রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিপর্যস্ত পুঁজিবাজার- ১৮ দিনে ৩ শ’ পয়েন্ট সূচক পতন ডিএসইর by নাসির উদ্দিন চৌধুরী
চলমান
রাজনৈতিক অস্থিরতা আবারো বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে পুুঁজিবাজারকে। ২০১০
সালের বিপর্যয়ের মতো আবারো শুরু হয়েছে বিনিয়োগকারীদের হাহাকার। প্রায়
প্রতিদিনই মারাত্মক অবনতি হচ্ছে পুঁজিবাজার সূচকের। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ
থেকে শুরু হওয়া অবরোধের ১৮ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক
হারিয়েছে ৩০০ পয়েন্টের বেশি। টানা এই দরপতনে প্রতিদিনই লোকসান বাড়ছে
বিনিয়োগকারীদের। অনেকের পুঁজি নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। আবার পুঁজি হারিয়ে
সর্বস্বান্ত তারা।
অন্য দিকে টানা নেতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন হ্রাস পাওয়ায় দিন দিন সক্ষমতা হারাচ্ছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের স্টেকহোল্ডাররা। এ খাতে জড়িত কমবেশি ২০ হাজার কর্মকর্তার চাকরি এখন হুমকির মুখে। যেখানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ব্রোকার হাউসগুলোর সক্ষমতা ধরে রাখতে অন্তত চার থেকে পাঁচ শ’ কোটি টাকা লেনদেন হওয়া দরকার, সেখানে দীর্ঘ দিন ধরে সে পর্যায়ে নেই ডিএসইর লেনদেন। সর্বশেষ গত ৪ ডিসেম্বর ডিএসইর লেনদেন ৫ শ’ কোটি টাকা অতিক্রম করে। এক মাস ধরে তা ঘোরাঘুরি করছে ২ শ’ কোটিতে।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, পুঁজিবাজারের মতো একটি স্পর্শকাতর খাত টানা এই রাজনৈতিক অনিশ্চতার ধকল সইতে পারে না। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আরো বড় বিপর্যয়ের দিকে এগোবে পুঁজিবাজার। তাই প্রয়োজন রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতা দেশের উৎপাদন ও সেবা খাতকে যেমন বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে; তেমনি এ দুই খাত নিয়ে গঠিত পুঁজিবাজারও তার বাইরে নয়। রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সঙ্কট নিরসনের কোনো বিকল্প নেই।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন যা চলছে তাতে পুঁজিবাজার ভালো পারফর্ম করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ দেশের সব ক’টি উৎপাদন খাত এখন বড় ধরনের সঙ্কটে আছে। সঙ্কট চলছে সেবা খাতেও। এসব খাত ঠিকমতো কাজ করতে না পারলে কোনোভাবেই তারা বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এ আশঙ্কা থেকেই পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন হচ্ছে।
মির্জ্জা আজিজ আরো বলেন, সুধীসমাজের পক্ষ থেকে বারবারই আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতায় আসার জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু কেউই নিজের অবস্থান থেকে সরে আসছে না। এটি ভালো লক্ষণ নয়। এ অবস্থায় সঙ্কট নিরসন সম্ভব নয়। অথচ সঙ্কট নিরসন না হলে আরো বড় বিপর্যয়ের দিকে যাবে দেশের অর্থনীতি, সেই সাথে পুঁজিবাজারও। দেশের স্বার্থে তিনি উভয় পক্ষকে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানান।
তবে চলমান মন্দায় তিনি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ করার সক্ষমতা থাকলে লোকসানে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দেন। তিনি মনে করেন, অস্থিরতা একসময় নিরসন হবেই। তখন তারা হারানো পুঁজি ফেরত পেতে পারেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু আহমদ মনে করেন, সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে চলমান সঙ্কট নিরসনে একটি সমাধান বের করতে হবে। তা না হলে পুঁজিবাজারের অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ টানা এই রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে দেশের উৎপাদন ও সেবা খাতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে। আর এ দুই খাত নিয়েই পুঁজিবাজার।
