আন্তর্জাতিক জলাভূমি দিবস- শিয়া সংশ্লিষ্ট হোক হৃতগৌরবের নদীসম্পদ by মো: আবুল হাসান ও খন রঞ্জন রায়
বাংলাদেশ
নদীমাতৃক দেশ কথাটি সামগ্রিক অর্থেই সত্য। সভ্যতার ক্রমবিকাশ, যোগাযোগ ও
অর্থনীতির মূল ভিত্তি রচিত হয়েছে নদীকে কেন্দ্র করে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক
ঐতিহ্যেরও মূল ভিত্তি নদীনির্ভরতা। আমাদের সাহিত্য, গান, নাটক, চলচ্চিত্রে
নানাভাবে উঠে এসেছে নদীর প্রসঙ্গ। আজকের এই বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ১৯৬৯ থেকে
১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পর্যন্ত শত-সহস্র বাঙালির কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল
‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’।
ঐতিহ্য আর গৌরবের নদী ও নৌপথ আজ বিপন্ন।
নদীনির্ভরশীলতা, গুরুত্ব, ঐতিহ্য বিবেচনা করে ভারতের জাতীয় নদী গঙ্গা। পাকিস্তানও সিন্ধু নদীকে ‘কওমি দরিয়া’ বা জাতীয় নদী ঘোষণা এবং প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি সিন্ধু দিবস পালন করে। এ দেশের ওপর দিয়ে সাত শ’র অধিক নদ-নদী, শাখা নদী ও উপনদী প্রবহমান রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সর্বজনীন সিদ্ধান্তে একটি নদীকে ‘জাতীয়’ ঘোষণা করা সমীচীন। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম নগর বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল সিন্ধুনদের অববাহিকায় এবং গুজরাটের কয়েকটি অঞ্চলে। নদ-নদীর প্রবল ভাঙনে নদ-নদীতে চলে যাচ্ছে বতসভিটা, আবাদি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা। পদ্মা মেঘনা যমুনা কর্ণফুলী শীতল্যা বুড়িগঙ্গা প্রভৃতি নদীতীরবর্তী এলাকায় নদীর পরিশোধনাগার ছাড়াই বিভিন্ন শিল্পকারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এভাবেই অদূরদর্শী শিল্পায়ন ধ্বংস ডেকে আনছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় নদ-নদীর। একটি সমীায় জানা গেছে, কলকারখানাসহ শিল্প থেকে প্রতি বছর প্রায় ৩০-৫০ কোটি টন ভারী ধাতু, তরল বর্জ্য, বিষাক্ত ছাই এবং অন্যান্য উপজাত পদার্থ পরিবেশকে দূষিত করে। যেসব শিল্পে জৈব পদার্থ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেখানে সবচেয়ে বেশি দূষণ ঘটে; বিশেষ করে খাদ্যসংক্রান্ত শিল্পগুলো। এসব শিল্প উন্নত দেশগুলোয় শতকরা ৪০ ভাগ আর উন্নয়নশীল দেশে ৫৪ শতাংশ দূষণ ঘটায়।
রেল, সড়ক, বিমানপথ প্রভৃতির দিকে বিশেষ ঝোঁক পড়ায় নৌপথ চরমভাবে অবহেলিত। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা। পানি মেপে ভয়াল মেঘনা পাড়ি দিতে হচ্ছে ছোট-বড় নৌযানকে। বাংলার ‘সুয়েজখাল’ বলে পরিচিত ঘাশিয়াখালী চ্যানেলের নাব্যতা সঙ্কটে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলা ছাড়াও খুলনা ও নওয়াপাড়া নদীবন্দরের সাথে সারা দেশের সরাসরি নৌযোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। গাবখান চ্যানেলেরও একই পরিণতি। এ দু’টি চ্যানেলের মাধ্যমেই মংলা, খুলনা ও নওয়াপাড়া বন্দরগুলোর সাথে সারা দেশের নৌযোগাযোগ পরিচালিত হয়।
ঐতিহ্য আর গৌরবের নদী ও নৌপথ আজ বিপন্ন।
নদীনির্ভরশীলতা, গুরুত্ব, ঐতিহ্য বিবেচনা করে ভারতের জাতীয় নদী গঙ্গা। পাকিস্তানও সিন্ধু নদীকে ‘কওমি দরিয়া’ বা জাতীয় নদী ঘোষণা এবং প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি সিন্ধু দিবস পালন করে। এ দেশের ওপর দিয়ে সাত শ’র অধিক নদ-নদী, শাখা নদী ও উপনদী প্রবহমান রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সর্বজনীন সিদ্ধান্তে একটি নদীকে ‘জাতীয়’ ঘোষণা করা সমীচীন। