বিরল পাতি কাঠশালিক by সৌরভ মাহমুদ
ফয়লাতলী সৈকতের পাড়ে পাতি কাঠশালিক |
‘পৃথিবীর এই মাঠখানি
ভুলিতে বিলম্ব হবে কিছু দিন; এ মাঠের কয়েকটা শালিখের তরে
আশ্চর্য বিস্ময়ে আমি চেয়ে রব কিছুকাল...’
- জীবনানন্দ দাশ
আমাদের অতিচেনা পাখি শালিক। ১১ প্রজাতির শালিক আমাদের দেশে দেখা যায়। তবে কোনো কোনো প্রজাতির দেখা মেলে কালেভদ্রে। তাদের মধ্যে চিতিপাখ গোশালিক, গোলাপি কাঠশালিক ও পাতি কাঠশালিক অন্যতম। সম্প্রতি চট্টগ্রামের ফয়লাতলী সৈকত এলাকায় দেখা মিলেছে চার থেকে সাতটি পাতি কাঠশালিকের। চট্টগ্রাম বার্ড ক্লাবের কয়েকজন সদস্য গত বছরের ২৩ নভেম্বর পাখি দেখতে গিয়ে ফয়লাতলী সৈকত এলাকায় সেগুলো দেখতে পান ও ছবি তোলেন।
চট্টগ্রাম বার্ড ক্লাবের আহসান উদ্দিন চৌধুরী ও তারেক উদ্দিন আহ্মেদ জানান, এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফয়লাতলী সৈকত এলাকায় তাঁরা একটি পাতি কাঠশালিক দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু তখন ছবি তুলতে পারেননি। এ ছাড়া বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল এইচ খান ২০১০ সালে শ্রীমঙ্গলে একটি পাতি কাঠশালিক দেখতে পান। পাখিবিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষক পল থমসন দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে বসবাস করছেন এবং পাখপাখালি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা ১৯৯৩ সালে তিনটি পাতি কাঠশালিক দেখেছিলেন চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়। আর ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে এ পাখি দেখেছিলেন এবং নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন প্রাণিবিদ ড. রেজা খান।
পাতি কাঠশালিক আগে পত্রঝরা বনে বাস করলেও পরবর্তীকালে শহর ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা ঝাঁক বেঁধে খাবারের সন্ধান করে। তখন বিশ্রামের ফুরসত থাকে খুব কমই। ঝগড়াও করে মাঝেমধ্যে। বিপদের সংকেত পেলে ঝাঁক বেঁধে উড়ে যায় অন্যত্র। দলবদ্ধ হয়ে নিজেরা কখনো অন্য প্রজাতির পাখিদের সঙ্গে রাতযাপন করে। চাষাবাদের জমি, তৃণভূমি, তুঁতগাছ এলাকায় ও কীটপতঙ্গময় মাঠে ঘুরে বেড়িয়ে খাবার খোঁজে। প্রধান খাদ্য মাকড়সা, কেঁচো, উচ্ছিষ্ট, ফল, শস্যবীজ, ফুলের মধু ও পোকামাকড়। এদের কণ্ঠ সুরেলা নয়; শন্ শন্ ও ঘ্যাঁস ঘ্যাঁস করে শিস দেয়। অন্য পাখির ডাক অনুকরণও করতে পারে।
পাতি কাঠশালিক ইউরোপের শীতপ্রধান অঞ্চলের ও পশ্চিম এশিয়ার স্থায়ী পাখি। শীত মৌসুমে এরা আমাদের দেশে আসে কখনো কখনো। ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানেও শীত মৌসুমে পাতি কাঠশালিক দেখা যায়। ভারতে এ প্রজাতির অনেকগুলো উপপ্রজাতি আছে। ১৮৫০ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় পাতি কাঠশালিক আনা হয়। সে দেশে পাখিটি মানুষের বসতিঘেঁষা ও ঘনিষ্ঠ।
পাতি কাঠশালিকের পালক বৈচিত্র্যময় রঙে সাজানো। দেহ লম্বায় ২১ সেন্টিমিটার। পালক তেলতেলে কালো, তাতে সাদাটে ছিট। ডানা, লেজ ও চোখ পাটকিলে। নিচের ঠোঁট হলদেটে। গায়ের কয়েক জায়গায় বেগুনি-নীল পালক আছে। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। যুবক শালিক দেখতে ফ্যাকাশে ধূসর-বাদামি। দেহে সাদা ফোঁটা থাকে। তরুণ পাখি দেখতে কালচে বাদামি। গলা সাদা, পালক উজ্জ্বল। ঠোঁট কালচে ও চিকন, যা পতঙ্গ ধরার উপযোগী।
প্রজনন সময় শীতকালে বড় ঝাঁক থেকে পাতি কাঠশালিকেরা আলাদা হয়ে জোড়া ও ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। অঞ্চলভেদে প্রজননে তারতম্য ঘটে।
ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে মে থেকে জুন মাসে এরা বাসা করে। ঘরের চালের ফাঁক, সিলিং, কাঠঠোকরার ফোকরে পরিপাটিহীনভাবে পাতা, খড়, শুকনো ঘাস দিয়ে বাসা বানায়। এ সময় পাতি কাঠশালিক বদরাগী হয়ে ওঠে। বাসা করার জায়গা দখলের জন্য অন্য প্রজাতির পাখি; এমনকি স্বপ্রজাতিদের সঙ্গেও ঝগড়াঝাঁটি করে। ডিম পাড়ে পাঁচ-ছয়টি। ১০-১২ দিন দুজন পালা করে ডিমে তা দেয়। বাচ্চাদের আদর-যত্নে রাখতে সর্বদাই সতর্ক থাকে মা ও বাবা পাখি।
ভুলিতে বিলম্ব হবে কিছু দিন; এ মাঠের কয়েকটা শালিখের তরে
আশ্চর্য বিস্ময়ে আমি চেয়ে রব কিছুকাল...’