আবু আহমদ বলেন, এ মুহূর্তে সরকারের দায়িত্ব সংলাপের উদ্যোগ নেয়া। বিরোধী দল চাইলেও এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে না। তিনি মনে করেন, এখন বিনিয়োগকারীরা লোকসান দিচ্ছেন। ক’দিন পর ব্রোকার হাউজগুলোও সক্ষমতা হারাবে। বাজারের লেনদেন কমতে থাকলে হাউজগুলো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা দিতে পারবে না। তখন বাধ্য হয়েই তাদের লোকবল ছাঁটাই করতে হবে।
গত সপ্তাহের বড় দরপতনের রেশ না কাটতেই গতকাল পুঁজিবাজারের নতুন সপ্তাহও শুরু হয়েছে সূচকের বড় ধরনের পতন দিয়ে। এভাবে ১৮ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ হারায় প্রধান সূচকটির ৩ শ’ পয়েন্টের বেশি। গত ৬ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচকের অবস্থান ছিল চার হাজার ৯৬৯ পয়েন্টে। গতকাল তা নেমে আসে চার হাজার ৬৫৪ পয়েন্টে। দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ হারায় সার্বিক মূল্যসূচকের ১১ শ’ পয়েন্টের বেশি। ৬ জানুয়ারি ১৫ হাজার ২৪৭ পয়েন্টে থাকা সিএসইর প্রধান সূচকটি গতকাল ১৪ হাজার ১৯৬ পয়েন্টে স্থির হয়।
সূচকের অবনতির পাশাপাশি প্রতিদিনই কমছে পুুঁজিবাজারগুলোর লেনদেন। গতকাল ডিএসইর লেনদেন নেমে আসে ২ শ’ কোটিরও নিচে। গত এক মাসে এটি ডিএসইর সর্বনিন্ম লেনদেন। গত ২৮ ডিসেম্বরের পর ডিএসইর লেনদেন আর এপর্যায়ে নামেনি। চট্টগ্রামে লেনদেন নেমে আসে ১৫ কোটিতে।
বিনিয়োগকারীরা চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য সরকার ও বিরোধী দল উভয় পক্ষকেই দায়ী করেন। তারা বলেন, উভয় পক্ষই ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার যুদ্ধে লিপ্ত। দেশের অর্থনীতি কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে কারোই মাথাব্যথা নেই। দিনের পর দিন দেশে অচলাবস্থা চলছে। মনে হচ্ছে এ দেশের কোনো অভিভাবক নেই। সেখানে পুঁজিবাজারের অস্তিত্ব কিভাবে টিকে থাকবে। তারাও মনে করেন, সংলাপের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করা না গেলে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়। তবে এ ক্ষেত্রে দায়টা সরকারেরই বেশি। কারণ সরকার চাইলে যেকোনো সময়ই সংলাপ হতে পারে। আর সরকারের সামান্য সদিচ্ছাই পাল্টে দিতে পারে দেশের সার্বিক অবস্থা।
অন্য দিকে টানা নেতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন হ্রাস পাওয়ায় দিন দিন সক্ষমতা হারাচ্ছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের স্টেকহোল্ডাররা। এ খাতে জড়িত কমবেশি ২০ হাজার কর্মকর্তার চাকরি এখন হুমকির মুখে। যেখানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ব্রোকার হাউসগুলোর সক্ষমতা ধরে রাখতে অন্তত চার থেকে পাঁচ শ’ কোটি টাকা লেনদেন হওয়া দরকার, সেখানে দীর্ঘ দিন ধরে সে পর্যায়ে নেই ডিএসইর লেনদেন। সর্বশেষ গত ৪ ডিসেম্বর ডিএসইর লেনদেন ৫ শ’ কোটি টাকা অতিক্রম করে। এক মাস ধরে তা ঘোরাঘুরি করছে ২ শ’ কোটিতে।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, পুঁজিবাজারের মতো একটি স্পর্শকাতর খাত টানা এই রাজনৈতিক অনিশ্চতার ধকল সইতে পারে না। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আরো বড় বিপর্যয়ের দিকে এগোবে পুঁজিবাজার। তাই প্রয়োজন রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতা দেশের উৎপাদন ও সেবা খাতকে যেমন বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে; তেমনি এ দুই খাত নিয়ে গঠিত পুঁজিবাজারও তার বাইরে নয়। রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সঙ্কট নিরসনের কোনো বিকল্প নেই।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন যা চলছে তাতে পুঁজিবাজার ভালো পারফর্ম করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ দেশের সব ক’টি উৎপাদন খাত এখন বড় ধরনের সঙ্কটে আছে। সঙ্কট চলছে সেবা খাতেও। এসব খাত ঠিকমতো কাজ করতে না পারলে কোনোভাবেই তারা বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এ আশঙ্কা থেকেই পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন হচ্ছে।
