সন্তানকে ঠকাব নাকি শঠতা শেখাব! by উমর ফারুক
আমেরিকার
প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন তার ছেলের শিক্ষককে এক চিঠিতে লিখেছিলেন,
'আমার ছেলেকে শেখাবেন, বিদ্যালয়ে নকল করার চেয়ে অকৃতকার্য হওয়া অনেক বেশি
সম্মানজনক'। তিনি লিখেছিলেন, 'তাকে শেখাবেন, পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার
চেয়ে একটি উপার্জিত ডলার অধিক মূল্যবান'। আমরা যে যা-ই বলি না কেন, আমাদের
পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ একেবারে ছোট নয়। আমাদের মায়েরা সন্তানকে সত্য
ও মিথ্যের পার্থক্যটা শেখানোর চেষ্টা করেন। কোনটি শঠতা, কোনটি সুন্দর সে
শিক্ষা আমরা শিশু জীবনে পেয়ে থাকি। প্রায়ই আমাদের চারপাশে সত্য উচ্চারিত
হয়। শিশুকাল থেকেই আমরা সত্য ধারণ করতে সাহসী হয়ে উঠি। কিন্তু বেশ কয়েক
বছরে আমাদের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংস্কৃতি আদর্শ শিক্ষায় বড় ধরনের আঘাত করছে।
প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষা আমাদের অভিভাবকদের সীমাহীন দুশ্চিন্তায় ফেলে
দিচ্ছে। 'জ্বালাও-পোড়াও, থামাও'_ এ রকম কিছু নেতিবাচক সংস্কৃতি যখন
আমাদের গ্রাস করছে, চারদিক থেকে যখন বারুদের গন্ধে নাক বন্ধ হয়ে আসছে, আর
মানুষের পোড়া গন্ধে যখন আমাদের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে, ঠিক তেমনি একটি
দুঃসময়ে শুরু হতে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। প্রতিটি মুহূর্ত একজন অভিভাবক
শঙ্কা নিয়ে পার করছেন। এক সীমাহীন অনিশ্চয়তা ভর করছে তার ওপর। পরীক্ষা কি
আদৌ যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে? প্রথম পরীক্ষার জন্য কোন পাঠ্যবইটি পড়তে বলব
আমার সন্তানকে? পরীক্ষা দিতে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না তো? নিরাপদ
প্রত্যাবর্তন কতখানি নিশ্চিত? পাশাপাশি প্রশ্নপত্র ফাঁস অভিভাবককে ভাবিয়ে
তুলছে।
গত ২৬ জানুয়ারি ফেসবুকে 'প্রশ্নপত্র ফাঁস' শীর্ষক একটি বিজ্ঞাপন দেখে অবাক হতে হলো। বিজ্ঞাপনের ভাষাটি এ রকম, 'এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র লাগলে ইনবক্স করুন, দুঃখিত শুধু সায়েন্স ও কমার্সের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হবে'। এবারের জেএসসি ও পিএসসি পরীক্ষার আগের দিন রাত ৮টার দিকে একাধিক ফেসবুকের পেজে স্ট্যাটাস ছিল কিছুটা এ রকম, 'একটু অপেক্ষা করুন, আর আধা ঘণ্টার মধ্যে প্রশ্নপ্রত্র পেয়ে যাবেন'। সত্যি সত্যি পাওয়াও গেল। শুধু তাই নয়, পরদিন আসল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলেও গেল। বেশ ক'বছর ধরে আমরা বিষয়টি জানছি, ভাবছি, শুধু মানছি না। আবার যদি মানছিও তাহলে বলছি, পরীক্ষার সময় ফেসবুক বন্ধ রাখা হবে। কী উদ্ভট সিদ্ধান্ত! কে বোঝাবে তাদের যে ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় না, বরং বিলি হয়। ফেসবুক বন্ধ করে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা সম্ভব নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বেশ কয়েক বছর ধরে চলে আসা এই ধ্বংসাত্মক সংস্কৃতির পথ কেন রুদ্ধ হচ্ছে না? সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের কোন দুর্বলতায় এই খারাপ পথকে রোধ করা যাচ্ছে না? আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, নিরাপত্তা সংস্থা কি তাহলে অসহায়? যে যা-ই বলুক, এ সমস্যার সমাধান করতে সবার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করতে হবে। তারপর প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে সাময়িক সময়ের জন্য হয়তো সরকারের ভাবমূর্তি কমবে কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের জীবন অন্তত রক্ষা পাবে। অবশ্য প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি এতটা দিবালোকের মতো সত্য যে, তা স্বীকার কিংবা অস্বীকার কোনোভাবেই সরকারের ভাবমূর্তি বাড়ার কোনো সুযোগ নেই।
একজন অভিভাবকের আর্তনাদ সবচেয়ে বেশি। তার সামনে দুটি পথ। প্রথমত, সন্তানের হাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র তুলে দেওয়া। সন্তানকে বোঝানো সারাজীবনে তাকে শেখানো সব আদর্শ ভুল। নতুন করে শিখতে হবে মিথ্যা আর শঠতার মাধ্যমে। প্রশ্নপত্র চুরি করে পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হবে। আর নয়তো প্রথাগত প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সন্তানকে পিছিয়ে দিতে হবে। গত পিএসসি পরীক্ষার সময় চারদিকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সুলভ্য হওয়ায় একজন অভিভাবক এক সেট প্রশ্নপত্র নিয়ে দ্রুত বাসায় ফিরলেন। সন্তানকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র দেখে পড়তে বললেন। সন্তান বললেন, 'বাবা এটা তো চুরি, তাই নয়?' লজ্জা পেলেন। তাই তো, সারাজীবন সন্তানকে সত্য, সুন্দর শিখিয়েছেন। এখন কেমন করে তিনি সন্তানকে চুরি করতে বলছেন? আবার ভাবলেন, ফলাফল যদি মূল বিবেচ্য হয় তাহলে সন্তানকে তিনি ঠকাবেন কেন? তিনি কেন সন্তানকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভালো ফলাফলের জন্য প্রস্তুত করবেন না? ভাবলেন, তার শিশু সন্তান যদি বোঝে এটা চুরি, তাহলে আমাদের নীতিনির্ধারকরা কি সত্যিই বোঝেন না?
