ডিজিটাল যুগে মুদ্রিত বইয়ের ভবিষ্যৎ by সিন গ্যাব
আমরা
এক 'বৈপ্লবিক' যুগে বাস করছি। অবশ্য তাতে রাজনৈতিক কাঠামোর সামান্যই
হেরফের হচ্ছে। এই বিপ্লব আসলে প্রযুক্তির পরিবর্তন। বিশ শতকে যেসব
প্রযুক্তির উদ্ভব ঘটেছিল, বিশেষত আশির দশক থেকে, সেগুলো উন্নয়নের চূড়ান্ত
সীমায় পৌঁছে গেছে এবং সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ভিনিয়েল ও টেপরেকর্ডারকে হত্যা
করেছে সিডি, পরে নিজেও এমপিথ্রির কাছে নিহত হয়েছে। এটাও কত দিন আধিপত্য
বজায় রাখতে পারবে, আমরা জানি না। ভিডিওটেপ আর নেই। ল্যান্ডফোন ক্রমে হারিয়ে
যাচ্ছে, একই অবস্থা তারবার্তার। রেডিও ও টেলিভিশনও 'গণতান্ত্রিক' যুগে এসে
ভয়ে কাঁপছে। হলিউডকে জীবন্ত গিলে ফেলছে পাইরেসি। ডাক যোগাযোগের জায়গায়
এসেছে ই-মেইল। কে আর এখন সেলফ কেনে? সংক্ষেপে বললে, ইন্টারনেট ও ডিজিটাল
প্রযুক্তি গোটা বিশ্বকে এমন একটি আকার দিচ্ছে, নতুন সেই বিশ্ব সম্পর্কে
আমাদের ধারণা এখনও ভাসা ভাসা। তাহলে মুদ্রিত বইয়ের কী খবর? এই মাধ্যম কি
টিকে থাকবে? কেনই বা টিকে থাকা উচিত? সন্দেহ নেই যে এখনও কাগজের প্রতি
অঙ্গীকারবদ্ধ গ্রন্থপ্রেমীরা আছেন, যেমন এখনও ক্যামেরার দোকানে ফিল্মের
ক্যামেরার খোঁজে প্রবীণরা যান। 'মুুদ্রিত বই কখনই হারিয়ে যাবে না' তাদের
বিড়বিড় করতে শুনি আমি। পুরনো সব প্রযুক্তি যখন হারিয়ে যাচ্ছে, তখন মুদ্রিত
বইয়ের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে কেন? আমরা আগামী দিনগুলোতেও পড়তে থাকব,
সন্দেহ নেই_ যেভাবে এখনও ফটো তুলি বা সঙ্গীত শুনি। কিন্তু সে ক্ষেত্রে এমন
কী কারণ আছে যে মুদ্রিত বইকেই টিকে থাকতে হবে? দেখা যাক, মুদ্রিত বইয়ের
পক্ষের যুক্তিগুলো কী কী।
প্রথমত, মুদ্রিত বই আর ১০টি প্রযুক্তির চেয়ে আলাদা। সাউন্ড রেকর্ডিংয়ের সঙ্গে তুলনা করা যাক। উনিশ শতকের শেষ দিকে এটা এসে ক্রমে উন্নত ও পরিবর্তিত হয়েছে। এডিসনের ফটোগ্রাম সিলিন্ডার থেকে শুরু করে গ্রামোফোন, ইলেকট্রিক্যাল রেকর্ডিং, ভিনিয়েল, ক্যাসেট এবং পরে ডিস্ক। গত কয়েক দশকে লাফিয়ে লাফিয়ে, আগেরটি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা নতুন প্রযুক্তি এসেছে আর পুরনোটি বাতিল হয়েছে। মুদ্রিত বইয়ের ক্ষেত্রে