খালেদা জিয়ার অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়া প্রতিহিংসাপরায়ণ, তার পরিণাম ভালো হয় না
সাবেক
প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অফিসের বিদ্যুৎ
সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বিদ্যুৎ
সংযোগ বন্ধ করার হুমকি দেয়ার ১০ ঘণ্টার মধ্যে সংযোগ কেটে দেয়া হলো। এ ছাড়া
টেলিফোন, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। মন্ত্রী
খালেদা জিয়ার অফিসের পানির সংযোগ ও তার খাবার নিয়ে যাওয়া বন্ধ করারও হুমকি
দিয়েছেন। খালেদা জিয়া প্রায় এক মাস যাবৎ এই অফিসে অবস্থান করছেন। প্রথমে
সরকার বালুর ট্রাক দিয়ে তাকে এই অফিসে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। পরে বালুর
ট্রাক সরিয়ে নেয়া হলেও বেগম খালেদা জিয়া আর এই অফিস থেকে বের হননি। এখান
থেকেই তিনি সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অফিসে অবস্থানকালেই তার
জীবনে দুঃখজনক বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটেছে। তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো
প্রবাসে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন। তার ছেলে মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ হয়নি।
এখন তার সাথে এই বাড়িতে ছেলেবধূসহ পরিবারের একাধিক সদস্য এবং অফিসের
স্টাফরা অবস্থান করছেন। এর মধ্যে সেই বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়া হলো।
একজন বিরোধী রাজনৈতিক নেতার বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়ার সিদ্ধান্ত কিংবা তার
বাসার পানির লাইন কেটে দেয়া কোনো রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে না। বেগম খালেদা
জিয়ার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে সরকার যেকোনো আইনি প্রক্রিয়া
অনুসরণ করতে পারে। বিদ্যুৎ, পানি বা খাবার সরবরাহ বন্ধ করার মতো অমানবিক
সিদ্ধান্তে সরকারের রাগ, ক্ষোভ, হতাশা ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা ছাড়া আর
কোনো লক্ষ্য থাকতে পারে না। কার্যত সরকার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে
বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কৌশলের কাজে পরাজিত হয়েছে। সরকার সুস্থ
স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কৌশল নিরূপণে ব্যর্থ
হয়েছে। সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়, প্রচলিত
আইনেরও লঙ্ঘন। শুধু সরকারবিরোধী রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে কারো
বাড়ির বিদ্যুৎ বা পানির সংযোগ কেটে দেয়া কোনো আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে
না। সরকারকে অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে হবে কেন তার অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে
দেয়া হলো। একজন মন্ত্রী কিভাবে কোন আইনে একজন নাগরিকের বাড়ির বিদ্যুৎ ও
পানির সংযোগ কেটে দেয়ার হুমকি দেন। আর কিভাবেইবা তা দ্রুত কার্যকর হয়?
তাহলে কি সরকারের মন্ত্রীরা আইনের ঊর্ধ্বে। তারা যা ইচ্ছা তাই করার ক্ষমতা
রাখেন। তাদের কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা আসলে কার কাছে? আমরা সরকারের এই
সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাই। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ
থাকে তা অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে করতে হবে। কিন্তু কোনো বেআইনি ও
নিপীড়নমূলক কাজ গ্রহণযোগ্য হবে না। সরকারকে বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে। এখন
পর্যন্ত বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। যৌথ বাহিনী বহু রাজনৈতিক নেতাকর্মীর
ঘরবাড়ি ভেঙে তছনছ করেছে। কিন্তু এতে বিরোধী দলের রাজনৈতিক আন্দোলন বন্ধ
হয়নি। বরং দেশে অস্বাভাবিক অবস্থা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। দমন পীড়নের মাধ্যমে
বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন বন্ধ করা যায়নি। বরং অত্যাচার নির্যাতন
বেআইনি কর্মকাণ্ড বিরোধী দলের প্রতি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি বাড়িয়ে
দিয়েছে। এখনো তাই হচ্ছে। আমরা আশা করব, রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সরকার দ্রুত
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করবে এবং বেগম খালেদা জিয়ার
অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে দেয়াসহ সব ধরনের নিপীড়নমূলক পথ থেকে সরে আসবে।
No comments