ফিরিয়ে দাও বঙ্গবন্ধুর পল্টন ময়দান লও হে রোলার স্কেট

বেদনার বৃষ্টি হতে থাকলে আমি সাধারণত রবীন্দ্রনাথ কিংবা জীবনানন্দের ছাতার নিচে আশ্রয় নিই। সম্প্রতি কোন্ বেদনায় এই দু’য়ের কার ছাতার নিচে কীভাবে আশ্রয় নিয়েছিলাম, সেটা পরে বলব। মূল বিষয় থেকে গোল্লাছুটের মতো এদিক-সেদিক ছোটাছুটি যেহেতু অভ্যাসে পরিণত হয়েছে আমার, তাই একটু ছড়িয়ে নেই আগে। কোনো ব্যক্তি অথবা স্থানের নাম উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিংবা কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার শুরুটা শুনলেই ব্রেইন স্টর্মিংয়ের মধ্য দিয়ে কিছু চিত্রকল্প আপনাআপনি ভেসে ওঠে আমাদের সবার মনের পর্দায়। যেমন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ শব্দদ্বৈতটি শোনামাত্রই আমার যেটা হয়- দেখতে পাই প্রথমে হিটলারের ক্রুর মুখ, তারপর পর্যায়ক্রমে রোমেল, কনসেনট্রেশন ক্যাম্প, স্ট্যালিন, চার্চিল, এল আলামিন, নরম্যান্ডি, পার্ল হারবার ইত্যাদি। যদি কেউ বলে ‘পল্টন’, বুদ্ধদেব বসুর চেহারা চলে আসে সামনে। তিনি বাস করতেন এই এলাকায়। আরও দেখি, বুদ্ধদেব যেভাবে পল্টনের বৃষ্টির বর্ণনা দিয়েছেন তার লেখায়, সেই বৃষ্টির অঝোর ধারা। আবার পল্টনের সঙ্গে ‘ময়দান’ যোগ করে পল্টন ময়দান উচ্চারিত হলেই একটা অদ্ভুত নস্টালজিয়ায় ভুগতে ভুগতে দেখতে পাই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশের বিশাল, বিস্তীর্ণ, উন্মুক্ত প্রান্তর, যার পুব দিকের একটি স্টেজে বসে আছেন বঙ্গবন্ধু (১৯৭১ সালের ৩ মার্চ) আর লক্ষ মানুষের সামনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করছেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের তখনকার সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ। আরও শুনতে পাই বঙ্গবন্ধু সেই স্টেজ থেকেই বক্তৃতা করতে করতে বলছেন- আমার পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবো ৭ তারিখে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)। হ্যাঁ, এই পল্টন ময়দানেরই এক জনসভা থেকে মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ জানিয়েছিলেন। আসসালামু আলাইকুমের অর্থ যা-ই হোক, ভাসানী যে বাচনভঙ্গিতে তা উচ্চারণ করেছিলেন,
তাতে এর মানে দাঁড়িয়েছিল- পাকিস্তান, তোমাকে বিদায়। এই ময়দানেই আমরা শুনেছিলাম বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রনেতাদের মুখ থেকে ছয় ও এগারো দফার নানা বিশ্লেষণ, সেই বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সংগঠিত হওয়ার প্রেরণা। এই সেই জায়গা, যেখানে স্বাধীনতা অর্জনের অব্যবহিত পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের খণ্ডিত দুই অংশের একটির প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং সেই সম্মেলনের স্টেজের খুঁটি গাড়া হয়েছিল আমারই তত্ত্বাবধানে। এখান থেকেই ’৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাতি শুনতে পেয়েছিল মেজর জলিল ও আসম আবদুর রবের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) আত্মপ্রকাশের ঘোষণা। আমরা পেছন ফিরে তাকালেই দেখতে পাব, ’৪৭-এ পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাঙালি জাতি পশ্চিমা শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর