প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন না মিট রমনি হিলারি ক্লিনটনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল
যুক্তরাষ্ট্রের
আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেবেন না রিপাবলিকান দল থেকে এর আগে
প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী মিট রমনি। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ
নির্বাচনে তিনি হেরে যান বারাক ওবামার কাছে। সে দেশে আগামী বছরের শেষের
দিকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। তার অনেক আগে থেকেই জল্পনা শুরু
হয়ে গেছে কে হচ্ছেন প্রধান দুই দল ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দলের প্রার্থী।
এরই মধ্যে মিট রমনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দিলেন। এতে তার দলের
অন্য সম্ভাব্য প্রার্থী জেব বুশের প্রার্থিতার সম্ভাবনা বেড়ে গেল।
উল্লেখ্য, এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জেব বুশের পিতা জর্জ
এইচ ডব্লিউ বুশ, বড় ভাই জর্জ ডব্লিউ বুশ। পিতা এইচ ডব্লিউ বুশ ও ছেলে জর্জ
ডব্লিউ বুশ ক্ষমতায় থাকাকালে দুজনেই মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ শুরু করেছেন। এবার
সেই পরিবারের ছোট ছেলে জেব বুশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে জোর আলোচনা
চলছে। মিট রমনি ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে রিপাবলিকান দলের চূড়ান্ত
প্রার্থী বাছাইয়ের সময় হেরে গিয়েছিলেন জন ম্যাককেইনের কাছে। প্রভাবশালী এ
ব্যবসায়ী এবারও রিপাবলিকান দলের সম্ভ্যাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায়
ওপরের দিকে ছিলেন। কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন পুনরায়
নির্বাচনে লড়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন। তবে সব গুঞ্জন থামিয়ে দিয়ে নিজেই
জানিয়ে দিলেন আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য লড়বেন না। এ খবর দিয়েছে
অনলাইন বিবিসি। ৬৭ বছর বয়সী মিট রমনি বলেছেন, পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী
হওয়ার জন্য দলের অন্য নেতাদের সুযোগ দেয়াটাই ভাল হবে বলে মনে করেন তিনি।
তার সিদ্ধান্তের ফলে অন্য রিপাবলিকানদের সহায়তা করতে পারবেন দলের সমর্থক ও
দাতারা। রিপাবলিকান দলের অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় শীর্ষে
রয়েছেন জেব বুশ, নিউ জার্সির গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি, সিনেটর র্যান্ড পল।
অপরদিকে ডেমোক্রেটিক দলে একেবারে প্রথম সারিতে রয়েছেন সাবেক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তবে নিজের প্রচারণার বিষয়ে এখনও
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা তিনি দেননি। এর আগে ডেমোক্রেটিক দলের চূড়ান্ত প্রার্থী
হওয়ার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে তিনি লড়েছিলেন। তবে সেবার বারাক ওবামার কাছে হেরে
যান তিনি। যদিও বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তার সরকারে
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন হিলারি। অবশ্য ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদে
নির্বাচিত হওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদ থেকে তিনি নিজেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন।
২০১৬ সালের সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের তালিকায় সবচেয়ে