সেটা ঘটেনি। সভ্যতার শুরু থেকে বা যদি যিশুখ্রিস্টের জন্মের পর থেকে ধরি, মাত্র দু'বার ধরন বদল করেছে। প্যাপিরাসের বদলে কাগজ এসেছে। বলা চলে বদলও হয়নি; উন্নত, সস্তা, সহজ ও ফ্যাশনেবল প্যাপিরাস রোল হচ্ছে আজকের কাগজের বই। পঞ্চম শতক থেকে এর খুব বেশি রদবদল হয়নি। অন্য প্রযুক্তি থেকে বইয়ের ক্ষেত্রে আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, এর মধ্যে লিখিত জ্ঞান ও বার্তা নতুন বইয়ে হুবহু স্থানান্তর সম্ভব হয়ে থাকে। পঞ্চদশ শতকে এসে হস্তাক্ষরের জায়গায় ছাপা স্থান করে নিয়েছিল; কিন্তু বইয়ের আকার ও ধরনের পরিবর্তন আসেনি। এ ছাড়া বই হচ্ছে সব সভ্যতাতেই পবিত্র। একটি পুরনো সিডি যেভাবে ফেলে দেয়, বই সেভাবে নয়। গ্রন্থাগারগুলোতে মানুষ নীরবতা বজায় রাখে গির্জার মতো করে। বই পড়ার সময় পাঠককে সব মনোযোগ যেভাবে ঢেলে দিতে হয়, তা অনেকটা উপাসনার মতো।
দ্বিতীয়ত, ই-বুক সব সময়ই মুদ্রিত বইয়ের তুলনায় কম গুরুত্ব পেয়ে আসছে। কারণ, সেটা পড়ার জন্য আলাদা একটি প্রযুক্তি দরকার। ব্যাটারি ফুরিয়ে গেল তো ওই বইও ফুরিয়ে গেল! যদি বর্তমান 'ডিজিটাল' সভ্যতা কোনো কারণে ভেঙে পড়ে, ই-বুক কীভাবে মিলবে? মুদ্রিত বই পড়ার জন্য দিনের আলো বা রাতে সামান্য মোমের আলোই যথেষ্ট। যদি ই-বুক টেক্সটের বদলে ফটোগ্রাফ দিয়ে তৈরি হয়, তাহলে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়েও পাওয়া যাবে না। আবার একটি ই-বুক খুঁজতে গেলে ওই বইয়ের সম্পর্কে একটি শব্দ হলেও জানা থাকতে হবে। মুদ্রিত বই আগে কোথাও দেখে থাকলে নাম মনে না থাকলেও সেখানে গিয়ে পাওয়া যেতে পারে। ই-বুকের প্রতি আস্থা একটি সংকট। যে কেউ বানাতে পারে। মুদ্রিত বইকে যেতে হয় একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, যেখানে সংশোধনের সুযোগ থাকে।
তৃতীয়ত, ই-বুকের স্থায়িত্ব সম্পর্কে কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারে না। হার্ডডিস্ক নষ্ট হতে পারে, ওয়েবসাইটের মেয়াদ চলে যেতে পারে, খোদ প্রযুক্তিটি হারিয়ে যেতে পারে। বহু প্রাচীন বই এখনও টিকে আছে, অনেক ই-বই আসছে, যাচ্ছে। গত মাসে আপনার কেনা মুদ্রিত বইটি নিশ্চয়ই আছে। গত মাসে ডাউনলোড করা ই-বুকটি কি এখন খুঁজে পাবেন?
