আরেকটি রক্তাক্ত দিন - ভাষান্তর by সুভাষ সাহা
শুক্রবার
জুমার নামাজের সময় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের শিকারপুর লাখিদার এলাকার
একটি মসজিদে শক্তিশালী বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। গত ডিসেম্বরে সেনা স্কুলে
হামলার পর পাকিস্তানে এটাই বড় ধরনের হামলার ঘটনা। এতে নিহত হয়েছেন ৫০ জনের
বেশি এবং আহতের সংখ্যাও ৫০-এর অধিক। এ প্রাণঘাতী হামলা নিয়ে পাকিস্তানের
ডন ও দি নিউজ পত্রিকার দুটি সম্পাদকীয় ভাষান্তর করেছেন সুভাষ সাহা >> যখন
নওয়াজ শরিফ করাচিতে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে
প্রাদেশিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনারত ছিলেন তখন জঙ্গিবাদ যে কতটা ভয়াবহ
আকার নিয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া গেল একটি বর্বরোচিত ঘটনা সংঘটিত হওয়ার
মাধ্যমে। এতে জঙ্গিবাদ দমন যে এখন কেবল অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়নে সীমাবদ্ধ
থাকলে চলবে না তাও স্পষ্ট হলো। শিকারপুরে ইমামবাগে এক শিয়া মসজিদে
শুক্রবারের নামাজ চলাকালে ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলায় এক হৃদয়বিদারক
দৃশ্যের অবতারণা হয়। আমাদের সুনি্নদের মতো পবিত্র জুমাবারে নামাজে এ বোমা
বিস্ফোরণের ঘটনায় কমপক্ষে ৫০ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এতে আমরা কবে এ ধরনের
বোমা হামলায় হতাহতের ঘটনা বা একই ধরনের সম্প্রদায়গত বিদ্বেষজাত হামলায়
হতাহতের মতো ঘটনা থেকে মুক্তি পাব সেটাই এক বিরাট জিজ্ঞাসা চিহ্ন হয়ে
উঠেছে। এ ধরনের ভয়ানক জঙ্গিবাদ যা আমাদের সমাজকে বিদীর্ণ করছে তাদের
বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনো সাফল্য এখনও পর্যন্ত আসেনি। বছরের পর বছর ধরে আমরা
সম্প্রদায়গত সহিংসতার শত শত ঘটনায় অনেক মানুষের হতাহত হওয়া দেখে আসছি।
লাখিদার এলাকার কারবালা মওলা ইমামবাগের হামলা এর সঙ্গে নতুন সংযোজন।
ইসলামের পবিত্রতম সপ্তাহের এ দিনটি দেশের বিরাট অংশের কাছে শোকের দিনে
পরিণত হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত আরও ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের কাছে বা যারা
নিহত হয়েছেন তাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছে প্রেসিডেন্ট,
প্রধানমন্ত্রী, সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ও সিন্ধু সরকারের
সদস্যদের এ সহিংস ঘটনার তীব্র নিন্দা কোনো সান্ত্বনাই বয়ে আনবে না। এসব
পরিবারের ক্ষতি কোনো মতেই পূরণ হওয়ার নয়। আমরা জাতি হিসেবে এ ব্যাপারে
কিছুই করতে পারি না তাই বোঝা যায়। পুলিশ বলেছে, বোমা প্লাস্টিকে মোড়ানো ছিল
এবং এটি মসজিদের ভেতরে রাখা হয়। এটি বিস্ফোরণেই মসজিদের ছাদের একটি অংশ
বিধ্বস্ত হয় এবং এতে বিপুলসংখ্যক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে হতাহত হয়। এই
সর্বশেষ হামলার ঘটনাটির দায় জাদুল্লা জঙ্গিবাদী সংগঠনটি ঘটিয়েছে বলে দাবি
করেছে এবং সংগঠনটির মুখপাত্র শিয়াদের তাদের শত্রু বলে উল্লেখ করে। ইসলামিক
স্টেটের (আইএস) সঙ্গে এই সংগঠনটি ইতিমধ্যে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং মনে হয়
এরা আইএসের মতো একই হত্যার দর্শনে বিশ্বাসী। আমরা যখন অসহায়ভাবে এসব
পর্যবেক্ষণ করছি তখন এ সংগঠনটির প্রভাব আমাদের দেশেও বিস্তৃত হয়ে চলেছে।
বাস্তবতা হলো, এ ধরনের ধ্বংসাত্মক তৎপরতাকে মেনে নেওয়ার মতো সুযোগ আমাদের
নেই। গত ডিসেম্বরে পেশোয়ারে সামরিক স্কুলে হামলার ঘটনার পর সরকার
জঙ্গিবাদীদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা অনেকটা কসমেটিক প্রকৃতির। এটা
সুস্পষ্ট যে, কেবল ফাঁসি দিয়ে জঙ্গিদের প্রতিরোধ করা যাবে না। ঘৃণা ছড়ানোর
বিরুদ্ধে একের পর এক বক্তব্য দিয়ে বা কিছু কট্টরপন্থি মৌলভীকে আটক করে
আমরা যে অবস্থার মধ্যে রয়েছি, তার পরিবর্তন ঘটানো যাবে না। বাস্তবতা হলো
নারকীয়। জঙ্গিবাদী যোদ্ধারা সবাই এখন বেরিয়ে পড়েছে যাদের শত্রুজ্ঞান করে
তাদের হত্যা করার জন্য। এখন আমরা দেখতে চাই, ঘৃণা ছড়ানো গুরুত্বপূর্ণ
ধর্মীয় মৌলভীদের আটক করে এবং আমাদের ছোট-বড় শহরে হামলার সুযোগ যেন নিষিদ্ধ
ঘোষিত সংগঠনগুলোর যোদ্ধা বা কর্মীরা না পায় তার ব্যবস্থা করা। সরকার কি
এসব সংগঠনের তৎপরতাকে স্তিমিত করতে পারে? যতদূর মনে হচ্ছে, এই ফ্রন্টে
সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা সরকারের বারবার ব্যর্থতা দেখতে চাই না।
No comments