খাদ্যমন্ত্রী ফসলহানি নিয়ে ডাহা মিথ্যাচার করছে : রিজভী
দেশের অস্থিতিশীল চালের দাম নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী ডাহা মিথ্যাচার করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিগত ৯ বছর ধরে পণ্যবাজার সিন্ডিকেটসহ ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারি ব্যাংক-বীমা সবকিছু গ্রাস করে নেয়ার পরও নির্লজ্জভাবে খাদ্যমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীরা নিজেদের অকর্মণ্যতা ও চৌর্যবৃত্তির কারণে সৃষ্ট মানুষের খাদ্য নিয়ে মহাদুর্যোগ আড়াল করার জন্য অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। তাদের লুটপাটের কারণেই চাল, চিনি, লবন, ডাল, তেল, পেঁয়াজ-রসুন, মরিচ, কাঁচা তরিতরকারিসহ সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এখন লাগামহীন। চারিদিকে এখন হাহাকার চলছে। মিথ্যার বেসাতি করে খাদ্যমন্ত্রীরা রেহাই পাবেন না, জনগণ সবকিছুরই হিসাব কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নেবে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, মিথ্যা মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুুলু আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গেলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এটি সরকারের প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির আরেকটি বর্ধিত প্রকাশ। স্বেচ্ছাচার ও দুর্নীতির চাপে গণতন্ত্র ও বহুত্ত্ববাদকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে সরকার জনরোষকে আটকানোর জন্য বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে কারাগারে আটকিয়ে রাখছে। বরকত উল্লাহ বুলুকে আটক সেই অশুভ পরিকল্পনারই অংশ। তাকে মিথ্যা মামলায় জামিন না দিয়ে কারাগারে আটকের ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান রিজভী। তিনি বলেন, গত দু’দিন আগে সরকারের খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অসাধু মজুদদার ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের দায়ী। চালের বাজারে এই দুর্যোগ মনুষ্যসৃষ্ট। হাওর অঞ্চলে বন্যায় ৩ শতাংশ অর্থাৎ ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান নষ্ট হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কারণে আরো ৭ লাখ মেট্রিক টন ধান নষ্ট হয়েছে। এই সুযোগে সরকারের বিরুদ্ধবাদী ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা আতঙ্ক সৃষ্টি করে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে।’ খাদ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, তিনি বিএনপি-কে দোষারোপ করে বলেছেন- ‘চালের বাজার অস্থিতিশীল করার পেছনে বিএনপি কলকাঠি নাড়ছে।’ আমি তাকে বলতে চাই- হাওর অঞ্চলে তিনি ফসলহানি নিয়ে ডাহা মিথ্যাচার করেছেন। উনি ফসলহানি নিয়ে যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন তার বাস্তবতার মোটেও মিল নেই। হাওর এলাকার প্রায় সম্পূর্ণ ফসল বিনষ্ট হয়েছে। এখন ৭৪-এর দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় আসার পর বিগত ৯ বছর ধরেই চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
কারণ দেশটাই তো আওয়ামী লীগের কব্জার মধ্যে। এ কয়েক বছরে বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মীর জোত-জমি-ভিটা, সহায়-সম্বল কেড়ে নেয়া হয়েছে। চাকরিজীবীদের কারে প্রতি সন্দেহ হলেই তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা তো মামলা-হামলা ও গ্রেফতার নির্যতনের ভয়ে বাড়িছাড়া এলাকাছাড়া। তিনি গতকাল প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, সরকার প্রধানের কিছুটা সত্য উপলব্ধি থাকলেও বেশিরভাগই হচ্ছে তার স্বভাবসূলভ এবং অনর্গল মিথ্যাচারেরই পুনরাবৃত্তি। আমি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলতে চাই- যারা আপনার বাবার রক্ত ডিঙ্গিয়ে শপথ নিয়েছেন এবং সেই শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন তারা ১৯৮১ সালের ১৭ মে থেকে কী করে আপনার অধীনে রাজনীতি করলেন, এমপি হলেন, মন্ত্রী ও উপদেষ্টা হলেন কিংবা গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেন? ‘রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাকে ১৯৮১ সালে দেশে আসতে বাধা দিয়েছিল’। প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, তাহলে ১৭ মে ১৯৮১ তে আপনি কী করে দেশ ঢুকলেন? তখন তো জিয়াউর রহমানই রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি আরো বলেন, আইনের শাসনের অভাবে দেশে যে ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা চলছে, যেভাবে প্রতিদিন হত্যা, গুম, অপহরণ, নারী ও শিশু নির্যাতনের যে বর্বরতা চলছে, যেভাবে এসব ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা প্রতিদিন গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ হচ্ছে তাতে দেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না। প্রতিদিনই পত্রিকার পাতা উল্টালেই বিভীষিকাময় পৈশাচিক আস্ফালনের চিত্রে সবাইকে আঁতকে উঠতে হয়। ওদিকে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ধানের শীষের প্রার্থী নুর উদ্দিন দর্জি ধানের শীষের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ধানের শীষ মনোনীত চেয়ারম্যান নুর উদ্দিন দর্জি যাতে দায়িত্ব পালন করতে না পারে সেজন্য তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে রিজভী অভিযোগ করেন।
No comments