মির্জ্জা আজিজ আরো বলেন, সুধীসমাজের পক্ষ থেকে বারবারই আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতায় আসার জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু কেউই নিজের অবস্থান থেকে সরে আসছে না। এটি ভালো লক্ষণ নয়। এ অবস্থায় সঙ্কট নিরসন সম্ভব নয়। অথচ সঙ্কট নিরসন না হলে আরো বড় বিপর্যয়ের দিকে যাবে দেশের অর্থনীতি, সেই সাথে পুঁজিবাজারও। দেশের স্বার্থে তিনি উভয় পক্ষকে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানান।
তবে চলমান মন্দায় তিনি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ করার সক্ষমতা থাকলে লোকসানে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দেন। তিনি মনে করেন, অস্থিরতা একসময় নিরসন হবেই। তখন তারা হারানো পুঁজি ফেরত পেতে পারেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু আহমদ মনে করেন, সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে চলমান সঙ্কট নিরসনে একটি সমাধান বের করতে হবে। তা না হলে পুঁজিবাজারের অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ টানা এই রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে দেশের উৎপাদন ও সেবা খাতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে। আর এ দুই খাত নিয়েই পুঁজিবাজার।
আবু আহমদ বলেন, এ মুহূর্তে সরকারের দায়িত্ব সংলাপের উদ্যোগ নেয়া। বিরোধী দল চাইলেও এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে না। তিনি মনে করেন, এখন বিনিয়োগকারীরা লোকসান দিচ্ছেন। ক’দিন পর ব্রোকার হাউজগুলোও সক্ষমতা হারাবে। বাজারের লেনদেন কমতে থাকলে হাউজগুলো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা দিতে পারবে না। তখন বাধ্য হয়েই তাদের লোকবল ছাঁটাই করতে হবে।
গত সপ্তাহের বড় দরপতনের রেশ না কাটতেই গতকাল পুঁজিবাজারের নতুন সপ্তাহও শুরু হয়েছে সূচকের বড় ধরনের পতন দিয়ে। এভাবে ১৮ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ হারায় প্রধান সূচকটির ৩ শ’ পয়েন্টের বেশি। গত ৬ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচকের অবস্থান ছিল চার হাজার ৯৬৯ পয়েন্টে। গতকাল তা নেমে আসে চার হাজার ৬৫৪ পয়েন্টে। দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ হারায় সার্বিক মূল্যসূচকের ১১ শ’ পয়েন্টের বেশি। ৬ জানুয়ারি ১৫ হাজার ২৪৭ পয়েন্টে থাকা সিএসইর প্রধান সূচকটি গতকাল ১৪ হাজার ১৯৬ পয়েন্টে স্থির হয়।
সূচকের অবনতির পাশাপাশি প্রতিদিনই কমছে পুুঁজিবাজারগুলোর লেনদেন। গতকাল ডিএসইর লেনদেন নেমে আসে ২ শ’ কোটিরও নিচে। গত এক মাসে এটি ডিএসইর সর্বনিন্ম লেনদেন। গত ২৮ ডিসেম্বরের পর ডিএসইর লেনদেন আর এপর্যায়ে নামেনি। চট্টগ্রামে লেনদেন নেমে আসে ১৫ কোটিতে।
বিনিয়োগকারীরা চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য সরকার ও বিরোধী দল উভয় পক্ষকেই দায়ী করেন। তারা বলেন, উভয় পক্ষই ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার যুদ্ধে লিপ্ত। দেশের অর্থনীতি কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে কারোই মাথাব্যথা নেই। দিনের পর দিন দেশে অচলাবস্থা চলছে। মনে হচ্ছে এ দেশের কোনো অভিভাবক নেই। সেখানে পুঁজিবাজারের অস্তিত্ব কিভাবে টিকে থাকবে। তারাও মনে করেন, সংলাপের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করা না গেলে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়। তবে এ ক্ষেত্রে দায়টা সরকারেরই বেশি। কারণ সরকার চাইলে যেকোনো সময়ই সংলাপ হতে পারে। আর সরকারের সামান্য সদিচ্ছাই পাল্টে দিতে পারে দেশের সার্বিক অবস্থা।
No comments