শিক্ষক, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
গত ২৬ জানুয়ারি ফেসবুকে 'প্রশ্নপত্র ফাঁস' শীর্ষক একটি বিজ্ঞাপন দেখে অবাক হতে হলো। বিজ্ঞাপনের ভাষাটি এ রকম, 'এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র লাগলে ইনবক্স করুন, দুঃখিত শুধু সায়েন্স ও কমার্সের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হবে'। এবারের জেএসসি ও পিএসসি পরীক্ষার আগের দিন রাত ৮টার দিকে একাধিক ফেসবুকের পেজে স্ট্যাটাস ছিল কিছুটা এ রকম, 'একটু অপেক্ষা করুন, আর আধা ঘণ্টার মধ্যে প্রশ্নপ্রত্র পেয়ে যাবেন'। সত্যি সত্যি পাওয়াও গেল। শুধু তাই নয়, পরদিন আসল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলেও গেল। বেশ ক'বছর ধরে আমরা বিষয়টি জানছি, ভাবছি, শুধু মানছি না। আবার যদি মানছিও তাহলে বলছি, পরীক্ষার সময় ফেসবুক বন্ধ রাখা হবে। কী উদ্ভট সিদ্ধান্ত! কে বোঝাবে তাদের যে ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় না, বরং বিলি হয়। ফেসবুক বন্ধ করে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা সম্ভব নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বেশ কয়েক বছর ধরে চলে আসা এই ধ্বংসাত্মক সংস্কৃতির পথ কেন রুদ্ধ হচ্ছে না? সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের কোন দুর্বলতায় এই খারাপ পথকে রোধ করা যাচ্ছে না? আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, নিরাপত্তা সংস্থা কি তাহলে অসহায়? যে যা-ই বলুক, এ সমস্যার সমাধান করতে সবার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করতে হবে। তারপর প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে সাময়িক সময়ের জন্য হয়তো সরকারের ভাবমূর্তি কমবে কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের জীবন অন্তত রক্ষা পাবে। অবশ্য প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি এতটা দিবালোকের মতো সত্য যে, তা স্বীকার কিংবা অস্বীকার কোনোভাবেই সরকারের ভাবমূর্তি বাড়ার কোনো সুযোগ নেই।
একজন অভিভাবকের আর্তনাদ সবচেয়ে বেশি। তার সামনে দুটি পথ। প্রথমত, সন্তানের হাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র তুলে দেওয়া। সন্তানকে বোঝানো সারাজীবনে তাকে শেখানো সব আদর্শ ভুল। নতুন করে শিখতে হবে মিথ্যা আর শঠতার মাধ্যমে। প্রশ্নপত্র চুরি করে পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হবে। আর নয়তো প্রথাগত প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সন্তানকে পিছিয়ে দিতে হবে। গত পিএসসি পরীক্ষার সময় চারদিকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সুলভ্য হওয়ায় একজন অভিভাবক এক সেট প্রশ্নপত্র নিয়ে দ্রুত বাসায় ফিরলেন। সন্তানকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র দেখে পড়তে বললেন। সন্তান বললেন, 'বাবা এটা তো চুরি, তাই নয়?' লজ্জা পেলেন। তাই তো, সারাজীবন সন্তানকে সত্য, সুন্দর শিখিয়েছেন। এখন কেমন করে তিনি সন্তানকে চুরি করতে বলছেন? আবার ভাবলেন, ফলাফল যদি মূল বিবেচ্য হয় তাহলে সন্তানকে তিনি ঠকাবেন কেন? তিনি কেন সন্তানকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভালো ফলাফলের জন্য প্রস্তুত করবেন না? ভাবলেন, তার শিশু সন্তান যদি বোঝে এটা চুরি, তাহলে আমাদের নীতিনির্ধারকরা কি সত্যিই বোঝেন না?
শিক্ষক, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
No comments