সংলাপই একমাত্র পথ by অ্যাডভোকেট এম এ করিম
বেগম
খালেদা জিয়া দেশব্যাপী অবরোধের ডাক রাজনৈতিক সঙ্কটকে রাজনৈতিকভাবে
সমাধানের এক বলিষ্ঠ রাজনৈতিক পদক্ষেপ। ২০ দলীয় জোটের প্রধান হিসেবে তিনি
সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির মধ্যেই ৫ জানুয়ারি থেকে
অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিতে বাধ্য হন। কারণ, ভোটারবিহীন
নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সরকারের পূর্ণ এক বছরের পর ২০ দলীয় জোট ৫ জানুয়ারি
সঙ্গত কারণেই গণতন্ত্র হত্যা দিবস ঘোষণা দিয়ে রাজধানী ঢাকায় ১৫ দিন আগেই
জনসভা করার অনুমতি চেয়েছিল। জনসভার অনুমতি না পেয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে
চূড়ান্তভাবে বঞ্চিত হলো। ৫ জানুয়ারি বেগম জিয়াকে জনসভা করতে না দিয়ে সরকার
গণতান্ত্রিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে বেগম জিয়াকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে
কলঙ্কজনক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বেগম খালেদা জিয়া দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত
করার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে লড়াই করছেন। সরকার তার জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়ে
তাকে তার কার্যালয়ে দিনের পর দিন শত শত পুলিশ বেষ্টনীর মাধ্যমে অবরুদ্ধ
করে রেখে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
২০ দলীয় জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ-র্যাব লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট চালিয়ে নির্যাতন ও ধরপাকড় করে মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে। এ পর্যন্ত সারা দেশের ১৫ হাজার নেতাকর্মীকে মামলা দিয়ে জেলে নিক্ষেপ করা হয়েছে। তাদের অপরাধ, তারা ভোটের অধিকার চায়, গণতন্ত্র চায়, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতন চায়। সরকার জেনেশুনেই প্রচণ্ড রাজনৈতিক সঙ্কটকে ‘নিছক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, বোমা, পেট্রলবোমা মেরে যানবাহন ধ্বংস ও মানুষ হত্যা’ বলে দেশের গণতন্ত্রমনা জনতার দৃষ্টিকে ভিন্ন পথে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে।
গত বছর ৫ জানুয়ারি বেগম জিয়ার নির্বাচন বর্জনের ডাক বিপুলভাবে জয়যুক্ত হয়েছে। শেখ হাসিনার নির্বাচন অনুষ্ঠানের ডাক শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, পরাজয় বরণ করেও সরকার গঠন করে রাষ্ট্রীয় পুলিশবাহিনী-র্যাব দিয়ে জনবিচ্ছিন্ন অবস্থায় জাসদ নেতাদের পরামর্শে সরকারকে জনতার মুখোমুখি দঁড়া করানো হয়েছে। আরামে মসনদে বসে জনগণকে উন্নয়ন দিচ্ছেন বলে গণতন্ত্র থেকে দৃষ্টি ফেরানোর অভিনব কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।
পুলিশের মহাপরিচালক, র্যাব মহাপরিচালক, বিজিবি মহাপরিচালক, জাসদের কার্যকর সভাপতি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী গুলির মাধ্যমে সমাধানের কথা বলে বাংলাদেশ যে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, তা জনগণকে ভুলিয়ে দিতে চাচ্ছেন। তারা ভোটারবিহীন অবৈধ সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতাসীন রাখার ঘোষণা দিচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়ার ২০ দলের অবরোধের সামনে বেশির ভাগ নিরীহ লোকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মন্ত্রীরা বেগম খালেদা জিয়া ইচ্ছা করলে নিজ বাসভবনে যেতে পারেন বলছেন, অথচ তাকে রাজপথে যেতে দিচ্ছেন না, সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী পন্থায় মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ডক্টর কামাল হোসেনের কিছু বক্তব্যের দিকে খেয়াল করলেই অনুধাবন করা যায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কোনো অবস্থায়ই নির্বাচন হিসেবে গণ্য হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, যারা দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেন, তারাই বেশি করে রাজপথ উত্তপ্ত করেছেন। ভোটারবিহীন নির্বাচনে গঠিত সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে না। অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনব্যবস্থার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে অনেকেই। ভারতের বিখ্যাত সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার বর্তমান রাজনৈতিক ক্রাইসিস সমাধানের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার দাবিকৃত ৭ দফার মধ্যে চলমান সঙ্কটের সমাধান আছে। ৭ দফার মধ্যে বেগম জিয়ার জোট বা তার দল অথবা তিনি নিজে ক্ষমতাসীন হবেন, সেই দাবি নেই। শুধু আছে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনব্যবস্থার দাবি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জোটের বামপন্থী নেতাদের উপেক্ষা করে নিজ দল আওয়ামী লীগের দিকে লক্ষ রেখে অবিলম্বে বর্তমান সঙ্কটকে রাজনৈতিক হিসেবে চিহ্নিত করে সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করাই সমাধানের উৎকৃষ্ট পথ। সরকার বেগম জিয়াকে গ্রেফতার এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে এবং স্বৈরাচারী পন্থায় সমাধানের পথ খুঁজলে গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে যাবে। এটা ক্ষমতাসীন দলের জন্যও শুভ হবে না। ব্যালটের মর্যাদা রক্ষার জন্য বুলেটের সম্মুখীন হওয়ার নজির সৃষ্টিকারী দেশে গণতন্ত্র উদ্ধারের লড়াই বন্দুকের নল দিয়ে স্তব্ধ করা যাবে না। এই বাস্তবতা যত তাড়াতাড়ি সরকার অনুধাবন করে, ততই সবার জন্য মঙ্গল।
চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে দেশের জন্য যারা ভাবেন, মঙ্গল কামনা করেন, মানবতার জয়গানে যারা উদ্বুদ্ধ, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার দেশ থেকে যাতে নির্বাসন না হয় সে জন্য রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা অকারণ সঙ্ঘাতে লিপ্ত না হয়ে সরকারকে গণতন্ত্রের পথে হাঁটা এবং দ্রুত সংলাপের বন্ধ দরজা খুলে দেয়ার পরামর্শ দিন।
২০ দলীয় জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ-র্যাব লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট চালিয়ে নির্যাতন ও ধরপাকড় করে মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে। এ পর্যন্ত সারা দেশের ১৫ হাজার নেতাকর্মীকে মামলা দিয়ে জেলে নিক্ষেপ করা হয়েছে। তাদের অপরাধ, তারা ভোটের অধিকার চায়, গণতন্ত্র চায়, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতন চায়। সরকার জেনেশুনেই প্রচণ্ড রাজনৈতিক সঙ্কটকে ‘নিছক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, বোমা, পেট্রলবোমা মেরে যানবাহন ধ্বংস ও মানুষ হত্যা’ বলে দেশের গণতন্ত্রমনা জনতার দৃষ্টিকে ভিন্ন পথে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে।
গত বছর ৫ জানুয়ারি বেগম জিয়ার নির্বাচন বর্জনের ডাক বিপুলভাবে জয়যুক্ত হয়েছে। শেখ হাসিনার নির্বাচন অনুষ্ঠানের ডাক শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, পরাজয় বরণ করেও সরকার গঠন করে রাষ্ট্রীয় পুলিশবাহিনী-র্যাব দিয়ে জনবিচ্ছিন্ন অবস্থায় জাসদ নেতাদের পরামর্শে সরকারকে জনতার মুখোমুখি দঁড়া করানো হয়েছে। আরামে মসনদে বসে জনগণকে উন্নয়ন দিচ্ছেন বলে গণতন্ত্র থেকে দৃষ্টি ফেরানোর অভিনব কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।
পুলিশের মহাপরিচালক, র্যাব মহাপরিচালক, বিজিবি মহাপরিচালক, জাসদের কার্যকর সভাপতি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী গুলির মাধ্যমে সমাধানের কথা বলে বাংলাদেশ যে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, তা জনগণকে ভুলিয়ে দিতে চাচ্ছেন। তারা ভোটারবিহীন অবৈধ সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতাসীন রাখার ঘোষণা দিচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়ার ২০ দলের অবরোধের সামনে বেশির ভাগ নিরীহ লোকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মন্ত্রীরা বেগম খালেদা জিয়া ইচ্ছা করলে নিজ বাসভবনে যেতে পারেন বলছেন, অথচ তাকে রাজপথে যেতে দিচ্ছেন না, সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী পন্থায় মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ডক্টর কামাল হোসেনের কিছু বক্তব্যের দিকে খেয়াল করলেই অনুধাবন করা যায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কোনো অবস্থায়ই নির্বাচন হিসেবে গণ্য হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, যারা দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেন, তারাই বেশি করে রাজপথ উত্তপ্ত করেছেন। ভোটারবিহীন নির্বাচনে গঠিত সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে না। অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনব্যবস্থার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে অনেকেই। ভারতের বিখ্যাত সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার বর্তমান রাজনৈতিক ক্রাইসিস সমাধানের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার দাবিকৃত ৭ দফার মধ্যে চলমান সঙ্কটের সমাধান আছে। ৭ দফার মধ্যে বেগম জিয়ার জোট বা তার দল অথবা তিনি নিজে ক্ষমতাসীন হবেন, সেই দাবি নেই। শুধু আছে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনব্যবস্থার দাবি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জোটের বামপন্থী নেতাদের উপেক্ষা করে নিজ দল আওয়ামী লীগের দিকে লক্ষ রেখে অবিলম্বে বর্তমান সঙ্কটকে রাজনৈতিক হিসেবে চিহ্নিত করে সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করাই সমাধানের উৎকৃষ্ট পথ। সরকার বেগম জিয়াকে গ্রেফতার এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে এবং স্বৈরাচারী পন্থায় সমাধানের পথ খুঁজলে গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে যাবে। এটা ক্ষমতাসীন দলের জন্যও শুভ হবে না। ব্যালটের মর্যাদা রক্ষার জন্য বুলেটের সম্মুখীন হওয়ার নজির সৃষ্টিকারী দেশে গণতন্ত্র উদ্ধারের লড়াই বন্দুকের নল দিয়ে স্তব্ধ করা যাবে না। এই বাস্তবতা যত তাড়াতাড়ি সরকার অনুধাবন করে, ততই সবার জন্য মঙ্গল।
চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে দেশের জন্য যারা ভাবেন, মঙ্গল কামনা করেন, মানবতার জয়গানে যারা উদ্বুদ্ধ, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার দেশ থেকে যাতে নির্বাসন না হয় সে জন্য রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা অকারণ সঙ্ঘাতে লিপ্ত না হয়ে সরকারকে গণতন্ত্রের পথে হাঁটা এবং দ্রুত সংলাপের বন্ধ দরজা খুলে দেয়ার পরামর্শ দিন।
লেখক : সিনিয়র আইনজীবী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
No comments