প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকান্ড- গুরুতর বিপর্যয়ের সতর্কতা সংকেত
রাজধানীর
মিরপুরে শনিবার একটি প্লাস্টিক কারখানায় ভয়াবহ অগি্নকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে ১৩
জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ও অন্তত ১০ জনের আহত হওয়া যেমন বেদনার, তেমনই
ক্ষোভসঞ্চারী। আমরা মনে করি, দাহ্য পদার্থবহুল প্লাস্টিক কারখানাটির
অবস্থান জনাকীর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় না হলে এবং নিরাপত্তাবিধি মানা হলে
হতাহতের সংখ্যা এত বেশি হতো না। রোববার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে যা
জানা যাচ্ছে, তাতে স্পষ্ট যে কারখানাটি স্থাপনে নূ্যনতম বিধিবিধান মানা
হয়নি। মিরপুর ১ নম্বর সেকশন এলাকার 'নাসিম প্লাজা' নামের পাঁচতলা ভবনটির
চারতলা পর্যন্ত কারখানা এবং পঞ্চমতলায় শ্রমিকদের থাকার জায়গা। অথচ
কর্মক্ষেত্র ও বাসস্থান আলাদা থাকবে_ এটা যে কোনো কারখানা স্থাপনেরই
প্রাথমিক শর্ত। তার চেয়েও গুরুতর অসঙ্গতি হচ্ছে, এভাবে বাণিজ্যিক এলাকায়
কারখানা স্থাপন। তার ওপর দাহ্য পদার্থ নিয়ে কারবার! আমাদের মনে আছে, ২০১০
সালের জুন মাসে রাজধানীর নিমতলী এলাকায় একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার
বিস্ফোরণের পর গোটা এলাকা ভস্মীভূত এবং অন্তত ২১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
সাধারণ অগি্নকাণ্ড এমন বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনারও প্রধান কারণ ছিল ওই
এলাকায় থাকা দাহ্য পদার্থের দোকান ও গুদাম। তখন জনাকীর্ণ এলাকায় দাহ্য
পদার্থ না রাখার ব্যাপারে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু আমরা যে
নিমতলী ট্র্যাজেডি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করিনি, মিরপুরের দুর্ঘটনা তার প্রমাণ।
তাজরীন ফ্যাশনস এবং রানা প্লাজা ধস থেকেও সংশ্লিষ্ট সবাই শিক্ষা নেয়নি।
মন্দের ভালো বলতে হবে যে আগুন আশপাশের ভবনেও ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। কিন্তু
প্রধান ফটকের মুখে পিকআপ দাঁড় করিয়ে মালামাল তোলায় অগি্নকাণ্ডের সময় অনেক
শ্রমিক আটকা পড়ে। ওই 'কারখানায়' অগি্ননির্বাপক ব্যবস্থা ছিল কি-না, তা
অবশ্য জানা যায়নি। আমরা মনে করি, এই অগি্নকাণ্ড আরও বড় বিপর্যয়ের সতর্কতা
সংকেত। জনবহুল এলাকায় দাহ্য পদার্থের কারবার বন্ধ করা না গেলে আরও ব্যাপক
মাত্রায় প্রাণ ও সম্পদহানি হতে পারে। কেবল ভবন ব্যবহার নয়, আবাসিক এলাকার
জন্য নির্ধারিত বিদ্যুৎ ও গ্যাস শিল্প বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারও আধুনিক যে
কোনো নগরে নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের এখানে এমন অপকর্ম অহরহই হচ্ছে। আমরা
দেখি, অগি্নকাণ্ড বা অন্য কোনো দুর্ঘটনার পর আবাসিক, বাণিজ্যিক বা শিল্প
এলাকার বিভাজন কার্যকর করার কথা উচ্চারিত হয় বটে, বাস্তবায়ন হয় না কখনও।
এমনকি নিমতলী ট্র্যাজেডির পরও ওই এলাকা থেকে দাহ্য পদার্থের দোকান ও গুদাম
পুরোপুরি অপসারণ সম্ভব হয়নি বলে সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন
প্রকাশিত হয়েছে। আমরা মনে করি, মিরপুরের এই দুর্ঘটনার পর আরও বড় বিপর্যয়ের
জন্য হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা হবে আত্মঘাতী। কর্তৃপক্ষের উচিত, অবিলম্বে
আবাসিক এলাকা থেকে এ ধরনের দোকান ও ব্যবসা কেন্দ্র সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা
করা। তারও আগে উচিত হবে দুর্ঘটনাটি নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যকারিতা
প্রমাণ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণ। একই সঙ্গে
ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পরিবার ও স্বজন যাতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং আহতরা
চিকিৎসা পায়, তাও নিশ্চিত করতে হবে কর্তৃপক্ষকে।
No comments