ভাল অবস্থায় রয়েছেন জেব বুশ। তবে তার জন্য বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়াতে
পারেন নিউ জার্সির গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি। আরেকজন রয়েছেন টি-পার্টি সমর্থিত
ও টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ। তিনি কিছুটা কট্টরপন্থি বলে পরিচিত।
উদারপন্থিদের তালিকায় রয়েছেন এলিজাবেথ ওয়ারেন, যার প্রশংসা অনেক
ডেমোক্রেটরাও করেছেন। আরেক উদারপন্থি র্যান্ড পলের সমর্থক যেমন আছে
রিপাবলিকান দলে, তেমনি শত্রুরও অভাব নেই। অপরদিকে ডেমোক্রেট মাঠ বলতে গেলে
একাই দখল করে আছেন হিলারি ক্লিনটন। ২০০৮ সালের ব্যর্থ নির্বাচনী লড়াইয়ে
অনেক কিছুই তিনি শিখেছেন। ২০১২ সালের নির্বাচনে মিট রমনি ১ বিলিয়ন ডলারেরও
বেশি অঙ্কের তহবিল গঠনে সক্ষম হয়েছিলেন। তবুও তিনি হেরে গিয়েছিলেন ওবামার
কাছে। তার দাতাদের সঙ্গে ফোনালাপের পর দেয়া এক বিবৃতিতে রমনি বলেছেন, তিনি
বুঝতে পেরেছেন যে তিনি হয়তো প্রার্থিতা পেতে পারেন দলের। কিন্তু দলের
পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো ডেমোক্রেট প্রার্থীকে পরাজিত করতে বেশি সামর্থ্য বহন
করে। তিনি বলেন, তার এবং তার স্ত্রী অ্যানের জন্য এ সিদ্ধান্ত বেশ কঠিন
ছিল। তবে তার ভাষায়, তিনি বিশ্বাস করেন এটাই তার দল ও জাতির জন্য সেরা
সিদ্ধান্ত। মিট রমনিকে দেখতে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের মতোই মনে হয়েছে সবসময়।
কিন্তু নির্বাচনে জিততে গিয়েই সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। ২০০৮ সালে
তিনি পরাজিত হয়েছিলেন দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন লাভে। কেন না তিনি ছিলেন একজন
উদারপন্থি রিপাবলিকান, যিনি উদারপন্থি রাজ্য বলে পরিচিত ম্যাসাচুসেটসের
গভর্নর ছিলেন। ২০১২ সালে তিনি মনোনয়ন পান। কিন্তু বারাক ওবামাকে পরাজিত
করতে ব্যর্থ হন। তার ধনকুবের ইমেজই হয়তো তার সবচেয়ে নির্বাচন জয়ে বড় বাধা
হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একই সঙ্গে নির্বাচনের ঠিক আগে আগে একটি ভিডিও ফাঁস হয়ে
যায়, যেটি তার মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দেয়। সেখানে তাকে সরকারের ওপর নির্ভরশীল
৪৭ শতাংশ ভোটারদের উদ্দেশ্য করে অপমানজনক মন্তব্য করতে দেখা যায়। মজার বিষয়
হচ্ছে, তিনি নির্বাচনে পেয়েছিলেন ৪৭% ভোট! অপরদিকে বারাক ওবামা পেয়েছিলেন
৫১%। আসন্ন নির্বাচনে ধারণা করা হচ্ছে আয় বৈষম্যের শিকার মধ্যবিত্তরাই
পার্থক্য গড়ে দেবে। তাই এ নির্বাচনে নিজের ইমেজ নতুন করে ফুটিয়ে তোলাটা তার
জন্য অত্যন্ত কঠিন ছিল। এদিকে বার্তা সংস্থা এপির খবর অনুযায়ী, মিট রমনি
মূলত সম্ভাব্য নির্বাচনী লড়াই থেকে নিজের ছিটকে পড়াটা আবিষ্কার করেন তিন
সপ্তাহ আগে। কেননা, তার বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ তহবিল সংগ্রহকারী জেব
বুশকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেন। জেব বুশ গত ডিসেম্বরে নিজের প্রার্থিতার
বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। তার বাবা ও বড় ভাইও ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
মধ্যপন্থি বলে বিবেচিত জেব বুশের সামনে সবচেয়ে বড় বাধা তার বড় ভাই জর্জ
ডব্লিউ বুশের ভাবমূর্তি। নির্বাচনে না লড়ার ব্যাপারে মিট রমনির ঘোষণার পর
এক টুইট বার্তায় জেব বুশ লিখেছেন, মিট রমনি একজন দেশপ্রেমিক। অন্য অনেকের
মতো আমিও আশা করছি দেশ ও আমাদের দলকে তার সেবা করাটার ইতি ঘটবে না।
No comments