প্রেসিডেন্ট অধ্যাদেশ জারি করে ঐকমত্যের সরকার গঠন করতে পারেন -এমাজউদ্দীন আহমদ
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী
ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। বুধবার তার
দেয়া একটি প্রস্তাব ঔৎসুক্য তৈরি করেছে সমাজের নানা মহলে। ওই দিন সুপ্রিম
কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এক আলোচনায় তিনি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনের
প্রস্তাব করেন। তার এই প্রস্তাবে এরই মধ্যে নাগরিক সমাজ ও পেশাজীবীদের একটি
অংশ সমর্থন জানিয়েছে। গতকাল মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে ওই প্রস্তাবের
ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি বলেন, চলমান
সঙ্কটের সুরাহা করতে হলে একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনের কোন বিকল্প নেই।
ওই সরকারের প্রধান কাজ হবে দুটি। প্রথমত, যেসব প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের সঙ্গে
সংযুক্ত ওই সব প্রতিষ্ঠানে সংস্কার করা। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠান যেভাবে
দলীয়করণ করা হয়েছে তা সংস্কার না করে কখনও অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত, একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক
সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠিত হবে। ওই সরকারের যারা
প্রতিনিধি হবেন তারাই ঠিক করবেন কে ওই সরকারের প্রধান হবেন। জাতীয় ঐকমত্যের
সরকারের মেয়াদ দীর্ঘ হবে না। সর্বোচ্চ ৯০ দিন ওই সরকারের মেয়াদ হতে পারে। এ
সময়ের মধ্যেই তারা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনবে এবং নির্বাচন
আয়োজন করবে। জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান সংশোধনের
প্রয়োজন হবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, সংবিধান সংশোধন
করে তা করা সম্ভব। আবার সংবিধান সংশোধন না করেও তা করা সম্ভব। যদিও আমাদের
সংবিধানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা একেবারেই সীমিত। কিন্তু জাতির অভিভাবক
হিসেবে প্রেসিডেন্টের একটা ভূমিকা রয়েছে। জাতির এই ক্রান্তিকালে
প্রেসিডেন্টই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে পারেন। প্রেসিডেন্ট একটি অধ্যাদেশ
জারি করে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করবেন। পরবর্তীকালে যে সংসদ গঠিত হবে ওই
সংসদ প্রেসিডেন্টের অধ্যাদেশকে অনুমোদন দেবে। তিনি বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ
সংশোধনী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ওই সংশোধনীতে সংসদ
বহাল রেখেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক দুনিয়ায়
সংসদ ভেঙে দিয়েই নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। বৃটেন, জার্মানি, জাপান সবখানেই এ
ব্যবস্থা। সংসদ বহাল থাকলে নির্বাচনের সময় একজন প্রার্থী সংসদ সদস্য
হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ক্ষেত্রে কিছুতেই লেভেল প্লেইং
ফিল্ড হবে না। এ অবস্থা বহাল থাকলে অবাধ নির্বাচন হবে না। এজন্য সংসদ ভেঙে
দিতে হবে। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, যদি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার
প্রতিষ্ঠা না করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা না হয় তবে গণতন্ত্র
শব্দটি ব্যবহারের অধিকার আমাদের থাকবে না। চার হাজার বছরের মধ্যে বাঙালি
জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান চেতনা ছিল
গণতন্ত্র। সে গণতন্ত্রকে আমরা ভূলুণ্ঠিত হতে দিতে পারি না। গত বছর নভেম্বরে
এক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে ২০১৫ সালের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে
রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তনের ব্যাপারে আশার কথা জানিয়েছিলেন অধ্যাপক
এমাজউদ্দীন আহমদ। সেসময় তিনি বলেছিলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যদি যথার্থতা
থাকে, আমার চিন্তাভাবনা যদি ঋজু হয়, তাহলে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে দেশের
চেহারা এমন থাকবে না। মাঝখানের সময়টাতে আন্দোলনে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়বে।
সম্প্রতি কয়েকটি সাক্ষাৎকারে তিনি প্রয়োজনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে বহাল
রেখেও নির্বাচনের কথা বলেন।
No comments