- জীবনানন্দ দাশ
আমাদের অতিচেনা পাখি শালিক। ১১ প্রজাতির শালিক আমাদের দেশে দেখা যায়। তবে কোনো কোনো প্রজাতির দেখা মেলে কালেভদ্রে। তাদের মধ্যে চিতিপাখ গোশালিক, গোলাপি কাঠশালিক ও পাতি কাঠশালিক অন্যতম। সম্প্রতি চট্টগ্রামের ফয়লাতলী সৈকত এলাকায় দেখা মিলেছে চার থেকে সাতটি পাতি কাঠশালিকের। চট্টগ্রাম বার্ড ক্লাবের কয়েকজন সদস্য গত বছরের ২৩ নভেম্বর পাখি দেখতে গিয়ে ফয়লাতলী সৈকত এলাকায় সেগুলো দেখতে পান ও ছবি তোলেন।
চট্টগ্রাম বার্ড ক্লাবের আহসান উদ্দিন চৌধুরী ও তারেক উদ্দিন আহ্মেদ জানান, এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফয়লাতলী সৈকত এলাকায় তাঁরা একটি পাতি কাঠশালিক দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু তখন ছবি তুলতে পারেননি। এ ছাড়া বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল এইচ খান ২০১০ সালে শ্রীমঙ্গলে একটি পাতি কাঠশালিক দেখতে পান। পাখিবিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষক পল থমসন দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে বসবাস করছেন এবং পাখপাখালি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা ১৯৯৩ সালে তিনটি পাতি কাঠশালিক দেখেছিলেন চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়। আর ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে এ পাখি দেখেছিলেন এবং নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন প্রাণিবিদ ড. রেজা খান।
পাতি কাঠশালিক আগে পত্রঝরা বনে বাস করলেও পরবর্তীকালে শহর ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা ঝাঁক বেঁধে খাবারের সন্ধান করে। তখন বিশ্রামের ফুরসত থাকে খুব কমই। ঝগড়াও করে মাঝেমধ্যে। বিপদের সংকেত পেলে ঝাঁক বেঁধে উড়ে যায় অন্যত্র। দলবদ্ধ হয়ে নিজেরা কখনো অন্য প্রজাতির পাখিদের সঙ্গে রাতযাপন করে। চাষাবাদের জমি, তৃণভূমি, তুঁতগাছ এলাকায় ও কীটপতঙ্গময় মাঠে ঘুরে বেড়িয়ে খাবার খোঁজে। প্রধান খাদ্য মাকড়সা, কেঁচো, উচ্ছিষ্ট, ফল, শস্যবীজ, ফুলের মধু ও পোকামাকড়। এদের কণ্ঠ সুরেলা নয়; শন্ শন্ ও ঘ্যাঁস ঘ্যাঁস করে শিস দেয়। অন্য পাখির ডাক অনুকরণও করতে পারে।
পাতি কাঠশালিক ইউরোপের শীতপ্রধান অঞ্চলের ও পশ্চিম এশিয়ার স্থায়ী পাখি। শীত মৌসুমে এরা আমাদের দেশে আসে কখনো কখনো। ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানেও শীত মৌসুমে পাতি কাঠশালিক দেখা যায়। ভারতে এ প্রজাতির অনেকগুলো উপপ্রজাতি আছে। ১৮৫০ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় পাতি কাঠশালিক আনা হয়। সে দেশে পাখিটি মানুষের বসতিঘেঁষা ও ঘনিষ্ঠ।
পাতি কাঠশালিকের পালক বৈচিত্র্যময় রঙে সাজানো। দেহ লম্বায় ২১ সেন্টিমিটার। পালক তেলতেলে কালো, তাতে সাদাটে ছিট। ডানা, লেজ ও চোখ পাটকিলে। নিচের ঠোঁট হলদেটে। গায়ের কয়েক জায়গায় বেগুনি-নীল পালক আছে। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। যুবক শালিক দেখতে ফ্যাকাশে ধূসর-বাদামি। দেহে সাদা ফোঁটা থাকে। তরুণ পাখি দেখতে কালচে বাদামি। গলা সাদা, পালক উজ্জ্বল। ঠোঁট কালচে ও চিকন, যা পতঙ্গ ধরার উপযোগী।
প্রজনন সময় শীতকালে বড় ঝাঁক থেকে পাতি কাঠশালিকেরা আলাদা হয়ে জোড়া ও ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। অঞ্চলভেদে প্রজননে তারতম্য ঘটে।
ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে মে থেকে জুন মাসে এরা বাসা করে। ঘরের চালের ফাঁক, সিলিং, কাঠঠোকরার ফোকরে পরিপাটিহীনভাবে পাতা, খড়, শুকনো ঘাস দিয়ে বাসা বানায়। এ সময় পাতি কাঠশালিক বদরাগী হয়ে ওঠে। বাসা করার জায়গা দখলের জন্য অন্য প্রজাতির পাখি; এমনকি স্বপ্রজাতিদের সঙ্গেও ঝগড়াঝাঁটি করে। ডিম পাড়ে পাঁচ-ছয়টি। ১০-১২ দিন দুজন পালা করে ডিমে তা দেয়। বাচ্চাদের আদর-যত্নে রাখতে সর্বদাই সতর্ক থাকে মা ও বাবা পাখি।
No comments