চট্টগ্রামে বিএনপির দুই নেতাকে অব্যাহতি
বিএনপির চট্টগ্রাম উত্তরের সদস্য সচিব কাজী আবদুল্লাহ আল হাসান ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েলকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ২ মে চট্টগ্রাম উত্তর ও ৩ মে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কর্মিসভায় হামলা ও সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। কর্মিসভা সফল করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকার অভিযোগে সতর্ক করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমকে। এদিকে ঢাকা ও রাজশাহী জেলা এবং মহানগর বিএনপির কর্মিসভায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত ও ইন্ধনদাতা ৭ নেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে জানা গেছে। বুধবার বিএনপির দফতর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েল এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সদস্য সচিব কাজী আবদুল্লাহ আল হাসানকে বিএনপির সব পর্যায়ের পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। দলীয় গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারা মোতাবেক এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উল্লিখিত দু’জনই এখন থেকে দলের কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকতে পারবেন না। এছাড়াও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীমকে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে ও সতর্কতার সঙ্গে পালনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, ৩ মে চট্টগ্রামের পটিয়ায় কর্মিসভায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক এনামের ওপর হামলা চালায় গাজী শাহজাহান জুয়েলের অনুসারীরা। তারা এনামের বুকে ছুরিকাঘাত করে। এলোপাতাড়ি হামলায় তার ডান হাত ভেঙে যায়। মাথায়ও গুরুতর আঘাত পান। অন্যদিকে ২ মে চট্টগ্রামের নাসিমন ভবনে উত্তর জেলা বিএনপির কর্মিসভায় মঞ্চের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবদুুল্লাহ আল হাসানের অনুসারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ বিষয়ে মাহবুবের রহমান শামীম যুগান্তরকে বলেন, এখন থেকে দলের চেয়ারপারসন যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। কোনো ভাই নয়, দল যেভাবে চাইবে সেভাবে কাজ করব। দলের এ সতর্ক বার্তাকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ১৪ মে কেন্দ্র ঘোষিত ঢাকা জেলার কর্মিসভায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য জেলা যুবদলের আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এর ইন্ধনদাতা হিসেবে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের নাম পেয়েছে বলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সূত্রে জানা গেছে। ঢাকা জেলা বিএনপির পক্ষ থেকেও উল্লিখিত ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাহউদ্দিন বাবু ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক সাক্ষাৎ করেন। কর্মিসভার বিস্তারিত ঘটনা খালেদা জিয়াকে জানান ওই দুই নেতা। এ সময় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন,
ঢাকা জেলা বিএনপির কর্মিসভায় আমার স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের (গয়েশ্বর চন্দ্র রায়) গায়ে পানির বোতল ছুড়ে মারা হয়েছে। তাকে বক্তব্য দিতে দেয়া হয়নি। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বা ইন্ধনদাতাদের ব্যাপারে আরও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। দায়ী কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। জানতে চাইলে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা ঢাকা জেলা বিএনপির কর্মিসভায় যা যা হয়েছে বিস্তারিত ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) অবহিত করেছি।’ এদিকে ১৫ মে রাজশাহী মহানগর ও ১৬ মে রাজশাহী জেলা বিএনপির কর্মিসভায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার নেপথ্য নেতাদের নাম চিহ্নিত করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। রাজশাহী টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, দু’দিনে মহানগর ও জেলা কর্মিসভায় যেসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো হয়েছে তার নেপথ্যে ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, জেলা নেতা দেলোয়ার হোসেন দুলু। এছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহীর প্রভাবশালী এক নেতার নামও এ তালিকায় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও রাজশাহীর টিম প্রধান গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, রাজশাহীতে যা হয়েছে সেটা আমরা প্রতিবেদন আকারে দলকে দেব। তবে এ নিয়ে গণমাধ্যমে বলার মতো কোনো খবর নেই।
No comments