তাগিদ অনুভব করত যখন, জড়ো হতো পুরনো ঢাকার আরমানিটোলা পার্কে। একটা পর্যায়ে যখন ঢাকার জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশের উপলব্ধি হল, সেখানে যাওয়াটা বড় ঝক্কি-ঝামেলা, বেছে নেয়া হল পল্টন ময়দান। তাতে আরও বাড়তি সুবিধা হল দুটি- গভর্নর হাউস (বর্তমানে বঙ্গভবন) ও সচিবালয়কে কাছে পাওয়া গেল এবং তাই সহজেই পৌঁছে দেয়া গেল বক্তার কণ্ঠস্বর। এককথায় বললে বাঙালির প্রতিবাদী চেহারা পেরিফেরি থেকে উদ্ভাসিত হল মেইনস্ট্রিমে। এখন তবে একটি প্রশ্ন, তাহলে কি স্বাধীনতা লাভের পর পল্টন ময়দানের উপযোগিতা আর থাকেনি? না, স্বাধীন দেশ মানে অন্যায়-অনাচারশূন্য কোনো বিরাণভূমি নয়।
স্বাধীন দেশ মানে ঔপনিবেশিক বা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কবলমুক্ত দেশ, সেখানে মানুষ বাস করে বলে অন্যায়-শোষণও থাকতে পারে। স্বাধীন বাংলাদেশ মানে তো আর শ্রেণীহীন সমাজ নয়, আর শ্রেণীবিভক্ত সমাজ মানেই সেখানে থাকবে শ্রেণীশোষণ ও শ্রেণীবঞ্চনা। তাই পল্টন ময়দান থেকে গেল নিয়তই ব্যবহারযোগ্য এক সম্মিলনকেন্দ্র। বস্তুত ষাট ও স্বাধীনতা অর্জনের পর সত্তর দশকজুড়ে এই ময়দান ছিল বাঙালির শত জিজ্ঞাসার উত্তর খোঁজার এমন এক পাঠশালা, যেখানে পড়ানো হতো ফলিত রাজনীতি (ধঢ়ঢ়ষরবফ ঢ়ড়ষরঃরপং)। ঢাকার এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত মাইকিং হতো- আগামী অত তারিখ বিকাল তিনটায় পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে এক বিশাল ঐতিহাসিক (ইতিহাস সৃষ্টির আগেই ঐতিহাসিক!) জনসভা। অষষ ৎড়ধফং ষবফ ঃড় জড়সব-এর মতো ঢাকার সব রাস্তা মিলে যেত পল্টনে, পঙ্গপালের মতো ছুটতো মানুষ, আর ময়দানটির ঠিক পেছনের সুউচ্চ ডিআইটি ভবনের (বর্তমানে রাজউক) শীর্ষদেশে থাকা বিশালাকার ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে সময় গুনতো কখন বাজবে তিনটা, স্টেজে উঠবেন নেতা। বাঙালির মানস গঠনেও পল্টনের ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না। আমার নিজের কথা যদি বলি, মানসটা তো বঙ্গবন্ধু আর রবীন্দ্রনাথেরই গিফ্ট। পল্টনে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা শুনে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা শিখেছি আর জনসভা থেকে বাড়ি ফিরে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে শুনতে শিখেছি ভালোবাসতে। বিভ্রান্তও হয়েছি পল্টনের মায়াজালে জড়িয়ে। মার্কসবাদের দোষ ধরব না; কিন্তু রব-জলিলরা এই পল্টন ময়দানেরই স্টেজে বসে এই মতবাদের ইন্দ্রজালে আটকে রেখে মতবাদটির ভুল ব্যাখ্যায় বেপথু করেছিলেন অজস তরুণ-যুবককে। এখান থেকেই ’৭৪ সালের ১৭ মার্চ রব-জলিল আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর মিন্টো রোডস্থ বাড়িতে। ওই বাড়িটি ঘেরাও করলেই নাকি বিপ্লবের অর্ধেকটা সম্পন্ন হয়ে যাবে। বিপ্লবের এমন শর্টকাট রাস্তা লেনিন-মাওজেদংরাও আবিষ্কার করতে পারেননি। বিপ্লব হয়নি, হতে পারে না,
