স্মরণ-নির্ভীক সাংবাদিক শহীদ শামছুর রহমান by সেলিনা আক্তার লাকি
সাংবাদিক জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন শহীদ শামছুর রহমান। নির্ভীক সাংবাদিক শামছুর রহমান দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী আর গডফাদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে শহীদ হয়েছেন ২০০০ সালের এই দিনে। ১৯৫৭ সালের ৫ মে যশোরের শার্শা থানার শলকোনা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সোহরাব উদ্দিন এবং মা খয়রুন্নেছা।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বাবা শহীদ হন। তখন তিনি নবম শ্রেণীর ছাত্র। আর তখন থেকেই শুরু হয় শামছুর রহমানের সংগ্রামী জীবন। ১৯৭২ সালে এসএসসি, ১৯৭৪ সালে এইচএসসি এবং ১৯৮১ সালে যশোর এম এম কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অর্নাসসহ এমএ পাস করেন। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি সাংবাদিকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক ঠিকানার মাধ্যমে শামছুর রহমানের সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয় ১৯৮০ সালে। ১৯৮২ সালে দৈনিক বাংলার নওয়াপাড়াস্থ নিজস্ব সংবাদদাতা এবং ১৯৮৪ সালে একই পত্রিকার যশোরস্থ নিজস্ব সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালের নভেম্বরে তিনি দৈনিক বাংলার স্টাফ রিপোর্টার এবং পরে সিনিয়র রিপোর্টার নিযুক্ত হন। দৈনিক বাংলার উপসম্পাদকীয় পাতায় নিয়মিত রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি সাপ্তাহিক বিচিত্রার আন্তর্জাতিক বিভাগে ভারতীয় রাজনীতির ওপর পাঁচ শতাধিক লেখা প্রকাশিত হয়।
এ ছাড়া কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক গণশক্তির বিভিন্ন বিভাগে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। একাধারে তিনি বিবিসির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিনিধিও ছিলেন। ১৯৯৭ সালে দৈনিক বাংলা ছেড়ে দৈনিক জনকণ্ঠে যোগ দেন।
শামছুর রহমান সাহিত্যচর্চাও করতেন। ১৯৯২ সালে ঢাকা বিদ্যাপ্রকাশ থেকে তাঁর একমাত্র উপন্যাস 'ধূসর সীমান্তে' প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি দেশ বিভাগ-পরবর্তীকালে দুই পারের মানুষের জীবন সংগ্রাম, চোরাচালান সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা, আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িতদের কর্মকাণ্ড এবং সীমান্তবর্তী মানুষের জীবনচিত্র নিয়ে রচিত হয়েছে। তাঁর অসাধারণ সাহিত্যবোধ এবং অগাধ জ্ঞানের আলোই তাঁর লেখনীতে প্রকাশ পায়। তিনি ১৯৯৩ সালে শিশুতোষ জীবনীমালা 'একজন বড় মানুষের গল্প' রচনা করেন। ভারতের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জ্যোতি বসুর জীবনীভিত্তিক প্রবন্ধ রচনা করেন ১৯৯৫ সালে, 'রাজনীতির জ্যোতি বসু' শিরোনামে।
শামছুর রহমানের ক্ষুরধার লেখনীর কথা পাঠকদের খুব ভালো করেই জানা আছে। তাঁর একেকটি প্রতিবেদন জনস্বার্থবিরোধীদের ঘাঁটিতে আতঙ্ক সৃষ্টি করত। তাই দুর্বলচিত্ত কাপুরুষ সমাজবিরোধীরা তাঁকে হত্যা করে নিশ্চিন্ত হয়েছে।
'সংবাদ' শব্দটির মধ্যে বিপদ আছে। তা সত্ত্বেও তিনি মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে কলমযুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। তাই ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি নিজ ডায়েরিতে লিখে গেছেন, 'সব অর্জনে আনন্দ আছে। ২০০০ সালকে স্পর্শ করতে পারা আমার কাছে অর্জন। মৃত্যু সেখানে বারবার দরজায় উঁকি দিচ্ছে। সন্ত্রাসীদের উদ্ধত সঙ্গিন যেখানে তাক করা, সেখানে বিংশ শতাব্দীকে অতিক্রম করা কি আমার জন্য পরম পাওয়া নয়...এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।' তিনি ওই দিন আরো লিখেছেন, 'মহাকালের কাছে আমার অস্তিত্ব ধূলিকণার চেয়েও ক্ষুদ্র। যতক্ষণ বেঁচে আছি, ততক্ষণই আমার অস্তিত্ব।' শামছুর রহমান নৃশংসভাবে খুন হন ২০০০ সালের ১৬ জুলাই। তিনি তখন তাঁর কর্মস্থল যশোরের দৈনিক জনকণ্ঠের অফিসকক্ষে বসেই কাজ করছিলেন। ঘাতকরা অতিনির্বিঘ্নে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সরে পড়ে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বাবার আদর্শ সন্তান শামছুর রহমান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি সন্ত্রাসমুক্ত ও সুস্থ সমাজ গঠনের ব্রত নিয়েছিলেন। প্রবাদ আছে, 'অসির চেয়ে মসি শ্রেষ্ঠ'। এটা যদি চিরায়ত সত্য হয়, তাহলে প্রয়াত সাংবাদিক শহীদ শামছুর রহমান এ সত্যেরই এক জ্বলন্ত নিদর্শন। তাঁর মতো সাংবাদিকরা সর্বকালের বিরল কলমযোদ্ধা। সাংবাদিক শামছুর রহমান সব সাংবাদিকের কাছে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন।
সেলিনা আক্তার লাকি
এ ছাড়া কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক গণশক্তির বিভিন্ন বিভাগে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। একাধারে তিনি বিবিসির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিনিধিও ছিলেন। ১৯৯৭ সালে দৈনিক বাংলা ছেড়ে দৈনিক জনকণ্ঠে যোগ দেন।
শামছুর রহমান সাহিত্যচর্চাও করতেন। ১৯৯২ সালে ঢাকা বিদ্যাপ্রকাশ থেকে তাঁর একমাত্র উপন্যাস 'ধূসর সীমান্তে' প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি দেশ বিভাগ-পরবর্তীকালে দুই পারের মানুষের জীবন সংগ্রাম, চোরাচালান সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা, আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িতদের কর্মকাণ্ড এবং সীমান্তবর্তী মানুষের জীবনচিত্র নিয়ে রচিত হয়েছে। তাঁর অসাধারণ সাহিত্যবোধ এবং অগাধ জ্ঞানের আলোই তাঁর লেখনীতে প্রকাশ পায়। তিনি ১৯৯৩ সালে শিশুতোষ জীবনীমালা 'একজন বড় মানুষের গল্প' রচনা করেন। ভারতের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জ্যোতি বসুর জীবনীভিত্তিক প্রবন্ধ রচনা করেন ১৯৯৫ সালে, 'রাজনীতির জ্যোতি বসু' শিরোনামে।
শামছুর রহমানের ক্ষুরধার লেখনীর কথা পাঠকদের খুব ভালো করেই জানা আছে। তাঁর একেকটি প্রতিবেদন জনস্বার্থবিরোধীদের ঘাঁটিতে আতঙ্ক সৃষ্টি করত। তাই দুর্বলচিত্ত কাপুরুষ সমাজবিরোধীরা তাঁকে হত্যা করে নিশ্চিন্ত হয়েছে।
'সংবাদ' শব্দটির মধ্যে বিপদ আছে। তা সত্ত্বেও তিনি মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে কলমযুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। তাই ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি নিজ ডায়েরিতে লিখে গেছেন, 'সব অর্জনে আনন্দ আছে। ২০০০ সালকে স্পর্শ করতে পারা আমার কাছে অর্জন। মৃত্যু সেখানে বারবার দরজায় উঁকি দিচ্ছে। সন্ত্রাসীদের উদ্ধত সঙ্গিন যেখানে তাক করা, সেখানে বিংশ শতাব্দীকে অতিক্রম করা কি আমার জন্য পরম পাওয়া নয়...এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।' তিনি ওই দিন আরো লিখেছেন, 'মহাকালের কাছে আমার অস্তিত্ব ধূলিকণার চেয়েও ক্ষুদ্র। যতক্ষণ বেঁচে আছি, ততক্ষণই আমার অস্তিত্ব।' শামছুর রহমান নৃশংসভাবে খুন হন ২০০০ সালের ১৬ জুলাই। তিনি তখন তাঁর কর্মস্থল যশোরের দৈনিক জনকণ্ঠের অফিসকক্ষে বসেই কাজ করছিলেন। ঘাতকরা অতিনির্বিঘ্নে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সরে পড়ে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বাবার আদর্শ সন্তান শামছুর রহমান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি সন্ত্রাসমুক্ত ও সুস্থ সমাজ গঠনের ব্রত নিয়েছিলেন। প্রবাদ আছে, 'অসির চেয়ে মসি শ্রেষ্ঠ'। এটা যদি চিরায়ত সত্য হয়, তাহলে প্রয়াত সাংবাদিক শহীদ শামছুর রহমান এ সত্যেরই এক জ্বলন্ত নিদর্শন। তাঁর মতো সাংবাদিকরা সর্বকালের বিরল কলমযোদ্ধা। সাংবাদিক শামছুর রহমান সব সাংবাদিকের কাছে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন।
সেলিনা আক্তার লাকি
No comments