শিক্ষাঙ্গনে হত্যা-সন্ত্রাস কি সরকারকে বিচলিত করে না?-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই খুন
সাম্প্রতিক ছাত্রহত্যার সারিতে এবার যোগ দিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রশিবিরের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত দুজন ছাত্রই ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী। নিহত ছাত্রদের রাজনৈতিক পরিচয় যা-ই হোক, এ ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কলঙ্কিত হলো।
সংঘাতের কারণটি তুচ্ছ ব্যক্তিগত রেষারেষি। দুজন সহপাঠীর একজন ছাত্রলীগের সদস্য, অন্যজন ছাত্রশিবিরের। একপর্যায়ে গত বুধবার উভয় ছাত্রই বিষয়টাকে দলীয় চেহারা দিতে সক্ষম হন এবং ডেকে আনেন যাঁর যাঁর দলের সহযোদ্ধাদের। আগুনে ঘি পড়লে যেমন হয়, সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রসংগঠনের সার্বিক যুদ্ধে পরিণত হয়। বন্দুক, চাপাতি, রামদা ব্যবহূত হয়—প্রক্টরসহ আহত হন ৪০ জন। সংঘাতের অন্তিমে দেখা গেল, গুলিবিদ্ধ দুটি দেহ পড়ে রয়েছে—হাসপাতালে নেওয়ার পর জানা গেল তাঁরা মৃত। সবই ঘটেছে পুলিশ প্রশাসনের চোখের সামনে। এ নিয়ে গত ২৪ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহত ছাত্রের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭।
ছাত্রলীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আদর্শের দাবিদার সংগঠন। ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন। আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে উভয় উভয়ের ঘোষিত প্রতিপক্ষ। কিন্তু খেয়াল করার বিষয়, এ দুটি সংগঠনের রক্তপাত এবং হত্যা-বদলাহত্যার ইতিহাসে আদর্শের কারণে যতটা না, তার চেয়ে বেশি প্রাণ ঝরেছে ক্যাম্পাসের দখলদারি প্রতিষ্ঠার জন্য। বলা দরকার, শিক্ষাঙ্গনে দখলদারির চর্চায় ছাত্রশিবিরই পথপ্রদর্শক। তবে আদর্শ যা-ই হোক না কেন, কার্যত সন্ত্রাস-হত্যার রেকর্ডের দিক থেকে উভয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কম।
সাধারণ শিক্ষার্থীর ক্যাডারে পরিণত হওয়া, ক্যাডারদের কারও কারও খুন হয়ে যাওয়া আর কারও কারও খুনি হয়ে ওঠার মাধ্যমে কেবল নতুন খুনের সম্ভাবনাই তৈরি হয় না, নষ্ট হয় শিক্ষার পরিবেশ, জিম্মি হয় অজস্র শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন। এসব বন্ধের দায় যেমন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের, তেমনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা সরকারেরও। হত্যা হত্যাই; হত্যাকারী মাত্রই অপরাধী—এর বাইরে অন্য কোনো বিবেচনা তাই থাকতে পারে না। পাশাপাশি, প্রধান তিনটি ছাত্রসংগঠন যেভাবে খুন-সন্ত্রাসের সমার্থক হয়ে উঠছে, যেভাবে কখনো নিজ দলের, কখনো প্রতিপক্ষ দলের কর্মীদের হত্যা করে চলেছে, সেভাবে এর বিচার কিন্তু হয় না। শিক্ষাঙ্গনে খুনের বিচার আদালতের মাধ্যমেই হতে হবে, কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসী তাণ্ডবের অবসান ঘটাতে হবে রাজনীতিবিদদেরই। শিক্ষাঙ্গনে অব্যাহত সন্ত্রাস আর হত্যাকাণ্ড জনগণকে যতটা বিচলিত করে, সরকারকে কি ততটা বিচলিত করে?
ছাত্রলীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আদর্শের দাবিদার সংগঠন। ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন। আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে উভয় উভয়ের ঘোষিত প্রতিপক্ষ। কিন্তু খেয়াল করার বিষয়, এ দুটি সংগঠনের রক্তপাত এবং হত্যা-বদলাহত্যার ইতিহাসে আদর্শের কারণে যতটা না, তার চেয়ে বেশি প্রাণ ঝরেছে ক্যাম্পাসের দখলদারি প্রতিষ্ঠার জন্য। বলা দরকার, শিক্ষাঙ্গনে দখলদারির চর্চায় ছাত্রশিবিরই পথপ্রদর্শক। তবে আদর্শ যা-ই হোক না কেন, কার্যত সন্ত্রাস-হত্যার রেকর্ডের দিক থেকে উভয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কম।
সাধারণ শিক্ষার্থীর ক্যাডারে পরিণত হওয়া, ক্যাডারদের কারও কারও খুন হয়ে যাওয়া আর কারও কারও খুনি হয়ে ওঠার মাধ্যমে কেবল নতুন খুনের সম্ভাবনাই তৈরি হয় না, নষ্ট হয় শিক্ষার পরিবেশ, জিম্মি হয় অজস্র শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন। এসব বন্ধের দায় যেমন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের, তেমনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা সরকারেরও। হত্যা হত্যাই; হত্যাকারী মাত্রই অপরাধী—এর বাইরে অন্য কোনো বিবেচনা তাই থাকতে পারে না। পাশাপাশি, প্রধান তিনটি ছাত্রসংগঠন যেভাবে খুন-সন্ত্রাসের সমার্থক হয়ে উঠছে, যেভাবে কখনো নিজ দলের, কখনো প্রতিপক্ষ দলের কর্মীদের হত্যা করে চলেছে, সেভাবে এর বিচার কিন্তু হয় না। শিক্ষাঙ্গনে খুনের বিচার আদালতের মাধ্যমেই হতে হবে, কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসী তাণ্ডবের অবসান ঘটাতে হবে রাজনীতিবিদদেরই। শিক্ষাঙ্গনে অব্যাহত সন্ত্রাস আর হত্যাকাণ্ড জনগণকে যতটা বিচলিত করে, সরকারকে কি ততটা বিচলিত করে?
No comments