ব্রিটিশ গ্রন্থকার; ফুকেট গেজেট থেকে সংক্ষেপে ভাষান্তরিত
প্রথমত, মুদ্রিত বই আর ১০টি প্রযুক্তির চেয়ে আলাদা। সাউন্ড রেকর্ডিংয়ের সঙ্গে তুলনা করা যাক। উনিশ শতকের শেষ দিকে এটা এসে ক্রমে উন্নত ও পরিবর্তিত হয়েছে। এডিসনের ফটোগ্রাম সিলিন্ডার থেকে শুরু করে গ্রামোফোন, ইলেকট্রিক্যাল রেকর্ডিং, ভিনিয়েল, ক্যাসেট এবং পরে ডিস্ক। গত কয়েক দশকে লাফিয়ে লাফিয়ে, আগেরটি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা নতুন প্রযুক্তি এসেছে আর পুরনোটি বাতিল হয়েছে। মুদ্রিত বইয়ের ক্ষেত্রে সেটা ঘটেনি। সভ্যতার শুরু থেকে বা যদি যিশুখ্রিস্টের জন্মের পর থেকে ধরি, মাত্র দু'বার ধরন বদল করেছে। প্যাপিরাসের বদলে কাগজ এসেছে। বলা চলে বদলও হয়নি; উন্নত, সস্তা, সহজ ও ফ্যাশনেবল প্যাপিরাস রোল হচ্ছে আজকের কাগজের বই। পঞ্চম শতক থেকে এর খুব বেশি রদবদল হয়নি। অন্য প্রযুক্তি থেকে বইয়ের ক্ষেত্রে আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, এর মধ্যে লিখিত জ্ঞান ও বার্তা নতুন বইয়ে হুবহু স্থানান্তর সম্ভব হয়ে থাকে। পঞ্চদশ শতকে এসে হস্তাক্ষরের জায়গায় ছাপা স্থান করে নিয়েছিল; কিন্তু বইয়ের আকার ও ধরনের পরিবর্তন আসেনি। এ ছাড়া বই হচ্ছে সব সভ্যতাতেই পবিত্র। একটি পুরনো সিডি যেভাবে ফেলে দেয়, বই সেভাবে নয়। গ্রন্থাগারগুলোতে মানুষ নীরবতা বজায় রাখে গির্জার মতো করে। বই পড়ার সময় পাঠককে সব মনোযোগ যেভাবে ঢেলে দিতে হয়, তা অনেকটা উপাসনার মতো।
দ্বিতীয়ত, ই-বুক সব সময়ই মুদ্রিত বইয়ের তুলনায় কম গুরুত্ব পেয়ে আসছে। কারণ, সেটা পড়ার জন্য আলাদা একটি প্রযুক্তি দরকার। ব্যাটারি ফুরিয়ে গেল তো ওই বইও ফুরিয়ে গেল! যদি বর্তমান 'ডিজিটাল' সভ্যতা কোনো কারণে ভেঙে পড়ে, ই-বুক কীভাবে মিলবে? মুদ্রিত বই পড়ার জন্য দিনের আলো বা রাতে সামান্য মোমের আলোই যথেষ্ট। যদি ই-বুক টেক্সটের বদলে ফটোগ্রাফ দিয়ে তৈরি হয়, তাহলে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়েও পাওয়া যাবে না। আবার একটি ই-বুক খুঁজতে গেলে ওই বইয়ের সম্পর্কে একটি শব্দ হলেও জানা থাকতে হবে। মুদ্রিত বই আগে কোথাও দেখে থাকলে নাম মনে না থাকলেও সেখানে গিয়ে পাওয়া যেতে পারে। ই-বুকের প্রতি আস্থা একটি সংকট। যে কেউ বানাতে পারে। মুদ্রিত বইকে যেতে হয় একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, যেখানে সংশোধনের সুযোগ থাকে।
তৃতীয়ত, ই-বুকের স্থায়িত্ব সম্পর্কে কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারে না। হার্ডডিস্ক নষ্ট হতে পারে, ওয়েবসাইটের মেয়াদ চলে যেতে পারে, খোদ প্রযুক্তিটি হারিয়ে যেতে পারে। বহু প্রাচীন বই এখনও টিকে আছে, অনেক ই-বই আসছে, যাচ্ছে। গত মাসে আপনার কেনা মুদ্রিত বইটি নিশ্চয়ই আছে। গত মাসে ডাউনলোড করা ই-বুকটি কি এখন খুঁজে পাবেন?
ব্রিটিশ গ্রন্থকার; ফুকেট গেজেট থেকে সংক্ষেপে ভাষান্তরিত
No comments