামের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত বুধবার তাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।' তিনি বলেন, 'মসজিদকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক আর বিতর্কিত মন্তব্য করতে তাকে অনেকবার বারণ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা শোনেননি। কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়েছিল, তারও জবাব দেননি। তাই তাকে ইমামতির কাজ থেকে সরিয়ে দেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছি আমরা।'
নুর ঊর রহমান বরকতি নিয়মিতই বিতর্কিত মন্তব্য আর ফতোয়া জারি করে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি তার কয়েকটি মন্তব্য নিয়ে বিক্ষোভ পর্যন্ত হয়েছে। নুর ঊর রহমান ভারত সরকারের জারি করা নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী নিজের গাড়ি থেকে লালবাতিসহ বিকন খুলতে অস্বীকার করেন। তিনি সে সময় জানান, গাড়িতে লালবাতি লাগানোর অধিকার তার পরিবারকে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ব্রিটিশ সরকার দিয়ে গিয়েছে। তাই একমাত্র পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বললেই তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ওই নির্দেশ মানবেন। পরে মমতার ঘনিষ্ঠতম এক মুসলিম মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে নুর ঊর রহমান বরকতি গাড়ি থেকে লালবাতি সরিয়ে নেন। এরপর তিনি মন্তব্য করে বসেন, ভারতকে যদি আরএসএস হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করে, তাহলে দেশের কোটি কোটি মুসলমানকে পাকিস্তানে পাঠানো হোক। এ সময় নুর ঊর রহমান জানান, পাকিস্তানের জন্য লড়াই করতেও তারা প্রস্তুত রয়েছে। মূলত এই মন্তব্যের পর তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। শুধু সাধারণ মানুষ বা হিন্দুত্ববাদী সংগঠন নয়, তার সমালোচনায় মুখর হয় মুসলিমরাও। গত শনিবার রাজ্যের এক মন্ত্রী এবং জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ'র রাজ্য সভাপতি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী তার সমর্থকদের নিয়ে টিপু সুলতান মসজিদের সামনে নজিরবিহীন জমায়েতও করেন। মুসলমান যুব নেতা মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, 'এ ধরনের কথাবার্তা বলে বরকতি সাহেব মুসলমান সমাজেরই ক্ষতি করছেন। এর থেকে ফায়দা তুলছে বিজেপি।'
No comments