বরং প্রতিবিপ্লবী ওই কর্মসূচিতে গুলি খেয়ে চোখের সামনেই ধড়পাতে ধড়পাতে মরেছিল বন্ধু জাফর। অনেক ছোটাছুটি হল, এবার স্থির হই। বাংলাদেশ খোখো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বাবুল আর আমরা থাকতাম রাস্তার এপার আর ওপারে। তিনি আমার আকৈশোর বড় ভাই। বহুদিন পর তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম গত ফাল্গ–নের কোনো এক সন্ধ্যায়। মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে বসানো হয়েছে স্পোর্টসের নানা ফেডারেশনের কার্যালয়ের সঙ্গে খোখোর কার্যালয়ও, সেখানেই গেছি। গত ত্রিশ বছর ভুলে ছিলাম পল্টন ময়দানের কথা। ভুলব না তো কী? প্রসঙ্গ উঠলেই না প্রাসঙ্গিকতার প্রশ্ন ওঠে। বাবুল ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হঠাৎ খেয়াল হয়, আরে এ জায়গাটা তো পল্টন ময়দানেরই একটা অংশ। যেসব নদীকে এখন আর চেনা যায় না, সেগুলোর দখল প্রক্রিয়া কীভাবে শুরু হয়েছিল জানি না, তবে পল্টন ময়দানের দূষণ শুরু হয়েছিল এরশাদের আমলে, এর একাংশে হকি স্টেডিয়ামটি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। চিরচেনা ভূতপূর্ব প্রেমিকার শরীরের একটি অংশ এসিডদগ্ধ দেখতে পেয়ে শুরু হয় বেদনার বৃষ্টি আর তখনই রবীন্দ্রনাথের ছাতার নিচে আশ্রয় নেই আমি- ‘যদি তারে নাই চিনি গো, সে কি আমায় নেবে চিনে এই নব ফাল্গ–নে’। আমি পল্টন ময়দানের পুরো শরীরটা খুঁটিয়ে দেখতে চাই; কিন্তু কথা বলতে বলতে রাত হয়ে গেছে বলে অন্ধকারে ভালো দেখতে পাব না, আরেকদিন আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফিরে আসি। গেলাম গত মঙ্গলবারে। এবার বিকেলেই, সূর্যালোকে স্পষ্ট দেখতে হবে সব। কিন্তু এ কী! প্রেমিকার সারা শরীরই যে ক্ষত-বিক্ষত, এ কোন্ ময়দানে এলাম আমি?
হকি স্টেডিয়ামটা তো আগেই দেখেছি। আজ প্রথমেই চোখে পড়ল শেখ রাসেল স্কেটিং কমপ্লেক্স, এর পর এক এক করে হ্যান্ডবল স্টেডিয়াম, ভলিবল স্টেডিয়াম, কাবাডি স্টেডিয়াম, ইনডোর স্টেডিয়াম, মোহম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম, দোকানপাট- ময়দানটাকে অচেনা করে ফেলতে আর কিছু লাগে? হ্যাঁ, ঠিক মাঝখানে এক চিলতে জমি আছে বটে। কিন্তু এর আয়ু কতদিন? কোনো একদিন কেউ এসে প্রধানমন্ত্রীর কানে কানে বলবেন, নেত্রী আমাদের বাস্কেটবলের একটা জায়গা দিন না! এই শুনে বাবুল ভাই আরেক কানের কাছে মুখ নিয়ে বলবেন, খোখো কী দোষ করল ম্যাডাম! ব্যস, দখল হয়ে যাবে এই ‘দুই বিঘা জমি’ও। পল্টন ময়দানকে কেন এভাবে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা? কেন স্পোর্টসের দোহাই পেড়ে ঐতিহ্যপ্রিয়, নস্টালজিক বাঙালিকে এভাবে আঘাত করা? ময়দানটিকে যদি অবিকল উন্মুক্ত রাখা হতো, তাতে কি ইতিহাস রক্ষার সঙ্গে সেটিকে যুগপৎ জনসভাস্থল ও খেলার মাঠ হিসেবেও ব্যবহার করা যেত না? সেটাও কি হতে পারত না স্পোর্টসেরই সেবা করা? আমাদের মনে আছে, ১৯৯৬ সালে পাইওনিয়ার ফুটবল লীগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথা দিয়েছিলেন, পল্টন ময়দানকে উন্মুক্ত রাখা হবে, কারণ এটা এক ঐতিহাসিক জায়গা। তার এই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সেখানে বাফুফের বহুতল ভবন নির্মাণের আয়োজনও বাতিল করা হয়েছিল। অথচ ময়দানটির দখল প্রক্রিয়ার প্রায় অর্ধেকটাই হয়েছে তার হাত দিয়ে। জাতির কথা বাদ, বাবার স্মৃতি কেউ এভাবে ঢেকে দিতে পারে? যদি এমন হতো, ওইসব কাজ-কারবারের জন্য আর কোনো জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না, তাহলেও একটা কথা থাকত। সবই রাজধানীর নাভিকেন্দ্রে করতে হবে? নাভিতেই যত মজা! মিষ্টি শিশু রাসেলকে আমরা সবাই ভালোবাসি। শেখ কামাল