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম নগর বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল সিন্ধুনদের অববাহিকায় এবং গুজরাটের কয়েকটি অঞ্চলে। নদ-নদীর প্রবল ভাঙনে নদ-নদীতে চলে যাচ্ছে বতসভিটা, আবাদি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা। পদ্মা মেঘনা যমুনা কর্ণফুলী শীতল্যা বুড়িগঙ্গা প্রভৃতি নদীতীরবর্তী এলাকায় নদীর পরিশোধনাগার ছাড়াই বিভিন্ন শিল্পকারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এভাবেই অদূরদর্শী শিল্পায়ন ধ্বংস ডেকে আনছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় নদ-নদীর। একটি সমীায় জানা গেছে, কলকারখানাসহ শিল্প থেকে প্রতি বছর প্রায় ৩০-৫০ কোটি টন ভারী ধাতু, তরল বর্জ্য, বিষাক্ত ছাই এবং অন্যান্য উপজাত পদার্থ পরিবেশকে দূষিত করে। যেসব শিল্পে জৈব পদার্থ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেখানে সবচেয়ে বেশি দূষণ ঘটে; বিশেষ করে খাদ্যসংক্রান্ত শিল্পগুলো। এসব শিল্প উন্নত দেশগুলোয় শতকরা ৪০ ভাগ আর উন্নয়নশীল দেশে ৫৪ শতাংশ দূষণ ঘটায়।
রেল, সড়ক, বিমানপথ প্রভৃতির দিকে বিশেষ ঝোঁক পড়ায় নৌপথ চরমভাবে অবহেলিত। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা। পানি মেপে ভয়াল মেঘনা পাড়ি দিতে হচ্ছে ছোট-বড় নৌযানকে। বাংলার ‘সুয়েজখাল’ বলে পরিচিত ঘাশিয়াখালী চ্যানেলের নাব্যতা সঙ্কটে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলা ছাড়াও খুলনা ও নওয়াপাড়া নদীবন্দরের সাথে সারা দেশের সরাসরি নৌযোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। গাবখান চ্যানেলেরও একই পরিণতি। এ দু’টি চ্যানেলের মাধ্যমেই মংলা, খুলনা ও নওয়াপাড়া বন্দরগুলোর সাথে সারা দেশের নৌযোগাযোগ পরিচালিত হয়।
দেশের
নদ-নদীগুলোর অবস্থা করুণ। নদী দেশের প্রাণপ্রবাহ। বিশুদ্ধ পানি ও
প্রতিবন্ধকহীন প্রবাহ ছাড়া বাস-উপযোগী দেশ কল্পনা করা কঠিন। বাংলাদেশের
প্রায় সব নদী ভারত, মিয়ানমার ও চীনের সাথে মিশে আছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত
৫৪টি অভিন্ন নদীর প্রায় সবগুলোতেই উজানে পানি প্রত্যাহার এবং পানির অসম
বণ্টনের কারণে ভাটির বাংলাদেশে পানি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির কবলে।
প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় নদ-নদীগুলোতে অসংখ্য চর জেগেছে। নৌ
চলাচল, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
নৌপথের ব্যবস্থাপনার জন্য দেশে গত ৩০-৪০ বছরে কয়েকটি মহাপরিকল্পনা প্রণীত হলেও কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। অনিয়ম ও দুর্নীতির গহ্বরে ঢুকে গেছে বড় বড় মহাপরিকল্পনা। নাব্যতাসঙ্কট নিরসনে ড্রেজিং খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও কাজ তেমন হয়নি। একের পর এক নৌপথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ৯০ দশকে ফ্রান্স ও জার্মানির কারিগরি সহায়তায় সরকার প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে কূলকান্দি রিভেটমেন্ট টেস্ট স্ট্রাকচারটি নির্মাণ করে। গত পাঁচ বছরে যমুনার বাম তীরের ভাঙন রোধে ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছরমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করে। এর বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত দুই বছরে যমুনার ভয়াবহ ভাঙনে টেস্ট স্ট্রাকচারটির দুই-তৃতীয়াংশ বিলীন হয়েছে। ফসলি জমি যমুনার ভাঙন থেকে রার জন্য ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছরমেয়াদি তীর সংরণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরে ব্যয় ৪১৭ কোটিতে উন্নীত করা হয়।
বিদেশীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যেমন বাংলার নদী বাঁচানো সম্ভব নয়, তেমনি দেশীয় প্রযুক্তি ও জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে নদী রায় বলিষ্ঠ পদপে প্রয়োজন। পরিকল্পিতভাবে নদী সমস্যার সমাধান করতেই হবে। নৌযান চলাচলের চ্যানেলগুলো যথাযথভাবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে প্রবহমান রাখা গেলে দুই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নদীর পানি বা মাটির নিয়ন্ত্রণ বা পরিচর্যা করতে হলে গবেষণা পরিচালনা করতে হবে। অথচ নদ-নদী, খাল-বিলসহ জলাভূমি সম্পর্কিত অধ্যয়নের শিাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়নি। নদী বিজ্ঞানের লেজার, আল্ট্রাসনিক, আইসোটোপ প্রভৃতির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মানদণ্ড নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা এ দেশে নেই। নদীশাসন, গতিপ্রকৃতি পর্যবেণ যন্ত্রপাতি তৈরি ও রণাবেণসংশ্লিষ্ট, প্রাতিষ্ঠানিক শিায় শিতি কর্মীবাহিনী সৃষ্টি করতে হবে। ইনস্টিটিউট অব রিভার টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা করে শিা, গবেষণা ও প্রযুক্তি সন্নিবেশের মাধ্যমে নদীপথের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
নৌপথের ব্যবস্থাপনার জন্য দেশে গত ৩০-৪০ বছরে কয়েকটি মহাপরিকল্পনা প্রণীত হলেও কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। অনিয়ম ও দুর্নীতির গহ্বরে ঢুকে গেছে বড় বড় মহাপরিকল্পনা। নাব্যতাসঙ্কট নিরসনে ড্রেজিং খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও কাজ তেমন হয়নি। একের পর এক নৌপথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ৯০ দশকে ফ্রান্স ও জার্মানির কারিগরি সহায়তায় সরকার প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে কূলকান্দি রিভেটমেন্ট টেস্ট স্ট্রাকচারটি নির্মাণ করে। গত পাঁচ বছরে যমুনার বাম তীরের ভাঙন রোধে ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছরমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করে। এর বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত দুই বছরে যমুনার ভয়াবহ ভাঙনে টেস্ট স্ট্রাকচারটির দুই-তৃতীয়াংশ বিলীন হয়েছে। ফসলি জমি যমুনার ভাঙন থেকে রার জন্য ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছরমেয়াদি তীর সংরণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরে ব্যয় ৪১৭ কোটিতে উন্নীত করা হয়।
বিদেশীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যেমন বাংলার নদী বাঁচানো সম্ভব নয়, তেমনি দেশীয় প্রযুক্তি ও জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে নদী রায় বলিষ্ঠ পদপে প্রয়োজন। পরিকল্পিতভাবে নদী সমস্যার সমাধান করতেই হবে। নৌযান চলাচলের চ্যানেলগুলো যথাযথভাবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে প্রবহমান রাখা গেলে দুই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নদীর পানি বা মাটির নিয়ন্ত্রণ বা পরিচর্যা করতে হলে গবেষণা পরিচালনা করতে হবে। অথচ নদ-নদী, খাল-বিলসহ জলাভূমি সম্পর্কিত অধ্যয়নের শিাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়নি। নদী বিজ্ঞানের লেজার, আল্ট্রাসনিক, আইসোটোপ প্রভৃতির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মানদণ্ড নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা এ দেশে নেই। নদীশাসন, গতিপ্রকৃতি পর্যবেণ যন্ত্রপাতি তৈরি ও রণাবেণসংশ্লিষ্ট, প্রাতিষ্ঠানিক শিায় শিতি কর্মীবাহিনী সৃষ্টি করতে হবে। ইনস্টিটিউট অব রিভার টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা করে শিা, গবেষণা ও প্রযুক্তি সন্নিবেশের মাধ্যমে নদীপথের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
No comments