ও জামালের সঙ্গে তাকেও হত্যা করা হয়েছিল এই চিন্তায় যে, বঙ্গবন্ধুর কোনো উত্তরাধিকারী যেন ভবিষ্যতে এই রাষ্ট্রের ক্ষমতা না নিতে পারে। হ্যাঁ, হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে বাবার ক্ষমতার উত্তরাধিকারী হয়েছেন আর ছোট ছেলে রাসেল হয়েছেন তার মূল্যবান এক স্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী- পল্টন ময়দানের। প্রধানমন্ত্রীকে এসব বুদ্ধি কে দেয়, কারা দেয়? জনসভার উত্তাপ থেকে গা বাঁচানোই কি উদ্দেশ্য? তাহলে তো বলব, শীতকালে যখন বিরোধী দলে থাকব, তখন তাপ দেবে কে? জিয়াউর রহমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভাগ করে শিশুপার্ক করেছিলেন বলে সেই অপবাদ এখনও তাকে ছাড়ে না। গিয়াস কামাল চৌধুরী যখন বলেছিলেন, শিশুপার্কটিকে আরও বিস্তৃত করা হবে, তখন তিনিও পড়েছিলেন আওয়ামী লীগারদের তোপের মুখে। জিয়া ও গিয়াস কামালের মনস্তত্ত্বটা হয়তো ছিল- যা আমার নয়, তা ধ্বংস করো। কিন্তু যা আমার, শুধু আমার বললে কম হবে, যা আমার অহঙ্কার, তাকে দেখিয়ে বেড়ানোই তো ছিল কৃতিত্ব। তা না, তাকে আড়ালে ঢেকে দিলাম! একেই কি বলে ‘উন্নয়ন’? একটা গুরুতর বিষয়ের ফয়সালা হওয়া দরকার। উন্নয়ন বলতে আমরা কী বুঝি? কেউ একজন একবার আমাকে বলেছিলেন, একটি দেশের উন্নয়ন এগোচ্ছে কিনা, তা বুঝতে হলে দেখতে হবে সেখানে ইটের ভাটার সংখ্যা বাড়ছে কিনা। তাকে ধমক লাগিয়েছিলাম এই বলে যে, এতটুকুই বুঝলাম, উন্নয়ন বলতে আপনি শুধু স্ট্রাকচার বোঝেন। আত্মার উন্নয়ন আপনার কাছে কিছু না, তাই না?
প্রকৃতি সংরক্ষণ, ঐতিহ্যকে আরও ঐতিহ্যমণ্ডিত করা- এসবও আপনার মতে উন্নয়ন নয়! তাকে আরও বলেছিলাম, হার্ভার্ডের আকৃতিতে একটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলাম, কিন্তু সেখানে ভালো শিক্ষক নেই; মাউন্ট এলিজাবেথের মতো হাসপাতাল গড়লাম, কিন্তু সেখানে রোগীর সেবা নেই- সেটা উন্নয়ন? উন্নয়ন বলতে আমি বুঝি- কৃৎকৌশল সভ্যতার মধ্যে বাস করে প্রকৃতিরও পরিচর্যা করা, ঐতিহ্যের মধ্যে থেকে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা এবং একইসঙ্গে আত্মার উন্নয়ন সাধন। এক কথায়, উন্নয়ন এক সুসমন্বিত সার্বিক প্রক্রিয়া। উন্নয়ন নিশ্চয়ই গোদ রোগ (বষবঢ়যধহঃরধংরং) নয় যে, পা ফুলে একাকার আর পুরো শরীরটাই শীর্ণকায়! বহুকাল আগ থেকেই প্রকৃতি, ঐতিহ্য, সৌন্দর্যচেতনা ইত্যাদির সঙ্গে উন্নয়নকে খাপ খাওয়ানোর অসংখ্য মডেল তৈরি ও সেগুলো অনুসৃত হয়ে আসছে দুনিয়াজুড়ে। আমাদের এখানেও এমন মডেল অনুসরণ করা হয়েছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। এমন একটি আধুনিক মডেল হল হাতিরঝিল, যেখানে জলাধার ও সৌন্দর্যকে যুগপৎ ধারণ করা হয়েছে। মোগলরা যখন গাজীপুরে বসতি স্থাপন করেছিল, তখনও প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে ক্ষুণœ করা হয়নি। এটাকে আমরা উন্নয়নের সনাতন মডেল (ঃৎধফরঃরড়হধষ সড়ফবষ) বলতে পারি। হ্যাঁ, কাঠামোর পর কাঠামো উঠছে তো উঠছেই ধুম-ধাড়াক্কা। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্স করে কুল পাচ্ছেন না। চারদিকে শনৈ শনৈ রব। কিন্তু আমি ভাবি, কবে না আবার আওয়াজ ওঠে- ফিরিয়ে দাও অরণ্য, লও হে নগর!
মাহবুব কামাল : সাংবাদিক
mahbubkamal08@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.